কোভিড নিয়ে মুখোমুখি সমকালীন বুদ্ধিজীবী (২য় পর্ব)



অনুবাদ ও গ্রন্থনা: আহমেদ দীন রুমি
অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

  • Font increase
  • Font Decrease

মহামারিতে বেড়েই চলছে মৃত্যুর মিছিল। চীনের উহান থেকে যে যাত্রার শুরু হয়েছিল, তা এশিয়া ও ইউরোপকে ছাপিয়ে ল্যাটিন আমেরিকাকেও নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছে। ঠিক এই সময়ে করোনার প্রভাব এবং পরবর্তী বিশ্বব্যবস্থা নিয়ে কথা বলেছেন সমকালের বুদ্ধিজীবীরা। আজ থাকছে তার দ্বিতীয় কিস্তি।


কোভিড নিয়ে মুখোমুখি সমকালীন বুদ্ধিজীবী (১ম পর্ব)

ব্রিস্টল: মহামারির আগে বৈশ্বিক কাঠামো ছিল চরম রকম ভঙ্গুর। ভাইরাস যদি নাও দেখা দিত; কতিপয় কারণে অর্থনৈতিক ধস কিংবা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের মতো ঘটনাগুলোর ধাক্কা আছড়ে পড়ত। মহামারিতে পাশ্চাত্যের আধিপত্য হ্রাস, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিচ্ছিন্নতা ত্বরান্বিত হয়েছে। আসলে মৌলগতভাবেই দুনিয়ার অবস্থা বদলে গেছে। যদি চীন এবং পশ্চিমা দেশগুলোতে জন-নিয়ন্ত্রণের জন্য নজরদারি বৃদ্ধির ইস্যুটাকেও গণ্য করা হয়; তবে বাস্তব যোগাযোগ থেকে সরে এসে ভার্চুয়াল যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং অর্থনীতিতে সরকারের হস্তক্ষেপ—সব মিলিয়ে অনিবার্যভাবে বদল ঘটেছে পটভূমি।

জন গ্রে
এমিরিটাস অধ্যাপক, লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিক্স

প্রোগ্রেসিভ লিবারেলিজমের মতো সাম্প্রতিককালের কোনো চিন্তাই অতীতের নস্টালজিয়ায় ভুগছে না। অভ্যন্তরীণ এবং বহিঃস্থ—উভয় ক্ষেত্রেই লিবারেল প্রজেক্ট হলো স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী বৈশ্বিক শৃঙ্খলার পুনঃপ্রতিষ্ঠা। অন্তত অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেবার পূর্ব অব্দি। ভাইরাসের বয়ে আনা পয়গাম হলো—ভুলে যাও। হোক ভালো কিংবা মন্দ; সে পৃথিবী চিরতরেই চলে গেছে। চীন, রাশিয়া এবং ভারতের নেতারা বিষয়টা ধরতে পেরেছেন। পশ্চিমা নেতারা যাই করবেন, থাকবেন পর্যবেক্ষণে।


মিলান: আমাদের জেনারেশন যুদ্ধের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। এটা এমন যুদ্ধ, যেখানে ডাক্তারেরা থাকে ফ্রন্টলাইনে আর সেনাবাহিনী পেছনে কফিন বহনের জন্য। আমাদের নায়কেরা প্রতিদিন যুদ্ধ করছে। অনুরূপ দলত্যাগীরা ট্রেঞ্চ থেকে নিয়মের বাইরে চলে যাচ্ছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় আমাদের যুদ্ধের পরিস্থিতি জানানোর জন্য খবর আসে। অনেক ফ্যাক্টরি এই যুদ্ধের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহে রত। আমাদের জনগণের সবচেয়ে বড় অবদান হতে পারে ঘরে অবস্থান করা; যাতে সংক্রমণ ঘটতে না পারে।

ডেভিড ক্যাসালিজ্জো
ফাইভ স্টার মুভমেন্টের পুরোধা ব্যক্তিত্ব

নতুন যুগে প্রবেশ করেছি আমরা। যা কিছুকে অসম্ভব মনে করা হতো; তা এখন খুব স্বাভাবিক। গোটা ব্যবস্থায় ঝাঁকি দিয়ে শুরু হচ্ছে নয়া অর্থনীতির যুগ। যেমনটা হয়েছিল প্লেগের সময়ে। মধ্যযুগের পোপতান্ত্রিকতার ব্যর্থতায় মানুষ মনোযোগ দিয়েছিল বিজ্ঞাননির্ভরতার দিকে। আমরা আবিষ্কার করলাম এমন সব জায়গাও; ম্যাপে যেখানে ড্রাগনের কথা বলা থাকত। আবিষ্কার করলাম আমাদের চিন্তার চেয়েও বেশি কিছু।

এই মহামারি সমাজে নতুন ঝাঁকি। যেখানেই অসম্ভবকে দেখছি; যেখানেই ড্রাগনের আখ্যান প্রচলিত—তা এখন আবিষ্কার করার সময়।


ক্যামব্রিজ: কেউ কেউ ভবিষ্যদ্বাণী করার চেষ্টা করছে, মহামারি কী কী পরিবর্তন ঘটাবে। বাকিরা দেখছে, কী পরিবর্তন হওয়া উচিত। ভবিষ্যদ্বাণী আর প্রায়োগিক আলোচনা ভিন্ন ব্যাপার। এই স্বাভাবিকতার সংজ্ঞায়ন ভবিষ্যতে ভালো কিছু বয়ে আনবে না। বিশ্বায়ন আমাদের কতিপয়কে অগাধ সম্পদশালী করেছে। গড় আয় বৃদ্ধি, বৃহত্তর বৈষম্য এবং আর সেই সাথে জটিল অর্থনৈতিক সরবরাহ। বৈশ্বিক উষ্ণতা এবং মহামারি তো আছেই। একে কি স্বাভাবিক বলা যায়?

ওনোরা ও’ নেইল
এমিরেটাস অধ্যাপক, ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়

এক্সপোজার বাড়িয়ে দিতে পারে ব্যক্তিমালিকানাধীন পণ্য, মুনাফা এবং ব্যয়। কিন্তু বাজারকেন্দ্রিক ব্যবস্থায় জনগণকে প্রয়োজন অনুপাতে পণ্য দেওয়া সম্ভব না। দেওয়া সম্ভব না স্বাস্থ্য ও পরিবেশের নিরাপত্তা। জনগণের সম্পদ তদারকিতে আইনের শাসন ও যথার্থ ব্যবস্থাপনার মতো অনেক ধরনের প্রশ্নই উঠতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন সরকার এবং জনগণ—উভয়পক্ষের সক্রিয়তা। 

ভবিষ্যতে কেমন স্বাভাবিকতা হবে, সেই বাণী দেবার চেষ্টা না করে আমাদের উচিত ভবিষ্যতের জন্য কাজ করা। যেন জনগণের জানমাল এবং মানুষের ভবিষ্যত নিরাপদ হয়।


লস এঞ্জেলস্: নতুন শিক্ষাগুলোর মধ্যে প্রধান হলো জাতীয় পরিচয়ের বৃদ্ধি। বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য আমাদের বৈশ্বিক পরিচিতি নিয়েই নামা উচিত। কিন্তু মানুষ তা মোটেও করছে না।

জ্যারেড ডায়মন্ড
‘গানস্, জার্মস্ এন্ড স্টিল’ গ্রন্থের লেখক

বর্তমান সংকট অন্তত এটুকু বুঝিয়ে দিয়েছে, পৃথিবীর সকলেই এক নৌকার যাত্রী। বুঝতে পারছি কোভিড-১৯ আসলে জলবায়ু পরিবর্তন, পারমাণবিক অস্ত্র এবং বৈষম্যের মতোই সকলের জন্য সমস্যা।


বেইজিং: প্রাচীন চীনের খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম থেকে পঞ্চম শতাব্দীর কোনো সময়ে জি চেন নামে এক সফল শাসক ছিলেন চেং রাজ্যে। একদিন রাজ্যের কর্মকর্তারা পরামর্শ দিলেন স্কুলগুলো ধ্বংস করে দিতে। কারণ, মানুষগুলো স্কুলে জমায়েত হয়েই রাজার সমালোচনা করে। কিন্তু রাজা ভাবলেন, মুক্ত আলোচনা রাজাকে জনগণের হাবভাব বুঝতে সহযোগিতা করবে। সুতরাং তাদের পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করলেন। স্কুল চলতে থাকল।

লি জিংলিন
অধ্যাপক, বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়

জি চেনের সিদ্ধান্তটা ছিল কনফুশিয়াসের রাষ্ট্রদর্শনের মতো। কনফুশিয়াস তাকে বদান্যতার জন্য উল্লেখ করেছেন। রাজনীতির লক্ষ্য কেবল রাজনীতি না; রাজনীতির লক্ষ্য মানুষের জীবন। জনগণের ইচ্ছাকে ধারণ করতে পারার ক্ষমতাই তাকে রাজনৈতিক বৈধতা প্রদান করে। আর মানুষের ইচ্ছা বুঝতে হলে, মানুষকে পুরোপুরিভাবে বলতে দিতে হবে। বদান্য সরকারের জন্য কনফুশিয়াসের জ্ঞান কোভিড পরবর্তী রাষ্ট্রচিন্তায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।


নিউইয়র্ক সিটি: যখন অনেক দেশেই আনুষ্ঠানিকভাবে আকাশ, বন্দর ও সীমান্তগুলোতে অভিবাসন কমানোতে উদগ্রীব; তখনও বৈশ্বিক মহামারি নতুন করে অভিবাসনের ঢেউ আনতে পারে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে উন্নত দেশগুলোতে অভিবাসন।

ডাম্বিসা মোয়ো
অর্থনীতিবিদ

আজ বিশ্বব্যাপী ৭ কোটিরও বেশি মানুষ শরণার্থী এবং বাস্তুহীন জীবন পার করছে। বিশাল সংখ্যক মানুষ নিম্ন অর্থনৈতিক পরিবেশ, ভঙ্গুর জীবনমান এবং ধ্বংসাত্মক জলবায়ু পরিবর্তনকে মোকাবিলা করছে। বৈশ্বিক মহামারিটি আরো একবার দেখিয়ে দিচ্ছে গরিব দেশগুলোর চিকিৎসাব্যবস্থা কতটা শোচনীয় এবং তাদের জনগণ কতটা ঝুঁকিপূর্ণ।


লস এঞ্জেলস্: স্বাস্থ্যব্যবস্থার ইতিহাসের কোভিড-১৯ একটা দুঃস্বপ্ন। একই সাথে বিজ্ঞানীদের জন্য স্বপ্ন। এটি পৃথিবীর নানা প্রান্তের বিজ্ঞানীদের পারস্পারিক সহযোগিতার সুযোগ করে দিয়েছে।

প্যাট্রিক সুন-শিয়ং
সার্জন এবং লস এঞ্জল টাইমস্-এর প্রধান

আগেকার দিনে এর নজির বিরল। তারা বুঝেছে, “চিকিৎসা অনুসন্ধানে, ভ্যাক্সিন উদ্ভাবনে আমরা সকলেই এক সারিতে। আমাকে তোমার যতটুকু প্রয়োজন; তোমাকে আমারও ততটুকু।”

   

৪ লাখ বছর আগে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

  • Font increase
  • Font Decrease

৪ লাখ বছর আগে রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে নতুন এক গবেষণা থেকে জানা গেছে। এখান থেকে যাত্রা শুরু করে এই গোত্রের মানুষ পরে উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায়।

নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে, সাইবেরিয়ায় নতুন একটি এলাকার সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে ৪ লাখ ১৭ হাজার বছর আগে হোমিনিনস (Hominins) গোত্রের মানুষের উপস্থিতি ছিল। এই গোত্রের মানুষ ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বাস করতেন। সেখান থেকে তারা উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায় বলে জানিয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের এক গবেষক।

১৬ এপ্রিল চেক অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষক জন জেনসেন এক সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এ তথ্য প্রকাশ করেন। গবেষণাবিষয়ক সংবাদ সাময়িকী নিউ সায়েন্সটিস্ট এ বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জন জেনসেন বলেন, আমরা আগে যে ধারণা করতাম, তারও আগে থেকে হোমিনিনস গোত্রের মানুষ সাইবেরিয়ার ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বসবাস করতেন। ৪ লাখ ১৭ বছর আগে থেকেই তারা এই এলাকায় বসবাস করতে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের অবস্থান ছিল উত্তর অক্ষাংশে।

তিনি বলেন, আরেকটি আদিম গোত্রের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা আর্কটিক অঞ্চলে বাস করতেন। ৪৫ হাজার বছর আগে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

 

;

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

;

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

  • Font increase
  • Font Decrease

বর্তমান পৃথিবী প্লাস্টিকময়। ছোট বড় থকে প্রায় সবরকম কাজে প্লাস্টিকের ব্যবহারের আধিক্য। তবে এই প্লাস্টিক অজৈব পদার্থে তৈরি হওয়ার কারণে সহজে পচনশীল নয়। বিভিন্ন স্থানে জমে থাকার কারণে এসব পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।  শুধু পরিবেশ নয়, হার্ট, মগজ, সব জায়গাতেই নাকি ঢুকে রয়েছে প্লাস্টিক। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনটাই জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, হার্টের নানা রোগ, মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার পিছনেও এই প্লাস্টিকগুলির অবদান রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

সময়ের বিবর্তনে প্লাস্টিক বিভিন্ন আঘাতের কারণে ক্ষয় হয়ে ক্ষুদ্র আকার ধারণ করে। ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট আকারের প্লাস্টিককে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলে। দিন দিন পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। ইতোমধ্যে সমুদ্রে বিপুল পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ সৃষ্টি করেছে। পরিবেশের বিভিন্ন প্রাণী তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে দিন দিন এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের আধিপত্য বেড়েই চলেছে। এমনকি মানব শরীরেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। এক গবেষণায় মস্তিস্কে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে নিউ ম্যাক্সিকোর এনভয়রনমেন্টাল হেলথ পারসপেক্টিভ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয় খাদ্য, পানি এমনকি বায়ুর মাধ্যমেও শরীরে প্রবেশ করে। এসব ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা আমাদের স্নায়ুবিক নানান অনুভূতির উপরেও মাইক্রো প্লাস্টিক প্রভাব ফেলে।

রক্ত প্রবাহের কারণে তা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে বেড়ায়। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে তা জমা থেকে স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা প্রদান করে। বৃক্ক, লিভার, হৃদপিণ্ডের রক্তনালি ছাড়াও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মস্তিষ্ক। মাইক্রোপ্লাস্টিক এসব অঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। 

ডাক্তার ইয়াতিন সাগভেকার বলেন দৈনন্দিন নানা কাজের মধ্যেই শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করে। তবে পারে তা ত্বক, প্রশ্বাসের বায়ু বা ইনজেশনের মাধ্যমে।     

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র ২০ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে প্রবেশ করতে পারার কথা। এছাড়া ১০ মাইক্রোমিটার আকারের গুলো মস্তিষ্কের সুক্ষ্ম কোষের ঝিল্লির অতিক্রম করতে সক্ষম হওয়া উচিত।

প্লাস্টিক পরিবেশ্ম প্রানি এমনকি মানুষের জন্যও অনেক ক্ষতিকর। তাই সকলের উচিত যতটা সম্ভব প্লাস্টিক বর্জন করা। পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি জিনিসের ব্যবহার বাড়ানো।

;