২৮ ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত জাপানে প্রবেশ নিষিদ্ধ
করোনার তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে জাপান। ডিসেম্বরে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে এখানে। শনাক্ত ও মৃত্যুর নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে।
এরই প্রেক্ষিতে ২৮ ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত বিদেশি নাগরিকদের নতুনভাবে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় দফা সংক্রমণের ঢেউ চলাকালে দেশটিতে যে পাঁচজন নতুন ধরনের করোনাভাইরাসে সংক্রমিত বলে শনাক্ত হয়েছেন, তাঁরা সবাই সম্প্রতি যুক্তরাজ্য থেকে দেশে এসেছেন।
শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) বার্তা সংস্থা রয়টার্স, জাপানের নিক্কেই এশিয়ান রিভিউয়ের এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এমনটি জানায়।
এদিকে যেই পাঁচ জন করোনায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছন তাঁদেরকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে জাপানের গণমাধ্যম। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এই পাঁচজনের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত ও সংক্রমণের সম্ভাব্য পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
করোনা সংক্রমণ বাড়লেও নতুন করে লকডাউন কিংবা জরুরি অবস্থা ঘোষণার চিন্তা করছে না জাপান সরকার। প্রথম জরুরি অবস্থার বিরূপ অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে সরকারের মাথাব্যথা এখনো কাটেনি। ফলে সেই পথে এখন আর জাপান সরকার হাঁটতে চাইছে না। তবে কিছু নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা সীমিত আকারে আবারও আরোপ করা হচ্ছে।
করোনা নিয়ে জাপানের অর্থনীতিতেও চলছে সংকট। দুর্দিনে ভোক্তা চাহিদার ব্যাপক পতন হওয়ায় কেনাকাটা গেছে কমে। ফলে ভুগছে জাপান। এ অবস্থা কত দিন চলবে, তা জানা নেই। তবে জাপান সরকার আশা করছে, টিকাদান কর্মসূচি শেষে আলোর দেখা হয়তো পাওয়া যাবে।
শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, চতুর্থ দিনের মতো দেশটিতে এক দিনে ৩ হাজার ৮৭৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং মৃত্যুবরণ করেছে ৪৬ জন। প্রতিদিনের তুলনায় এটি একটি নতুন রেকর্ড। বছরের শেষের দিকে এবং নববর্ষের ছুটির দিনে সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি সংখ্যক হিসাবে দেখা গেছে।
এর আগে শুক্রবার তৃতীয় দিনে শনাক্ত হয়েছিল ৩ হাজার ৮০০ এবং মৃত্যুবরণ করেছিল ৬৪ জন।
বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেশটিতে এক দিনে ৩ হাজার ২৭১ জনের করোনা শনাক্তের খবর দিয়েছিল। মৃতুবরণ করেছিল ৫৬ জন। করোনায় জাপানে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড ছিল এটাই। এরপর বৃহস্পতিবার আবার সেই রেকর্ড ভেঙে গেছে।
প্রসঙ্গত, চীনের উহানে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের খবরের সপ্তাহ তিনেক পর জানুয়ারিতে জাপানে প্রথম করেনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল। ৮ এপ্রিল থেকে একমাসের জন্য ৪৭ টি প্রদেশের মধ্যে কোভিড-১৯ আক্রান্ত সাতটি প্রদেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। ওই সময় পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছিল ৪ হাজার ১০০ জন, আর মারা গিয়েছিল ৯৩ জন। এরপর ৬ মে দ্বিতীয় মেয়াদে জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানোর সময় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার ১৯৮। সে সময় প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র ৫০ জন। দ্বিতীয় মেয়াদে জরুরি অবস্থা বাড়ানোর ঠিক ১০ দিন পর দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা নেমে আসে ২৮ জনে। ২৫ মে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করার সময় দেশ জুড়ে মোট আক্রান্ত হয়েছিল ১৬ হাজার।
জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করলেও জাপানে অফিস-আদালত কার্যত বন্ধ ছিল। ২৫ মে থেকে সরকার নিয়ম বেঁধে দিলে কাজে ফেরে জাপানিরা। ওই সময় মৃতের সংখ্যা ছিল সাড়ে ৭শ ৭৭ জন।