থ্যাংকস গিভিং ডে উপলক্ষে ঘরে ঘরে টার্কি ভোজ
বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) উদযাপিত হয়েছে থ্যাংকস গিভিং ডে। এ উপলক্ষ্যে আমেরিকানদের পাশাপাশি বাংলাদেশি কমিউনিটিও উৎসবমুখর পরিবেশে দিনটি উদযাপন করে।
দিনটিতে ব্যক্তি ও পারিবারিক উদ্যোগ ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের অয়োজন করা হয়। ঘরে ঘরে টার্কি ভোজের পাশাপাশি গান-বাজনারও আয়োজন হয়। উল্লেখ্য, আমেরিকার এক সর্বজনীন সামাজিক-সাংস্কৃতিক উৎসব থ্যাংকস গিভিং ডে। টার্কি ভোজ থ্যাংকস গিভিং ডে’র অন্যতম অনুষঙ্গ। আমেরিকানদের কাছে খুবই জনপ্রিয় খাবার এটি। স্বজনদের সঙ্গে টার্কি ভোজের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করা রীতিমত ঐতিহ্যের অংশ।
এদিকে থ্যাংকস গিভিং ডে উদযাপিত উপলক্ষে থ্যাংকস প্রতি বছরের মতো এ বছরও ম্যাসির উদ্যোগে ম্যানহাটানে ২৮ নভেম্বর দুপুরে বর্ণাঢ্য প্যারেড আয়োজিত হয়। হাজার হাজার নরনারী প্যারেডটি উপভোগ করেন। অপরদিকে থ্যাংকস গিভিং ডে-তে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘সারপ্রাইজ ভিজিট’-এ আফগানিস্তান সফরে গিয়ে সেনা সদস্যদে সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
থ্যাংকস গিভিং ডে উদযাপন উপলক্ষে গত ২৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি নার্গিস আহমেদের জ্যামাইকার বাসায় টার্কি ভোজের আয়োজন করা হয়। এতে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি অংশ নেন। অনুষ্ঠানে প্রবাসের শিল্পীরা মধ্যরাত পর্যন্ত সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
অপরদিকে নিউইয়র্কের রিচমন্ডহিলে বসবাসকারী শহীদ-শেলী ও জহির-রেবেকা দম্পতির উদ্যোগে ওই দিন সন্ধ্যায় পারিবারিকভাবে থ্যাংকস গিভিং ডে উদযাপন করা হয়।
নিউইয়র্কে আর্তমানবতার সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান মজুমদার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ এন মজুমদার এবং বিশিষ্ট এটর্নি এইচ ব্রুশ ফিসার সংগঠনটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে এদিন সকাল ১১টায় খলিল বিরিয়ানির বক্স ব্রঙ্কসের একটি চার্চের নির্বাহীর হাতে হাতে তুলে দেন। এরপর তারা ব্রঙ্কসের একটি শেল্টারেও বিরিয়ানি বিতরণ করেন।
মজুমদার ফাউন্ডেশনের ডাইরেক্টর রাশেদ মজুমদারের পরিচালনায় এ সময় আরো বক্তব্য দেন স্থানীয় কমিউনিটি বোর্ডের ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার উইলিয়াম রিভারা, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট ড. সারাহ, ডা. নাহিদ খান, মোজাফফর হোসেন, এ ইসলাম মামুন, আবুল খায়ের আকন্দসহ অনেকে।
এ সময় প্রবাসী আইনজীবী মোহাম্মদ এন মজুমদার জানান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সহমর্মিতার মানবিকতায় উজ্জ্বীবিত হয়ে মজুমদার ফাউন্ডেশন বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিতরণ করেছে বিরিয়ানি। মানুষে মানুষে সুসম্পর্ক সৃষ্টিতে এটি একটি ভালো উদ্যোগ। বিগত কয়েক বছর ধরে এ ধরনের কর্মসূচি আয়োজন করে আসছে সংগঠনটি।
বাপা বৃহস্পতিবার ব্রঙ্কসে টার্কি ভোজ পার্টির আয়োজন করে। এতে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি অংশ নেন। বাপা প্রেসিডেন্ট ফরিদা ইয়াসমীন আমন্ত্রিত অতিথিদের স্বাগত জানান।
মৌলভীবাজার ডিস্ট্রিক্ট অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকা’র উদ্যোগে থ্যাংকস গিভিং ডেতে সিটির সানি সাইডের ফোর ফ্লেভার রেস্টুরেন্টে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে মৌলভীবাজারের বিপুল সংখ্যক প্রবাসী, সংগঠনের সব কর্মকর্তা, ট্রাস্টিবোর্ড ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সপরিবারে এবং কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অংশ নেন। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলুর রহমান, সিনিয়র সহসভাপতি মাসুক মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান এবং কোষাধ্যক্ষ মঈনুল ইসলাম আগত অতিথিদের স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতার শিল্পী অনিন্দিতা চৌধুরী, প্রবাসী শিল্পী মুক্তধর, মনিকা রায়সহ অনেকে। তবলায় ছিলেন শীতেষ ধর ও পিনু সেন দাস। উল্লেখ্য, এবারই প্রথম কোনো বাংলাদেশি সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে ব্যাপক আয়োজনে থ্যাংকস গিভিং ডে উদযাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে ডিজিটাল ট্রাভেলস এস্টারিয়ার সত্ত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম, পূর্ব জড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকার নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান শেফাজ, শ্রীমঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুমন এলাহী, মৌলভীবাজার জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামীম চৌধুরী, ব্যবসায়ী আরজান খান, বড়লেখা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল জব্বার, সমাজসেবী মইনুজ্জামান চৌধুরী, জাকির হোসেন, এমরান তরফদার, জাভেদ আহমদসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
থ্যাংকস গিভিং ডে উপলক্ষে বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ‘নয়ন-আলী’ প্যানেলের পক্ষ থেকে জ্যামাইকার পার্সন্স বুলেভার্ডস্থ একটি রেস্টুরেন্টে গত শুক্রবার এক পার্টির আয়োজন করা হয়। এতে প্যানেলটির সভাপতি পদপ্রার্থী কাজী আশরাফ হোসেন নয়ন ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মোহাম্মদ আলীসহ কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
হৃদয়ে বাংলাদেশ: সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন হৃদয়ে বাংলাদেশ’র উদ্যোগে উদযাপিত হয় থ্যাংকস গিভিং ডে। গত ২৮ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ব্রঙ্কসের এশিয়ান ড্রাইভিং স্কুল পার্টি সেন্টারে বর্ণাঢ্য এ আয়োজনের ভোজে টার্কি ছাড়াও ছিল মজাদার সব খাবার-দাবার। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট শিল্পী শারমিন তানিয়া ও শিপু চাকলাদারের মনমুগ্ধকর সঙ্গীত পরিবেশনা উৎসবে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।
হৃদয়ে বাংলাদেশ’র সভাপতি সাইদুর রহমান লিংকনের সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পল্লব সরকারের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাঙালি চেতনা মঞ্চের সভাপতি আবদুর রহিম বাদশা, খলিল বিরিয়ানি হাউজের সত্ত্বাধিকারী মো. খলিলুর রহমান, হৃদয়ে বাংলাদেশ’র সাহিত্য সম্পাদক মাকসুদা আহমেদ, নারী নেত্রী মেহের চৌধুরী, একাত্তরের যুদ্ধবন্দী আব্দুর রহমান, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট শাহ বদরুজ্জামান রুহেল, মাসুদ রানা, রায়হান জামান রানা, বান্টি প্রমুখ।
সাইদুর রহমান লিংঙ্কন বলেন, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে প্রবাস প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাবে সংগঠনটি। তিনি আসন্ন বিজয় দিবসের উৎসব আয়োজন সফলে সবার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।