পকেট ক্যালকুলেটরের জনকের মৃত্যু
গণনার জটিল হিসাবপত্র সহজ হতে থাকে গত শতকের সত্তরের দশকের শুরুর দিক থেকে। বৈদ্যুতিক গণকযন্ত্র বলতে তখন মূলত কম্পিউটার কিছু কিছু গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হতে থাকে। তারপর বাজারের আসে পাসকালের আবিষ্কৃত ক্যালকুলেটার।
কিন্তু এসবের আয়তন, ওজন কিংবা দাম কোনোটাই সাধ্যের মধ্যে ছিল না সাধারণ মানুষের। ঠিক সেই সময়ই ইলেকট্রনিকের বাজারে সাড়া ফেলে দেন এক তরুণ ব্রিটিশ উদ্ভাবক। দাবি করেন, হাতের তালুর আয়তনের বৈদ্যুতিক গণকযন্ত্রের নকশা বানিয়ে ফেলেছেন তিনি। তবে অধিকাংশ বহুজাতিক প্রযুক্তি সংস্থাই সেসময় বিশ্বাস করেনি তার এই দাবি।
বছর দুয়েক পর ১৯৭২ সালে সেই নকশারই সফল রূপায়ন করেন তিনি। চমকে দেন গোটা বিশ্বকে। তার নাম ক্লাইভ সিনক্লেয়ার। বৈজ্ঞানিক কৃতিত্বের জন্য পরে লাভ করেন স্যার উপাধি।
স্যার ক্লাইভ সিনক্লেয়ার চলে গেলেন পরলোকে। বর্তমান প্রজন্মের অন্যতম ব্রিটিশ উদ্ভাবক, প্রযুক্তিবিদ, উদ্যোক্তা এবং পকেট ক্যালকুলেটরের জনক হিসেবে তিনি ইতিহাসে স্মরণীয়। আমজনতার নাগালের মধ্যে জটিল হিসাবপত্রের সহজ ও সুলভ ব্যবস্থা উপস্থাপন তারই কৃতিত্ব। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত অসুখে আক্রান্ত থেকে গত ১৬ সেপ্টেম্বর লন্ডনে নিজের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
তবে শুধু আবিষ্কর্তা কিংবা উদ্ভাবকই নন, প্রযুক্তির জগতে এক বর্ণময় চরিত্রের নাম সিনক্লেয়ার। ১৯৪০ সালে দক্ষিণ লন্ডনের নিকটবর্তী রিচমন্ডে জন্ম সিনক্লেয়ারের। পিতা, পিতামহ উভয়েই ছিলেন প্রযুক্তিবিদ। দু’জনেই জড়িত ছিলেন খ্যাতনামা ব্রিটিশ জাহাজ প্রস্তুতকারক সংস্থা ভাইকারসের সঙ্গে।
ফলে ছোট থেকেই প্রযুক্তির পরিবেশের মধ্যেই বড়ো হয়ে ওঠেছেন তিনি। তবে যান্ত্রিক প্রযুক্তির বদলে চিরকালই বৈদ্যুতিন প্রযুক্তির প্রতিই বেশি আগ্রহী ছিলেন সিনক্লেয়ার। আর প্রযুক্তির প্রতি সেই মাদকতার দরুণ মাত্র ১৭ বছর বয়সেই পড়াশোনার পাঠ গুটিয়ে স্কুল ছেড়েছিলেন মেধাবী সিনক্লেয়ার। উদ্দেশ্য, বৈদ্যুতিন প্রযুক্তির বাজারকে সামনে থেকে প্রত্যক্ষ করা। সে লক্ষ্যে স্বল্প বেতনেই কাজ শুরু করেছিলেন প্রযুক্তি সাংবাদিক হিসাবে। অবশ্য পরবর্তীতে সাংবাদিকতার সঙ্গেই সেন্ট জর্জ কলেজ থেকে প্রায়োগিক গণিতে স্নাতকতা করেন তিনি।
বিজ্ঞানের কঠিন বিষয়কে সাধারণ মানুষের ব্যবহারিক জীবনে সহজে ব্যবহারের দৃষ্টান্তের জন্য স্যার ক্লাইভ সিনক্লেয়ারকে মনে রাখবে সবাই।