কোমর ব্যথায় করণীয়



ডা. দলিলুর রহমান
প্রতীকী

প্রতীকী

  • Font increase
  • Font Decrease

কোমর ব্যথায় সাধারণত কেউ মারা যায় না। কিন্ত ভুল চিকিৎসায় মারাত্মক ক্ষতি খুবই স্বাভাবিক, এমনকি মৃত্যুও হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

কোমর ব্যথা সম্পর্কে ভুল ধারণা কিংবা ভুল চিকিৎসা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। কিন্তু কোমর ব্যথার সংখ্যা কিংবা মাত্রার তাতে কোন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না।

শারীরিক চলাচলে অক্ষমতার সব ধরনের রোগের ভয়াবহতার মধ্যে এক নম্বর কারণ হিসেবে দেখা হয় বিশ্বব্যাপী কোমর ব্যথাকে। গবেষণামতে কোমর ব্যথায় যত ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতিই প্রয়োগ করা হোক না কেন, মোট জনগোষ্ঠীর ২৫-৩০ শতাং মানুষ এবং বয়স্ক জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশ মানুষ জীবনের কোন না কোন সময় কোমর ব্যথায় আক্রান্ত হচ্ছে। এ সব রোগীদের মধ্যে ৯০ শতাংশ রোগীর ব্যথা ৮ সপ্তাহের মধ্যে কোন চিকিৎসা ছাড়া কিংবা চিকিৎসা নিয়ে সেরে যাচ্ছে। ৫ শতাংশ রোগীর ব্যথা ১২ সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়।

কিনতু এ সময়ের মধ্যে ব্যথা সেরে যাওয়া রোগীদের ৭০ শতাংশ ভবিষ্যতে পুনরায় কোমর ব্যথায় আক্রান্ত হচ্ছে। কোমর ব্যথা সারাজীবনে শুধু একবারই হবে এরকম ধারণা ভুল। কোমর ব্যথা সাধারণ ঠান্ডা লাগার মতই ব্যাপার, ব্যথায় আক্রান্ত হলে ম্যানেজ করা শিখতে হবে, সময়ের সাথে সাথে ব্যথা কমে যাবে।

কোমর ব্যথার কারণ
বিভিন্ন গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ৯৫ শতাংশ কোমর ব্যথার রোগীদের রোগের সুনির্দিষ্ট কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্ত কোমর ব্যথার মারাত্মক কারণ যেমন ক্যান্সার, যক্ষা, কডা ইকুউনা সিনড্রম, ইনফেকশাস ডিজিজেস খুবই নগণ্য।

যদিও মনে করা হচ্ছে মেরুদণ্ডের ক্ষয়, স্পন্ডিলোসিস, ডিস্ক হানিয়েশন, গাউট, আর্থ্রাইটিস, স্পাইনাল ক্যানেল স্টেনোসিস জনিত কারণে ব্যথা হচ্ছে। কিন্তু এ সমস্যাগুলি এমনকি যাদের কোমর ব্যথা নাই তাদের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে। চিকিৎসা পেশাজীবীরা রোগীদের ব্যথা সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝিয়ে না বললে রোগীরা মনে করেন তাদের কোমরে হয়তো মারাত্মক কোন সমস্যা আছে।

প্রচলিত চিকিৎসা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
গবেষণায় দেখা যায়, এ যাবতকাল কোমর ব্যথার চিকিৎসায় যত পদ্ধতিই প্রয়োগ করা হোক না কেন, দুর্ভাগ্যক্রমে এ সব চিকিৎসার বেশিরভাগই ব্যর্থ হচ্ছে। এমনকি এ সব চিকিৎসা নিয়েও ভালোর পরিবর্তে খারাপ হওয়ার উদাহরণ আছে অগণিত। কোমর ব্যথা হলে শুধু সুনির্দিষ্ট কিছু থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ সবচেয়ে কাযকরী বলে প্রমাণিত।

গ্লোবাল থেলথ এর মাসকুলোস্কেলিটাল বিভাগের নেতৃস্থানীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানী অধ্যাপক ক্রিস মাহের বলেন, “চিকিৎসা পেশাজীবীরা কোমর ব্যথার জন্য অনেক ধরনের চিকিৎসা মাধ্যম চর্চা করে থাকেন। এর মধ্যে উচ্চমাত্রার ক্ষতিকারক ব্যথার ওষুধ, এপিডিওরাল ইনজেকশন, সার্জারি, ট্রাকশন ও হিট থেরাপি অন্যতম। অথচ স্বপ্লকালীন সময়ে এগুলো কিছুটা কার্যকরী মনে হলেও দীর্ঘমেয়াদী কোন কার্যকারিতা নেই। কিন্তু উচু মাত্রার ওধুষ সেবনের ফলে রোগীদের বিভিন্ন রকম পেটের সমস্যা, গ্যাস্ট্রিক আলসার, কিডনির সমস্যাসহ নানাবিধ শারীরিক সমস্যা বেড়েই চলছে। এমনকি এপিডিওরাল ইনজেকশনের বিষক্রিয়ায় ও দীর্ঘমেয়াদী উচু মাত্রার ব্যথার ওধুষ সেবনের ফলে মৃত্যূর হার প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে।

সার্জারিকে কোমর ব্যথার সর্বশেষ চিকিৎসা মনে করা হলেও এর কার্যকারিতা প্রশ্নমুখী এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ব্যাপক। বিশেষজ্ঞরা রোগীদের বিছানায় শুয়ে দীর্ঘমেয়াদী বিশ্রাম নিতে বলেন, যার কোন বৈজ্ঞানিক ভিওি নেই এবং অপ্রয়োজনে গণহারে মেরুদণ্ডের ইমেইজিং এমআরআই, এক্সরে করতে পাঠান। এমআরআই-এর তেমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকলেও এক্সরে-এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক। কিন্তু এমআরআই-তে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোন না কোন সমস্যা দেখা যায়, যার সাথে হয়তো কোমর ব্যথার কোন সম্পর্ক নেই। অথচ এর ওপর ভিত্তি করে সার্জারিসহ নানাবিধ জটিল চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য ৬৪ শতাংশ এমআরআই ফলস পসিটিভ।

কোমর ব্যথার সাথে মেরুদণ্ডের সরাসরি সংযোগ আর মেরুদণ্ড যেহেতু রোবাস্ট অর্গান, তাই এর সাথে মেকানিক্যাল ও কেমিক্যাল বিষয়সমূহ যুক্ত। যার জন্য বিশেষজ্ঞদের পেথমেকানিক্স জানতে হয়। পেথমেকানিক্স জানতে হলে মেরুদণ্ডের বায়মেকানিক্স, মুভমেন্ট সাইন্স, স্ট্রাকচারাল ও ফাংশনাল এনাটমি জানতে ও বুঝতে হয়। আর এসব বিষয় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের সুচারুভাবে শিখতে হয়, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করতে হয়। তাই ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকেরা অতি অল্প সময়ে রোগীকে ব্যথামুক্ত করে প্রমাণিত ও সবচেয়ে কাযকরী সুনির্দিষ্ট কিছু থেরাপিউটিক এক্সারসাইজের মাধ্যমে কর্মক্ষম জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারেন।

কোমর ব্যথা প্রতিরোধ
কোমর ব্যথা প্রতিরোধ করা সত্যিই কঠিন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেরুদণ্ডের এলাইনমেন্ট/পজিশন, হার-পেশীর সক্ষমতা এবং মেরুদণ্ডের স্টেবিলিটি ঠিক রাখতে পারলে কোমর ব্যথা থেকে দীর্ঘমেয়াদে ভালো থাকা যায়। এই ক্ষেত্রেও ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকেরা আপনার মেরুদণ্ড ও টোটাল বডি অ্যাসেসমেন্ট করে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন (লাইফ স্টাইল রুটিন) দিতে পারেন।

করোনা পরিস্থিতিতে কোমর ব্যথায় যা করবেন
=> পরিচিত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের কাছে ফোনে আলোচনা করে পরামর্শ নিন।

=> কোমরকে ২-৩ দিনের জন্য পূর্ণ বা আংশিক বিশ্রাম দিতে পারেন। কিন্তু বিছানায় শুয়ে পূর্ণ বিশ্রাম নিষেধ। যতটা সম্ভব স্বাভবিক জীবনযাপন করতে হবে এবং সচল থাকতে হবে।

=> যেসব কারণে ব্যথা বাড়ে (যেমন নিচে বসা, সিঁড়িতে ওঠা-নামা করা, লো কমডে বসা, সামনে ঝুঁকে কাজ করা, লম্বা সময় বসা বা দাঁড়িয়ে থাকা বা হাঁটা ইত্যাদি) কিছুদিনের জন্য এড়িয়ে চলুন। আর যেভাবে রাখলে ব্যথা কম লাগে, সেভাবে রাখার চেষ্টা করুন।

=> ব্যথার স্থানে ব্যথার ধরন ও কারণ অনুযায়ী ব্যথার ক্রিম লাগিয়ে সুতার তোয়ালে দিয়ে ২০ মিনিট গরম সেঁক ও ১০ মিনিট ঠাণ্ডা পানির সেঁক দিনে ৩ থেকে ৪ বার দিতে পারেন। অথবা প্রয়োজনে শুধু গরম বা ঠাণ্ডা পানির সেঁক দিতে পারেন।

=> হাঁটা বা চলাফেরার সময় কিছু দিন কোমরের করসেট ব্যবহার করতে পারেন।

=> পুষ্টিকর ও এন্টিটক্সিক খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন এবং শরীরের সঠিক ওজন বজায় রাখুন।

=> প্রয়োজনীয় সুনির্দিষ্ট থেরাপিউটিক এক্সারসাইজগুলো নিয়মিত করুন। সুনির্দিষ্ট ব্যয়ামগুলি নিরূপণের জন্য একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং তার তত্ত্বাবধানে সঠিকভাবে করতে পারেন। থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ ভুল হলে আপনার ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।

=> সাধারণ মানের ব্যথার ওষুধ খেতে পারেন, তারমধ্যে প্যারাসিটামলই সবচেয়ে ভালো। প্রয়োজনে ব্যথানাশক ওষুধ ও সাপ্লিমেন্ট খেতে পারেন।

=> কোমর ব্যথায় যেকোন চিকিৎসা নেওয়ার আগেই তার প্রয়োজনীয়তা, উপকারিতা এবং অপকারিতা ভালোভাবে জেনে নিন।

ডা. দলিলুর রহমান, সিনিয়র কনসালট্যান্ট, কেয়ার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। পেইন, ফিজিওথেরাপি ও স্পোর্টস ইঞ্জুরি বিশেষজ্ঞ। e-mail: [email protected]

কিভাবে বুঝবেন সংক্রমণ হয়েছে ফুসফুসে?



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হচ্ছে ফুসফুস। শ্বাস নিতে কাজ করে এমন গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গটির সবচেয়ে ভয়াবহ সংক্রমণ হচ্ছে ক্যান্সার।

বুকে হাল্কা ব্যথা। কিংবা মাঝেমধ্যেই ঠান্ডা লেগে যাওয়া। এ তো হয়েই থাকে। ফুসফুসে সংক্রমণ হলেও সাধারণ ঠান্ডা লাগা ভেবে ভুল করি আমরা। কোভিডের পর থেকেই চিকিৎসকরা ফুসফুসের প্রতি বাড়তি যত্ন নেওয়ার কথা বলছেন। সতর্ক হতে হবে যে কোনও সংকেত পেলেই। যে সব অস্বস্তিকে সাধারণত অবহেলাই করা হয়ে থাকে, সে সব বিষয়েও হতে হবে সাবধান। ধূমপানের অভ্যাস না থাকলেও বুকে ব্যথা হলে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

কোন কোন লক্ষণ ফুসফুসের জটিলতার লক্ষণ?

১) রোজ ঘুম থেকে উঠেই কাঁধ-পিঠে তীব্র যন্ত্রণা হয়? তা হলে বুঝতে হবে, এ সাধারণ ক্লান্তি নয়। অনেক সময়েই শরীরের এক অংশে সমস্যা হলে একেবারে অন্য কোনও অঙ্গে অসুবিধা দেখা দেয়। এই ধরনের ব্যথাকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলে ‘রেফার্ড পেন’।

২) কথায় কথায় সর্দি-কাশি হচ্ছে? এমন কিন্তু স্বাভাবিক নয়। যদি কিছু দিন অন্তর ঠান্ডা লেগে থাকে, তবে বুঝতে হবে শরীরের ভিতরে কোনও সমস্যা আছে। অনেকের আবার কাশি হলে কমতেই চায় না। এমন প্রবণতা দেখলে সাবধান হওয়া জরুরি।

৩) শ্বাস নিতে গেলেই মনে হচ্ছে খুব কষ্ট হচ্ছে? এই সমস্যাও অবহেলা করার মতো নয়। বুঝতে হবে ফুসফুস জানান দিচ্ছে, ভিতরে কোনও সমস্যা আছে। ফুসফুসের আশপাশে প্রদাহ সৃষ্টি হলে বা সংক্রমণ হলে এমন অনেক সময়েই হতে পারে। সর্ব ক্ষণ ক্লান্ত লাগলে যেমন উদ্বেগ, অবসাদের মতো সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তেমন অন্য অসুখও হতে পারে। ফুসফুস ঠিক ভাবে কাজ না করলে শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ঢোকে না। তা থেকেও ক্লান্তি আসতে পারে। তাই সতর্ক থাকুন।

৪) গলার আওয়াজ অন্য রকম লাগছে কি? সর্দি-কাশি হলে এমন সমস্যা ঘটেই থাকে। কিন্তু দিনের পর দিন যদি এমনই চলে, তবে তা ক্যানসারের লক্ষণও হতে পারে।

৫) কাশি কিছুতেই কমছে না? কফের সঙ্গে রক্তপাত হচ্ছে? সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ফুসফুসে সংক্রমণ হলে বা কর্কট রোগ বাসা বাঁধলে এমনটা হতে পারে।

;

হার্ট অ্যাটাকের কারণ ও ঝুঁকি মোকাবিলায় করণীয়



ডা. ইসমাইল আজহারি
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বে প্রতি বছর ৩৮ লাখ পুরুষ এবং ৩৪ লাখ মহিলা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়, তার মধ্যে প্রতি ৪ জনের একজনের মৃত্যুর কারণ হচ্ছে করোনারি হার্ট ডিজিজ বা ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ যা মূলত এথোরোসক্লেরোসিস এর ফলাফল।

এথোরোসক্লেরোসিস কি?

Athero+Sclerosis থেকে এথোরোসক্লেরোসিস শব্দটা এসেছে। এথোরো মূলত Atheroma থেকে এসেছে। আর্টারি বা ধমনির ওয়ালে ফ্যাটি ম্যাটেরিয়াল বা চর্বি জাতীয় বস্তু কিংবা স্কার টিস্যু জমা হয়ে যখন ধমনীর ওয়াল সমূহ মোটা হয়ে যায়, ফলশ্রুতিতে ধমনীর লুমেন সরু হয়ে যায় এবং রক্তপ্রবাহ কমে হয়ে যায় সেই সাথে আর্টারি সমূহ শক্ত হয়ে যায় তখন এই অবস্থাকে এথোরোসক্লেরোসিস বলা হয়। সহজ কথায়, যদি কোনো ফ্যাটি প্ল্যাকের কারণে রক্তনালী দিয়ে রক্ত চলাচল সীমিত হয়ে যায় তখন এই অবস্থাকে এথোরোসক্লেরোসিস বলে।

এথোরোসক্লেরোসিস বলতে মূলত হার্টের ধমনী সমূহে তথা করোনারি আর্টারি সমূহের মধ্যে ডিজেনারেটিভ চেঞ্জকে বুঝানো হয়ে থাকে। তবে এথোরোসক্লেরোসিস শরীরের যে কোনো রক্তনালিতে হতে পারে। হাতে পায়ে হলে তখন সেটাকে পেরিফেরাল ভাস্কুলার ডিজিজ বলা হয়। শরীরে যদি অতিরিক্ত LDL ক্লোরেস্টেরল থাকে তখন সেটা রক্তনালীতে জমা হয়ে এথোরোসক্লেরোসিস তৈরি করে।

করোনারি আর্টারিতে এথোরোসক্লেরোসিস হলে সেখানে রক্ত প্রবাহ কমে যায় কিংবা রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয় আর যেখানেই রক্ত প্রবাহ কমে যায় বা রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয় সেখানে অক্সিজেন পরিবহন কমে যায়। কারণ রক্তের হিমোগ্লোবিন এর সাথে মিশেই অক্সিজেন সারা দেহে সঞ্চালিত হয়। শরীরের কোনো টিস্যুতে চাহিদার তুলনায় অক্সিজেন সরবরাহ কমে গেলে তাকে ইসকেমিয়া বলে। আর হার্টের মধ্যে যদি অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায় তাহলে এই অবস্থাকে ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ বলে।

হার্ট অ্যাটাক:

হার্টের মাংশপেশী সমূহ সচল থাকার জন্য হার্টের মধ্যে রক্ত সরবরাহ হয় দুইটা রক্ত নালীর মাধ্যমে যাকে রাইট এন্ড লেফট করোনারি আর্টারি বলে। এই করোনারি আর্টারি সমূহে ফ্যাট কিংবা চর্বি জমে যদি রক্ত সঞ্চালনে বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে এই অবস্থাকে করোনারি আর্টারি ডিজিজ বলে এই অবস্থাকে আবার হার্ট ব্লক ও বলা হয় আর ফ্যাট জমে আর্টারি মোটা আর শক্ত হয়ে যাওয়াকে এথোরোসক্লেরোসিস বলে। এথোরোসক্লেরোসিস হলে যে কোনো মুহুর্তে রক্তনালি ছিড়ে রক্ত জমাট বেধে যেতে পারে। রক্তনালীর ভিতর যদি রক্ত জমাট বাধে তাহলে সেখানে রক্ত চলাচল করতে পারবে না, হার্টের রক্তনালীতে যদি রক্ত চলাচল করতে না পারে তাহলে হার্টের মাংসপেশি সমূহ অক্সিজেন পাবেনা, অক্সিজেন না পেলে হার্টের টিস্যু সমূহ ড্যামেজ হতে থাকবে এবং এইভাবে হার্টের রক্তনালীতে রক্তজমাট বাধার কারণে কিংবা শরীরের অন্য কোনো ধমনীতে রক্ত জমাট বেধে তা থ্রম্বোসিস হয়ে তথা রক্তনালী দিয়ে পরিবাহিত হয়ে যদি করোনারি আর্টারি সমূহকে কিংবা হার্টের ধমনী সমূহকে ব্লক করে দেয় এবং হার্টের পেশীসমূহে যদি পরিমিত অক্সিজেন দিতে না পারে তখন  অক্সিজেনের অভাবে হার্টের টিস্যু সমূহ ড্যামেজ হয়ে যাবে যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বা হার্ট অ্যাটাক বলা হয়।

এই সময় খুব দ্রুত রক্ত সরবরাহ চালু করতে না পারলে মৃত্যু হতে পারে। এই সময় রোগীর প্রচন্ড বুকে ব্যাথা হবে, সাথে শ্বাসকষ্ট হবে, শরীর ঘামিয়ে যাবে, ব্যাথা ঘাড়, হাত, পিঠে বা থুতনিতে যেতে পারে।

ইশকেমিক হার্ট ডিজিজের উপসর্গ:

ব্লাড প্রেশার চেক করা না হলে অধিকাংশ রোগী উপসর্গহীন থাকে এবং এক সময় তারা হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক করে মৃত্যু বরণ করে। আর কারো কারো ক্ষেত্রে নিম্নের কিছু উপসর্গ দেখা দেয়:

১। চলতে ফিরতে বুকে ব্যাথা হয়

২। শ্বাসকষ্ট হয়

৩।খাবার পরে বুকে ব্যাথা হয়,

৪।একটু টেনশন করলে বুকে ব্যাথা হয়,

৫। মাথা ঘোরানো এবং মাথা ব্যাথা

৬।ঘাড় কিংবা বাহুতে ব্যাথা

৭। বমি বা বমির ভাব

ইসকেমিক হার্ট ডিজিজের কারণ:

১।উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন

২। অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার যথা গরুর গোশত, ডিম বা ট্রান্স ফ্যাট জাতীয় খাবার ইত্যাদি

৩। সিগারেট স্মোকিং বা জর্দা ইত্যাদি

৪।অবেসিটি বা অতিরিক্ত ওজন

৫। এলকোহল, কোমল পানীয়

৬।পর্যাপ্ত ব্যায়াম না করা

৭। শারিরীক পরিশ্রম না করা

৮। সবসময় শুয়ে থাকা ইত্যাদি।

ইসকেমিক হার্ট ডিজিজের কারণে জটিলতা:

১। হার্ট অ্যাটাক হতে পারে

২। ব্রেইন স্ট্রোক হতে পারে

প্রতিকার:

১। ধূমপান ত্যাগ করতে হবে

২। ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে

৩। ওজন স্বাভাবিক বিএমআই অনুযায়ী রাখা জরুরি। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

৪। অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে এবং লবণ কম খেতে হবে।

৫। নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত

৬। স্বাভাবিক শারীরিক পরিশ্রম করা উচিত।

চিকিৎসা:

১। লাইফস্ট্যাইল মোডিফাই করতে হবে এবং অতিরিক্ত ওজন কমার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।

২। ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সে জন্য নিয়মিত রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত খেয়ে যেতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মেডিসিন বাদ দেয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে খুব খেয়াল রাখতে হবে। কোন মেডিসিন যেন খেতে ভুলে না যায়। এছাড়া যে কোন জটিলতায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বুকে ব্যাথা হলে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

ডা. ইসমাইল আজহারি, চিকিৎসক, ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরিচালক, সেন্টার ফর ক্লিনিক্যাল এক্সিলেন্স এন্ড রিসার্চ। [email protected]

;

করোনায় পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের মৃত্যু: পরিবেশ মন্ত্রীর শোক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
বার্তা ২৪.কম

বার্তা ২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

প‌রি‌বেশ অ‌ধিদপ্ত‌রের মহাপ‌রিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. এ কে এম র‌ফিক আহাম্মদ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ (১০ এপ্রিল) ভোর ৪:১৪ মি‌নি‌টে ই‌ন্তেকাল ক‌রে‌ছেন (ইন্না লিল্লা‌হি ওয়া ইন্না ইলাইহি রা‌জিউন)।

এর আগে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ১০ম ব্যাচের একজন কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৯১ সালে সরকারি চাকুরিতে যোগদানকারী রফিক আহাম্মদ ২৩ মার্চ থেকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গতকাল থেকে তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।

প‌রি‌বেশ অ‌ধিদপ্ত‌রের মহাপ‌রিচালকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন, উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, সচিব জিয়াউল হাসান এনডিসি এবং সকল স্তরের কর্মকর্তা,কর্মচারীবৃন্দ গভীরভাবে মর্মাহত এবং শােকাভিভূত।

আজ এক শোকবার্তায় পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, তার মতো একজন সদালাপী, ধার্মিক, সৎ, দক্ষ এবং আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের কর্মকর্তা বিরল। কর্মজীবনে তিনি দেশের পরিবেশ সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মােকাবিলায় দেশী এবং বিদেশী অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

পৃথক এক শোকবার্তায় মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার জানান তাঁর মতো অমায়িক ও কর্মনিষ্ঠ কর্মকর্তার মৃত্যু দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান এনডিসি জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সকল কর্মকর্তা,কর্মচারি তাঁর শােক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছে এবং পরম করুনাময়ের কাছে তাঁর মাগফিরাত ও বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করছে। পরম করুনাময় মহান আল্লাহ তাঁকে জান্নাত নসিব করুন।

উল্লেখ্য, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসাবে ২০১৯ সালের ২২ মে যোগদানের পূর্বে তিনি দুবাইয়ে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল অফিসে কমার্শিয়াল কাউন্সিলর হিসেবে সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করেন। ইতঃপূর্বে তিনি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রীর একান্ত সচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিব এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই পুত্র রেখে গেছেন।

 

;

সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নোয়াখালী
ছবি সংগৃহীত

ছবি সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো.মতিউর রহমান করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

শুক্রবার (৯ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টায় সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ও করোনা ফোকাল পারসন ডা. নির্ণয় পাল এ তথ্য নিশ্চিত করেন।  

তিনি আরো জানান,  গতকাল (৮ এপ্রিল) সকাল ১১টার দিকে ডা. মো.মতিউর রহমানের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আব্দুল মালেক উকিল মেডিক্যাল কলেজের করোন ট্রেস্ট ল্যাবে পাঠানো হয়। এরপর শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে ওনার করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। বর্তমানে তিনি নিজ বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ছাড়াও সেনবাগ উপজেলায় গত ২৪ ঘন্টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ পাঁচজন করোনায় আক্রান্ত হয়। করোনা সংকট শুরু থেকেই তিনি সেনবাগ উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। কাজের কারণে তিনি সবার কাছে প্রশংসিত হয়েছেন।

অপরদিকে, জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘন্টায় নোয়াখালীতে নতুন করে ৯২জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

;