মায়ানমারে জান্তা সরকারের শান্তি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে বিদ্রোহীরা

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বিবিসি

ছবি: বিবিসি

মায়ানমারের জান্তা সরকারের দেওয়া শান্তি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে বিদ্রোহীরা। দেশটিতে তিন বছরের অধিক সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

২০২১ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর স্বৈরাচার জান্তা এবারই প্রথম এমন পদক্ষেপ নিয়েছে। উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে চীনের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার পর জান্তা সরকারের পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব এসেছে।

বিজ্ঞাপন

জান্তা সরকার জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং সন্ত্রাসী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলিকে রাজনৈতিকভাবে রাজনৈতিক সমস্যাগুলি সমাধান করার জন্য সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছে। আগামী বছরে পরিকল্পিত নির্বাচনে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছে।

নির্বাসিত জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি) বলেছে, প্রস্তাবটি বিবেচনা করার মতো নয়। জান্তার নির্বাচন করার কোনও কর্তৃত্ব নেই।

বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জান্তা সরকার বিদ্রোহ থামাতে একাধিক ফ্রন্টে লড়াই করতে একটি শাখা প্রসারিত করেছে।

কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বর্তমানে জান্তা সরকার মায়ানমারের অর্ধেকের বেশি অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।

গত জুনে তিনটি জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর জোট মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী চীনের ইউনান প্রদেশের একটি প্রধান মহাসড়কের পাশের এলাকা দখল করে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নতুন করে আক্রমণ চালায়।

শান রাজ্যের সীমান্তের কাছে লড়াই চীনের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা ল্যান্ডলকড যা দক্ষিণ-পশ্চিমে মিয়ানমার হয়ে ভারত মহাসাগরের সাথে সংযোগ করাকে বাধাগ্রস্ত করেছে।

বেইজিংয়ের শীর্ষ কুটনীতিক ইয়ং ই গত মাসে মিয়ানমার ভ্রমণের সময় দেশটির শাসক মিন অং হ্লাইংকে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জান্তা সরকার জানান, সশস্ত্র গ্রুপগুলোকে স্থায়ী শান্তি এবং উন্নয়নের জন্য দলীয় রাজনীতি ও নির্বাচনের পথ অনুসরণ করা উচিত।

দেশের মানবসম্পদ, মৌলিক অবকাঠামো এবং অনেক মানুষের জীবন হারিয়েছে। দেশের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন সংঘাতের কারণে আটকে আছে।

কিন্তু বিদ্রোহী দলগুলো এই প্রস্তাব নিয়ে সন্দিহান।

কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন (কেএনইউ) এক দশক ধরে থাইল্যান্ড সীমান্তে আরো স্বায়ত্বশাসনের জন্য সেনাবাহীনির সাথে লড়াই করছে। সংগঠনটি সংবাদ সংস্থা এফপিকে বলেছে, আলোচনা তখনই সম্ভব যখন সেনাবাহিনী মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ডাকবে।

কেএনইউ মুখপাত্র পাদোহ সাও তাও নি এএফপিকে বলেছেন, প্রথমত কোনো সেনা সদস্য ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। দ্বিতীয়ত সেনাবাহিনীকে একটি ফেডারেল গণতান্ত্রিক সংবিধানে সম্মত হতে হবে।

তৃতীয়ত, যুদ্ধাপরাধ, মানবতা বিরোধী অপরাধসহ তারা যা করেছে সকল কিছুর দায়বার তাদেরকে নিতে হবে। তিনি যোগ করেন, তাদের কোন দায়মুক্তি হবে না।

তিনি বলেন, যদি জান্তা এসব দাবি না মানে তাহলে, কেএনইউ রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে জান্তার ওপর চাপ অব্যাহত রাখবে।

বামার পিপলস লিবারেশন আর্মির নেতা মং সাংখা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন যে তার দল এই প্রস্তাবে আগ্রহী নয়।

মান্দালে পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের কমান্ডার সোয়ে থু ইয়া জাও ফেসবুকে বলেন, তারা ছাগলের মাথা ঝুলিয়ে রেখে কুকুরের মাংস বিক্রি করছে।

২০২১ সালে মিয়ানমারের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে সামরিক বাহিনী ক্ষমতাচ্যুত করার পর, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে হত্যা ও অনেককে গ্রেফতার করা হয়।

এতে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সারা দেশে সেনা অভ্যুত্থানবিরোধী মিলিশিয়াদের তাদের সাথে যোগদানের জন্য আহ্বান জানানো হয়। ফলে দেশটি একটি গৃহযুদ্ধে নিমজ্জিত হয়।

জাতিসংঘের মতে, অভ্যুত্থানের পর থেকে অন্তত ৫০,০০০ মানুষ নিহত হয়েছে এবং ২০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।