যুক্তরাজ্যে প্রস্তুত ৫০টি হাসপাতাল, আগামী সপ্তাহেই শুরু টিকা প্রয়োগ
করোনা টিকাবিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ফাইজার ও জার্মান কোম্পানি বায়োএনটেকের তৈরি করোনা টিকা ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাজ্য। দেশটিতে যারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন, আগামী সপ্তাহের শুরুতেই তাদের এই টিকা দেওয়া শুরু হবে।
ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রক সংস্থা, এমএইচআরএ বলছে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ৯৫ শতাংশ সক্ষম এই টিকাটি এখন ব্যবহারের জন্য নিরাপদ। আগামী সপ্তাহের শুরুতেই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা মানুষজনের ওপর টিকার প্রয়োগ শুরু হবে।
ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) প্রধান নির্বাহী স্যার সাইমন স্টিভেনস বলেছেন, স্বাস্থ্য পরিষেবায় দেশের ইতিহাসে সবচয়ে বড় টিকা প্রদান কর্মসূচি শুরু করতে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রায় ৫০ টি হাসপাতাল তৈরি রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সম্মেলন কেন্দ্রগুলিতেও টিকা প্রদানের বুথ স্থাপন করা হচ্ছে।
টিকা প্রদান কর্মসূচির শুরুতে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, বয়স্ক ব্যক্তি অর্থাৎ যাদের বয়স ৮০ বছরের বেশি এবং মৃত্যুর সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন এমন ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্য ৪ কোটি টিকার ডোজ অর্ডার করেছে। এর মধ্যে এক কোটি টিকার ডোজ খুব শিগগিরই যুক্তরাজ্যে সরবরাহ করা হবে। প্রথমদিনেই ৮ লাখ ডোজ আসবে।
টিকার অনুমোদনের পরপরই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এক টুইট বার্তায় জানান, কোভিড -১৯ টি টিকা আমাদের জীবনের সুরক্ষা দেবে এবং আমরা আবার দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নেব।
ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক এমএইচআরএ’র সিদ্ধান্তকে ‘সু-সংবাদ’ আখ্যা দিয়ে বলেন, আগামী সপ্তাহের শুরুতেই আমরা করোনা প্রতিরোধে যুক্তরাজ্য জুড়ে টিকা দেওয়ার কর্মসূচি শুরু করব।
তিনি বিবিসিকে বলেন, মানুষ সকালের নাস্তা সেরে এনএইচএস-তে টিকা দেওয়ার জন্য যাবে। আমি আত্মবিশ্বাসী পরবর্তী গ্রীষ্মকাল পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আনন্দে কাটাব।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের ইমিউনোলজির অধ্যাপক ড্যানি আল্টম্যান অনুমোদনের সংবাদকে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি একটি কার্যকর টিকার অনুমোদনকে বীরত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ড বলে উল্লেখ করেছেন।
এদিকে মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ফাইজার এটিকে বিজ্ঞানের জয় বলে মানছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকার প্রয়োগ শুরু হলেও মানুষজনকে এখনো সতর্ক অবস্থায় থাকতে হবে এবং করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে স্বাস্থ্য সতর্কতার নিয়মকানুন কড়াকড়িভাবে পালন করতে হবে। তার মানে এখনো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। সেই সঙ্গে উপসর্গ দেখা গিলেই পরীক্ষা করাতে হবে এবং তাদের বিচ্ছিন্ন করে রাখতে হবে।
এখনও পর্যন্ত ছয়টি দেশে ৪৩ হাজার ৫০০ জনের শরীরে ফাইজার ও বায়োএনটেক টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে এবং এতে ঝুঁকিপূর্ণ কিছু দেখা যায়নি। এই টিকাটির ক্ষেত্রে একেবারে ভিন্ন ধরনের একটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে যাতে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থাকে প্রশিক্ষিত করে তোলার জন্য ভাইরাসটির জেনেটিক কোড শরীরে ইনজেক্ট করা হয়।
ফাইজার ছাড়াও ইতোমধ্যে আরেক মার্কিন কোম্পানি মডার্না জানিয়েছে, তাদের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন চূড়ান্ত পরীক্ষায় প্রায় ৯৫ শতাংশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। তারা অনুমোদনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনে আবেদন করেছে। এছাড়া রাশিয়ার উদ্ভাবিত স্পুটনিক নামক ভ্যাকসিনটিও ৯০ শতাংশের বেশি কার্যকর।
সূত্র: বিবিসি, ডয়েচে ভেলে