কামাখ্যাগুড়ির আদি কামাখ্যাধাম



ড. রূপকুমার বর্মণ
কামাখ্যাগুড়ির আদি কামাখ্যাধাম।ছবি: দেবাশিষ ভট্টাচার্য

কামাখ্যাগুড়ির আদি কামাখ্যাধাম।ছবি: দেবাশিষ ভট্টাচার্য

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজনৈতিক, আর্থসামাজিক ও সংস্কৃতিক ইতিহাসের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। এই পারস্পরিক সম্পর্কের বহু নিদর্শন দুই দেশের সীমানায় ছড়িয়ে আছে বিক্ষিপ্তভাবে। অনেক ক্ষেত্রেই এই নিদর্শনগুলি রয়ে গেছে ইতিহাসের গবেষনার পরিধির বাইরে। প্রথাগত গবেষকদের দৃষ্টির অগোচরে থেকে যাওয়া এমনই একটি নিদর্শন হল কামাখ্যাগুড়ির ‘আদি কামাখ্যাধাম’।

ভারত-ভূটানের কুমারগ্রাম সীমানা ক্ষেত্র থেকে ৩০ কিমি দক্ষিণে এবং বাংলাদেশ ও ভারতের কুড়িগ্রাম-কোচবিহারের সীমানা থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত দক্ষিণ কামাখ্যাগুড়ি গ্রামের এই ধাম (মন্দির ক্ষেত্র) পূর্বতন দেশিয় রাজ্য কোচবিহারের (১৫১৫-১৯৪৯) সঙ্গে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত।

বাংলাদেশের পাঙ্গার ‘কোচ জমিদার বংশ’, আসামের ‘কোচ-হাজো’, ‘বিজনী’ ও ‘দরং রাজবংশ’ এবং জলপাইগুড়ির ‘রায়কত বংশের’ আদি ইতিহাসও আদি-কামাখ্যাধামের সঙ্গে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। 

ভূটান হিমালয়ের পাদদেশে ডুয়ার্সের নদী-বেষ্টিত অঞ্চলে অবস্থিত কামাখ্যাগুড়ি বর্তমানে একটি বর্ধিষ্ণু জনপদ। এর উত্তর দিকের ৩১নং জাতীয় সড়ক ও উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল কামাখ্যাগুড়িকে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের অন্যান্য রাজ্যের প্রবেশদ্বারে পরিণত করেছে। ১নং রায়ডাক ও ২নং রায়ডাক নদী বৃহত্তর কামাখ্যাগুড়ি জনপদের যথাক্রমে পশ্চিম ও পূর্ব সীমানা দিয়ে কূলকূল করে বয়ে চলেছে। এছাড়াও কামাখ্যাগুড়ির প্রানকেন্দ্রের মরা রায়ডাক ও ঘোড়ামারা নদী বর্ষার জলে প্রানবন্ত হয়ে ওঠে। কামাখ্যাগুড়ির দক্ষিণ দিক আটিয়ামোচর-বোচামারির জঙ্গলের মধ্যদিয়ে কোচবিহার জেলার সীমানা স্পর্শ করেছে।

স্বাভাবিকভাবেই ভূটান, আসাম, কোচবিহার ও পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ারের সঙ্গে কামাখ্যাগুড়ির গভীর ঐতিহাসিক সংযোগ গড়ে উঠেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হল এই যে লব্ধপ্রতিষ্টা ঐতিহাসিকগন কামাখ্যাগুড়ির ইতিহাস অনুসন্ধানে বিন্দুমাত্র আগ্রহ প্রকাশ করেননি। তাই বলে কামাখ্যাগুড়ির কোন ইতিহাস নেই এমন মনে করারও কোন কারনও নেই।

কামাখ্যাগুড়ির প্রাচীন ইতিহাস নির্মানের জন্য আমাদের একটু ফিরে তাকাতে হবে কোচবিহার রাজ্যের উৎপত্তি ও বিকাশের ইতিহাসের দিকে। একটু বৃহত্তর দৃষ্টিকোন থেকে বিচার করলে আমরা খুঁজে পাবো দক্ষিণ কামাখ্যাগুড়ির আদি কামাখ্যাধামের সঙ্গে কোচবিহার রাজ্য তথা হিমালয় সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ ও নিম্ন আসামের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের সংযোগ।

মরা রায়ডাক, ঘোড়ামাড়া ও ২ নং রায়ডাক অববাহিকার রাভা ও কোচ-রাজবংশী জনগোষ্ঠী অধ্যুষ্যিত দক্ষিণ কামাখ্যাগুড়ির আদি কামাখ্যাধাম একটি প্রাচীন ধর্মীয় ক্ষেত্র। রাভা ও রাজবংশী ছাড়াও এই ধামের অতি নিকটেই মেচ জনজাতির বসবাস। ভারত-ভূটান সীমানার কুমারগ্রাম থেকে হেমাগুড়ি, মারাখাতা, খোয়ারডাঙ্গা, তেলিপাড়া ও ঘোড়ামারা ও উত্তর কামাখ্যাগুড়ি পর্যন্ত মেচ্‌, কোচ-রাজবংশী ও রাভা জনজাতির বসবাসের ইঙ্গিত পাওয়া যায় মধ্যযুগীয় কামরূপী, বাংলা ও ফারসি ভাষায় রচিত ঐতিহাসিক সাহিত্যগুলিতে। কোচবিহার রাজ্যের প্রকৃত স্থাপয়িতা মহারাজ বিশ্বসিংহের (১৫১৫-১৫৪০ খ্রি:) কামাখ্যা দেবী আরাধনার বিস্তৃত বিবরণ পাওয়া যায় ‘দরং রাজবংশাবলী’ ও ‘রাজোপাখ্যানের’ মত ঐতিহাসিক গ্রন্থাবলীতে। একইসঙ্গে মহারাজা নরনারায়ন (১৫৪০-১৫৮১ খ্রি) ও কোচ মহাসেনাপতি চিলারায়ের দ্বারা গৌহাটির নীলাচল পাহাড়ের কামাখ্যা মন্দির নির্মানের গৌরবোজ্জ্বল পর্যায় চিত্রিত হয়েছে আসাম ও কোচবিহারের ঐতিহাসিক সুত্রগুলিতে। কিন্তু এই সুত্রগুলিতে কোথাও কামাখ্যাগুড়ির আদি কামাখ্যাধামের উল্লেখ নেই।

তাহলে আদি কামাখ্যাধামের সৃষ্টি কি করে হল? কোচবিহারের সঙ্গে এর সম্পর্কই বা কি? এই প্রশ্নগুলির উত্তর খোঁজার জন্য আমাদের একটু দৃষ্টিপাত করতে হবে কোচ রাজ্যের সূচনা পর্বের উপর। একথা আজ সকলেরই জানা যে কোচ রাজ্যের সূচনা করেছিলেন মেচ দলপতি হাড়িয়া মন্ডল। ভূটানের হিমালয় সংলগ্ন পশ্চিমে ২নং রায়ডাক-সংকোষ অববাহিকা থেকে পূর্বে বড়নদী পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল ষোড়শ শতকের গোড়ায় হাড়িয়া মন্ডল মেচদের একটি সংবদ্ধ গোষ্ঠীতে পরিনত করেন। হাড়িয়া মন্ডল হীরা ও জীরা নামে দুই কোচ কন্যার সঙ্গে বিবাহ সুত্রে আবদ্ধ হয়ে কোচ রাজ্যকে সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য করে তোলেন। কিন্তু মেচ-কোচদের নবোস্থিত শক্তি বাংলার সুলতান হুসেন শাহ (১৪৯৪-১৫১৯) নিয়োজিত গোয়ালপাড়ার সুলতানী প্রতিনিধি তুরবকের কাছে ভয়ের কারন হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। হাড়িয়া মন্ডলের পুত্র বিশু (মহারাজা বিশ্বসিংহ), শিশু (রায়কত শিষ্যসিংহ), চন্দন ও মদনের নেতৃত্বে মেচ ও কোচদের যৌথ শক্তি তুরবককে পরাজিত করে গোয়ালপাড়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল কোচদের অধীনে নিয়ে আসে। এই যুদ্ধে মদন নিহত হলে চন্দনকে কোচ রাজা হিসেবে ঘোষণা করা হয় ও কোচবিহারের রাজশকের গণনা শুরু হয় (১৫১০ খ্রি)।

তবে কোচবিহারের ইতিহাসে বিশু বা বিশ্বসিংহকেই কোচ রাজ্যের প্রকৃত স্থাপয়িত রাজা হিসাবে মান্যতা দেওয়া হয়েছে।

বিশ্বসিংহের রাজ্য প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে কোচবিহার রাজদরবারে লিখিত বংশাবলী বা উপখ্যানগুলিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে হাড়িয়ে মেচের নেতৃত্বে মেচবা কর্ণপুর বা ফুলগুড়ির ভুইয়ার অধীনস্ত অঞ্চল আক্রমন করলে হাড়িয়া মেচ বন্দী হন। বিশু ও তাঁর অন্যান্য ভাইয়েরা নিম্ন আসাম সংলগ্ন অরণ্যে আশ্রয় গ্রহন করেন। কথিত আছে বিশু বনের মধ্যে একটি দশভূজা দেবী প্রতিমা প্রাপ্ত হয়েছিলেন। এক মেচ গৃহকত্রীর (মেচনী) ছদ্মবেশী দেবীর সহায়তায় “বহাগ বিহুর” দিন কর্ণপুরের ভূইয়াকে সহসা আক্রমণ করে তাকে পরাজিত করে তার অঞ্চল দখল করেন বিশু।  ক্রমে ক্রমে অন্যান্য ভুইয়াদের পরাজিত করে এক বিশাল রাজ্য গড়ে তোলেন তিনি।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই দেবী আসলে কে ? বিশ্বসিংহ কোথায় এই দেবীর দর্শন পেয়েছিলেন? এই প্রশ্নগুলির উত্তর অনুসন্ধান করলে আমাদের মনে হতে পারে যে এই অঞ্চলটি ছিল মেচ ও কোচ-রাজবংশী জনজাতি অধ্যুষিত নিম্ন আসাম (বর্তমান বোড়ো স্বায়ত্ব শাসিত অঞ্চল যেখানে হাড়িয়া মন্ডল তাঁর নেতৃত্বে মেচদের একতাবদ্ধকরনের প্রকৃয়া শুরু করেছিলেন)। তবে একটু গভীর দৃষ্টিতে ঐতিহাসিক সূত্র ও প্রমাণের উপর আলোকপাত করলে বোঝা যাবে যে বিশ্বসিংহ যেখানে দেবীর দর্শন পেয়েছিলেন সেটা ছিল সংকোষ ও রায়ডাক নদীর মধ্যবর্তী মেচ, রাভা ও কোচ জনজাতি পরিপূর্ণ ভূটান হিমালয়ের পাদদেশ (বা কুমারগ্রাম -কামাখ্যাগুড়ি- শামুকতলা-তুফানগঞ্জ অঞ্চল)। এরকম মনে হওয়ার যথেষ্ট কারণও আছে। প্রথমত: নিম্ন- আসামের (গৌহাটির) বর্তমান কামাখ্যামন্দিরের পুননির্মান করেছিলেন বিশ্বসিংহ-পুত্র মহারাজা নরনারায়ন (১৫৪০-১৫৪৭ খ্রি) ও কোচ মহাসেনাপতি চিলারায়। দ্বিতীয়ত: বিশ্বসিংহ তাঁর রাজধানী তৈরি করেছিলেন হিঙ্গুলাবাসে (বর্তমান আলিপুরদুয়ার জেলা শামুকতলা-মহাকালগুড়ি-কুমারগ্রাম অঞ্চল)। আলিপুরদুয়ারের চেকো নদী তীরবর্তী ‘চন্ডীর ঝাড়’ গ্রামে প্রাপ্ত বিশ্বসিংহ প্রবর্তিত মুদ্রা (১৯৮৬) আমাদের ধারনার পরিপূরক বলা যায়।

আদি কামাখ্যাধাম সন্নিহিত অঞ্চলের প্রচলিত লোকবিশ্বাস অনুসারে আজ থেকে প্রায় দুশ বছর পূর্বে কোচবিহারের কোন এক মহারাজার আদি কামাখ্যাধাম সংলগ্ন আটিমোচর-বোচামারির জঙ্গলে শিকার অভিযানের সময়ে তাঁর একটি হাতি সেখানকার কাঁদামাটিতে  আটকে যায়। স্থানীয় মানুষের পরামর্শে সেখানকার দেবী কামাখ্যার নাম স্মরন করে তাঁর মাহাত্ম্য প্রচার করতে মনস্থির করলে মহারাজার সেই হাতি উদ্ধার করা সম্ভব হয়। তখন থেকেই এই আদি কামাখ্যার আরাধানার প্রচলন হয়। গৌহাটির কামাখ্যামন্দিরের মতই এখানে অম্বুবাচীতে আদি কামাখ্যার পূজো হয়। এছাড়াও এখানে দুএকটি বিশেষ প্রজাতির বৃক্ষ আছে যা গৌহাটির কামাখ্যা মন্দির ছাড়া আর কোথাও দেখা যায় না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্যযোগ্য যে কোচবিহারের মহারাজারা তাঁদের রাজ্যের অধীনস্ত আটিয়ামোচর–বোচামারীর জঙ্গলে তাঁদের রাজত্বের শেষ দিন পর্যন্ত (১৯৪৯) শিকারের প্রথাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। অন্যদিকে মরা রায়ডাক ও ২নং রায়ডাক নদীর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত আদি কামাখ্যাধামের মাটি ছিল অত্যন্ত নরম।  এখনও এখানে কোথাও কোথাও মাটিতে পা ঢুকে যায়।

কোচবিহার রাজ্যের গোড়াপত্তন, কোচ রাজাদের মৃগয়াক্ষেত্র ও তাঁদের ধর্মাচরনের সঙ্গে নিবিড় সংযোগ থাকা সত্ত্বেও কোচ দরবারের ঐতিহাসিকগন আদি কামাখ্যাধামের গুরুত্ব অনুধাবন করেননি।

মুন্সী জয়নাথ  ঘোষ (রাজ্যোপাখ্যান), রিপুঞ্জয় দাস (মহারাজ বংশাবলী), ভগবতীচরন বন্ধ্যোপাধ্যায় (কোচবিহারের ইতিহাস) ও খাঁ চৌধূরী আমানতউল্লা আহমেদ [কোচবিহারের ইতিহাস, ১ম খণ্ড (১৯৩৬)]) বা অন্যান্য ঐতিহাসিকগন আদি কামাখ্যাধাম নিয়ে উচ্চবাচ্য না করলেও কোচবিহার রাজ্য, বিশ্বসিংহ-পুত্র নরসিংহ স্থাপিত পাঙ্গার রাজবংশ, মুঘল আমলের উত্তরকূল ও দক্ষিনকূল, বর্তমান রংপুর বিভাগের অধীনস্ত বিভিন্ন জেলা, নিম্ন আসাম ও নিম্ন ভূটানের ইতিহাস রচনায় এর গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না।

ড. রূপ কুমার বর্মণ, কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও আম্বেদকর চর্চা কেন্দ্রের সমন্বয়ক ।

   

কুয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত চট্টগ্রামের আকবর



কুয়েত করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুয়েত
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কুয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় আকবর হোসেন নামে এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। তিনি চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার রহমতপুর গ্রামের আদর্শ পাড়া হাদির গো বাড়ির সুলতান আহমদের ছেলে।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) রাতে কুয়েতের রাবিয়া নামক স্থানে ইশারা আল কাসেমিতে রাস্তা পারাপারের সময় গাড়ির ধাক্কা লেগে এই দুর্ঘটনায় ঘটে।

নিহতের আত্মীয় সাখাওয়াত হোসাইন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, 'বেশ কিছুদিন যাবৎ তিনি মানসিকভাবে চাপের মধ্যে ছিলেন। শুক্রবার রাতে রাস্তা পারাপার করতে গেলে দুর্ঘটনার শিকার হয়।এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি।'

বর্তমানে মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়া শেষে তার মরদেহ দ্রুত দেশে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা।

;

দেশের ইলিশের টানে লন্ডন থেকে গ্লাসগো



ড. হাসিন মাহবুব চেরী, সিনিয়র স্পেশালিস্ট সায়েন্টিস্ট, ইউকে
দেশের ইলিশের টানে লন্ডন থেকে গ্লাসগো

দেশের ইলিশের টানে লন্ডন থেকে গ্লাসগো

  • Font increase
  • Font Decrease

একটা বয়সের পরে আমরা আটকা পড়ি শুধুই মায়ার টানে। কোন মানুষটা আমাদের মন থেকে মায়া করে, এটাই সব কিছুর ঊর্ধ্বে বিবেচ্য হয় আমাদের কাছে (অন্তত আমার কাছে ব্যাপারটা এখন তাই)।

কারণ, আমরা বুঝতে শিখি যে, আমাদের আশেপাশে বন্ধুরূপী অসংখ্য মুখের ভিড়ে শুধু মাত্র সেই মুখগুলোই মূল্যবান - যার কাছে আমি মূল্যবান। আর ঠিক একারণেই সুদূর বিলাতের বিভূঁই পরিবেশে ফারহানা হোসেন আপু যখন বললো দেশ থেকে আসা ইলিশ তোমাকে আর Rumana Newlands কে ছাড়া খাবো না বলে তুলে রেখেছি, কবে আসবে? মনে হলো এই ভালোবাসার ডাক পাবার মতো ভাগ্য আসলে ক'জনেরই বা হয়? তাই প্রচন্ড ব্যস্ত সময়ের মধ্যেই হুট করে একবেলার জন্যে লন্ডন থেকে গ্লাসগো উড়ে চলে গেলাম।

এই ঝটিকা সফর বহু কারণেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে, তবে অর্ধেক দিনের এই মেমরি আমাকে আবার শেখালো:

Life is not about quantity, it`s all about quality. So it doesn`t matter what you have in life, but who you have only matters.

আর জীবনে নিজের পরিবারের মানুষ ছাড়াও কারো সত্যিকারের ভালোবাসা পাওয়া আসলেই বিশাল ভাগ্যের ব্যাপার। ফারহানা আপু এবং সাজ্জাদ ভাইয়ার আন্তরিকতায় আবারো মুগ্ধ হতে হতে তাই ভাবছিলাম, যদিও আমি সবসময় সবার থেকে ভালো জিনিস গুলো শেখার চেষ্টা করি তবে কিছু কিছু কোয়ালিটি আসলে মানুষের মধ্যে আসে 'ইন বিল্ট' হয়ে, যেটা অন্য কেউ হয়তো হাজার চেষ্টা করেও আয়ত্ত্ব করতে পারে না!

অন্যকে স্পেশাল এবং গুরুত্বপূর্ণ ফিল করানোও ঠিক সেরকমই একটা ইন বিল্ট কোয়ালিটি যেটা বেশিরভাগ মানুষের মধ্যেঔ অনুপস্থিত। যেমন আপু এবং ভাইয়া (আমার দেখা দুই অন্যতম ব্রিলিয়ান্ট এবং down to earth মানুষ) যেভাবে ওয়ার্কিং ডে 'র শেষে আমাকে এয়ারপোর্ট থেকে পিক করা থেকে শুরু করে নিজের হাতে রান্না করা বহু পদের মুখরোচক খাবার এবং নিজের হাতে বানানো মিষ্টি'র আয়োজন করলেন, স্কটল্যান্ডে এসে আমার ভাইয়ের সাথে দেখা হবে না বলে আমার ভাই কেও আবেরডিন থেকে ডেকে নিয়ে আসলেন, এবং আসবার পথে একগাদা খাবার প্যাক করে ব্যাগে নিজের হাতে ঢুকিয়ে দিয়ে একদম এডিনবরা এয়ারপোর্ট এর সিকিউরিটি পর্যন্ত এসে বিদায় দিয়ে গেলেন - এই আন্তরিকতাটা বোধহয় একেবারে মনের গভীর থেকে না আসলে করা সম্ভব নয়।

আসলে জীবনে আমরা বহু অপাত্রে আমাদের ভালোবাসা এবং সময় দান করে নষ্ট করি, বহু মানুষের ব্যবহার দেখে মনে হয় সত্যিই বোধহয় স্বার্থপর না হওয়াটাই আজকাল বোকামি। তবে পরমুহূর্তেই আবার যখন এরকম সুন্দর মনের মানুষ গুলোর আন্তরিকতায় অবাক এবং মুগ্ধ হই, তখন মনে হয় এই সুন্দর মনের মানুষগুলোর উপস্থিতির জন্যেই আসলে জীবনটা এতো সুন্দর। আর এরকম মানুষের উপস্থিতি আমাদের ঠিক একইভাবে ওনাদের মতোই অন্য কারো জীবনেও নিজের উপস্থিতি দিয়ে তার জীবনের কিছু সুন্দর মুহূর্ত উপহার দিতে অনুপ্রেরণা যোগায়।

;

শেখ হাসিনার সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দৃঢ় করবে: থাই সরকারের মুখপাত্র



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাউথ-ইস্ট এশিয়া (ব্যাংকক, থাইল্যান্ড)
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ পর থাইল্যান্ডে আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী বুধবার (২৪ এপ্রিল) তিনি থাইল্যান্ডে এসে পৌঁছাবেন। পাঁচদিনের সফর শেষে সোমবার (২৯ এপ্রিল) তিনি দেশে ফিরে যাবেন।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) থাই সরকারের মুখপাত্র চাই ওয়াচারানক স্থানীয় গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানান।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শ্রেত্থা থাবিসিন এর আমন্ত্রণে শেখ হাসিনা থাইল্যান্ডে আসছেন।

শেখ হাসিনার ভ্রমণের সময় উভয় দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি এবং এমওইউ স্বাক্ষর হবে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সফরসঙ্গীদের জন্য গভর্মেন্ট হাউজে দুপুরের খাবারের আয়োজন করেছেন শ্রেত্থা থাবিসিন।

চাই ওয়াচারানক জানান, ২০০২ সালের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এটি প্রথম থাইল্যান্ড সফর। এই সফরে দুই দেশের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে দ্বি-পাক্ষীক সম্পর্ক শক্তিশালী করতে আলোচনা করতে পারবেন। এছাড়াও বিভিন্ন খাতে সহযোগীতা বৃদ্ধি, বিশেষত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বিষয়টি নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এছাড়াও যোগাযোগ, পর্যটন এবং দুই দেশের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে শেখ হাসিনার এই সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে জানান থাই সরকারের মুখপাত্র। 

;

আমিরাতে বর্ণিল আয়োজনে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব



তোফায়েল আহমেদ পাপ্পু, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

পহেলা বৈশাখ বাঙালির সর্বজনীন উৎসব। শুধু দেশে নয়, সারা বিশ্বে বসবাসরত বাঙালিরা দিনটি সাড়ম্বরে পালন করে থাকে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে এবার ঈদের ছুটি অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ ছিল। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পহেলা বৈশাখ। যা প্রবাসী বাংলাদেশিদের আনন্দ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। লোকায়ত সংস্কৃতির ডালা সাজিয়ে বর্ণিল উৎসব আয়োজনের মধ্যদিয়ে দেশটিতে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব উদযাপিত হয়েছে।

ভিনদেশের মাটিতেও বাঙালি সংস্কৃতির চিরায়ত পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হলো নানা অনুসঙ্গে। দেশটিতে বসবাসরত বাঙালিদের মধ্যেও ছিল আনন্দের কলরব। আর এই আনন্দ উচ্ছ্বাসকে সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে প্রবাসী সনাতনি ঐক্য পরিষদের চমৎকার আয়োজনের মধ্য দিয়ে এক নতুন মাত্রা পেয়েছে।


রোববার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আমিরাতের সারজায় আল জায়েদ ফার্ম হাউজে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের শুরুতে পহেলা বৈশাখ ১৪৩১ বাংলা নববর্ষ বরণ করে নিতে সকাল সাড়ে ১০টায় মঙ্গল শোভযাত্রা র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। পরে নাচ, গান, মধ্যাহৃভোজ ও নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে বর্ষবরণ উদযাপন করেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

একাকী প্রবাসজীবনে পরিবার পরিজন, বন্ধুবান্ধব থেকে দূরে থাকা, দেশীয় স্বাদ ও আমেজের জন্য সারাবছর লালায়িত থাকা এই প্রবাসীরা হাজার মাইলের দূরত্ব কষ্ট ভুলে গিয়েছিল পহেলা বৈশাখ উদযাপন অনুষ্ঠানে। আমিরাতের আবুধাবী, দুবাই, আজমান ও বিভিন্ন শহর থেকে প্রবাসীরা পরিবার নিয়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।


অনুষ্ঠান শেষে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কনস্যুলেট দুবাই লেডিস গ্রুপের সভাপতি আবিদা হোসেন, বাংলাদেশ কনস্যুলেট দুবাই ও উত্তর আমিরাতের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর আশীষ কুমার সরকার, প্রবাসী সনাতনী পরিষদের সিনিয়র উপদেষ্টা বিশ্বনাথ দাশ, সভাপতি অজিত কুমার রায়, সহ সভাপতি অজিত চৌধুরী মিঠু, সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার সরকার, অর্থ সম্পাদক কার্তিক সাহা, দপ্তর সম্পাদক দেবব্রত তালুকদার, ফুজাইরাহ বাংলাদেশ সমিতির সভাপতি বাবু তপন সরকার, জাতীয় হিন্দু মহাজোট ইউএই’র সিনিয়র উপদেষ্টা মিনাল কান্তি ধর প্রমুখ।

প্রবাসী সনাতনী পরিষদের সভাপতি অজিত কুমার রায় জানান, প্রবাসের মাটিতে বেড়ে ওঠা তরুণ প্রজন্মকে বাংলা সংস্কৃতির ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আগামীতে আরও বড় পরিসরে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয়া হবে।

 

 

;