সবুজ গম্বুজের ছায়াতলে শুয়ে আছেন রাহমাতুল লিল আলামীন



জাফর আহমাদ, অতিথি লেখক, ইসলাম
সবুজ গম্বুজের ছায়াতলে শুয়ে আছেন রাহমাতুল লিল আলামীন, ছবি: সংগৃহীত

সবুজ গম্বুজের ছায়াতলে শুয়ে আছেন রাহমাতুল লিল আলামীন, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মদিনার মসজিদে নববী। মসজিদে নববীর সবুজ গম্বুজ। যার ছায়াতলে শুয়ে আছেন সীমাহীন কৃতিত্বের অধিকারী, সতত প্রবাহমান ঝর্নাধারা সৃষ্টিকারী রাহমাতুল লিল আলামীন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

এই সেই সবুজ গম্ভুজ। যার ছায়াতলে তারই পাশে শুয়ে আছেন উত্তাল সংগ্রামমুখর জীবনের সাথী, হিজরতের সাথী, সওর গুহার সাথী, দুঃসহ জীবনের সাথী, সারা জীবনের সাথী এমন কি দীর্ঘ কবর জীবনের সাথী সাইয়েদুনা আমিরুল মুমিনীন হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)। আরও শুয়ে আছেন সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী, আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার জনক, অর্ধেক পৃথিবীর বাদশা আমিরুল মুমিনীন সাইয়েদুনা হজরত ওমর ফারুক (রা.)। আল্লাহর কি অপার মহিমা সম্ভবত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো পূর্ব নির্দেশনা ছিল না। অত্যন্ত নাজুক ও স্পর্শকাতর জীবনের সাথী, সুখ-দুঃখে শান্তনাদানকারী হুজুরের সম্মানিত স্ত্রী উম্মুল মুমীনিন হযরত খাদিজাতুল কুবরা (রা.) নয়, কলিজার টুকরা হজরত ফাতেমা (রা.) নয়, আমিরুল মুমিনীন প্রিয় জামাতা হজরত আলী (রা.) নয়, অত্যন্ত প্রিয়ভাজন ইমাম হাসান ও হোসাইনও (রা.) নয় কিন্তু কবর জীবনের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় এই দু’জন মহান সাথীকে পাশে নিয়ে সময়ের পথ অতিক্রম করে চলেছেন দূর দিগদিগন্তরের পানে।

উচ্চাংগের মেধাবী ও বুদ্ধিমান, সাহসী বীর, ধৈর্যশীল, আদর্শে অবিচল, সৎ ও ন্যায়পরায়ণ, উদার ও মহানুভব, দাতা, দায়িত্ব সচেতন, বিনয়ী ও ভাবগম্ভীর এবং প্রিয়ভাষী ও শুদ্ধভাষী চরিত্র মাধুর্য ও আবিলতামুক্ত জীবনধারার আলোক রশ্মি সবুজ গম্বুজের চূড়া থেকে অবিরত বিচ্ছুরিত হয়ে পৃথিবীর প্রতিটি দেশ, প্রতিটি জনপদকে আলোকিত করে চলেছে। এর সুরভিত পবিত্র ঘ্রান পৃথিবীকে মোহিত করে চলেছে। পৃথিবীর শেষ অবদি এই আবহ চলবে। যেন সতত প্রবাহিত কোনো এক নির্ঝর, যার স্বচ্ছ নির্মল পানি সারা পৃথিবীকে সিক্ত করে চলেছে। তারই রূপের মহিমায় প্রকৃতি বার বার নতুন সাজে আবির্ভূত হয়, পৃথিবী ঢেকে যায় সবুজ বন-বনানীতে, ফুলে-ফলে সুশোভিত হয় মন ও মানস।

এই সেই সবুজ গম্বুজ যেন একটি ভালো জাতের গাছ, যার সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নেয় তৃণলতাহীন, কুলকীনারাহীন ও অন্তহীন মরভূমির দিকভ্রান্ত পথিক খরতাপ রোদ্রে একটু ছায়ার জন্য যার প্রাণ ওষ্ঠাগত। এটি এমন একটি গাছ, যার শিকড় মাটির অত্যন্ত গভীরে প্রোথিত এবং শাখা-প্রশাখা আকাশে পৌঁছে গেছে। যার সবুজ পাতা মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণে সাহায্য করে। প্রতিটি মুহূর্তে নিজের রবের নির্দেশে ফলদান করে। যে ফল মানুষ ও পাখপাখালীরা খায় এবং আল্লাহতায়ালার শোকরিয়া আদায় করে।

মানবতার পরম সহৃদ সবুজ গম্বুজের নিবিড় ছায়ায় শুয়ে আছেন। এই সবুজ গম্বুজ পৃথিবীর প্রতিটি জনপদকে তীব্রভাবে আকর্ষণ করে। তাই তারা অকৃত্রিম ভালোবাসা ও প্রচণ্ড আবেগের টানে ছুটে আসে সবুজ গম্বুজের একটু ঘ্রাণ নেওয়ার জন্য। প্রচণ্ড আবেগের কারণেই তাকে নিয়ে এত গান, এত সাহিত্য-প্রবন্ধ, কাব্যমালা ও জীবন চরিত রচিত হয়েছে। এমনটি দ্বিতীয় কোনো জীবন চরিত আজও আবির্ভূত হয়নি এবং ভবিষ্যতেও আর হবে না। এটিও যেন এক অনিশেষ ঝর্ণাধারা। জীবন চরিতের ভাণ্ডার নৈমিত্তিক যা রচিত হচ্ছে, তা নিত্য নতুনই মনে হয়।

যারা এই আবেশে পাগলের মতো তার দিকে ছুটে আসেন, তাদের আবেগ-অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলতে চাই যে, এই সবুজ গম্বুজের সত্যিকারের ঘ্রাণ একমাত্র তারাই নিতে পারে, এই স্রোতস্বীনি নির্ঝর থেকে স্বচ্ছ ভালোবাসার স্বাদ তারাই গ্রহণ করতে পারে যারা তার সংগ্রামমূখর জীবনের অনুসারী। যারা নিজ নিজ এলাকায় তার মিশন বাস্তবায়নে রক্ত ঝড়ায়। যারা নিজ মাতৃভুমিতে জেঁকে বসা অসংখ্য প্রভুর নাগপাশ থেকে মানবতাকে রক্ষায় জানমাল খরচ করে। প্রচলিত অসংখ্য বাতিল জীবন ব্যবস্থার স্থলে সত্য-সরল জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় যাদের সময় ও শ্রম ব্যয় হয়।

পৃথিবীর দেশে দেশে মানবতার লাঞ্ছনা যাদের মানবিকতাকে সামান্যতম বিচলিত করতে পারে না। যেখানে মানবজাতি নিকষ অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে, পাশবিকতা, হিংস্রতা, জুলুম ও নির্যাতন রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতিতে রূপ নিয়েছে, শিরক ও পৌত্তলিকতা সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে প্রবেশ করেছে। সমাজ জীবনের প্রতিটি অঙ্গ-প্রতঙ্গে এমন ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে যে, সেখান থেকে উৎকট দুর্গন্ধ বেরুচ্ছে। সাধারণ মানুষ শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মরতে বসেছে। ক্ষমতাসীনরা রাষ্ট্র্রীয় অস্ত্রধারীদের জোরে নিদারুণ শোষণ-নিষ্পেষণে জাতিকে পিষ্ট করছে। চারদিকে দলিত মথিত হচ্ছে মানবিক মর্যাদা। লাঞ্ছিত ও ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে মনুষত্ব।

বিবেক ও মন যেন আজ কঠিন দাসত্বের নিগড়ে আবদ্ধ হয়ে গেছে, যার দরুন কোথাও প্রতিবাদ নেই। হতাশা ও ব্যর্থতার দীর্ঘশ্বাসে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে গেছে। এহেন অবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিশন যে একমাত্র মুক্তির উপায় হতে পারে, তা যাদের মনে ক্ষীণতম আশার আলো জ্বালে না। মানবতার আত্মার আর্তনাদ যাদের কর্ণকুহরে পৌঁছে না। তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি কি ভাবে কোন ধরণের ভালোবাসা পোষণ করেন, তা আমার বুঝে আসে না।

কিন্তু মনের কান পেতে শুনুন সবুজ গম্বুজের চূড়া থেকে বয়ে আসা সম্মিলিত করুণ কান্না। মানবতার করুণ লাঞ্ছনায় সবুজ গম্বুজ থেকে সূরা রুমের ৪১ নং সেই আয়াতটি যেন তেলাওয়াত হচ্ছে, ‘পৃথিবীর জলে-স্থলে যে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে, তা শুধু মানুষের কৃতকর্মের ফল। এভাবে আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের ফল ভোগ করাতে চান। হয়তো তারা সৎপথে ফিরে আসবে।’

নিপীড়িত বঞ্চিত বিপন্ন মানবতার নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেন ব্যথিত হৃদয়ে বিদায় হজের সেই ঐতিহাসিক ভাষণের বার বার পূনরাবৃত্তি করছেন। রাতের অন্ধকারে মনের চক্ষু দিয়ে লক্ষ্য করুন, এই বুঝি মহাকালের মহান রাষ্ট্রপতি হজরত ওমর (রা.) ক্ষুধার্ত মানুষের খোঁজে বেরিয়ে পড়েছেন। জাকাতভিত্তিক অর্থনীতি কায়েমের জন্য বার বার তাগাদা দিচ্ছেন সিদ্দিকে আকবর হজরত আবু বকর (রা.)। যদি এই কান্নার সুর আপনি উপলব্ধি না করতে পারেন, তবে আপনার আবেগ-অনুভূতি সস্তা মায়াকান্নার রূপ নেবে।

সুদীর্ঘ ২৩ বৎসর ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিশনারী জীবন। মিশন কি ছিল তা নিন্মোক্ত আয়াতে ব্যক্ত হয়েছে, ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি স্বীয় রাসূলকে হেদায়েত ও সত্য জীবন ব্যবস্থা সহকারে পাঠিয়েছেন, যাতে তিনি এই সত্য জীবন ব্যবস্থাকে অন্যসব ধর্মমত ও জীবন ব্যবস্থার ওপর বিজয়ী করে দিতে পারেন। মুশরেকদের তা যতই অপছন্দনীয় হোক না কেন।’ –সূরা আস সফ: ৯

তিনি মুশরেকদের পছন্দ-অপছন্দের তোয়াক্কা না করে, সকল প্রকার বিরোধীতাকে উপেক্ষা করে সত্য জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়নের কাজ সুসম্পন্ন করেছেন। মহাবিশ্বের একজন স্রষ্টা ও প্রভু আছেন এবং মানুষ তারই গোলাম ও দাস শ্রেষ্টতম এই সত্য, যার ওপর সভ্যতার কল্যাণ-অকল্যাণ পুরোপুরি নির্ভরশীল। তিনি সৎ ও নিষ্কুলষ সভ্যতার এই পবিত্র বৃক্ষ রোপন করে গেছেন। তিনি মানুষের মন-মননে ধ্রুব সত্যের রূপ দিয়ে গেছেন।

সুতরাং যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিপ্লবী জীবন চরিত্রে মনোনিবেশ করেন কেবলমাত্র তারাই সবুজ গম্বুজের চূড়ায় আলোক রশ্মি দেখতে পায়। তারাই কেবল সবুজ গম্বুজের সত্যিকার ঘ্রাণ নিতে পারে।

   

মালয়েশিয়া থেকে সাইকেলে হজযাত্রা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
পবিত্র হজ পালনে সাইকেলে করে মক্কার উদ্দেশে বের হয়েছেন মালয়েয়িশার চার মুসলিম। ছবি : সংগৃহীত

পবিত্র হজ পালনে সাইকেলে করে মক্কার উদ্দেশে বের হয়েছেন মালয়েয়িশার চার মুসলিম। ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আসন্ন পবিত্র হজ পালন করতে সাইকেলে করে সৌদি আরবের মক্কায় উদ্দেশে বের হয়েছেন মালয়েয়িশার চার মুসলিম। স্থলপথে তাদের সময় লাগবে প্রায় সাত মাস। আগামী বছরের মে মাসে প্রায় ১২ হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে তারা সৌদি আরবের মক্কায় পৌঁছবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এ সময় তারা মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, ইরান, আমিরাতসহ ছয় দেশ পাড়ি দেবেন।

মালয়েশিয়াভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম দি সান সূত্রে জানা যায়, সাইকেলে হজযাত্রা শুরু করা এ দলে রয়েছেন দেশটির সংবাদ সংস্থার সাবেক সাংবাদিক চে সাদ নরদিন (৭৩)। অন্যরা হলেন- আহমেদ মোহাম্মদ ইসা (৩৫), নোরাদিলাহ মোহাম্মদ সাপি (৩৬) ও বন গবেষণা কর্মী আবদুল হালিম তালহা (৫৬)।

তারা তাদের সাইক্লিং মিশনের তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ফেসবুক পেজ কেমবারা মেমবুরু হিকমাহ (কেএমএইচ) জানাচ্ছেন।

সাদ নরদিন বলেন, মূলত ২০১৯ সাল থেকে সাইকেলে করে আমাদের পবিত্র হজ পালন করার পরিকল্পনা ছিল। তবে পরবর্তীতে কোভিড-১৯ সংকটের কারণে কয়েকবার এ পরিকল্পনা বিলম্ব করতে হয়।

সাইকেল ভ্রমণের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মসহ সবাইকে আমি একটি বার্তা দিতে চাই। তা হলো- একজন মালয়েশিয়ান হিসেবে আমি আমার এ বয়সেও বিভিন্ন দেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে প্রস্তুত। আমি মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ যে তিনি আমাকে ভ্রমণ করার মতো সুস্বাস্থ্য দিয়েছেন। মক্কা যাওয়ার পুরো ভ্রমণ আমি উপভোগ করতে চাই।

তিনি আরো জানান, গত আগস্ট থেকে অন্য তিন বন্ধুসহ তারা দীর্ঘ ভ্রমণের প্রস্তুতি নিয়েছেন। এ জন্য তারা বীমা ও ভিসা নেওয়ার পাশাপাশি সাইকেল চালানোর অনুশীলন এবং শারীরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। তা ছাড়া ভ্রমণকালে তাদের সবাইকে সাইকেলে করে প্রাথমিক চিকিৎসার কিট, ক্যাম্পিং সরঞ্জাম, সোয়েটার, ক্যামেরা ও সাইকেলের খুচরা যন্ত্রাংশসহ আনুমানিক ৬০ কেজি বহন করতে হয়েছে।

সাইকেলে হজযাত্রার একমাত্র নারী সদস্য নোরাদিলা জানান, ২০১৬ সালে তার স্বামীর সঙ্গে তিনিও সাইকেল চালিয়ে ওমরাহ করতে মক্কায় গিয়েছিলেন। তবে আগের তুলনায় এবারের সাইকেল যাত্রা পুরোপুরি ভিন্ন।

কারণ এবার আমরা ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ পবিত্র হজ পালন করব। ভ্রমণকালে যেসব অতিক্রম করবে সেখানে আমরা একসঙ্গে হানিমুনেও যেতে পারি। তবে তা দলের অন্য সদস্যদের সঙ্গে পরামর্শ করে হবে।

;

সৌদিতে বিভিন্ন দেশের ৫০ হাজারের বেশি লোকের ইসলাম গ্রহণ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সৌদি আরবে ২০২৩ সালের শুরু থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ৫৬ হাজার ৫৬১ জন ইসলাম গ্রহণ করেন

সৌদি আরবে ২০২৩ সালের শুরু থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ৫৬ হাজার ৫৬১ জন ইসলাম গ্রহণ করেন

  • Font increase
  • Font Decrease

ইসলামের জন্মস্থান এবং মসজিদুল হারামাইন তথা পবিত্র দুই মসজিদের ভূমি হিসেবে সৌদি আরব সমগ্র বিশ্বের প্রতিটি মুসলমানের হৃদয়ে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। বাদশাহ আবদুল আজিজের সময় থেকে এই ভূখণ্ডের নেতারা সর্বদা ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি গভীর আগ্রহ দেখিয়েছেন। কয়েক দশক ধরে সৌদি আরব বিভিন্নভাবে বিশ্বের মুসলমানদের সেবা ও সহযোগিতা করে আসছে। সৌদি আরব সর্বদা মুসলমানদের স্বার্থ এগিয়ে নেওয়ার কাজে সক্রিয়। এ জন্য দেশটি বহু কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এসব কর্মসূচির একটি হলো- সৌদি আরবে কাজের জন্য আসা অমুসলিমদের উদারহস্তে সেবা, সহায়তা ও দানের উদ্যোগ। এর ফলে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক মানুষ ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হচ্ছে।

সম্প্রতি সৌদি বার্তা সংস্থা এসপিএ জানিয়েছে, সৌদি আরবে গত এক বছরে বিভিন্ন দেশের ৫০ হাজারের বেশি লোক স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। গত ১১ মাসে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে ইসলাম ও দাওয়াহ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে তারা ইসলাম গ্রহণ করেন।

জানা যায়, ২০২৩ সালের শুরু থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ৫৬ হাজার ৫৬১ জন ইসলাম গ্রহণ করেন।

এর মধ্যে পুরুষ রয়েছেন ৪১ হাজার ৬০৯ জন এবং নারী রয়েছেন ১৪ হাজার ৯৫২ জন। তারা এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশের অধিবাসী।

সৌদি আরবের ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন শাখার তত্ত্বাবধানে অমুসলিমদের কাছে ইসলামের শিক্ষা উপস্থাপন করা হয়। সংশ্লিষ্ট শাখার বিশেষজ্ঞ আলেমরা বিভিন্ন ভাষায় ইসলাম প্রচারের দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

সাধারণত বক্তৃতা, পাঠদান, সেমিনার, কর্মশালাসহ সফরের আয়োজন করা হয়। কোম্পানি, হাসপাতাল, অভিবাসী শ্রমিকদের জমায়েতের স্থানসহ বিভিন্ন স্থানে এসব আয়োজন করা হয়। সেখানে তারা ইসলাম সম্পর্কে বিশদভাবে জানার সুযোগ পান। এর পর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

 

;

শেষ হলো ছারছীনা দরবারের তিন দিনব্যাপী মাহফিল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছারছীনা দরবার শরিফের পীর হজরত মাওলানা শাহ্ মোহাম্মদ মোহেব্বুল্লাহ আখেরি মোনাজাত করছেন, ছবি : সংগৃহীত

ছারছীনা দরবার শরিফের পীর হজরত মাওলানা শাহ্ মোহাম্মদ মোহেব্বুল্লাহ আখেরি মোনাজাত করছেন, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ছারছীনা থেকে মো. আবদুর রহমান : ঈমান ও আকিদা সহিহ-শুদ্ধ করে নিয়মিত তরিকা মশক করে আমলি জিন্দেগি গঠনের মাধ্যমেই দয়াময় আল্লাহর রেজামন্দি (সন্তুষ্টি) হাসিল করা সম্ভব।

শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) বাদ জুমা তিন দিনব্যাপী ছারছীনা দরবারের বার্ষিক ঈছালে ছওয়াব মাহফিলের আখেরি মোনাজাতের আগে উপস্থিত ধর্মপ্রাণ মানুষের উদ্দেশ্যে আমিরে হিযবুল্লাহ ছারছীনা দরবার শরিফের পীর সাহেব হজরত মাওলানা শাহ্ মোহাম্মদ মোহেব্বুল্লাহ এসব কথা বলেন।

এ সময় তিনি সমবেত জনতাকে গোনাহমুক্তির জন্য জন্য তওবা করিয়ে জিকিরের তালিম দেন। ব্যস্ততার মধ্যেও সকাল-সন্ধ্যা জিকির ও অজিফা পালনের মাধ্যমে তরিকা মশকের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, তরিকা চর্চার মাধ্যমে একজন মানুষ আদববান মানুষে পরিণত হতে পারে। তরিকা কখনোই বেয়াদবি শিক্ষা দেয় না।

আখেরি মোনাজাতের আগে বিশেষ হেদায়েতি বয়ানে হজরত পীর সাহেব কেবলা সবাইকে বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহর সংগঠনভুক্ত হয়ে তালিমি জলসা কায়েম, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা এবং নিজ নিজ সন্তানদের যেসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করার নির্দেশ দেন। এছাড়া তিনি আগামী মাহফিলে সবাইকে আসার জন্য দাওয়াত দেন।

আখেরি মোনাজাতে হজরত পীর সাহেব কেবলা দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন। দোয়ার সময়ে লাখো জনতার ক্রন্দনে এক হৃদয়বিদারক অবস্থার সৃষ্টি হয়। মোনাজাতে পীর সাহেব কেবলা বিশ্ব শান্তির জন্য বিশেষ করে ফিলিস্তিনের বিপন্ন মুসলিম ভাই-বোনদের জন্য দোয়া করেন। দোয়ার সময় উপস্থিত জনতার আমিন আমিন ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে ওঠে।

ছারছীনা দরবারের তিন দিনব্যাপী মাহফিলের আখেরি মোনাজাতের দৃশ্য

 

ছারছীনা দরবারের বার্ষিক মাহফিলে জাতীয় ও দক্ষিণবঙ্গের রাজনীতিবিদদের অনেকেই অংশ নেন। এ সময় তারা সংক্ষিপ্ত আলোচনায় তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে উপস্থিত জনতার কাছে দোয়া কামনা করেন। তারা বলেন, বাংলাদেশে বহু দরবার রয়েছে। তবে ছারছীনা দরবার ব্যতিক্রম। ছারছীনা কোনো দলীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। দেশ ও জাতির কল্যাণে ছারছীনা দরবারের ভূমিকা সর্বদা ইতিবাচক। বিভিন্ন সময়ে শাসকবর্গকে বুঝিয়ে দেশ ও ইসলামের কল্যাণে এই দরবার যে অবদান রেখেছে তা অন্যকোনো দরবার রাখতে পারেনি।

আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন- মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শ.ম. রেজাউল করিম, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মো. আফজাল হোসেন, সংসদ সদস্য রুস্তুম আলী ফরাজী, এস. এম. শাহজাদা, অধ্যক্ষ মুহিবুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম মনি, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আবদুর রশিদ, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছিনের মহাসচিব অধ্যক্ষ শাব্বির আহমদ মোমতাজি, নেছারাবাদ উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল হক, স্বরূপকাঠী পৌর মেয়র গোলাম ফারুকসহ বিভাগীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ।

;

বদ আকিদায় দেশ ছেয়ে গেছে : ছারছীনার পীর



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছারছীনা দরবারের ১৩৩তম ঈছালে ছওয়াব মাহফিল, ছবি : সংগৃহীত

ছারছীনা দরবারের ১৩৩তম ঈছালে ছওয়াব মাহফিল, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মো. আবদুর রহমান ছারছীনা থেকে : বর্তমানে বদ আকিদায় দেশ ছেয়ে গেছে। আলেমরা কোনটি সঠিক ও কোনটি বদ আকিদা- সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আলেম-উলামারাও তা পার্থক্য করতে পারছেন না। বাতিল ফেরকাকেই অনেকে সঠিক আকিদা হিসেবে গণ্য করে আমল করে থাকেন। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) ছারছীনা দরবার শরিফের ১৩৩তম বার্ষিক ঈছালে ছওয়াব মাহফিলের দ্বিতীয় দিন বাদ মাগরিব তালিমের পর আলোচনায় আমিরে হিযবুল্লাহ ছারছীনা শরিফের পীর সাহেব হজরত মাওলানা শাহ্ মোহাম্মদ মোহেব্বুল্লাহ এসব কথা বলেন।

উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে পীর সাহেব ছারছীনা বলেন, ছারছীনা শরিফের মরহুম দাদা হুজুর কেবলা আল্লামা শাহ্সূফী হজরত মাওলানা নেছার উদ্দীন আহমদ (রহ.) যাবতীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। মুসলামনদেরকে কালেমা, নামাজ, রোজা ইত্যাদি শিক্ষা দেন।

এ সময় তিনি জমইয়াতে হিযবুল্লাহর কার্যক্রম জোরদার করার মাধ্যমে তালিমি জলসা কায়েমের প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন, মাহফিল কায়েমের ক্ষেত্রে ফেসবুকে ভাইরাল দেখে নয় বরং সঠিক আকিদা ও আমলের অনুসারী আলেমদের দ্বারা মাহফিল করার পরামর্শ দেন।

পীর সাহেব ছারছীনা আগামীকাল বাদ জুমা আখেরি মোনাজাতে শরিক হওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বানও জানান।

ছারছীনার মাহফিলে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহর সিনিয়র নায়েবে আমির ও হজরত পীর সাহেব কেবলার বড় সাহেবজাদা হজরত মাওলানা শাহ্ আবু নছর নেছার উদ্দিন আহমদ হুসাইন।

বাদ মাগরিব আলোচনায় তিনি বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহ, দীনিয়া মাদ্রাসা, তালিমি জলসা ও এলাকায় ছারছীনা সিলসিলার প্রচার-প্রসারকল্পে ওয়াজ মাহফিল কায়েমের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ছারছীনা দরবার দলীয় রাজনীতি করে না। নির্দিষ্ট কোনো দলের সঙ্গে এই দরবারের কোনো সখ্যতা বা বৈরিতা নেই। আমরা সরকারের ভালো কাজ যেমন সমর্থন করি, তেমনি ভালো কাজে সহযোগিতা করি। আমরা মুসলিম জনসাধারণকে পরহেজগার মুসলমানে রূপান্তরিত করতে চাই।

এছাড়া দ্বিতীয় দিন আলোচনা করেন- মাওলানা মো. রূহুল আমিন ছালেহী, মাওলানা আ জ ম ওবায়দুল্লাহ্, মাওলানা আবদুল গফফার কাসেমী, ড. মাওলানা সৈয়দ মুহা. শরাফত আলী, মাওলানা কাজী মফিজ উদ্দিন, মাওলানা মো. রূহুল আমীন আফসারী ও মাওলানা হাফেজ মো. বোরহান উদ্দীন ছালেহী প্রমূখ।

;