প্রায় সব আর্মেনীয়ান নাগোর্নো-কারাবাখ ছেড়ে পালিয়েছে

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

আর্মেনিয়া সীমান্তে অপেক্ষমান শরণার্থীরা। ছবি : সংগৃহীত

আর্মেনিয়া সীমান্তে অপেক্ষমান শরণার্থীরা। ছবি : সংগৃহীত

নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চল ছেড়ে এক লাখেরও বেশি জাতিগত আর্মেনিয়ান পালিয়েছে বলে দাবি করেছে আর্মেনিয়া।

বিবিসি জানিয়েছে, গত সপ্তাহে আজারবাইজান ওই অঞ্চলটি দখল করার পর থেকে এই ছিটমহল আর থাকার সাহস করেনি জাতিগত আর্মেনিয়ানরা।

বিজ্ঞাপন

তবে আজারবাইজান বলেছে, তারা অঞ্চলটিকে পুনরায় একীভূত করতে এবং এর সকল বাসিন্দাদের প্রতি ন্যায্য আচরণ করতে চায়। তবে, আজারবাইজানের ওই ঘোষণাকে "মিথ্যা" বলে অভিহিত করেছেন আর্মেনিয়ার এক মুখপাত্র।

এদিকে, আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র নাজেলি বাগদাসারিয়ান বলেছেন, গত সপ্তাহে নাগোর্নো-কারাবাখের মোট জনসংখ্যা ১ লাখ ২০ হাজারের মধ্যে আনুমানিক ১ লাখ ৪১৭ জন শরণার্থী আর্মেনিয়ায় প্রবেশ করেছে।

বিজ্ঞাপন

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) বলেছে, প্রায় ১ লাখ মানুষ পালিয়ে গেছে এবং যারা পালিয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই ক্ষুধার্ত, ক্লান্ত এবং অবিলম্বে তাদের সহায়তা প্রয়োজন"।

কারাবাখের সাবেক বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকর্তা আর্তাক বেগলারিয়ান বলেছেন, নাগর্নো-কারাবাখ বাসিন্দাদের শেষ দল শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) আর্মেনিয়ায় পৌছেছে।

তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, "প্রায় কয়েকশ লোক রয়ে গেছে, যাদের বেশিরভাগই কর্মকর্তা, জরুরী পরিষেবার কর্মচারী, স্বেচ্ছাসেবক, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন কিছু ব্যক্তি।"

জাতিসংঘ বলেছে, মানবিক পরিস্থিতির মূল্যায়ন করার জন্য তারা চলতি সপ্তাহান্তে নাগর্নো-কারাবাখে একটি মিশন পাঠাবে।

নাগর্নো-কারাবাখ অন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের অংশ হিসাবে স্বীকৃত, যা গত তিন দশক ধরে জাতিগত আর্মেনিয়ানদের দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছিল।

দক্ষিণ ককেশাসের এই পার্বত্য অঞ্চলটি আর্মেনিয়া দ্বারা সমর্থিত এবং এর মিত্র রাশিয়াও।

৭০ বছর বয়সি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ভেরা পেট্রোসিয়ান মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রয়টার্সকে বলেন, ‘আমি সবকিছু পিছনে ফেলে এসেছি। আমি জানি না আমার ভাগ্যে কী আছে। আমার কিছুই নেই। আমি কিছুই চাই না।’ আজারবাইজানের সঙ্গে সীমান্তের আর্মেনিয়া অংশের একটি হোটেলই এখন তার বাড়ি।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি যে, গুলি, ক্ষুধা, অশান্তি এবং যন্ত্রণা প্রত্যক্ষ করেছি, তা আর দেখতে চাই না।’

এদিকে আজারবাইজান বলছে, তাদের সামরিক অভিযানে বেসামরিক নাগরিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।

আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান ৩০ বছরের মধ্যে ছিটমহলটি নিয়ে দুটি যুদ্ধ করেছে। ২০২০ সালে ছয় সপ্তাহের সংঘর্ষের পর নাগর্নো-কারাবাখ এবং এর আশেপাশের কিছু অংশ ফিরে পায় আজারবাইজান।

আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ বলেছেন, ‘আর্মেনিয়ানদের অধিকারকে সম্মান করা হবে এবং ওই অঞ্চলটিকে একটি স্বর্গে পরিণত করা হবে।’

কিন্তু কারাবাখের আর্মেনিয়ানরা রয়টার্সকে বলেছে, তারা আজারবাইজানের অংশ হিসাবে বাস করতে চায় না, বরং তারা আজারবাইজানের হাতে জাতিগত নির্মূলের ভয় পায়।

কারাবাখ নেতৃত্বের উপদেষ্টা ডেভিড বাবায়ান বলেন, ‘আমাদের জনগণ আজারবাইজানের অংশ হিসেবে থাকতে চায় না। ৯৯ শতাংশ আর্মেনিয়ান আমাদের ঐতিহাসিক ভূমি ছেড়ে যেতে ইচ্ছুক।’

আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা হিকমেত হাজিয়েভ আল-জাজিরাকে বলেছেন, ওই অঞ্চলের বেসামরিক নাগরিকদের রাজনৈতিক একীকরণ, আর্থসামাজিক সমস্যাসহ তাদের ভবিষ্যত সম্পর্কে সরাসরি সংলাপের জন্য বলা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী শিলা পেলান বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন না যে, আজারবাইজানের শাসনের অধীনে জাতিগত আর্মেনিয়ানদের সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘আর্মেনিয়ানদের প্রতি ঘৃণার একটি দীর্ঘস্থায়ী নীতি রয়েছে। এটা শুধু রাতারাতি শেষ হবে না। কারাবাখের আর্মেনিয়ানদের জন্য কোনো নিরাপত্তা বা অধিকার সুরক্ষিত থাকবে বলে বিশ্বাস করার কোনো যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি নেই। তারা এখন খুব বিপদে আছে।’

নাগোর্নো-কারাবাখে মানবাধিকার ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য অবিলম্বে জাতিসংঘের একটি দল মোতায়েনের আহ্বান জানিয়েছে আর্মেনিয়া।