“সত্যিকার বিপদ হলো বৈশ্বিক অনৈক্য”



অনুবাদ: আহমেদ দীন রুমি
অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

  • Font increase
  • Font Decrease

ইউভাল নোয়াহ হারারি বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত চিন্তকদের মধ্যে অন্যতম। ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন ইজরায়েলে। ২০১৪ সালে প্রকাশিত ‘সেপিয়েন্স: আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব হিউম্যানকাইন্ড’ বইয়ের জন্য বিশ্বব্যাপী বিশেষভাবে আলোচিত হন। তারপর বহু বই ও জার্নাল প্রকাশিত হয়েছে। ইতিহাসবিদ হিসাবে সুপরিচিত হলেও তার কাজের মধ্যে মূলত ব্যক্তিস্বাধীনতা, সচেতনতা, বুদ্ধিমত্তার ছাপ স্পষ্ট।

করোনা মোকাবিলায় বৈশ্বিক সংহতির প্রয়োজনীয়তা উঠে এসেছে হারারির আলোচনায়। সম্প্রতি ইউনেস্কো কুরিয়ারে সাক্ষাৎকার দেন ইসরায়েলি ঐতিহাসিক এবং সেপিয়েন্স, হোমো ডিউস ও টুয়েন্টিওয়ান লেসন ফর টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি বইয়ের লেখক ইউভাল নোয়াহ হারারি। বিশ্লেষণ করেন সাম্প্রতিককালের করোনা ভাইরাস স্বাস্থ্য সংকটের ফলাফল কেমন হতে পারে। তুলে ধরেন আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা এবং দেশগুলোর মধ্যে পারস্পারিক তথ্য বিনিময়ের প্রয়োজনীয়তাকে।


ইউনেস্কো: অতীতের স্বাস্থ্য মহামারিগুলো থেকে বর্তমান বৈশ্বিক সংকটটি কিভাবে আলাদা? এটা কী জানান দেয়?
ইউভাল নোয়াহ হারারি: আমি নিশ্চিত না এটি আমাদের সামনে আসা সবচেয়ে ব্যাপক বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকট কিনা। ১৯১৮-১৯ সালের ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারি খারাপ ছিল; সম্ভবত এইডস মহামারিও। আগের যুগের মহামারিগুলোও ছিল নিশ্চিতভাবেই ভয়াবহ। মহামারির সেই ধারণা অনুযায়ী, এটা বেশ হালকাই। ১৯৮০-র দশকে কেউ এইডসে আক্রান্ত হবার অর্থ ছিল মৃত্যু। ব্ল্যাক ডেথ (ইউরোপকে বিধ্বস্ত করে দেওয়া ১৩৪৭ থেকে ১৩৫১ সাল অব্দি বিস্তৃত প্লেগ) কেড়ে নিয়ে নিয়েছে পৃথিবীর এক-চতুর্থাংশ এবং সংক্রমিতদের অর্ধেক মানুষ। ১৯১৮ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জায় কিছু দেশে মারা গেছে জনসংখ্যার ১০%। বিপরীতভাবে, কোভিড-১৯-এ মৃত্যু ঘটছে সংক্রমণের মাত্র ৫%। কোনো বিপদজনক মিউটেশন না ঘটলে কোনো দেশেই মৃত্যু ১% এর বেশি হবে না।

তদুপরি, গত দিনগুলোর বিপরীতে বর্তমানে আমাদের আছে মহামারি মোকবিলায় প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক জ্ঞান এবং প্রযুক্তিগত যন্ত্রপাতি। ব্ল্যাক ডেথ আঘাত হানার সময় মানুষ ছিল একান্ত সহযোগিতাহীন। বের করতে পারেনি কী তাদের মৃত্যুর কারণ কিংবা কী করা যেতে পারে। ১৩৪৮ সালে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল বিভাগ বিশ্বাস করতো মহামারির কারণ জ্যোতির্বিদ্যা-সংক্রান্ত দুর্ভাগ্য। একুয়ারিয়াসে তিন গ্রহের মিলনের কারণে ঘটে প্রাণঘাতী বায়ুদূষণ। আর কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের পর মহামারির জন্য দায়ী ভাইরাসকে সঠিকভাবে সনাক্তকরণ, জিনোম সিকুয়েন্স এবং নির্ভরযোগ্য টেস্ট বের করতে লেগেছে মাত্র দুই সপ্তাহ। আমরা জানি মহামারি থামাতে হলে আমাদের কী করতে হবে। এক বা দুই বছরের মধ্যে হয়তো ভ্যাকসিনও পেয়ে যাব।

যাহোক, কোভিড-১৯ কেবল স্বাস্থ্য সংকটই না। রয়েছে ব্যাপক অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক জের। আমি ভাইরাসের চেয়ে বেশি শঙ্কিত মানবজাতির ভেতরের দানব- লোভ, ঘৃণা, অজ্ঞতাকে নিয়ে। যদি মানুষ মহামারির জন্য বিদেশি আর সংখ্যালঘুদের দোষারূপ করে; যদি লোভী ব্যবসায়ীরা কেবল নিজেদের মুনাফার কথা ভাবে এবং যদি আমরা সকল কিসিমের ষড়যন্ত্রতত্ত্ব বিশ্বাস করি; তাহলে এই মহামারি কাটিয়ে ওঠা আরো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। উপরন্তু ভবিষ্যৎ পৃথিবী দূষিত হয়ে থাকবে ঘৃণা, লোভ এবং অজ্ঞতার মাধ্যমে। বিপরীতভাবে, যদি মহামারির প্রতিক্রিয়ায় আমরা বৈশ্বিক সংহতি এবং বিনয় দেখাতে পারি এবং যদি ষড়যন্ত্রতত্ত্বের চাইতে বিজ্ঞানের ওপর বিশ্বাস রাখি; তবে নিশ্চিত আমরা কেবল এই সংকটই কাটিয়ে উঠব না, হয়ে উঠব আরো শক্তিশালী।

ইউনেস্কো: সামাজিক দূরত্ব কিভাবে আদর্শ হবে? সমাজে এর পরবর্তী প্রভাব কী?
ইউভাল নোয়াহ হারারি: সংকটের সময়ে কতিপয় সামাজিক দূরত্ব আবশ্যিক। ভাইরাসের বিস্তার ঘটে আমাদের মানবিক প্রবৃত্তিকে কাজে লাগিয়েই। আমরা সামাজিক জীব। বিশেষত দুঃসময়ে যোগাযোগ পছন্দ করি। বন্ধু, আত্মীয় কিংবা প্রতিবেশী অসুস্থ হয়ে গেলে সহানুভুতি জেগে উঠে। আমরা কাছে যেতে এবং সাহায্য করতে চাই। ভাইরাস ঠিক এই প্রবৃত্তিকেই ব্যবহার করছে। এভাবেই ছড়াচ্ছে। সুতরাং এখানে হৃদয় দিয়ে না; মাথা দিয়ে কাজ করতে হবে। কঠিন সময় সত্ত্বেও কমিয়ে আনতে হবে পারস্পারিক যোগাযোগ। যেখানে ভাইরাস মনহীন জেনেটিক তথ্য মাত্র; সেখানে মানুষের রয়েছে বিচারবুদ্ধি। আমরা পরিস্থিতি যৌক্তিকভাবে বিশ্লেষণ করতে এবং আচরণের পরিবর্তন ঘটাতে পারি। আমি বিশ্বাস করি, একবার এই সংকট শেষ হয়ে গেলে মানুষের মৌল প্রবৃত্তিতে দীর্ঘস্থায়ী কোনো প্রভাব পড়বে না। তখনও আমরা সামাজিক জীবই থাকব। তখনো ভালোবাসব যোগাযোগ। বন্ধু এবং আত্মীয়ের সহযোগিতায় আসব তখনও।

উদাহরণস্বরূপ, এইডসের সময়ে এলজিবিটি সংস্থার ভূমিকা উল্লেখ করা যায়। এটি একটি ভয়াবহ মহামারি ছিল। সমকামীদের প্রায়শ ত্যাগ করল রাষ্ট্র। তারপরেও তারা বিচ্ছিন্ন হয়নি; বরং ঘটল উল্টোটা। সংকটের চূড়ান্ত মুহূর্তে অসুস্থদের চিকিৎসায় নতুন বহু সংস্থা প্রতিষ্ঠা করতে স্বেচ্ছাসেবা প্রদান করল এলজিবিটি। কাজ করল নির্ভরযোগ্য তথ্য সরবরাহ করতে এবং রাজনৈতিক অধিকার আদায় করতে। এইডস মহামারির শেষাশেষি ১৯৯০-এর দিকে এলজিবিটি সংস্থাগুলো অনেক দেশেই আগের চেয়ে শক্তিশালী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হলো।

ইউনেস্কো: সংকটের পরে বৈজ্ঞানিক এবং তথ্যগত সহযোগিতাকে আপনি কিভাবে দেখেন? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউনেস্কো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে চিন্তার মুক্ত প্রবাহ দ্বারা বৈজ্ঞানিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সহযোগিতাকে অগ্রসর করার জন্য। এই সংকটের পরিণামে ‘চিন্তার মুক্ত প্রবাহ’ এবং দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা কি সুদৃঢ় হতে পারে?
ইউভাল নোয়াহ হারারি: ভাইরাসের বিপক্ষে আমাদের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো আমরা কার্যকরভাবে সহযোগিতা করতে সক্ষম। চীনের একটা ভাইরাস এবং যুক্তরাষ্ট্রের একটা ভাইরাস কৌশল বিনিময় করতে পারে না—কিভাবে মানুষকে সংক্রমিত করতে হয়। চীন কিন্তু করোনাভাইরাস এবং তার মোকাবিলা নিয়ে মূল্যবান কিছু শেখাতে পারে যুক্তরাষ্ট্রকে। এর বাইরেও চীন বিশেষজ্ঞ এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি পাঠিয়ে সরাসরি সহযোগিতা করতে পারে। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করতে পারে অন্যান্য দেশগুলোকে। ভাইরাস এরকম কিছু করতে পারবে না। সহযোগিতার সমস্ত প্রকারের মধ্যে তথ্য বিনিময় খুব সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যথার্থ তথ্য ছাড়া আপনি কিছুই করতে পারবেন না। নির্ভরযোগ্য তথ্য ছাড়া সম্ভব না ঔষধ এবং ভ্যাক্সিনের অগ্রগতি। এমনকি সঙ্গনিরোধের জন্যও তথ্য দরকার তথ্য। রোগ কিভাবে ছড়ায়, তাই-ই যদি আপনি না বোঝেন; তবে লোকজনকে কিভাবে এর বিরুদ্ধে কোয়ারেন্টিনে রাখবেন?

উদাহরণস্বরূপ, এইডস আইসোলেশনের চেয়ে কোভিড-১৯-এর আইসোলেশন ভিন্ন ধরনের। এইডসের বিরুদ্ধে আইসোলেশনের জন্য কেবল প্রয়োজন ছিল সঙ্গমকালে কনডমের ব্যবহার। এইচআইভি পজিটিভ এবং নেগেটিভ মুখোমুখি কথাবার্তা কিংবা হাত মেলানো এমনকি কোলাকুলিতেও সমস্যা ছিল না। কোভিড-১৯-এর গল্প পুরোপুরি আলাদা। কোনো মহামারিতে নিজেকে সঙ্গরোধে নেওয়ার জন্য প্রথমেই নির্ভরযোগ্যভাবে জানা প্রয়োজন মহামারি কিভাবে ছড়ায়। এটা কি ভাইরাস নাকি ব্যকটেরিয়া? এটা রক্তে প্রবাহিত হয় নাকি নিঃশ্বাসে? এটা কি শিশুদের জন্য বিপদজনক নাকি বয়স্কদের? ভাইরাসের স্ট্রেইন কি কেবল একটাই নাকি অনেকগুলো মিউট্যান্ট স্ট্রেইন আছে?

সাম্প্রতিক কালে, একনায়ক এবং পপুলিস্ট রাজনীতিবিদেরা কেবল তথ্যের মুক্ত প্রবাহকেই রদ করে দেয়নি। বিজ্ঞানের প্রতি জনগণের আস্থাকেও নাজুক করে দিয়েছে। কোনো কোনো রাজনীতিবিদ তো বিজ্ঞানীদের আখ্যা দিয়েছে মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন নিষ্কর্মা অভিজাত হিসাবে। রাজনীতিবিদেরা তাদের অনুসারীদের নিষেধ করলেন জলবায়ু এমনকি ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস করতে। পপুলিস্ট সংবাদগুলো কতটা ভয়ঙ্কর তা বর্তমানে প্রত্যেকের কাছে স্পষ্ট। সংকটের সময়ে প্রয়োজন তথ্যের উন্মুক্ত প্রবাহ। প্রয়োজন জনতা যেন রাজনৈতিক বক্তৃতাবাজদের চেয়ে বৈজ্ঞানিক বিশেষজ্ঞদের ওপর বেশি আস্থা রাখে। সৌভাগ্যক্রমে, এই সংকটের সময়ে বেশির ভাগ মানুষ বিজ্ঞানের দিকে ঝুঁকেছে। ক্যাথোলিক চার্চ বিশ্বাসীদের নির্দেশ দিয়েছেন চার্চ থেকে দূরে থাকতে। ইসরায়েল বন্ধ করে দিয়েছে সিনাগগ। মসজিদে যাওয়া ব্যক্তিদের ইরান শাস্তি অব্দি দিচ্ছে। উপসনালয় এবং সকল উপদলও তাদের অনুষ্ঠান বাতিল করে দিয়েছে। আর এসবের কারণ বিজ্ঞানীরা হিসাব করেছেন এবং পরামর্শ দিয়েছে পবিত্র ভূমিগুলো বন্ধ করে রাখতে।

আশা করি, সংকট শেষ হয়ে গেলেও মানুষ বিশ্বাসযোগ্য বৈজ্ঞানিক তথ্যের প্রয়োজনীয়তা মনে রাখবে। যদি আমরা জরুরি সময়ে বিশ্বাসযোগ্য বৈজ্ঞানিক তথ্য পেতে চাই; তবে অবশ্যই স্বাভাবিক সময়কে ব্যবহার করতে হবে। বৈজ্ঞানিক তথ্য আসমান থেকে হাজির হয় না; কোনো এক মহাপুরুষের মন থেকেও বের হয় না। এটা নির্ভর করে স্বাধীন বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল এবং সংবাদপত্রের মতো প্রতিষ্ঠান। যে প্রতিষ্ঠান শুধু সত্য নিয়ে গবেষণাই করে না; একনায়ক সরকারের শাস্তির ভয় ছাড়াই সত্যটা মানুষকে বলতে পারে। এমন প্রতিষ্ঠান প্রস্তুতিতে লেগে যায় বছরের পর বছর। কিন্তু এটাই সঠিক। যে সমাজ নাগরিককে ভালো বৈজ্ঞানিক শিক্ষা প্রদান করে এবং স্বাধীন, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের দ্বারা পরিষেবা পায়; তা জনতার উপর তল্লাশি চালানো নিষ্ঠুর স্বৈরাচার অপেক্ষা ভালো মহামারি মোকাবিলা করতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, কিভাবে আপনি প্রতিদিন কোটি মানুষের হাত ধোয়াবেন? একটা উপায় হলো একজন পুলিশ নিয়োগ কিংবা প্রতি টয়লেটে ক্যামেরা রাখা। তারপর যেসব মানুষ হাত না ধোয় তাদের শাস্তি দেওয়া। আর অন্য উপায় হলো স্কুলগুলোতে মানুষকে ভাইরাস আর ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কে শেখানো। ব্যাখ্যা করে দেওয়া, সাবান জীবাণু দূর করতে পারে। তারপর আস্থা রাখা মানুষের ওপর। কী মনে হয়, কোন পদ্ধতিটা সবচেয়ে কার্যকরী?

ইউনেস্কো: নির্ভরযোগ্য তথ্য ছড়িয়ে দিতে দেশগুলোর একত্রে কাজ করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
ইউভাল নোয়াহ হারারি: কেবল স্বাস্থ্য খাতে না; সংকটের অর্থনৈতিক প্রভাব থেকে জনতার মানসিক অবস্থা অব্দি বিস্তৃত বিষয়েও বিশ্বাসযোগ্য তথ্য দেশগুলোর ভাগাভাগি করা প্রয়োজন। ধরা যাক, ক দেশ বর্তমানে বিতর্ক করছে কেমন লকডাউন জারি করা যেতে পারে। এর জন্য কেবল রোগের বিস্তারকে মাথায় রাখলে হবে না; রাখতে হবে লকডাউনের অর্থনৈতিক এবং মনস্তাত্ত্বিক মূল্যও। অন্যান্য দেশ আগেই এই টানাপোড়েন এবং বিভিন্ন নীতি পার করে এসেছে। নিজের ধারণা অনুযায়ী কাজ করা এবং ভুলের পুনরাবৃত্তি করার চেয়ে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, সুইডেন, ইতালি এবং যুক্তরাজ্যের গ্রহণ করা নীতি ও তার ফলাফল নিয়ে পরীক্ষা চালাতে পারে ক। এটা বরং আরো ভালো সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে। কিন্তু এটা তখনই সম্ভব, যখন সকল দেশ সৎভাবে কেবল সংক্রমণ এবং মৃত্যুর উপাত্তই জানাবে না; জানাবে তাদের জনগণের অর্থনৈতিক এবং মনস্তাত্ত্বিক অবস্থাও।

ইউনেস্কো: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উদ্ভব এবং প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর ব্যবহৃত প্রযুক্তিগত সমাধানগুলো সামনে আসছে। এই প্রেক্ষিতে বৈশ্বিকভাবে নৈতিক মূলনীতি এবং সহযোগিতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা কি এখনো সম্ভব?
ইউভাল নোয়াহ হারারি: যেহেতু প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলোও জড়িত হচ্ছে; বৈশ্বিকভাবে নৈতিক মূলনীতি এবং সহযোগিতা এখন আরো বেশি জরুরি। কিছু প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান হয়তো সংহতির চেয়ে লোভের বশেই জড়িত হবে। ফলে তাদের পরিচালনাও করতে হবে সতর্কভাবে। এমনকি যারা উদারভাবে কাজ করে যাচ্ছে; তারাও জনগণের কাছে দায়বদ্ধ না। সুতরাং তাদেরকে ব্যাপক ক্ষমতা অর্জন করতে দেওয়াটা বিপজ্জনক হয়ে উঠবে।

কথাটা নজরদারির ব্যাপারে আংশিকভাবে সত্য। বর্তমানে আমরা বিশ্বব্যাপী নতুন ধারার নজরদারির সাথে পরিচিত হচ্ছি। রাষ্ট্র এবং ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান—উভয়ক্ষেত্রেই। বর্তমান সংকট নজরদারির ইতিহাসে নয়া অধ্যায় যুক্ত করতে পারে। প্রথমত, এর মধ্য দিয়ে দেশগুলোতে ব্যাপক মাত্রায় নজরদারির সামগ্রী বৈধতা পাবে; যা আগে নাকচ করা হতো। দ্বিতীয়ত এবং আরো গুরুত্বপূর্ণ, এর মাধ্যমে নজরদারি ‘ওভার দ্য স্ক্রিন’ থেকে ‘আন্ডার দ্য স্ক্রিন’-এ রূপান্তরিত হবে। আগে সরকার এবং ঊর্ধ্বতনরা কেবল পর্যবেক্ষণ করত আপনার কাজ—কোথায় যাচ্ছেন, কার সাথে সাক্ষাৎ করছেন। বর্তমানে তারা আপনার শরীরের ভেতরের অবস্থা নিয়েও আগ্রহী। আপনার স্বাস্থ্যগত অবস্থা, শরীরের তাপমাত্রা, রক্তচাপ। এইসব বায়োমেট্রিক তথ্য সরকার এবং কর্তৃপক্ষকে আগের চেয়ে অনেক বেশি কিছু বলতে পারে।

ইউনেস্কো: নয়া নজরদারি ব্যবস্থা কিভাবে পরিচালিত হতে পারে; সে বিষয়ে কি আপনি কোনো নৈতিক পরিকল্পনার পরামর্শ দিতে পারেন?
ইউভাল নোয়াহ হারারি: আদর্শিকভাবে, গোয়েন্দা সংস্থা কিংবা প্রাইভেট কোম্পানির চেয়ে বিশেষ স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের দ্বারা এই নজরদারি পরিচালিত হতে পারে। আর স্বাস্থ্যসেবা কর্তৃপক্ষের উচিত শুধুমাত্র মহামারি প্রতিরোধের দিকে নজর দেওয়া; কোনো বাণিজ্যিক বা রাজনৈতিক মুনাফার দিকে না। আমি শঙ্কিত হয়ে পড়ি, যখন শুনি মানুষ কোভিড-১৯-কে যুদ্ধের সাথে তুলনা করছে এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য আহবান করছে নিরাপত্তা রক্ষীদের। এটা যুদ্ধ না; স্বাস্থ্য সংকট। এখানে হত্যা করার মতো কোনো মানুষ শত্রু নেই। পুরোটাই মানুষকে রক্ষা করার জন্য। যুদ্ধের সময়ে রাইফেল হাতে ছুটে যাওয়া যোদ্ধার ছবি গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে সে ছবি হবে কোনো নার্সের দ্বারা হাসপাতালের বিছানার চাদর বদলানোর। যোদ্ধা আর নার্সের চিন্তার রাস্তা আলাদা। আপনি যদি কাউকে দায়িত্বই দিতে চান; তাহলে যোদ্ধাকে না, নার্সকে দিন।

স্বাস্থ্যসেবা কর্তৃপক্ষের উচিত খুব অল্প পরিমাণে শুধু মহামারি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় উপাত্তগুলো সংগ্রহ করা। সরকার কিংবা বিশেষ করে পুলিশের কাছে তা হস্তান্তর করবে না। কোন প্রাইভেট কোম্পানির কাছেও না। নিশ্চিত করতে হবে যে, তথ্য সংগ্রহের মধ্যে দিয়ে ব্যক্তির ক্ষতি বা শোষণ করা হবে না। উদাহরণস্বরূপ, মানুষের চাকুরি কিংবা ইনস্যুরেন্স হারানোর মতো কিছু। স্বাস্থ্যসেবা কর্তৃপক্ষ এই তথ্যকে হয়তো বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যবহার করতে পারেন; যদি সেই গবেষণা মানবজাতির জন্য উন্মুক্ত থাকে। আর যদি তার থেকে কোনো প্রকার লাভ পুনরায় বিনিয়োগ করা হয় আরো উন্নত স্বাস্থ্যসেবার উদ্দেশ্যে। তথ্য সরবরাহের এত সীমাবদ্ধতার বিপরীতে ব্যক্তিকে নিজের সম্পর্কে তথ্যে নিয়ন্ত্রণ দেওয়া উচিত। তারা যেন নিজেদের তথ্য পরীক্ষা এবং তা থেকে সুবিধা পেতে পারে।

সবিশেষ, মহামারি মোকাবিলার নিরিখে এরকম নজরদারি ব্যবস্থা যখন জাতীয়করণ হয়; বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান একে অন্যকে সহযোগিতা করতে পারে। যেহেতু জীবাণু রাষ্ট্রীয় সীমানা মানে না। যদি আমরা বিভিন্ন দেশ থেকে প্রাপ্ত তথ্য একত্রিত না করি; তবে মহামারি সনাক্ত ও থামানো কঠিন হয়ে যাবে। স্বাধীন স্বাস্থ্যসেবা কর্তৃপক্ষ যদি রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থের বাইরে গিয়ে নজরদারি চালায়; তবে তার জন্য বৈশ্বিক সৌহার্দ্যে কাজ করা আরো সহজ হয়ে যাবে।

ইউনেস্কো: আপনি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় সাম্প্রতিক সময়ে আস্থার অবনতির কথা বলছেন। তাহলে ভবিষ্যতের বহুমূখী সহযোগিতায় পরিবর্তনের ব্যাপার কিভাবে দেখছেন?
ইউভাল নোয়াহ হারারি: আমি জানি না ভবিষ্যতে কী হবে। এটি নির্ভর করে বর্তমান সিদ্ধান্তের ওপর। দেশগুলো বিরল সম্পত্তির জন্য প্রতিযোগিতা কিংবা স্বার্থপর নীতি গ্রহণ করতে পারে। অথবা নিতে পারে পরস্পরের সহযোগিতা এবং বৈশ্বিক সৌহার্দ্যের ধারণা। এই সিদ্ধান্ত বর্তমান সংকট মোকাবিলা এবং ভবিষ্যতের আন্তর্জাতিক নীতিকে গঠন করবে। আমি আশা রাখি, দেশগুলো সংহতি ও সহযোগিতার সিদ্ধান্তটাই নেবে। বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে গভীর সহযোগিতা ছাড়া আমরা এই মহামারি থামাতে পারব না। এমনকি কোনো দেশ যদি কিছু সময়ের জন্য থামাতে সফলও হয়; যতক্ষণ অব্দি মহামারি ছড়াতে থাকবে, ততক্ষণ তার ফিরে আসার সক্ষমতা থামবে না। তারচেয়ে বড় কথা, ভাইরাস ক্রমাগত বিবর্তিত হয়। পৃথিবীর যে কোনো স্থানে ভাইরাসের একটা মিউটেশন আরো বেশি সংক্রামক এবং জীবনঘাতী হয়ে গোটা মানবজাতিকে হুমকিতে ফেলে দিতে পারে। একমাত্র যে পথে আমাদের রক্ষা করা যায় তা হলো, গোটা মানবজাতিকে রক্ষায় সাহায্য করা।

অর্থনৈতিক সংকটের জন্যও একই কথা প্রযোজ্য। যদি প্রতিটা দেশ কেবল নিজের লাভই প্রাধান্য দেয়; বৈশ্বিক অর্থনীতিতে তার ফলাফল হবে ভয়াবহ; যা আঘাত করবে সবাইকে। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি এবং জাপানের মতো ধনী দেশগুলোও একভাবে না একভাবে কাটিয়ে উঠবে। কিন্তু আফ্রিকা, এশিয়া এবং লাতিন আমেরিকার দেশগুলো পরিপূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়ে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র তার অর্থনীতিতে দুই ট্রিলিয়ন ডলার বরাদ্দ বহন করতে পারবে। ইকুয়েডর, নাইজেরিয়া কিংবা পাকিস্তানের তেমন সামর্থ্য নেই। আমাদের একটি বৈশ্বিক মুক্তি পরিকল্পনা প্রয়োজন।

দুর্ভাগ্যজনক ভাবে, আমাদের প্রয়োজনীয় শক্তিশালী বৈশ্বিক নেতৃত্ব বর্তমানে অনুপস্থিত। ২০১৪ সালের ইবোলা মহামারি এবং ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকটের সময় যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বনেতার ভূমিকা পালন করলেও বর্তমানে ত্যাগ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র কেবল নিজের স্বার্থ দেখে, তা ট্রাম্প প্রশাসন পরিষ্কার করে দিয়েছে। উপরন্তু পশ্চিম ইউরোপের সবচেয়ে কাছের মিত্রদেরকেও ত্যাগ করেছে। তারপরেও যুক্তরাষ্ট্র যদি কিছু বৈশ্বিক পরিকল্পনা নিয়ে সামনে আসে, কে তাকে বিশ্বাস করবে? কে অনুসরণ করবে? আপনি সেই নেতাকে অনুসরণ করবেন, যার নীতি ‘আগে আমি’?

কিন্তু প্রত্যেকটা সংকট একটা সুযোগও বটে। আশাজনকভাবে বর্তমান মহামারি মানবজাতিকে বুঝিয়ে দেবে, সত্যিকার বিপদ হলো বৈশ্বিক অনৈক্য। যদি সত্যিকার অর্থেই এই মহামারির কারণে বৈশ্বিক সহযোগিতা গভীর হয়; তা কেবল ভাইরাসের বিরুদ্ধেই বিজয় হবে না। বিজয় হবে জলবায়ু পরিবর্তন থেকে নিউক্লিয়ার যুদ্ধের মতো ভবিষ্যতের মানবজাতির জন্য সকল হুমকির বিরুদ্ধেও।

ইউনেস্কো: আপনি বললেন আমরা এখন যে সিদ্ধান্ত নেব তা আসছে-দিনে আমাদের সমাজে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে প্রভাব ফেলবে। এই সিদ্ধান্তগুলো কি এবং তা গ্রহণ করার দায়িত্ব কার?
ইউভাল নোয়াহ হারারি: আমরা অনেক সিদ্ধান্তের মুখোমুখি। এই সিদ্ধান্ত কেবল জাতীয়তাবাদী নিঃসঙ্গতা এবং বৈশ্বিক সংহতির না। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন মানুষ কি একনায়কতন্ত্রের উত্থানকে সমর্থন দেবে নাকি গণতান্ত্রিক পন্থায় জরুরি অবস্থার মোকাবিলা করবে? যখন সরকার বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা খরচ করে মুখ থুবড়ে পড়া ব্যবসাকে সাহায্য করতে; তারা কি বড় বড় কর্পোরেশনকে বাঁচাবে নাকি ছোট পারিবারিক ব্যবসাকে? মানুষ যেহেতু বাসা থেকে কাজ এবং অনলাইনে যোগাযোগের দিকে মনোযোগ দিয়েছে; এটা কি সংগঠিত শ্রমিকদের বিধ্বস্ত করবে? নাকি আমরা শ্রমিকদের অধিকার আরো ভালোভাবে সুরক্ষা দেব?

সবকিছুই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আমাদের জানতে হবে, আমরা কেবল স্বাস্থ্য সংকট না; রাজনৈতিক সংকটেও ভুগছি। গণমাধ্যম এবং নাগরিকদের উচিত হবে না নিজেদের মহামারি থেকে পুরোপুরি অমনোযোগী হওয়া। অসুস্থতার সর্বশেষ সংবাদ জানাটা গুরুত্বপূর্ণ। আজ কত মানুষ মারা গেল? কতজন আক্রান্ত? তার সাথে গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতির দিকেও লক্ষ্য রাখা এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গকে সঠিক কাজ করতে চাপ সৃষ্টি করা। নাগরিকের উচিত রাজনীতিবিদদের বৈশ্বিক সংহতির আদর্শে কাজ করতে চাপ দেওয়া। চাপ দেওয়া দোষারূপ না করে দেশগুলোর মধ্যে পারস্পারিক সহযোগিতা, তহবিলের সুষম বণ্টন এমনকি জরুরি অবস্থায় গণতন্ত্রের ভারসম্য নিয়ন্ত্রণের জন্য।

সবকিছু করার সময় এখনই। যাকেই আমরা আসছে-দিনের জন্য শাসনে বসাই বর্তমানের নেওয়া সিদ্ধান্ত উল্টানো যাবে না। আপনি যদি ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট হন; তার মানে এমন সময়ে অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন, যখন অনুষ্ঠান শেষ। বাকি আছে কেবল নোংরা থালা-বাসন ধোয়াটা। আপনি যদি ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট হন; আপনি দেখতে পাবেন পূর্ববর্তী সরকার বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিলি করে গেছে। ফেলে রেখে গেছে পাহাড় প্রমাণ ঋণ। পূর্ববর্তী সরকার ইতোমধ্যে চাকুরির বাজার পুনর্গঠন করেছেন। আপনি আবার গোড়া থেকে শুরু করতে পারবেন না। পূর্ববর্তী সরকার ইতোমধ্যে নয়া নজরদারির পত্তন ঘটিয়েছেন; রাতারাতি তা বিলুপ্ত করা যাবে না। সুতরাং ২০২১ সাল অব্দি অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। পর্যবেক্ষণ করুন, রাজনীতিবিদেরা এখন কী করছে।

   

খাবারের পর প্লেট ধোয়া কষ্ট? তাহলে এই কৌশল আপনার জন্য!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খাওয়ার বিষয়ে সবাই পটু। কিন্তু খাওয়ার পর থালা বাসন ধোয়াকে অনেকেই কষ্টকর কাজ মনে করেন। তাই দেখা যায় খাওয়ার পর অপরিষ্কার অবস্থায়ই থেকে যায় থালা বাসনগুলো। এবার এই কষ্ট কমাতে এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন এক ব্যক্তি।

সম্প্রতি এমন এক ভিডিও নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। 

হর্ষ গোয়েনকা নামে ভারতের এক শিল্পপতি তাঁর এক্স হ্যন্ডেলে (সাবেক টুইটার) ভিডিওটি শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, থালাবাসন পরিষ্কারের কাজ এড়াতে এক ব্যক্তি মজার এক কৌশল নিয়েছেন। এতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি খাবার রান্না করছেন। খাবার আগে তিনি প্লাস্টিক দিয়ে প্লেট, চামচ ও পানির গ্লাস মুড়িয়ে নিচ্ছেন।

শেয়ার করে তিনি মজাচ্ছলে লিখেছেন, "যখন আপনার থালা-বাসন ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকে না..."।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি অনেক বিনোদনের জন্ম দিয়েছে। যদিও কেউ কেউ প্লাস্টিকের মোড়ককে হাস্যকর মনে করেন এবং এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, 'পানি সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার করা হল মন্ত্র হল এমন কৌশল! তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার নতুন করে ভাবাচ্ছে।'

অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি আমার হোস্টেলের দিনগুলিতে এটি করেছি। আমাদের পানি সরবরাহ ছিল না এবং বারবার ধোয়ার কষ্টে এমন কৌশল নিয়েছি।'

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে পানি–সংকটের সমাধান হয়ে যাচ্ছে।’

;

জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রহস্যময় জলদানব জলদানব ‘লক নেস’কে খুঁজে পেতে নাসার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে লক নেস সেন্টার। ২০২৩ সালের এই রহস্যময় প্রাণীর শব্দের উৎস ও একে খুঁজে পেতে হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হয়েছিল।

স্যার এডওয়ার্ড মাউন্টেনের ৯০তম অভিযানের অংশ হিসেবে আগামী ৩০ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত এই ‘লক নেস মনস্টার’কে খুঁজে পেতে অনুসন্ধান চালানো হবে।

রহস্যময় এই ‘লক নেস মনস্টার’কে ১৯৩৪ সালে প্রথম দেখা যায়। এ পর্যন্ত ১ হাজার ১শ ৫৬ বার দেখা গেছে বলে লক নেস সেন্টার সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে লক নেস সেন্টারের এমি টোড বলেছেন, আমরা আশা করছি, এই রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার গবেষকেরা আমাদের সহযোগিতা করবেন। তারা আমাদের জলদানবকে খুঁজে পেতে যথাযথ নির্দেশনা দেবেন এবং এ বিষয়ে সব কিছু জানাতে সাহায্য করবেন।

তিনি বলেন, আমাদের অভিযানের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি। আমরা আশা করছি, নাসার উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা জলদানব বিষয়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাবো।

রহস্যময় জলদানব খুঁজে পেতে স্বেচ্ছাসেবকের ভূপৃষ্ঠ থেকে যেমন নজর রাখবেন, তেমনি পানির ভেতরে অভিযান চালানোর বিষয়ে তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। রহস্যময় জলদানবকে খুঁজে পেতে ১৯৭০ দশক ও ১৯৮০ দশকের যে সব তথ্যচিত্র লক নেসের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে, সেগুলো যাচাই করে দেখা হবে।

তারপর জলদানব সম্পর্কে স্বেচ্ছাসেবকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন লক নেসের পরিচালক জন ম্যাকলেভারটি।

এ নিয়ে গবেষকদের নিয়ে একটি অনলাইন বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। যারা রহস্যময় এই জলদানবকে সচক্ষে দেখেছেন, তারাও এ লাইভ বিতর্কে অংশ নেবেন।

নেস হৃদ

যে হ্রদে জলদানব অবস্থান করছে বলে জানা গেছে, অভিযানের অভিযাত্রী দল নৌকায় করে সেখানে যাবেন। এসময় তাদের সঙ্গে থাকবেন গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধানকারী দলের ক্যাপ্টেন অ্যালিস্টার মাথিসন। তিনি লক নেস প্রজেক্টে একজন স্কিপার হিসেবে কাজ করছেন। তার সঙ্গে থাকবেন ম্যাকেন্না।

অনুসন্ধান কাজে ১৮ মিটার (৬০ ফুট) হাইড্রোফোন ব্যবহার করা হবে। এটি দিয়ে রহস্যময় শব্দের প্রতিধ্বনি রেকর্ড করা হবে।

দ্য লক নেস সেন্টার ড্রামনাড্রোচিট হোটেলে অবস্থিত। ৯০ বছর আগে অ্যালডি ম্যাককে প্রথম রিপোর্ট করেছিলেন যে তিনি একটি জলদানব দেখেছেন।

লক নেস সেন্টারের জেনারেল ম্যানেজার পল নিক্সন বলেছেন, ২০২৩ সালে নেসিকে খুঁজে পেতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, জাপানসহ আরো অনেক দেশ অনুসন্ধান কাজে অংশ নিয়েছিল। এটি ছিল বড় ধরনের একটি অভিযান।

তিনি বলেন, অনুসন্ধানের সময় যে অদ্ভুত শব্দ শোনা গিয়েছিল, সে শব্দের কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করানো যায়নি। তবে আমরা এবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে, জলদানব লক নেসের রহস্য উন্মোচন করতে পারবো।

এ বিষয়ে আমরা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করবো। এ রহস্যময় জলদানব লক নেস সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে, তাদের সহযোগিতা নেওয়া হবে। পল নিক্সন আরো বলেন, এবার আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত যে, জলদানবকে খুঁজে পেতে নতুন ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবো।

স্কটল্যান্ডের ইনভার্নেসের কাছে এক বিশাল হ্রদের নাম ‘নেস’। স্কটিশ গেলিক ভাষায় হ্রদকে লক (Loch) বলা হয়। আর উচ্চারণ করা হয় ‘লক’। গ্রেট ব্রিটেনের স্বাদুপানির সবচেয়ে একক বৃহত্তম উৎস এ হ্রদটির আয়তন ২২ বর্গ কিলোমিটার, গভীরতা ৮০০ ফুটেরও বেশি। এই হ্রদেই দেখা মিলেছিল সত্যিকারের জলদানব ‘লক নেসের’।

;

স্টেডিয়ামে খেলা দেখার জন্য অফিসে মিথ্যা বলা, শেষ রক্ষা হয়নি তার!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বহুল প্রত্যাশিত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) শুরু হয়েছে ২২ মার্চ থেকে। বিশ্বের নামিদামী সব খেলোয়াড়ের উপস্থিতি থাকায় বিশ্বজুড়ে এই লীগের চাহিদা তুঙ্গে। তাই এর দর্শক সংখ্যাও কত হতে পারে সেটা সহজেই অনুমেয়। যাদের সুযোগ সামর্থ্য থাকে তারা স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখেন আর যাদের সুযোগ না থাকে তারা টেলভিশনের পর্দায়ই বিনোদন খোঁজেন।

সম্প্রতি, এই লীগের একটি ম্যাচ স্টেডিয়ামে দেখতে গিয়ে অদ্ভুত এক কাণ্ডের জন্ম দিয়েছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরের নেহা নামে এক নারী ভক্ত। ওইদিন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও লখৌন সুপার জায়ান্টসের মধ্যে ম্যাচ চলছিল। সেই খেলা মাঠে বসে দেখতে তিনি পারিবারিক সমস্যার কথা বলে আগেই অফিস থেকে বের হয়ে যান।

তারপর যথারীতি সে মাঠে বসে খেলা উপভোগ করছিল। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে অন্য জায়গায়। খেলা চলার এক পর্যায়ে তাকে টিভি স্ক্রিনে দেখতে পায় তার অফিসের বস।

পরে এই ঘটনাটির একটি ভিডিও তিনি তার ইন্সটাগ্রাম একাউন্টে শেয়ার করেন। সেখানে তিনি পুরো বিষয়টি নিয়ে খোলাসা করেন।

ওই ভিডিওতে নেহা বলেন, অফিস থেকে পারিবারিক সমস্যার কথা বলে মাঠে এসে খেলা দেখেছি। আমি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর একজন ভক্ত। কিন্তু টিভি স্ক্রিনে আমার বস আমাকে দেখে ফেলে। পরে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন আমি কোন দলের সমর্থক হিসেবে খেলা দেখছি। আমি বলেছি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু।

এরপর বস বলেন, তাহলে আপনি নিশ্চয় গতকাল খুব অসন্তুষ্ট ছিলেন। ওরা ফিল্ডিংয়ে একটি ক্যাচ মিস করার সময় আপনাকে খুব উদ্বিগ্ন চেহারায় দেখেছি। ১৬.৩ ওভারে যখন কিপার ক্যাচ মিস করলো, তখন।

হাতেনাতে ধরা পড়ে যাওয়ার পর নেহা স্বীকার করে নেন, ওটা তিনিই ছিলেন। বলেন, হ্যাঁ, অনুজ রাওয়াত ক্যাচ মিস করেছিল।

এরপর নেহার বস বলেন, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য ক্যামেরায় আপনাকে দেখিয়েছিল। আর তাতেই আমি চিনে ফেলেছি। তাহলে এটাই ছিল গতকাল দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার কারণ।

এরপর তিনি একটি হাসির ইমোজি দিয়ে কথপোকথন শেষ করেন।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর রাতারাতি সেটি ভাইরাল হয়ে যায়।

পোস্টের নিচে অনেকেই নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

একজন লিখেছেন, এটা ঠিক আছে। ম্যানেজারের উচিত কর্মচারীকে স্বাধীনতা প্রদান করা। যাতে সে সত্য বলতে পারে বা নিজের জীবনকে স্বাধীনভাবে উপভোগ করতে পারে।

আরেকজন লিখেছেন, আপনাকে এর জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত করা উচিত। একে তো আপনি অফিস থেকে মিথ্যা কথা বলে বের হয়েছে আবার নিজেদের ব্যক্তিগত কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন।

;

নওগাঁয় কালের সাক্ষী কয়েক শ বছরের পুরোনো বটগাছ



শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামে বট ও পাকুড় গাছের মেল বন্ধন প্রায় ৩০০ বছরের অধিক সময়ের। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম কালের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে রহস্যময় এই বট গাছটি। প্রায় ৫ থেকে ৬ একর জমির ওপরে শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এই পুরাতন বটগাছটি।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বট ও পাকুর মিলে বিশাল জায়গাজুড়ে কাল্পনিক এক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে। বট গাছের কাণ্ড থেকে কাণ্ড শাখা থেকে প্রশাখা মাটিয়ে লুটে পড়ে আরেক বটগাছের জন্ম দিয়েছে। কাণ্ডগুলো দেখলে বোঝার উপায় নেই যে এটির মূল শাখা কোনটি। লতা থেকে মাটিতে পড়ে সৃষ্টি হয়েছে আরেকটি বটগাছ এভাবে অনেকটা জায়গাজুড়ে এক অন্যরকম সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়েছে স্থানটি। বটগাছের নিচে ও পাশে রয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কালি মন্দির যেখানে কয়েকদিন পর পর বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেন তারা।

মুরাদপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা গৌরাঙ্গ সাহা ( ৫০) এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আসলে এই গাছটির সঠিক বয়স কত সেটি আমরা কেউ জানিনা। আমার বাবা-দাদা তারাও এখানে পূজা করতেন তবে তারা আমাদেকে সঠিক বয়স বলতে পারেনি। আমার দাদার মুখে শুনেছি উনার ছোটবেলাতে সেখানে গিয়ে খেলাধুলা করতেন সে সময় গাছটি ঠিক এমন-ই ছিল। তবে অনুমান করা যায়, এই গাছের বয়স প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ বছরের অধিক হতে পারে।

একই গ্রামের গৃহবধূ লাইলী বেগম ( ৫৫) বলেন, আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় ৩০ বছর হলো আর তখন থেকেই এই গাছটি দেখে আসছি। বাড়ি কাছে হওয়ায় প্রতিদিন আশেপাশে আসতে হয় বিভিন্ন কাজে। মূল গাছটি আমরা অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। একটা গাছ থেকে এতগুলো গাছের সৃষ্টি হয়েছে দেখতে ভালোই লাগে। তবে যদি এটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে আরো কয়েকশ বছর টিকবে বলে মনে করি।

হালঘোষপাড়া থেকে আসা রায়হান নামের এক দর্শনার্থী বলেন, শুনেছিলাম এখানে অনেক পুরাতন বটগাছ আছে আজকে দেখতে আসলাম। চারিদিকে ছড়িয়ে গেছে এমন বটগাছ আমাদের এলাকায় নেই। দেখে খুব ভালো লাগছে এখন থেকে মাঝেমধ্যেই আসব।


কল্পনা রানী ( ৪৮) বলেন, আমার স্বামীর বাবার মুখ থেকে শুনেছি এটির বয়স প্রায় ৩০০ বছরের অধিক। কিছুদিন পর পর এখানে পূজা হয় বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসে পূজা দেয়। এমন সুন্দর বটগাছ আমি কোনোদিন দেখিনি।

বিমল সাহা নামের এক শিক্ষার্থী জানান, আমরা প্রতিদিন আমরা এখানে এসে ক্রিকেট খেলি। এতো পুরাতন একটি বটের গাছ দেখতে পেয়ে আমাদের খুব ভালো লাগে।

এ বিষয়ে নওগাঁ সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এনায়েতুস সাকালাইন বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রাকৃতিকভাবে একেকটা উদ্ভিদের আয়ু একেক রকম হয়ে থাকে সেরকম বটগাছ দীর্ঘজীবি উদ্ভিদ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো কোনো জায়গায় ৫০০ বছর বা অধিক সময়ের বেশি বেঁচে থাকে। এই উদ্ভিদগুলোর অভিযোজন ক্ষমতা অনেক বেশি ও পরিবেশের সাথে এদের খাপখাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতাও বেশি এবং যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশে এরা মোকাবিলা করতে সক্ষম। বটগাছ গুলো বেশি পানি না পেলেও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে আবার খুব বেশি তাপমাত্রা বা তাপমাত্রা নিচে নেমে গেলেও এ ধরনের উদ্ভিদ সে সময় টিকে থাকতে পারে সেজন্য অনেক সময় বিল্ডিং বাড়ির দেয়ালেও এদের বিস্তার দেখা যায়।

তিনি আরও বলেন, বট গাছগুলোর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে সেটি হলো ওপরের দিকে একটু বেড়ে অনেকদিকে বিস্তার লাভ করে বেশ বড় জায়গা দখল করে তখন এই উদ্ভিদগুলোর ওপরের অংশের ভার বহন করার জন্য ঠেসমূল গঠন করে তারা। মূল কাণ্ড থেকে আস্তে আস্তে মাটিতে ঠেসমূল নেমে আসে তখন ধীরে ধীরে মোটা হতে থাকে। মূল যে কাণ্ডটা তার থেকে বয়সের সাথে সাথে আরো তৈরি হয় যাতে গাছের ভার বহন করতে সক্ষম হয় এবং এভাবে বিশাল জায়গাজুড়ে একে একে বিস্তার লাভ করে কাণ্ডগুলো। বটগাছে এ ধরনের কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যায় কিন্তু পাকুড় জাতীয় গাছে কম লক্ষ্য করা যায়।

;