করোনাকাল : প্রতিশোধ ও প্রায়শ্চিত্তের সময়



সাইফুল হাসান
অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

  • Font increase
  • Font Decrease

‘হেল ইজ এমটি এন্ড অল ডেভিলস আর হিয়ার’
লাইনটি উইলিয়াম শ্রেক্সপিয়ারের ‘দ্য টেমপেস্ট’ নাটকের। ‘হিয়ার’ শব্দটির স্থলে ‘ইন দ্য আর্থ’ বা পছন্দমতো কোনো জায়গা/ দেশকে ভাবুন। এবার খেয়াল করুন, দেখবেন ‘নরক আসলেই শূন্য’। সব ‘ডেভিলস’ (শয়তান) এখন পৃথিবীতে। মুখোশ মানুষের। আদতে শয়তান। নানান কায়দায় পৃথিবীটাকে গিলছে। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, রাজতন্ত্র, ধর্মতন্ত্র, যুদ্ধ, পুঁজিবাদ বিশ্বায়ন, প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন—যেভাবে, যে নামে আর তন্ত্রে সুবিধা সেভাবেই লুটছে। পৃথিবী নামক গ্রহটাকে নরক বানিয়ে রেখেছে।

যেন ছেলেবেলায় গল্পের বইয়ে পড়া রাক্ষসগুলো জীবন্ত হয়ে উঠেছে। যারা গিলে নিচ্ছে মানুষ, প্রাণ-প্রকৃতি, নদী-সাগর, বনভূমি, মরুভূমি সব। ভেঙে ফেলছে ঐক্য ও ভাতৃত্ব। জনকল্যাণের নামে ‘রাজনীতি’কে করেছে বোতলবন্দী। রাজনীতিবিদ, সরকার, আমলা, কর্পোরেশন, মাফিয়া, ব্যবসায়ীরা মিলে বিশ্বে এমন এক ব্যবস্থা (সিস্টেম) দাঁড় করিয়েছে, যেখানে মুনাফা আর ভোগই শেষ কথা।

মানুষ মাত্রই স্বার্থপর ও কর্তৃত্ববাদী। এবং মগজে সাম্রাজ্যবাদী। অন্যের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব ও কর্তৃত্ব ফলাতে চায়। তা সে মানুষ, প্রকৃতি বা প্রাণী যাই হোক। এটাই মূল প্রবণতা। হোমো সেপিয়েন্সদের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার শুরু প্রকৃতিধ্বংসের মাধ্যমে। প্রকৃতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় মানুষ উজাড় করতে থাকে গাছ-পালা, বন-বাদাড়, পশুপাখি ও এর গেরস্থালী। মাটি, পানি, বায়ু তো বটেই বাঘ, সিংহ, হাতি, সাপ, বেজী কিছুই রক্ষা পায়নি মানুষের হাত থেকে। আর যেখানে পারেনি, পুঁজো দিয়েছে মানুষ।

আদি আফ্রিকান থেকে আজকে পর্যন্ত মানষের ইতিহাস মূলত নির্মমতা, অমানবিকতা এবং মুর্খতার ইতিহাস। যার পরতে পরতে হত্যা, ধ্বংস, লুণ্ঠন, দখল, নির্যাতনের গল্প। যত আধুনিক দাবি, ততই নৃশংসতা আর বিচ্ছিন্নতার ইতিহাস। মুদ্রার অপরপিঠে মানুষের অসাধারণ সব অর্জন, বীরত্ব ও মানবিকতার গল্পও আছে। কিন্তু নিষ্ঠুতার চিত্রই বেশি। আমেরিকা-ইউরোপ, আফ্রিকা, আরব-ভারতবর্ষ দুনিয়ার সব জায়গার ছবি এক।

শোষণ, নিয়ন্ত্রণ এবং সম্পদ আহরণের প্রশ্নে সবাই সমান। সর্বত্র ক্ষোভ, লোভ, হিংসা-জিঘাংসা এবং হতাশার চাষাবাদ। আশাবাদী হবার উপলক্ষ কম। যেন কেউ কারো নয়। কেউ আমাদের নয়। একাকিত্ব ও বিচ্ছিন্নতায় সমাজ ও ব্যক্তি প্রবলভাবে আক্রান্ত। যেখানে স্বপ্ন নেই। সাহস দেবার বন্ধু নেই; দুঃসময়ে পাশে থাকার স্বজন নেই। যার সুযোগ নিচ্ছে সুবিধাবাদী, সুযোগসন্ধানী একতাবদ্ধ শয়তানেরা। কিন্ত সাধারণেরা গা বাঁচিয়ে, ঝামেলা এড়িয়ে চলে। কিন্তু ঝামেলা তাদের ছাড়ে না। বরং আরো আঁকড়ে ধরে।

বিচ্ছিন্নতা ভয়ের, সমষ্টি জোগায় সাহস। এটা জানার পরও পৃথিবী ভীষণ ব্যক্তিকেন্দ্রীকতায় আবদ্ধ। অথচ সমাজ এমন ছিল না। বিচ্ছিন্নতার সংস্কৃতিও মানুষের নয়। তারপরও, মানুষ কেন বিচ্ছিন্নতার মতো আত্নঘাতকেই বেছে নিচ্ছে? এসব কারণে সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিনিয়ত নির্মম সব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছে। যা নিয়ে মৃদ আহ, উহ্ হলেও প্রতিকারও মিলছে না। বরং বিশ্বজুড়ে সামাজিক, রাজনৈতিক, প্রতিবেশ এবং পরিবেশগত সংকট গভীর হচ্ছে।

এই নিস্পৃহতায় জন্ম নিচ্ছে নতুন নতুন সংকট। মানবসৃষ্ট ইকোসিস্টেমেও নানা ছিদ্র। যার পুরো নিয়ন্ত্রণ সামান্য কিছু মানুষের (গোষ্ঠী) হাতে। রাজনীতিক, কর্পোরেট, ব্যবসায়ী, সুবিধাভোগী আমলা—অসাধারণ এদের নেক্সাস। ভাগবাটোয়ারাও এদের হাতেই। এরাই কালে কালে ধর্ম বা রাষ্ট্রের নামে অথবা শক্তির জোরে পৃথিবীকে কব্জা করেছে। রাষ্ট্র, সংবিধান, সীমানা, আইন বানিয়েছে। রাষ্ট্রের ধারণা যত শক্তিশালী, মানুষ তত পরাধীন হচ্ছে। মূলত সংবিধান ও আইন হচ্ছে ক্ষমতাবানদের নির্যাতন-শোষণ এবং প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসের বৈধ সনদ।

জনকল্যাণ ও উন্নয়নের নামে ক্ষমতাবানরা, দখল করেছে বন-বিল-নদী। পাহাড় সমতল ভূমি এবং প্রাকৃতিক সম্পদ। উন্নয়নের ঠিকাদারেরা পকেটস্থ করছে প্রবৃদ্ধির সুফল। শিল্পায়নের নামে বিষাক্ত রাসায়নিকে মেরে ফেলেছে নদী ও এর জীববৈচিত্র্য। উচ্চ ফলনশীল ফসল উৎপাদনের নামে কীটনাশকে ধ্বংস করেছে ফসলের ক্ষেত, কীটপতঙ্গ, ব্যাঙ, সাপ, পিঁপড়া, ইঁদুর। নিরেট বন সাফ করে গড়েছে কারখানা। পাহাড় কেটে আবসান। মাটি আর গাছ পুড়িয়ে বানিয়েছে সভ্যতার দেয়াল।

মানুষ ভুলেই গেছে পৃথিবী শুধু তার একার আবাস নয়। বরং কীটপতঙ্গ, লতাপাতা, ঘাস, ফড়িং, বাঘ, সিংহ, শিম্পাঞ্জি থেকে পানির নিচের হাঙর-ডানকোনাসহ সকলের। কিন্তু মানুষ মানে না। মানেনি। সে ভেবেছে সে-ই সেরা এবং এই গ্রহের সব তার অধীন। ফলে প্রকৃতির সন্তান হয়েও, সে প্রকৃতিতে থাকেনি। গড়ে তুলেছে নিজস্ব এক সিস্টেম বা ব্যবস্থাপনা। যা প্রকৃতিবিরোধী এবং আত্নঘাতী। এর মাশুল কালে কালে দিয়েছে মানুষ।

২৫০ খ্রিস্টাব্দে স্মল পক্স, ১৩শ শতাব্দীতে ব্লাক ডেথ, ১৭শ শতাব্দীতে বিউবোনিক প্লেগ লাখো কোটি মানুষের প্রাণ নিয়েছে। গত শতকে স্প্যানিশ ফ্লুতে মরেছে ৫ থেকে ১০ কোটি। এ ছাড়াও ম্যালেরিয়া, হাম, গুটি বসন্ত, ডায়ারিয়া, কলেরা বা পোলিওতে কত যে মরেছে তার হিসাব রাখেনি কেউ। ১৬৭৬ সালের আগে মানুষ ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কে জানত না। ভাইরাস মাত্র শতাধিক বছর আগের আবিষ্কার। এদের সম্পর্কে জানতেই লেগেছে লাখ লাখ বছর। অথচ মানব ইতিহাসের শুরু থেকে কোটি কোটি জীবন নিয়েছে অনুজীবগুলো। আর মানুষ ভাবত, মৃত্যুর কারণ স্রষ্টার অভিশাপ। এ কালের ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যানসারের মতো আধুনিক ও জটিল রোগগুলোও প্রকৃতির প্রতি অবিচারের ফসল।

সেমিটিক ধর্মগ্রন্থগুলোতে বারবার মহামারি এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু মানুষ সাবধান হয়নি। চলেছে নিজের মতোই। মধ্যযুগের অবসান এবং ইউরোপে রেনেসাজনিত জ্ঞান-বিজ্ঞান উন্মেষের কারণে মানুষ ভাবতে শুরু করে পৃথিবীটা তার। একার। সরকারি কর্মকর্তা ও প্রিয়জন হাসান মুর্তার্জা এ বিষয়ে ফেসবুকে তাৎপর্যপূর্ণ একটি স্ট্যাটাস লিখেছে—“হাজার বছর ধরে যে প্রকৃতির কোলে মানুষ বেঁচে থাকল, বা বলা ভালো, যে প্রকৃতি তাকে বাঁচিয়ে রাখল, মানুষ নিজেকে সেই আপন নিবাস থেকে নির্বাসিত করল। নিজেকে বাস্তুচ্যুত করল। প্রকৃতি-বিয়োগ করে এক অপ্রাকৃতিক পরিবেশে নিজেকে থিতু করার চেষ্টা করল। এবং করেই যাচ্ছে। এটা আত্মঘাত। প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্যে যারা আছে, কই, তারা তো এমন রোগেশোকে মরে না। কিন্তু আপনার পালিত গরুর ম্যাড কাউ হয়। মুরগির ম্যালেরিয়া হয়। মানুষের সাথে প্রাণীকুলের আরো যারা দেশান্তরী হয়েছে, তাদের ওষুধ লাগে। দু-দশ বছরে নতুন জেনারেশনের এন্টিবায়োটিক লাগে। নিজেকে মারার এই ফন্দি মানুষ নিজেই করেছে।”

করোনা হচ্ছে তেমন এক ফন্দি, যার ভয়ে সারাবিশ্ব ঘরবন্দী। অসীম ক্ষমতাবান শাসক, মিথ্যাবাদী নেতা, দাপুটে ব্যবসায়ী, জোচ্চর কর্পোরেট, বেপরোয়া জনতা সবাই তটস্থ। সকলেই অদৃষ্টের দিকে তাকিয়ে আছে। অথচ রোগের উৎপত্তি যেখানে, প্রতিষেধকও সেখানে,—সহজ এই বিষয়টা মেনে চললে পৃথিবী অনেক সহজ হতো। কিন্তু মানুষ শিখেছে সভ্যতা, জ্ঞান-বিজ্ঞান আর উন্নয়নের অর্থ প্রকৃতিকে উপেক্ষা করা। তাছাড়া রোগের সাথে প্রতিষেধক, ব্যবসা, নগদ লাভ ক্ষতির হিসাব। জীবন শুধুই সংখ্যা।

তাই মানুষ বেপোরোয়া হয়ে প্রকৃতি সাবাড় করে কৃষি জমি বাড়াচ্ছে। প্রকৃতি জ্বালাচ্ছে-কাটছে। মাটি খুঁড়ে তুলে আনছে ভূগর্ভস্থ পানি, পাথর, তেল, গ্যাসসহ বহু খনিজ। মাটি, পানি, বায়ু ও সমুদ্র দূষণ করেছে। ফলাফল, চিরতরে হারিয়ে গেছে বহু বন্য প্রাণী, পাখি, লতাগুল্ম, পশু ও কীট পতঙ্গ। ভারসাম্যহীন হয়েছে প্রকৃতি ও এর জীবনচক্র।

সৃষ্টির সেরা জীব দাবি করলেও, বাস্তবে প্রাণ ও প্রকৃতির একমাত্র শত্রু মানুষ। উন্নয়ন ও প্রকৃতির কোনো বিরোধ না থাকলেও, উন্নয়নের প্রথম বলি পরিবেশ এবং প্রতিবেশ। প্রকল্পগুলো এমনভাবে নেওয়া হয়, যেখানে প্রকৃতি রক্ষার সুযোগ নেহাতই কম। ক্ষতিপূরণ হিসেবে সরকারগুলো প্রচুর গাছ লাগায় বটে। কিন্তু একমাত্র গাছই যে প্রকৃতি নয় তা কে বোঝাবে? শতবছর ধরে গড়ে ওঠা ইকোসিস্টেম কি শুধু গাছে পূরণ হয়?

অন্যদিকে মানুষসৃষ্ট সিস্টেমেও প্রচুর অন্যায়, জুলুম, বৈষম্য এবং যন্ত্রণার গল্প লিপিবদ্ধ। ঘুষ, দুর্নীতি, জুলুম, অনাচারে ব্যস্ত মানুষ। এর মূল্যও কোনো না কোনোভাবে প্রকৃতিকেই দিতে হচ্ছে। সবমিলিয়ে মানুষের সমষ্টিগত পাপ এত বেশি যে কয়েক শতাব্দী প্রায়শ্চিত্ত করলেও তা শোধ হবার নয়। অতএব রোগবালাই, মহামারি, ঝড়, বন্যা, ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতেই হবে। এড়ানোর সুযোগ নেই।

এই মানুষ জ্ঞান-বিজ্ঞান, আবিষ্কারের দাবি ফলাও প্রচার করে। কিন্তু কী হারিয়েছে সে কথা বলে না। একসময় মানুষ খালি চোখে, প্রকৃতিলদ্ধ জ্ঞান দিয়েই প্রকৃতিকে বুঝত। আকাশের দেখেই বলতে পারত, দিনটি কেমন হবে। এখন ওয়েদার অ্যাপ লাগে। বাড়ির গৃহিণী দাঁতের নিচে শস্যদানা ফেলে বলতে পারত, বীজে ফসল হবে কিনা। এখন পরীক্ষাগারের সনদকৃত বীজ লাগে। অর্থাৎ মানুষ উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া জ্ঞান দিয়েই প্রকৃতিকে বুঝত। কিন্তু সেই জ্ঞানে বিশ্বাস না রাখায় প্রকৃতি এখন মানুষের কাছে গোলকধাঁধা।

মানুষ কি টিকবে? না অন্যান্য বহু প্রাণীর মতোই বিলুপ্ত হয়ে যাবে, তা সময় বলবে। তবে, পৃথিবী মানুষের জন্য ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে, আলামত স্পষ্ট। বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যেই নানা ভীতিকর তথ্য হাজির করেছে। অতএব মানুষের সময় এসেছে থামার। প্রকৃতির কাছে আত্নসমর্পণের।

বিশ্বের মানুষ একযোগে ঘরবন্দী এটা প্রকৃতির প্রতিশোধ। করোনা মানুষকে থামার এবং নতুন করে ভাবার সুযোগ দিয়েছে। যা কাজে লাগানো উচিত। প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন, মুনাফা এবং প্রতিযোগিতা নয়; সমঅধিকার আর ন্যায্যতার ভিত্তিতে সবার বাঁচার সনদ করা উচিত। ভোগবাদী ব্যবস্থার ফাটল ও বিপদগুলো স্পষ্ট। পৃথিবীর শাসকরা যদি এখনো বিপদ বুঝতে না পারে তাহলে মানুষের ভবিষ্যত অন্ধকার। করোনার চেয়েও ভয়ংকর মহামারি অথবা অন্য কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকা উচিত। তাই পৃথিবী ও এর প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় সাধারণ মানুষকেই ভূমিকা রাখতে হবে।

গত কয়েক দশকে মানুষ যেসব রোগ বালাইয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তার সবই এসেছে বন্য বা পোষ্য প্রাণীর কাছ থেকে। এইডস আফ্রিকান সবুজ বানর থেকে, সার্স বাঁদুর থেকে, মার্স উট থেকে, বার্ড ফ্লুর ফার্মের মুরগি থেকে, সোয়াইন ফ্লু শূকর থেকে, করোনা প্যাঙ্গোলিন থেকে। অনাদিকাল থেকেই ভয়ংকর সব ভাইরাস প্রকৃতি ও প্রাণীকুলের মধ্যে ছিল। কিন্তু মানুষ সংক্রমিত হয়েছে খুবই কম। এখন কেন হচ্ছে? কারণ মানুষ প্রাণীর আবাস ধ্বংস করায় তারা মানবালয়ে আসছে।

বিষয় হচ্ছে, প্রকৃতি ও তার অন্য প্রাণীকুলকে তাদের মতো থাকতে দিতে হবে। বন্ধ করতে হবে প্রকৃতি ধ্বংসের মহোৎসব। আমাজন, কঙ্গো রেইন ফরেস্ট, ব্লাক ফরেস্ট, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার রেইন ফরেস্ট, সেকা বা সুন্দরবনের মতো বিশ্বের সব প্রাকৃতিক অরণ্যগুলো রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে। যে কোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে বন্যপ্রাণী শিকার, পাচার, হত্যাসহ এর বাজার। জল, স্থলে থাকা সকল প্রাণী, গাছগাছালি, পাখপাখালি রক্ষায় বহুপক্ষীয় চুক্তি করতে হবে। বায়ু ও পানির দূষণ বন্ধ করতে হবে। শাসকদের এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করা পৃথিবীর প্রতিটি নাগরিকের অবশ্য কর্তব্য। ক্ষেপাটে নেতাদের হাতে নিজেদের ভবিষ্যত ছেড়ে দেবার মতো বোকামির ফল সকলেই বুঝতে পারছি।

সবশেষ, মানুষ নিজেকে রক্ষায় প্রাণপণ লড়াই করছে এবং শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবে। কিন্তু প্রকৃতি রক্ষার ঐতিহাসিক যে দায়িত্ব শাসকদের (মানুষ) কাঁধে এই বোধ না জন্মালে হেরে যাবে মানুষ। সেটা আজ বা কাল। প্রকৃতি ও মানুষ ভালোবাসে এমন মানবিক নেতৃত্ব দরকার পৃথিবীর। যারা ভাববে পৃথিবীর ওপর পিঁপড়ার যতটুকু অধিকার, ঠিক ততটাই মানুষের। উন্নয়ন আর প্রবৃদ্ধির হিসাব হবে প্রকৃতিকে রক্ষা করে। যেখানে মানুষ প্রকৃতির সন্তান হয়ে থাকবে, নিয়ন্ত্রক নয়।

প্রকৃতি! কিছুটা সময় পেয়েছো সামলে নাও, যতটা পারো।
মানুষ! তুমি প্রায়শ্চিত্ত করো কয়েক শতাব্দীর।

   

খাবারের পর প্লেট ধোয়া কষ্ট? তাহলে এই কৌশল আপনার জন্য!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খাওয়ার বিষয়ে সবাই পটু। কিন্তু খাওয়ার পর থালা বাসন ধোয়াকে অনেকেই কষ্টকর কাজ মনে করেন। তাই দেখা যায় খাওয়ার পর অপরিষ্কার অবস্থায়ই থেকে যায় থালা বাসনগুলো। এবার এই কষ্ট কমাতে এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন এক ব্যক্তি।

সম্প্রতি এমন এক ভিডিও নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। 

হর্ষ গোয়েনকা নামে ভারতের এক শিল্পপতি তাঁর এক্স হ্যন্ডেলে (সাবেক টুইটার) ভিডিওটি শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, থালাবাসন পরিষ্কারের কাজ এড়াতে এক ব্যক্তি মজার এক কৌশল নিয়েছেন। এতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি খাবার রান্না করছেন। খাবার আগে তিনি প্লাস্টিক দিয়ে প্লেট, চামচ ও পানির গ্লাস মুড়িয়ে নিচ্ছেন।

শেয়ার করে তিনি মজাচ্ছলে লিখেছেন, "যখন আপনার থালা-বাসন ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকে না..."।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি অনেক বিনোদনের জন্ম দিয়েছে। যদিও কেউ কেউ প্লাস্টিকের মোড়ককে হাস্যকর মনে করেন এবং এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, 'পানি সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার করা হল মন্ত্র হল এমন কৌশল! তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার নতুন করে ভাবাচ্ছে।'

অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি আমার হোস্টেলের দিনগুলিতে এটি করেছি। আমাদের পানি সরবরাহ ছিল না এবং বারবার ধোয়ার কষ্টে এমন কৌশল নিয়েছি।'

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে পানি–সংকটের সমাধান হয়ে যাচ্ছে।’

;

জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রহস্যময় জলদানব জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে লক নেস সেন্টার। ২০২৩ সালের এই রহস্যময় প্রাণীর শব্দের উৎস ও একে খুঁজে পেতে হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হয়েছিল।

স্যার এডওয়ার্ড মাউন্টেনের ৯০তম অভিযানের অংশ হিসেবে আগামী ৩০ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত এই ‘লক নেস মনস্টার’কে খুঁজে পেতে অনুসন্ধান চালানো হবে।

রহস্যময় এই ‘লক নেস মনস্টার’কে ১৯৩৪ সালে প্রথম দেখা যায়। এ পর্যন্ত ১ হাজার ১শ ৫৬ বার দেখা গেছে বলে লক নেস সেন্টার সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে লক নেস সেন্টারের এমি টোড বলেছেন, আমরা আশা করছি, এই রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার গবেষকেরা আমাদের সহযোগিতা করবেন। তারা আমাদের জলদানবকে খুঁজে পেতে যথাযথ নির্দেশনা দেবেন এবং এ বিষয়ে সব কিছু জানাতে সাহায্য করবেন।

তিনি বলেন, আমাদের অভিযানের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি। আমরা আশা করছি, নাসার উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা জলদানব বিষয়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাবো।

রহস্যময় জলদানব খুঁজে পেতে স্বেচ্ছাসেবকের ভূপৃষ্ঠ থেকে যেমন নজর রাখবেন, তেমনি পানির ভেতরে অভিযান চালানোর বিষয়ে তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে ১৯৭০ দশক ও ১৯৮০ দশকের যে সব তথ্যচিত্র লক নেসের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে, সেগুলো যাচাই করে দেখা হবে।

তারপর জলদানব সম্পর্কে স্বেচ্ছাসেবকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন লক নেসের পরিচালক জন ম্যাকলেভারটি।

এ নিয়ে গবেষকদের নিয়ে একটি অনলাইন বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। যারা রহস্যময় এই জলদানবকে সচক্ষে দেখেছেন, তারাও এ লাইভ বিতর্কে অংশ নেবেন।

নেস হৃদ

যে হ্রদে জলদানব অবস্থান করছে বলে জানা গেছে, অভিযানের অভিযাত্রী দল নৌকায় করে সেখানে যাবেন। এসময় তাদের সঙ্গে থাকবেন গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধানকারী দলের ক্যাপ্টেন অ্যালিস্টার মাথিসন। তিনি লক নেস প্রজেক্টে একজন স্কিপার হিসেবে কাজ করছেন। তার সঙ্গে থাকবেন ম্যাকেন্না।

অনুসন্ধান কাজে ১৮ মিটার (৬০ ফুট) হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হবে। এটি দিয়ে রহস্যময় শব্দের প্রতিধ্বনি রেকর্ড করা হবে।

দ্য লক নেস সেন্টার ড্রামনাড্রোচিট হোটেলে অবস্থিত। ৯০ বছর আগে অ্যালডি ম্যাককে প্রথম রিপোর্ট করেছিলেন যে তিনি একটি জলদানব দেখেছেন।

লক নেস সেন্টারের জেনারেল ম্যানেজার পল নিক্সন বলেছেন, ২০২৩ সালে নেসিকে খুঁজে পেতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, জাপানসহ আরো অনেক দেশ অনুসন্ধান কাজে অংশ নিয়েছিল। এটি ছিল বড় ধরনের একটি অভিযান।

তিনি বলেন, অনুসন্ধানের সময় যে অদ্ভুত শব্দ শোনা গিয়েছিল, সে শব্দের কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়নি। তবে আমরা এবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে, জলদানব লক নেসের রহস্য উন্মোচন করতে পারবো।

এ বিষয়ে আমরা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করবো। এ রহস্যময় জলদানব লক নেস সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তাদের সহযোগিতা নেওয়া হবে। পল নিক্সন আরো বলেন, এবার আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত যে, জলদানবকে খুঁজে পেতে নতুন ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবো।

স্কটল্যান্ডের ইনভার্নেসের কাছে এক বিশাল হ্রদের নাম ‘নেস’। স্কটিশ গেলিক ভাষায় হ্রদকে লক (Loch) বলা হয়। আর উচ্চারণ করা হয় ‘লক’। গ্রেট ব্রিটেনের স্বাদুপানির সবচেয়ে একক বৃহত্তম উৎস এ হ্রদটির আয়তন ২২ বর্গ কিলোমিটার, গভীরতা ৮০০ ফুটেরও বেশি। এই হ্রদেই দেখা মিলেছিল সত্যিকারের জলদানব ‘লক নেসের’।

;

স্টেডিয়ামে খেলা দেখার জন্য অফিসে মিথ্যা বলা, শেষ রক্ষা হয়নি তার!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বহুল প্রত্যাশিত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) শুরু হয়েছে ২২ মার্চ থেকে। বিশ্বের নামিদামী সব খেলোয়াড়ের উপস্থিতি থাকায় বিশ্বজুড়ে এই লীগের চাহিদা তুঙ্গে। তাই এর দর্শক সংখ্যাও কত হতে পারে সেটা সহজেই অনুমেয়। যাদের সুযোগ সামর্থ্য থাকে তারা স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখেন আর যাদের সুযোগ না থাকে তারা টেলভিশনের পর্দায়ই বিনোদন খোঁজেন।

সম্প্রতি, এই লীগের একটি ম্যাচ স্টেডিয়ামে দেখতে গিয়ে অদ্ভুত এক কাণ্ডের জন্ম দিয়েছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরের নেহা নামে এক নারী ভক্ত। ওইদিন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও লখৌন সুপার জায়ান্টসের মধ্যে ম্যাচ চলছিল। সেই খেলা মাঠে বসে দেখতে তিনি পারিবারিক সমস্যার কথা বলে আগেই অফিস থেকে বের হয়ে যান।

তারপর যথারীতি সে মাঠে বসে খেলা উপভোগ করছিল। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে অন্য জায়গায়। খেলা চলার এক পর্যায়ে তাকে টিভি স্ক্রিনে দেখতে পায় তার অফিসের বস।

পরে এই ঘটনাটির একটি ভিডিও তিনি তার ইন্সটাগ্রাম একাউন্টে শেয়ার করেন। সেখানে তিনি পুরো বিষয়টি নিয়ে খোলাসা করেন।

ওই ভিডিওতে নেহা বলেন, অফিস থেকে পারিবারিক সমস্যার কথা বলে মাঠে এসে খেলা দেখেছি। আমি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর একজন ভক্ত। কিন্তু টিভি স্ক্রিনে আমার বস আমাকে দেখে ফেলে। পরে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন আমি কোন দলের সমর্থক হিসেবে খেলা দেখছি। আমি বলেছি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।

এরপর বস বলেন, তাহলে আপনি নিশ্চয় গতকাল খুব অসন্তুষ্ট ছিলেন। ওরা ফিল্ডিংয়ে একটি ক্যাচ মিস করার সময় আপনাকে খুব উদ্বিগ্ন চেহারায় দেখেছি। ১৬.৩ ওভারে যখন কিপার ক্যাচ মিস করলো, তখন।

হাতেনাতে ধরা পড়ে যাওয়ার পর নেহা স্বীকার করে নেন, ওটা তিনিই ছিলেন। বলেন, হ্যাঁ, অনুজ রাওয়াত ক্যাচ মিস করেছিল।

এরপর নেহার বস বলেন, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য ক্যামেরায় আপনাকে দেখিয়েছিল। আর তাতেই আমি চিনে ফেলেছি। তাহলে এটাই ছিল গতকাল দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার কারণ।

এরপর তিনি একটি হাসির ইমোজি দিয়ে কথপোকথন শেষ করেন।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর রাতারাতি সেটি ভাইরাল হয়ে যায়।

পোস্টের নিচে অনেকেই নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

একজন লিখেছেন, এটা ঠিক আছে। ম্যানেজারের উচিত কর্মচারীকে স্বাধীনতা প্রদান করা। যাতে সে সত্য বলতে পারে বা নিজের জীবনকে স্বাধীনভাবে উপভোগ করতে পারে।

আরেকজন লিখেছেন, আপনাকে এর জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত করা উচিত। একে তো আপনি অফিস থেকে মিথ্যা কথা বলে বের হয়েছে আবার নিজেদের ব্যক্তিগত কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন।

;

নওগাঁয় কালের সাক্ষী কয়েক শ বছরের পুরোনো বটগাছ



শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামে বট ও পাকুড় গাছের মেল বন্ধন প্রায় ৩০০ বছরের অধিক সময়ের। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম কালের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে রহস্যময় এই বট গাছটি। প্রায় ৫ থেকে ৬ একর জমির ওপরে শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এই পুরাতন বটগাছটি।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বট ও পাকুর মিলে বিশাল জায়গাজুড়ে কাল্পনিক এক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে। বট গাছের কাণ্ড থেকে কাণ্ড শাখা থেকে প্রশাখা মাটিয়ে লুটে পড়ে আরেক বটগাছের জন্ম দিয়েছে। কাণ্ডগুলো দেখলে বোঝার উপায় নেই যে এটির মূল শাখা কোনটি। লতা থেকে মাটিতে পড়ে সৃষ্টি হয়েছে আরেকটি বটগাছ এভাবে অনেকটা জায়গাজুড়ে এক অন্যরকম সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়েছে স্থানটি। বটগাছের নিচে ও পাশে রয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কালি মন্দির যেখানে কয়েকদিন পর পর বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেন তারা।

মুরাদপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা গৌরাঙ্গ সাহা ( ৫০) এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আসলে এই গাছটির সঠিক বয়স কত সেটি আমরা কেউ জানিনা। আমার বাবা-দাদা তারাও এখানে পূজা করতেন তবে তারা আমাদেকে সঠিক বয়স বলতে পারেনি। আমার দাদার মুখে শুনেছি উনার ছোটবেলাতে সেখানে গিয়ে খেলাধুলা করতেন সে সময় গাছটি ঠিক এমন-ই ছিল। তবে অনুমান করা যায়, এই গাছের বয়স প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ বছরের অধিক হতে পারে।

একই গ্রামের গৃহবধূ লাইলী বেগম ( ৫৫) বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় ৩০ বছর হলো আর তখন থেকেই এই গাছটি দেখে আসছি। বাড়ি কাছে হওয়ায় প্রতিদিন আশেপাশে আসতে হয় বিভিন্ন কাজে। মূল গাছটি আমরা অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। একটা গাছ থেকে এতগুলো গাছের সৃষ্টি হয়েছে দেখতে ভালোই লাগে। তবে যদি এটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে আরো কয়েকশ বছর টিকবে বলে মনে করি।

হালঘোষপাড়া থেকে আসা রায়হান নামের এক দর্শনার্থী বলেন, শুনেছিলাম এখানে অনেক পুরাতন বটগাছ আছে আজকে দেখতে আসলাম। চারিদিকে ছড়িয়ে গেছে এমন বটগাছ আমাদের এলাকায় নেই। দেখে খুব ভালো লাগছে এখন থেকে মাঝেমধ্যেই আসব।


কল্পনা রানী ( ৪৮) বলেন, আমার স্বামীর বাবার মুখ থেকে শুনেছি এটির বয়স প্রায় ৩০০ বছরের অধিক। কিছুদিন পর পর এখানে পূজা হয় বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসে পূজা দেয়। এমন সুন্দর বটগাছ আমি কোনোদিন দেখিনি।

বিমল সাহা নামের এক শিক্ষার্থী জানান, আমরা প্রতিদিন আমরা এখানে এসে ক্রিকেট খেলি। এতো পুরাতন একটি বটের গাছ দেখতে পেয়ে আমাদের খুব ভালো লাগে।

এ বিষয়ে নওগাঁ সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এনায়েতুস সাকালাইন বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রাকৃতিকভাবে একেকটা উদ্ভিদের আয়ু একেক রকম হয়ে থাকে সেরকম বটগাছ দীর্ঘজীবি উদ্ভিদ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো কোনো জায়গায় ৫০০ বছর বা অধিক সময়ের বেশি বেঁচে থাকে। এই উদ্ভিদগুলোর অভিযোজন ক্ষমতা অনেক বেশি ও পরিবেশের সাথে এদের খাপখাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতাও বেশি এবং যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশে এরা মোকাবিলা করতে সক্ষম। বটগাছ গুলো বেশি পানি না পেলেও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে আবার খুব বেশি তাপমাত্রা বা তাপমাত্রা নিচে নেমে গেলেও এ ধরনের উদ্ভিদ সে সময় টিকে থাকতে পারে সেজন্য অনেক সময় বিল্ডিং বাড়ির দেয়ালেও এদের বিস্তার দেখা যায়।

তিনি আরও বলেন, বট গাছগুলোর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে সেটি হলো ওপরের দিকে একটু বেড়ে অনেকদিকে বিস্তার লাভ করে বেশ বড় জায়গা দখল করে তখন এই উদ্ভিদগুলোর ওপরের অংশের ভার বহন করার জন্য ঠেসমূল গঠন করে তারা। মূল কাণ্ড থেকে আস্তে আস্তে মাটিতে ঠেসমূল নেমে আসে তখন ধীরে ধীরে মোটা হতে থাকে। মূল যে কাণ্ডটা তার থেকে বয়সের সাথে সাথে আরো তৈরি হয় যাতে গাছের ভার বহন করতে সক্ষম হয় এবং এভাবে বিশাল জায়গাজুড়ে একে একে বিস্তার লাভ করে কাণ্ডগুলো। বটগাছে এ ধরনের কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যায় কিন্তু পাকুড় জাতীয় গাছে কম লক্ষ্য করা যায়।

;