লন্ডনে আবারও ইতিহাস সৃষ্টি করলেন লুৎফুর রহমান



সাঈদ চৌধুরী
লুৎফুর রহমান

লুৎফুর রহমান

  • Font increase
  • Font Decrease

লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে তৃতীয়বারের মতো নির্বাহী মেয়র নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রাজনীতিক লুৎফুর রহমান। ৪০ হাজার ৮০৪ ভোট (৫৪.৯%) পেয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লেবার দলীয় জন বিগ্সকে হারিয়ে তিনি বিজয় নিশ্চিত করেছেন। দুইবারের মেয়র জন বিগ্স পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৪৮৭ ভোট (৪৫.১%)।

বৃহস্পতিবার (৫ মে) সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত জনগণ শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট প্রদান করেন। শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় ফলাফল ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনে প্রথম প্রিফারেন্সে লুৎফুর রহমান ৩৯ হাজার ৫৩৩ ভোট (৪৭.০%) আর জন বিগ্স ২৭ হাজার ৮৯৪ ভোট (৩৩.২%) লাভ করেন। ১১ হাজার ৬৩৯ ভোটে লুৎফুর রহমান এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু বৃটেনের নিয়মানুযায়ী এককভাবে ৫১% ভোট না পেলে দ্বিতীয় প্রিফারেন্সের ভোট গণনা করতে হয়। দ্বিতীয় পছন্দে লুৎফুর রহমান পেয়েছেন ১ হাজার ২৭১ ভোট আর জন বিগ্স ৫ হাজার ৫৯৩ ভোট। এতে লুতফুর রহমানের মোট প্রাপ্ত ভোট দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ৮০৪ এবং জন বিগ্স পেয়েছেন মোট ৩৩ হাজার ৪৮৭ ভোট। অর্থ্যাৎ লুতফুর রহমান নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ৭ হাজার ৩১৭ ভোট বেশী পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।

নির্বাচনে ৬ হাজার ৪৩০ ভোট পেয়ে লিবডেমের রাবিনা খান তৃতীয় এবং ৪ হাজার ২৬৯ ভোট পেয়ে কনজারভেটিব পার্টির এলিয়ট উইভার চতুর্থ হয়েছেন। অনেক অপেক্ষা ও উৎকন্ঠার প্রহর কাটিয়ে বহু হিসেব নিকেশের পর আসে বিজয়ের ঘোষণা। আনন্দে মেতে ওঠেন উপস্থিত লুৎফুর সমর্থক অসংখ্য মানুষ। জনতার মেয়র খ্যাত লুৎফুর রহমান পুনঃনির্বাচিত হওয়ায় উল্লসিত জনতা আল্লাহু আকবর বলে স্লোগান দিয়ে মহান স্রষ্টার শুকরিয়া আদায় করেন। তারা মেয়রকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের গর্ব হিসেবে আখ্যায়িত করে তার সাফল্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।

শত অপপ্রচার ও প্রপাগান্ডার পরও জনগণ তাদের হৃদয় উজাড় করে ভালোবেসে তাদের মূল্যবান ভোট দিয়েছেন। তবে যারা তাকে ভোট দেননি তাদেরও সেবা করতে চান তিনি। এ জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন নব নির্বাচিত মেয়র।

জনতার কাতারে এসে লুৎফুর রহমান বলেন, কাউন্সিলের জনগণ আমার প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা রেখেছেন। তাদের কাছে আমার দায়বদ্ধতা আরও বেড়ে গেল। সবাকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করারও অঙ্গীকার করেন তিনি।

৫ মে যুক্তরাজ্যের সর্বত্র স্থানীয় নির্বাচন হলেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাচন। ২০১৫ সালে বিশেষ ইলেক্টোরাল কোর্টের রায়ে লুৎফুর রহমান পদচ্যুত হন। তখনও তিনি নির্বাহী মেয়র ছিলেন। এটাকে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করে নিজের সততার প্রমাণ ও স্থানীয় জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়াস তিনি অব্যাহত রাখেন। তবে আইনের বাধ্যবাধকতায় ৫ বছর কোন নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারেননি। ২০২১ সালে মেয়রাল রেফারেন্ডামে লেবার, কনজারভেটিব এবং লিবডেমসহ সকল দলের বিপরীতে লুৎফর রহমান নির্বাহী মেয়র নির্বাচনের পক্ষে বিজয়ী হন। এরপর তিনি এবারের মেয়র নির্বাচনে নিজের প্রার্থীতা ঘোষণা করেন।

মূলত টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে ২০১০ সালের ২১ অক্টোবরের নির্বাচনে লুৎফুর রহমানের বিজয়ের মধ্যদিয়ে বৃটিশ বাংলাদেশিরা বৃটেনে এক অনন্য ইতিহাস রচনা করেন। ১ম বাংলাদেশি নির্বাচিত নির্বাহী মেয়র হিসেবে ইতিহাসের খাতায় নাম লেখান লুৎফুর রহমান। বৃটেনে ১৩ জন নির্বাচিত মেয়রের মধ্যে তিনি ছিলেন একমাত্র অশ্বেতাঙ্গ এবং প্রথম মুসলিম ও প্রথম বাংলাদেশি মেয়র। অন্য সকলেই শ্বেতাঙ্গ। তখন তার দায়িত্বে ছিল ১.২ বিলিয়ন পাউন্ড বাজেট ও ১১ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী।

তখন বৃটেনের শীর্ষ পত্রিকা ডেইলি টেলিগ্রাফে সেরা ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন মেয়র লুতফুর রহমান। টানা ৩য় বারের মতো তিনি এই তালিকায় স্থান পেয়েছেন। আগের বারের চেয়ে পরের বার তিনি ১৫ ধাপ এগিয়ে ৫৩ নম্বরে স্থান করে নেন। টপ হান্ড্রেডস মোস্ট ইনফ্লুয়েন্সিয়াল ব্যক্তিদের মধ্যে লুৎফুর রহমান ২০১১ সালে ৭৮তম স্থান লাভ করেন। ২০১২ সালে তিনি ১০ জনকে টপকে যান। এভাবে দু বছরে ২৫ জনকে ছাড়িয়ে ৭৮ থেকে ৫৩তে স্থান করে নেন। তবে এই ধরনের প্রভাব ও সাফল্য দেখে একটি মহল ঈর্ষান্বিত হয়ে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে।

ব্রিটেনে কোয়ালিশন সরকার যখন ব্যয় সংকোচন নীতি অবলম্বন করেছে তখন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে প্রাইমারি স্কুলের রিসেপশন ও ইয়ার ওয়ানের শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি স্কুল মিল চালু করেন নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান। এ বাবত বরাদ্দ করেন প্রায় পৌনে ৩ মিলিয়ন পাউন্ড । তার এই সাহসী ও সৃজনশীল উদ্যোগের প্রশংসা করে বিখ্যাত গার্ডিয়ান পত্রিকা নিবন্ধ প্রকাশ করে। বিবিসির সানডে পলিটিক্স অনুষ্ঠানসহ মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় তার কার্যক্রমের প্রশংসা করা হয়েছে। লুৎফুর রহমান ফ্রি স্কুল মিল চালুর অল্প দিনের মাথায় পুরো ব্রিটেনে এই ফ্রি স্কুল মিল চালুর ঘোষণা দেন তৎকালীন ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার নিক ক্লেগ।

নির্বাহী মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে লুৎফুর রহমান ২০০৮ থেকে ২০১০ পর্যন্ত টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে দু টার্ম কাউন্সিল লিডার ছিলেন।পেশাগত জীবনে তিনি ফ্যামিলি এন্ড চাইলড প্রটেকশন ল স্পেশালিষ্ট ও সিনিয়র সলিসিটর।

মেয়র লুৎফুর রহমানের তৃতীয় বারের বিজয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন টাওয়ার হ্যামলেটস সহ গ্রেট বৃটেন এমনকি ইউরোপে বসবাসরত বিভিন্ন শ্রেণি পেশার বিশিষ্টজনেরা। তারা বলেছেন, লুৎফুর রহমান বিগত সময়ে টাওয়ার হ্যামলেটসে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছেন। এই বিজয় তারই প্রতিদান। বৃটেন সরকার যখন সারাদেশে স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি স্কুল মিল বন্ধ করে দেয় তখন লুৎফুর রহমান তা অব্যাহত রেখেছেন। এমনিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া গরিব শিক্ষার্থীদের জন্য ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট, বৃদ্ধদের জন্য ফ্রি হোম কেয়ার সুবিধা, পুরো বৃটেনে সর্বোচ্চ সংখ্যক সোস্যাল হাউজ নির্মাণসহ নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডই তাকে এই সম্মান দিয়েছে বলে তারা মতামত ব্যক্ত করেন।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালে লন্ডন বারা অব টাওয়ার হ্যামলেটসে সরাসরি ভোটে মেয়র নির্বাচনের প্রথা গণভোটের মাধ্যমে চালু হয়। ওই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য লুৎফুর রহমান লেবার পার্টির কাউন্সিলর হিসেবে মনোনয়ন চান। প্রথম দিকে সব কিছু ঠিক থাকলেও পরে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। কমিউনিটির স্বার্থের ব্যাপারে তার স্পষ্ট ও সাহসী অবস্থানের কারনেই বাদ পড়েন তিনি।

এরপর জনতার সমর্থনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন এবং বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। বাঙালি অধ্যুষিত এ বারার উন্নয়নে তিনি ব্যাপক কাজ করেন, যা দেশে-বিদেশে বেশ প্রশংসিত হয়। দ্বিতীয় বার নির্বাচনের আগে ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের (বিবিসি) একটি বিতর্কিত অনুষ্ঠান টাওয়ার হ্যামলেটসের বাসিন্দাদের দারুণভাবে হতাশ করে। বিবিসির বিখ্যাত প্যানারমা অনুষ্ঠানে মেয়র লুৎফুর রহমানকে বলা হয়, তিনি বাঙালিদের বিভিন্ন সংগঠন ও মসজিদে বারার তহবিল থেকে অনৈতিকভাবে বেশি অর্থ প্রদান করেছেন। নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে এই প্রচারণায় তার ইমেজ সংকট দেখা দেয়। শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। তার এক সময়ের রাজনৈতিক দল লেবার পার্টির প্রার্থিরা বিবিসির এই অনুষ্ঠানের সূত্র ধরে তাকে কোণঠাসা করতে চান। বিষয়টি নিয়ে পুলিশি তদন্তও চলে। অবশ্য পুলিশি তদন্তে তার বিরুদ্ধে কিছু না পাওয়ায় এটি ষঢ়যন্ত্রকারিদের জন্য ছিল হিতে বিপরীত।

দৃঢ়চেতা ও সাহসী ব্যক্তিত্ব লুৎফুর রহমান ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক রেসিজমের বিরুদ্ধে ঐক্য ও ভালবাসার মন্ত্রে উজ্জিবিত হয়ে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন তার নতুন দল আসপায়ার, ক্যাম্পেইন টিম ও সমর্থকদের। ফলে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে তার বিজয়ের মাধ্যমে জনতার বিজয় নিশ্চিত হয়েছে। অবশ্য লুৎফুর বিরোধী প্রচারণায় কতিপয় বাঙালির তৎপরতাও কম ছিল না। কাউন্সিলার পদে জনতার রায়ে এরা অনেকেই ধরা খাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইংল্যান্ডের যে কোনও কাউন্সিলের তুলনায় বেশি সংখ্যক সোস্যাল হাউজ নির্মাণের পুরস্কার হিসেবে সরকারের তরফ থেকে সর্বোচ্চ হাউজিং বোনাস পেয়েছে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল। মেয়র লুৎফুর রহমানের নেতৃত্বে টানা দুবছর সর্বোচ্চ সংখ্যক সোস্যাল হাউজ নির্মাণের কারণে সরকারের বিশেষ স্কিম থেকে সাড়ে ১৯ মিলিয়ন পাউন্ড অতিরিক্ত বরাদ্দ পেয়েছে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জন্য এ অর্থ বরাদ্দ দেয় সরকার। এর আগের মেয়াদেও প্রায় ১৬ মিলিয়ন পাউন্ড বোনাস পেয়েছিল টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল। ফলে ২০১১ সালের পর থেকে টাওয়ার হ্যামলেটসের মোট বোনাস বরাদ্দ দাঁড়াবে ৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের কাছাকাছি।

হাউজিং বিষয়ক ইন্ডাস্ট্রি ম্যাগাজিন ইনসাইড হাউজিং সহ বৃটেনের মেইনস্ট্রিম সংবাদ মাধ্যমে টাওয়ার হ্যামলেটসের এ সফলতার খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে। ইংল্যান্ডের বিভিন্ন কাউন্সিল এলাকায় নতুন বাড়ি নির্মাণকে উৎসাহিত করতে ২০১১ সালে সরকার নতুন এ স্কিম চালু করে। লীগ টেবিলে বোনাস পাওয়ার দৌড়ে প্রথম স্থানে ছিল টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল। এর আগের মেয়াদেও টাওয়ার হ্যামলেটস প্রথম স্থান দখল করেছিল। এক্ষেত্রে মেয়র লুৎফুর রহমান বলেন, হাউজিং আমার অন্যতম অগ্রাধিকার ভিত্তিক খাত। গত টার্মে ইংল্যান্ডে আমরাই সর্বোচ্চ সংখ্যক এফর্ডেবল সোস্যাল হাউজ নির্মাণ করেছি। সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া সর্বশেষ এ স্বীকৃতি তারই সাক্ষ্য বহন করে।

পারিবারিক জীবনে বিবাহিত লুৎফুর রহমান দু সন্তানের জনক। ১৯৫৭ সাল থেকে তার পিতা বৃটেনে বসবাস করছেন। তিনি চার বছর বয়সে বৃটেনে আসেন সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার সিকন্দরপুর গ্রাম থেকে। সিলেট তথা বাংলাদেশের এই কৃতিমান রাজনীতিকের প্রতি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের পক্ষ থেকে অফুরান শুভেচ্ছা।

লেখক: লন্ডন প্রবাসী। সাংবাদিক, কবি ও কথাসাহিত্যিক।

   

কুয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত চট্টগ্রামের আকবর



কুয়েত করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুয়েত
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কুয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় আকবর হোসেন নামে এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। তিনি চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার রহমতপুর গ্রামের আদর্শ পাড়া হাদির গো বাড়ির সুলতান আহমদের ছেলে।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) রাতে কুয়েতের রাবিয়া নামক স্থানে ইশারা আল কাসেমিতে রাস্তা পারাপারের সময় গাড়ির ধাক্কা লেগে এই দুর্ঘটনায় ঘটে।

নিহতের আত্মীয় সাখাওয়াত হোসাইন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, 'বেশ কিছুদিন যাবৎ তিনি মানসিকভাবে চাপের মধ্যে ছিলেন। শুক্রবার রাতে রাস্তা পারাপার করতে গেলে দুর্ঘটনার শিকার হয়।এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি।'

বর্তমানে মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়া শেষে তার মরদেহ দ্রুত দেশে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা।

;

দেশের ইলিশের টানে লন্ডন থেকে গ্লাসগো



ড. হাসিন মাহবুব চেরী, সিনিয়র স্পেশালিস্ট সায়েন্টিস্ট, ইউকে
দেশের ইলিশের টানে লন্ডন থেকে গ্লাসগো

দেশের ইলিশের টানে লন্ডন থেকে গ্লাসগো

  • Font increase
  • Font Decrease

একটা বয়সের পরে আমরা আটকা পড়ি শুধুই মায়ার টানে। কোন মানুষটা আমাদের মন থেকে মায়া করে, এটাই সব কিছুর ঊর্ধ্বে বিবেচ্য হয় আমাদের কাছে (অন্তত আমার কাছে ব্যাপারটা এখন তাই)।

কারণ, আমরা বুঝতে শিখি যে, আমাদের আশেপাশে বন্ধুরূপী অসংখ্য মুখের ভিড়ে শুধু মাত্র সেই মুখগুলোই মূল্যবান - যার কাছে আমি মূল্যবান। আর ঠিক একারণেই সুদূর বিলাতের বিভূঁই পরিবেশে ফারহানা হোসেন আপু যখন বললো দেশ থেকে আসা ইলিশ তোমাকে আর Rumana Newlands কে ছাড়া খাবো না বলে তুলে রেখেছি, কবে আসবে? মনে হলো এই ভালোবাসার ডাক পাবার মতো ভাগ্য আসলে ক'জনেরই বা হয়? তাই প্রচন্ড ব্যস্ত সময়ের মধ্যেই হুট করে একবেলার জন্যে লন্ডন থেকে গ্লাসগো উড়ে চলে গেলাম।

এই ঝটিকা সফর বহু কারণেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে, তবে অর্ধেক দিনের এই মেমরি আমাকে আবার শেখালো:

Life is not about quantity, it`s all about quality. So it doesn`t matter what you have in life, but who you have only matters.

আর জীবনে নিজের পরিবারের মানুষ ছাড়াও কারো সত্যিকারের ভালোবাসা পাওয়া আসলেই বিশাল ভাগ্যের ব্যাপার। ফারহানা আপু এবং সাজ্জাদ ভাইয়ার আন্তরিকতায় আবারো মুগ্ধ হতে হতে তাই ভাবছিলাম, যদিও আমি সবসময় সবার থেকে ভালো জিনিস গুলো শেখার চেষ্টা করি তবে কিছু কিছু কোয়ালিটি আসলে মানুষের মধ্যে আসে 'ইন বিল্ট' হয়ে, যেটা অন্য কেউ হয়তো হাজার চেষ্টা করেও আয়ত্ত্ব করতে পারে না!

অন্যকে স্পেশাল এবং গুরুত্বপূর্ণ ফিল করানোও ঠিক সেরকমই একটা ইন বিল্ট কোয়ালিটি যেটা বেশিরভাগ মানুষের মধ্যেঔ অনুপস্থিত। যেমন আপু এবং ভাইয়া (আমার দেখা দুই অন্যতম ব্রিলিয়ান্ট এবং down to earth মানুষ) যেভাবে ওয়ার্কিং ডে 'র শেষে আমাকে এয়ারপোর্ট থেকে পিক করা থেকে শুরু করে নিজের হাতে রান্না করা বহু পদের মুখরোচক খাবার এবং নিজের হাতে বানানো মিষ্টি'র আয়োজন করলেন, স্কটল্যান্ডে এসে আমার ভাইয়ের সাথে দেখা হবে না বলে আমার ভাই কেও আবেরডিন থেকে ডেকে নিয়ে আসলেন, এবং আসবার পথে একগাদা খাবার প্যাক করে ব্যাগে নিজের হাতে ঢুকিয়ে দিয়ে একদম এডিনবরা এয়ারপোর্ট এর সিকিউরিটি পর্যন্ত এসে বিদায় দিয়ে গেলেন - এই আন্তরিকতাটা বোধহয় একেবারে মনের গভীর থেকে না আসলে করা সম্ভব নয়।

আসলে জীবনে আমরা বহু অপাত্রে আমাদের ভালোবাসা এবং সময় দান করে নষ্ট করি, বহু মানুষের ব্যবহার দেখে মনে হয় সত্যিই বোধহয় স্বার্থপর না হওয়াটাই আজকাল বোকামি। তবে পরমুহূর্তেই আবার যখন এরকম সুন্দর মনের মানুষ গুলোর আন্তরিকতায় অবাক এবং মুগ্ধ হই, তখন মনে হয় এই সুন্দর মনের মানুষগুলোর উপস্থিতির জন্যেই আসলে জীবনটা এতো সুন্দর। আর এরকম মানুষের উপস্থিতি আমাদের ঠিক একইভাবে ওনাদের মতোই অন্য কারো জীবনেও নিজের উপস্থিতি দিয়ে তার জীবনের কিছু সুন্দর মুহূর্ত উপহার দিতে অনুপ্রেরণা যোগায়।

;

শেখ হাসিনার সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দৃঢ় করবে: থাই সরকারের মুখপাত্র



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাউথ-ইস্ট এশিয়া (ব্যাংকক, থাইল্যান্ড)
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ পর থাইল্যান্ডে আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী বুধবার (২৪ এপ্রিল) তিনি থাইল্যান্ডে এসে পৌঁছাবেন। পাঁচদিনের সফর শেষে সোমবার (২৯ এপ্রিল) তিনি দেশে ফিরে যাবেন।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) থাই সরকারের মুখপাত্র চাই ওয়াচারানক স্থানীয় গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানান।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শ্রেত্থা থাবিসিন এর আমন্ত্রণে শেখ হাসিনা থাইল্যান্ডে আসছেন।

শেখ হাসিনার ভ্রমণের সময় উভয় দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি এবং এমওইউ স্বাক্ষর হবে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সফরসঙ্গীদের জন্য গভর্মেন্ট হাউজে দুপুরের খাবারের আয়োজন করেছেন শ্রেত্থা থাবিসিন।

চাই ওয়াচারানক জানান, ২০০২ সালের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এটি প্রথম থাইল্যান্ড সফর। এই সফরে দুই দেশের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে দ্বি-পাক্ষীক সম্পর্ক শক্তিশালী করতে আলোচনা করতে পারবেন। এছাড়াও বিভিন্ন খাতে সহযোগীতা বৃদ্ধি, বিশেষত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বিষয়টি নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এছাড়াও যোগাযোগ, পর্যটন এবং দুই দেশের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে শেখ হাসিনার এই সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে জানান থাই সরকারের মুখপাত্র। 

;

আমিরাতে বর্ণিল আয়োজনে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব



তোফায়েল আহমেদ পাপ্পু, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

পহেলা বৈশাখ বাঙালির সর্বজনীন উৎসব। শুধু দেশে নয়, সারা বিশ্বে বসবাসরত বাঙালিরা দিনটি সাড়ম্বরে পালন করে থাকে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে এবার ঈদের ছুটি অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ ছিল। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পহেলা বৈশাখ। যা প্রবাসী বাংলাদেশিদের আনন্দ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। লোকায়ত সংস্কৃতির ডালা সাজিয়ে বর্ণিল উৎসব আয়োজনের মধ্যদিয়ে দেশটিতে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব উদযাপিত হয়েছে।

ভিনদেশের মাটিতেও বাঙালি সংস্কৃতির চিরায়ত পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হলো নানা অনুসঙ্গে। দেশটিতে বসবাসরত বাঙালিদের মধ্যেও ছিল আনন্দের কলরব। আর এই আনন্দ উচ্ছ্বাসকে সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে প্রবাসী সনাতনি ঐক্য পরিষদের চমৎকার আয়োজনের মধ্য দিয়ে এক নতুন মাত্রা পেয়েছে।


রোববার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আমিরাতের সারজায় আল জায়েদ ফার্ম হাউজে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের শুরুতে পহেলা বৈশাখ ১৪৩১ বাংলা নববর্ষ বরণ করে নিতে সকাল সাড়ে ১০টায় মঙ্গল শোভযাত্রা র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। পরে নাচ, গান, মধ্যাহৃভোজ ও নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে বর্ষবরণ উদযাপন করেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

একাকী প্রবাসজীবনে পরিবার পরিজন, বন্ধুবান্ধব থেকে দূরে থাকা, দেশীয় স্বাদ ও আমেজের জন্য সারাবছর লালায়িত থাকা এই প্রবাসীরা হাজার মাইলের দূরত্ব কষ্ট ভুলে গিয়েছিল পহেলা বৈশাখ উদযাপন অনুষ্ঠানে। আমিরাতের আবুধাবী, দুবাই, আজমান ও বিভিন্ন শহর থেকে প্রবাসীরা পরিবার নিয়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।


অনুষ্ঠান শেষে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কনস্যুলেট দুবাই লেডিস গ্রুপের সভাপতি আবিদা হোসেন, বাংলাদেশ কনস্যুলেট দুবাই ও উত্তর আমিরাতের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর আশীষ কুমার সরকার, প্রবাসী সনাতনী পরিষদের সিনিয়র উপদেষ্টা বিশ্বনাথ দাশ, সভাপতি অজিত কুমার রায়, সহ সভাপতি অজিত চৌধুরী মিঠু, সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার সরকার, অর্থ সম্পাদক কার্তিক সাহা, দপ্তর সম্পাদক দেবব্রত তালুকদার, ফুজাইরাহ বাংলাদেশ সমিতির সভাপতি বাবু তপন সরকার, জাতীয় হিন্দু মহাজোট ইউএই’র সিনিয়র উপদেষ্টা মিনাল কান্তি ধর প্রমুখ।

প্রবাসী সনাতনী পরিষদের সভাপতি অজিত কুমার রায় জানান, প্রবাসের মাটিতে বেড়ে ওঠা তরুণ প্রজন্মকে বাংলা সংস্কৃতির ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আগামীতে আরও বড় পরিসরে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয়া হবে।

 

 

;