বাংলাদেশে কোকাকোলার বিক্রি কমেছে ২৩ শতাংশ
বহুজাতিক কোম্পানি কোকাকোলার একটি বাংলা বিজ্ঞাপনের ভিডিও রিল প্রচারের পর বাংলাদেশে পানীয়টির বিরুদ্ধে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়। এর পর পরই বাংলাদেশে কোকাকোলার বিক্রি ২৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইনডিপেন্ডেন্ট’ এ বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ করে।
খবরে বলা হয়, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় হামাস ও ইসরায়েলের যুদ্ধে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন কোম্পানি ইসরায়েলের সঙ্গে গাটছড়া বেঁধেছে এ তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে কোকাকোলা অন্যতম। যদিও কোকাকোলা ইতোপূর্বে এ তথ্যের সত্যতা অস্বীকার করে।
গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলকে অর্থায়ন করছে না কোকাকোলা তা প্রমাণ করতে কোকাকোলা বাংলাদেশ ইউটিউবে একটি ভিডিও রিল আপলোড করে।
এতে দেখানো হয়, এক দোকানদার একজন ক্রেতার কাছে জানতে চান, তিনি কোকাকোলা নিতে চান কিনা। এর উত্তরে ক্রেতা জানান, তিনি কোকাকোলা পান করা বন্ধ করেছেন। কারণ, এটি ‘সেই দেশ’ থেকে এসেছে (যদিও তিনি ইসরায়েলের নাম উল্লেখ করেননি)। ক্রেতার কথার জবাবে দোকানদার তাকে জানান যে, ‘এটি সেই জায়গা’ (ইসরায়েল) থেকে নয়। এসময় তিনি সামাজিক গণমাধ্যম ঘেটে বলেন, এটি তুরস্ক এবং স্পেনসহ ১শ ৯০টি দেশে ১শ ৩৮ বছর ধরে পান করা হয়েছে।
কিন্তু সে ভিডিও রিলে এ তথ্য জানানো হয়নি যে, ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে তুরস্কের সংসদ দেশটির রেস্তোরাঁগুলোত ‘কোকাকোলা’ এবং ‘নেসলে’ বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
রোববার (৯ জুন) টি২০ বিশ্বকাপে ভারত ও পাকিস্তান ম্যাচে উপলক্ষে ভিডিও রিলটি আপলোড করা হয়। ইউটিউবে রিলটি প্রচারের উদ্দেশ্য ছিল কোকাকোলার ভাষায় ‘অপতথ্য রোধ’ করা।
কিন্তু তথ্য গোপন করার কারণে বাংলাদেশে সমালোচনা শুরু হয়। এতে করে বাংলাদেশে কোকাকোলা বিক্রি ২৩ শতাংশ হ্রাস পায় বলে ‘দ্য ইনডিপেন্ডেন্ট’-এর খবরে বলা হয়।
বিজ্ঞাপনের রিলে অংশগ্রহণকারী অভিনেতা এবং পরিচালক ‘জনগণের অনুভূতিতে আঘাত’ লাগায় ইতোমধ্যে ক্ষমা চেয়েছেন।
বিজ্ঞাপনের প্রযোজক এবং অভিনেতা শরাফ আহমেদ জীবন এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘এই বিজ্ঞাপনে ইসরায়েলের পক্ষ টানিনি এবং আমি কখনোই ইসরায়েলের পক্ষে নই’!
১০ জুন রাতে শরাফ আহমেদ জীবন তার ফেসবুক ওয়ালে এক পোস্টে বলেছেন, ‘আমি একজন নির্মাতা এবং অভিনেতা হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। বিগত দুই দশক ধরে আমি নির্মাণ ও অভিনয়ের সাথে জড়িত।
সম্প্রতি কোকা-কোলা বাংলাদেশ আমার সাথে তাদের একটি বিজ্ঞাপন নির্মাণ এবং অভিনয় করার জন্য নিয়োগ করেছিলো। আমি শুধুমাত্র তাদের দেয়া তথ্য ও উপাত্তই কাজটিতে তুলে ধরেছি। বিজ্ঞাপনটি প্রচার হবার পর থেকে আমি আপনাদের অনেক মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করছি এবং আপনাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমি আবারো বলতে চাই কাজটি শুধুই আমার পেশাগত জীবনের একটি অংশমাত্র।
ব্যক্তিগত জীবনে আমি সবসময় মানবাধিকার বিরোধী যেকোনো আগ্রাসনের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছি এবং আপনাদের অনুভূতি ও মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেছি। এখানে আমি কোথাও ইসরায়েলের পক্ষ নেইনি এবং আমি কখনোই ইসরায়েলের পক্ষে নই। আমার হৃদয় সবসময় ন্যায়ের পক্ষে এবং মানবতার পাশে আছে, থাকবে’।
অন্যদিকে, শিমুল শর্মা ফেসবুকে এক পোস্টে বলেছেন, তিনি ‘না বুঝেই’ বিজ্ঞাপনে অংশ নিয়েছেন এবং ‘আমি বুঝতে পারছি, এটি আমার ভক্ত, আমার পরিবার এবং দেশের জনগণকে আঘাত করেছে! আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, ভবিষ্যতে আমি দেশের মূল্যবোধ, মানবাধিকার এবং জনগণের অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই কাজ করবো’!