দেড় হাজার সন্তানের মমতাময়ী মা!



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
সিন্ধুতাই সপকাল, ছবি: সংগৃহীত

সিন্ধুতাই সপকাল, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নিজের অবুঝ সন্তানদের ফেলা যাওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশেও ঘটে এমন অমানবিক ঘটনা। কিছুদিন আগেও ঢাকায় এক মা তার দুই অবুঝ শিশুকে আবর্জনা রাখার জায়গায় ফেলে যান। হয়তো দুই সন্তানের বোঝা টানতে পারছিলেন না ওই মা।

মাতা-পিতাহীন এসব শিশুর অনেকেরই আশ্রয় হয় এতিমখানায় বা কোনো উদারমনা ব্যক্তির পরিবারে। অনেকে আবার পড়ে থাকেন রাস্তায়।

এ ধরনের এতিম শিশুদের নিয়ে নিজের সন্তান-রাজ্য গড়ে তুলেছেন ভারতের মহারাষ্ট্রের সিন্ধুতাই সপকাল। সিন্ধুতাইয়ের সন্তানের সংখ্যা ১৫শ। এসব এতিম শিশুদের দেখাশোনা করছেন ৭১ বছর বয়সী এই মহীয়সী নারী ১৯৭৩ সাল থেকে। স্বামীর বাড়ি থেকে বিতাড়িত হবার পর থেকেই পথশিশু আর এতিমদের মা হয়ে উঠেন তিনি।

সিন্ধুতাই জন্ম নেন মহারাষ্ট্রের ওয়ারদা শহরে। কন্যাসন্তানের প্রতি নেতিবাচক সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির মাঝে থেকেও গরীব বাবা তার মেয়ের প্রতি ভালোবাসা খুঁজে পান। পাঁচ বছর বয়সে স্কুলে ভর্তি করানো হয় সিন্ধুতাইকে। কিন্তু বেশি দূরে এগোয়নি তাঁর পড়াশোনা। পুরুষশাসিত সমাজের চাপে মেয়েকে বিয়ে দিতে হয়। ১০ বছরের সিন্ধুতাইয়ের সঙ্গে বিয়ে হয় ২০ বছরের এক যুবকের।

স্বামীর সংসারে গিয়েই মুখোমুখি হন অকল্পনীয় পরিস্থিতির। ক্লান্তিহীন শারীরিক পরিশ্রম আর সেবা করেও মন জয় করতে ব্যর্থ হন স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ির। এরই মধ্যে জন্ম দেন তিন তিনটি সন্তান। চতুর্থ সন্তান জন্মের আগে তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বেড়ে যায়। একদিন তার স্বামী তাকে বেধড়ক মারধোর করেন। রেখে আসেন গোশালায়, বন্ধনহীন অনেক গরুর মাঝে।

তিনি বলেন, তাকে মারপিটের পর ওই গোশালায় রেখে দেওয়া হয়, যেনো গরুর পায়ের আঘাতে মৃত্যু হয় তার। এতে তার স্বামীর পরিবারের ওপর অভিযোগ উঠবে না, তারা তাঁকে মেরেছে। অনেক গরুর ছোটাছুটি দেখে ভয় পেয়ে যান তিনি। নিজের জীবনের ইতি এখানেই, মনে মনে ভাবেন তিনি। কিন্তু তার জীবনতো তার হাতে নেই। এতো ঈশ্বরের দেয়া। ‘রাখেন আল্লাহ, মারে কে’- প্রবাদেরই প্রমাণ তিনি। অন্য গরু যখন তার দিকে ছুটে আসছিলো, একটি গরু তার সামনে এসে দাঁড়ায়।

সিন্ধুতাইয়ের মতো, ‘ওই গরু অন্য গরুদের বলে, ওকে আঘাত করবে না।’

ওই সময় নিজের চতুর্থ সন্তানকে পৃথিবীতে নিয়ে আসেন তিনি। চাকু-কেচির মতো কোনো কিছু না পেয়ে গোশালায় পাওয়া একটি পাথর দিয়ে নাড়ী কাটেন তিনি। একে একে ১৬বার আঘাত করার পরই মেয়ের সাথে নিজের নাড়ীর বিচ্ছেদ করেন সিন্ধুতাই।

এতিমদের সাথে সিন্ধুতাই সপকাল

এই বিপদসংকুল পরিবেশে সদ্যজাত সন্তানের মুখ দেখে কষ্টের কথা সাময়িক ভুলে যান তিনি। নিজের জীবন বাঁচানো গরুকে আসার সময় বলে আসেন, ‘আজ গরু হয়েও তুমি আমার সাথে মায়ের মতো আচরণ করলে। তোমার সুরক্ষামূলক আচরণে আমিও মা হলাম।’

সদ্য জন্ম নেয়া সন্তানকে নিয়ে নিকটবর্তী রেল স্টেশনে যান তিনি। আত্মাহুতি দেওয়াই ছিলো তাঁর উদ্দেশ্য। কিন্তু রেল স্টেশনে ভিক্ষুক আর এতিমদের দেখে নিজের কষ্টকে ছোট মনে হয় তাঁর। তিনিও শুরু করেন ভিক্ষাবৃত্তি। সিন্ধুতাই বলেন, ‘আমার দুধের শিশুকে নিয়েই আমি ভিক্ষা শুরু করি। তখনই আমি আমার মনে এক বড় ধরনের আকুতি শুনতে পাই, এতিমদের দেখাশোনা করার। আমি উপলব্ধি করি, ভিক্ষা করা আমার মধ্যে নিহত ছিলো।’

এরই মধ্যে বাস্তুছাড়া ভিক্ষুক ও এতিমরা তার নতুন পরিবারের সদস্য হন। এদের দেখভালের জন্য দিনভর তিনি ভিক্ষা করতেন। সন্ধ্যায় এসে খাওয়াতেন তাদের। রাস্তার এ পরিবার পেয়ে আত্মহত্যার কথা ভুলে গেলেও প্রতিদিনই জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে তাঁকে। আত্মহত্যার চিন্তা বারবার উঁকি দিতো তাঁর মন-জগতে। একদিন আবারও আত্মহত্যার কথা ভাবেন তিনি। সেদিনই রাতে খাবার খাচ্ছিলেন এ অভাগিনী মা। প্রতিদিন অন্য ভিক্ষুকদের খাবার দিলেও সেদিন দেননি, নেননি খোঁজ-খবরও। সিন্ধুতাই বলেন, ‘ওই দিন তিনি কাউকে খাবার দেননি, কেননা পেটপুরে খেয়ে তিনি বিদায় নিতে চেয়েছিলেন পৃথিবী থেকে।’

ওই খাবারকে মনে করেছিলেন, তার শেষ খাবার। এমন সময় এক পুরুষ ভিক্ষুক আসে। ওই ভিক্ষুক জ্বরে কাঁপছিলেন, ক্ষুধায় কাতরাচ্ছিলেন। কান্না করছিলেন কিছু খেতে। আশপাশের মানুষের কাছে চাচ্ছিলেন পানি। সহ-ভিক্ষুককে দেখে মন গলে গেলো সিন্ধুতাইয়ের। শুধু পানি নয়, সাথে কয়েকটি গমের রুটিও দিলেন তাকে। এতে ওই ভিক্ষুক সুস্থ হয়ে উঠলেন। এবারের এ ঘটনা তাকে বাঁচালো আত্মহত্যা করা থেকে।

এতিমদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন নিজের পরিবার

ওই ঘটনার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘আমাকে বিস্মিত করে দিয়ে ওই ভিক্ষুক বেঁচে গেলেন। আবারও একবার আমি উপলব্ধি করলাম, জীবন কতটা শক্তিশালী। আর এর পরেই আমি জীবন ছেড়ে দিলাম ঈশ্বরের কাছে, ত্যাগ করলাম আত্মহত্যার পরিকল্পনার।’

এরপর নিজের নতুন পরিবারকে মনোযোগ দিয়ে গড়া শুরু করলেন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত তার হাতে পালিত সন্তানের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫শ। এদের মধ্যে রয়েছে ২৭০ জন জামাতা, ৪০ জনেরও বেশি ছেলের স্ত্রী এবং এক হাজারেও বেশি নাতি-নাতনি।

তার নিজের মেয়ে মমতাসহ এদের অনেকে হয়েছেন আইনজীবী, চিকিৎসক ও বিভিন্ন মর্যাদাশীল পেশার অধিকারী। মমতাও শুরু করেছেন তার নিজের এতিম আশ্রয় কেন্দ্র। তার এক পালিত সন্তান তারই জীবনকথা নিয়ে করেছেন পিএইডি।

তাঁর এই জীবনযুদ্ধের ও মানবতাবাদী কর্মজীবনের জন্য সম্মানিত হয়েছেন দেশে বিদেশে। পেয়েছেন ২৭০টিরও বেশি পুরষ্কার। তাকে নিয়ে হয়েছে একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রও, তার মায়ের ভাষা-মারাঠিতে। পুরষ্কারের সাথে সম্মাননা বাবদ যে অর্থ পান তিনি তা পালিত শিশুদের দেখভালে ব্যয় করেন। পুনে ও চিকালধারায় গড়ে তুলেছেন এতিমদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র।

মানবতাবাদী কর্মজীবনের জন্য পেয়েছেন ২৭০টিরও বেশি পুরষ্কার

এসব চালাতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তহবিল সংগ্রহ করতে সফর করেন তিনি। তার শেষ ইচ্ছা পুষ্টিহীন শিশুদের জন্য একটি আশ্রয়কেন্দ্র ও হাসপাতাল নির্মাণ করা। তিনি বলেন, ‘মানুষ এতিমদের বিষয়টি বুঝতে পারে, এ জন্য অনেকে অনুদানও দেয়। কিন্তু পুষ্টিহীন শিশুদের জন্য এ ধরনের মানবিক সাহায্য তেমন নেই। পুষ্টিহীনতার কারণেই মহারাষ্ট্রের প্রত্যন্ত এলাকায়, বিশেষ করে আদিবাসীদের মধ্যে শিশু মৃত্যুর হার বেশি।’

তাঁর ভাষ্যমতে, মহারাষ্ট্রে আদিবাসী এলাকায় অনেক স্বামী তাদের স্ত্রীকে ছেড়ে যান। না খেয়ে বেচে থাকেন গর্ভবতী নারীরা। মায়ের পেটে থাকার সময় থেকেই অপুষ্টিতে ভোগে অনেক শিশু।

তিনি বলেন, ‘আমি এ ধরনের গর্ভবতী নারীদের হাসপাতালে রাখতে চাই। সন্তান প্রসবের তিন মাস পর আমার বাড়িতে (আশ্রয়কেন্দ্র) রাখবো তাদের। এতে করে মা ও সন্তান সুস্থ ও বেঁচে থাকবে। এটা আমার স্বপ্নের প্রকল্প। এর মাধ্যমে আমি এই পৃথিবীতে পদচিহ্ন রেখে যেতে চাই।’

-গাল্ফ নিউজ

   

ইসরায়েলের কারাগারে ১৩ ফিলিস্তিনির মৃত্যু



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্দি করে রাখা হয়েছে অসংখ্য ফিলিস্তিনি বন্দিদের। তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানোয় অন্তত ১৩ ফিলিস্তিনি বন্দির মৃত্যু হয়েছে। তাদের অনেকের বুকের পাঁজরসহ হাড়গোড় ভাঙ্গা এবং আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। 

স্বজন, সাবেক কারাবন্দি ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে ইসরায়েলি কারাগারে ফিলিস্তিনি নির্যাতনের এই বর্ণনা দিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

গত বছর ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে ইসরায়েলি কারাগারগুলোতে ফিলিস্তিনি বন্দিদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়েছে। নির্মম নির্যাতনে অন্তত ১৩ ফিলিস্তিনি বন্দির মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের বন্দী বিষয়ক কমিশন। মৃত বন্দিদের পরিবারের সদস্য ও তাদের সাথে একই কারাগারে  আটক সাবেক বন্দিরা ইসরায়েলি কারাগারের নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছে বিবিসিকে। 

এক বন্দীর মা বলেন, ছেলে মৃত্যুর আগে শেষবার যখন তাকে ফোন করেছিল তখনই জানিয়েছিল দিন দিন কারাগারে তার ওপর নির্যাতন বাড়ছে। কারা কর্তৃপক্ষ তাকে পরিবারের সাথে কথা বলতে দিতে চায় না। ফিলিস্তিনের রামাল্লাহ থেকে সুর্নিদিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই তাকে আটক করে ইসরায়েলি সেনারা। পরে কারাগারে তার মৃত্যু হয়।

মৃত বন্দিদের সাথে একই কারাগারে আটক সাবেক বন্দিরা জানান, কারাগারে কোনো কারণ ছাড়াই তাদেরকে গালাগালি, পরিবার নিয়ে বাজে মন্তব্য, মারধর, তল্লাশি এবং অমানুষিক নির্যাতন চালানো হতো। এমনকি কারো দিকে তাকালেও মারধরের শিকার হতে হতো। রোগে দেওয়া হতো না কোন ওষুধ। মৃত্যুর আগে ওই বন্দিদের অন্য কারাকক্ষে আটকে রেখে নির্যাতনের সময় ব্যথায় তাদের চিৎকার শুনতে পেয়েছিল তারা।

এদিকে, বন্দিদের মৃত্যুর বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি ইসরায়েলি কারাগার কর্তৃপক্ষ। নির্যাতনের অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি তাদের। তবে মৃত বন্দিদের অনেকের বুকের পাঁজরসহ অনেক হাড়গোড় ভাঙ্গা থাকা এবং শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে জানান মানবাধিকার গ্রুপগুলোর চিকিৎসকরা।



;

দোনেৎস্কের আরেকটি গ্রাম দখলের দাবি রাশিয়ার



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্কের আরও একটি গ্রাম দখলের দাবি করেছে রাশিয়া। তাদের দাবি, পূর্ব ইউক্রেনের গ্রাম নোভোমিমিকাইলিভকা তারা দখল করে নিয়েছে এবং তা তাদের নিয়ন্ত্রিত দোনেৎস্কের মধ্যে নিয়ে এসেছে।

সোমবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সামাজিকমাধ্যমে দাবি করেছে, তারা একটি গ্রামকে মুক্ত করেছে এবং যুদ্ধক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থান আরও ভালো করেছে। তবে ইউক্রেনের দাবি, তারা রুশ বাহিনীর অগ্রগতি থামিয়েছে।

জার্মানভিত্তিক বার্তাসংস্থা ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনের সেনা কর্তারা দাবি করেছেন, রাশিয়া দোনেৎস্কে ২৩ বার তাদের প্রতিরক্ষা বলয় ভেঙে এগোবার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পারেনি।

ইউক্রেনের হাতে এখন অস্ত্র এবং গোলাবারুদ কমে এসেছে। তাই তারা রাশিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করছে মাত্র।

গত সপ্তাহ শেষে মার্কিন পার্লামেন্টে ইউক্রেনকে ছয় হাজার এক শ’ কোটি ডলার সামরিক ও আর্থিক সাহায্য দেয়ার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই সাহায্য ইউক্রেনের হাতে পৌঁছাতে বেশ কয়েক সপ্তাহ লেগে যাবে।

মার্কিন থিংক ট্যাংক দ্য স্টাডি অৎ ওয়ার জানিয়েছে, রাশিয়ার সেনা এখন তাদের আক্রমণ আরও তীব্র করবে। তারা মিসাইল ও ড্রোন ব্যবহার করবে। ইউক্রেনের হাতে যথেষ্ট পরিমাণ অস্ত্র না থাকার সুবিধা তারা নেওয়ার চেষ্টা করবে।

;

ইরানে পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে: মানবাধিকার প্রতিবেদন



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

২০২৩ সালের পরিস্থিতি হিসেবে ইরানের মানবাধিকারের রেকর্ড ক্রমাগত খারাপের দিকে যাচ্ছে। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠী, মানবাধিকার আইনজীবী, সাংবাদিক এবং সুশীল সমাজকর্মীদের লক্ষ্যবস্তু করে ক্রমবর্ধমানভাবে দেশটি শাসন হতে থাকায় নারীদের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে।

ইরানী নারীরা বাধ্যতামূলক পোষাক কোড লঙ্ঘনকারী লোকদের বিরুদ্ধে শাস্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বৈষম্য করা হয়েছে বলে জানান তিনি। প্রতিবাদ এবং নাগরিক অবাধ্যতা সরকারকে ব্যাপক কর্মকাণ্ডের দিকে পরিচালিত করে।

ব্যুরো অফ ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস এবং শ্রমের সিনিয়র ব্যুরো অফিসার রবার্ট গিলক্রিস্ট মানবাধিকার অনুশীলনের ৪৮তম বার্ষিক কান্ট্রি রিপোর্ট প্রকাশ করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন সেক্রেটারি ব্লিঙ্কেন এবং মুখপাত্র ম্যাট মিলার। ভয়েস অফ আমেরিকার গিটা আরিয়ান ইরান নিয়ে প্রশ্ন তুললে তিনি এসব কথা বলেন।

রবার্ট গিলক্রিস্ট বলেন, মানবাধিকার রিপোর্ট নামে পরিচিত এই কংগ্রেসের নির্দেশিত প্রতিবেদনটি ১৯৯৭ সাল থেকে ডিআরএল ব্যুরোর একটি প্রধান প্রচেষ্টা। মানবাধিকার প্রত্যেকের জন্য; এই প্রতিবেদনটি এই সর্বজনীন অধিকারের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করার একটি উপায়।

ভয়েস অব আমেরিকা থেকে গিটা আরিয়ান ইরান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ইসলামিক রিপাবলিক অফ ইরান মার্চের শেষের দিক থেকে নারীদের বাধ্যতামূলক হিজাবের উপর ক্র্যাকডাউন করেছে এবং যেদিন ইসরায়েলে আক্রমণ করেছে, সেদিন থেকে এটি সেই ক্র্যাকডাউনকে আরও তীব্র করেছে। একই সময়ে, ক্যাপিটল হিলে আইন রয়েছে যে প্রশাসন উচ্চ নেতৃত্বের কর্মকর্তাদের - সর্বোচ্চ নেতা, রাষ্ট্রপতিকে অনুমোদন দেয়।

গিলক্রিস্ট বলেন,  যেকোন আইনের ব্যাপারে অবশ্যই বিভাগটি কংগ্রেসে পাস হওয়া প্রতিটি আইন সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর তাই আইন বাস্তবায়নে দপ্তরের প্রতিশ্রুতি অবশ্যই আছে।

অনেক নারী ও মানবাধিকার কর্মী তাদের সক্রিয়তার জন্য কারাদণ্ড পেয়েছেন এবং কারাগারে রয়েছেন। নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে থাকাকালীন মাহসা জিনা আমিনির ২২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুর পর শুরু হওয়া শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমন করার প্রচেষ্টায় কর্তৃপক্ষ লোকেদের আটক, সাজা এবং মৃত্যুদণ্ড অব্যাহত রেখেছিল ইরান প্রশাসন। তাই যুক্তরাষ্ট্রও বহুজাতিক অঙ্গনে কাজ করে যাচ্ছে।

নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে রবার্ট গিলক্রিস্ট বলেন, বিভাগটি ইতিমধ্যেই সক্রিয়ভাবে ভিসা বিধিনিষেধ এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো ব্যবহার করেছে। ইরানের কর্তৃপক্ষের মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতা বাড়াতে ২০২২ সালের দাঙ্গার পর থেকে সাম্প্রতিকতম ক্র্যাকডাউনের বিষয়গুলো বিবেচনায় আনা হচ্ছে।

;

সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগে ভারতের সমালোচনা 



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মণিপুরে রাজ্য ২০২৩ সালে সংঘটিত দাঙ্গায় হয়রানির শিকার হয়েছে সাংবাদিক ও সংখ্যালঘুরা। এছাড়া ভারতজুড়ে সাংবাদিক ও ভিন্নমতাবলম্বীরা মোদি সরকার ও তার সমর্থকদের চাপ প্রয়োগ ও হয়রানির শিকার হয়েছে। 

সোমবার (২২ এপ্রিল) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর প্রকাশিত বার্ষিক মানবাধিকার মূল্যায়ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। তবে প্রতিবেদনের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও মন্তব্য করেনি ওয়াশিংটনে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস।

ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এর প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মণিপুরে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ ও সাংবাদিক-ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর নির্যাতনের উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পেয়েছে। 

দেশটির একটি আদালতের আদেশকে কেন্দ্র করে গত বছরের মাঝামাঝি মণিপুরে দুই উপজাতি কুকি ও মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাতের শুরু হয়। সেই সংঘাত সহিংসতায় অন্তত ২০০ জনের মৃত্যু হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সংঘটিত দাঙ্গায় অন্তত ৬০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভারতের অন্যান্য অংশেও সরকার ও এর সমর্থকরা গণমাধ্যম ও সরকারের সমালোচকদের ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি ও হয়রানি করেছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, ২০২৩ সালে ভারতের বিবিসি কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়েছে আয়কর বিভাগ। হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনামূলক একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রকাশের পর এই তল্লাশি চালানো হয়।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস ২০২৩ সালে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতকে ১৬১তম স্থানে রেখেছিল, যা দেশটির ইতিহাসে সর্বনিম্ন অবস্থান।

মার্কিন মূল্যায়ন প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা তাদের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য ছড়িয়ে সহিংসতার আহ্বান জানানোসহ নানা অভিযোগ করেছেন। তবে মোদি সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছেন, তার নীতিমালা সব ভারতীয়র উপকারের লক্ষ্যেই প্রণীত। 

মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর অভিযোগ, মোদির শাসনামলে জলবায়ু পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এছাড়া তার আমলে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য, মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন প্রয়োগ এবং অবৈধ স্থাপনা অপসারণের নামে মুসলিম স্থাপনা ভেঙে ফেলার মতো কাজ করা হয়েছে।

তারপরও চলতি বছরের নির্বাচনে রেকর্ড আসন নিয়ে মোদির দলের তৃতীয়বারের মতো জয় পাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে নির্বাচনী জরিপ সংস্থাগুলো।

;