সহজ ১০ আমলে জাহান্নাম থেকে মুক্তি

  • মুফতি আবুল কাসেম, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সহজ ১০ আমলে জাহান্নাম থেকে মুক্তি, ছবি: সংগৃহীত

সহজ ১০ আমলে জাহান্নাম থেকে মুক্তি, ছবি: সংগৃহীত

মানুষ সৃষ্টিকুলের সেরা জীব হলেও অন্যায়, অনাচার-পাপাচারে লিপ্ত। এতদ্বসত্ত্বেও আল্লাহতায়ালা মানুষকে সুযোগ দিলেন পাপমুক্ত হওয়ার, তওবা করে সঠিক ফিরে আসারা। এ জন্য তিনি যুগে যুগে পাঠিয়েছেন অসংখ্য নবী-রাসূল। এরই ধারাবাহিকতায় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাম দুনিয়ায় আগমন করেন। তার আনীত ধর্ম ইসলাম ও আল্লাহর প্রেরিত কিতাব কোরআনে কারিম মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তির পথ দেখায়।

আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির প্রত্যেক মানুষের আকাঙ্খা ও চেষ্টা দরকার। নিয়মিত ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি এমন কিছু সহজ আমল রয়েছে, যা মানুষকে খুব সহজে জাহান্নাম থেকে মুক্তির পথ সুগম করে। এমনই কিছু আমলের কথা উল্লেখ করা হলো-

বিজ্ঞাপন

গীবতমুক্ত জীবনযাপন করা
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি তার (মুসলিম) ভাইয়ের সম্ভ্রম রক্ষা করে, কিয়ামতের দিবসে আল্লাহতায়ালা তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন।’ –সুনানে তিরমিজি: ১৯৩১

দৈনিক ৩৬০ বার তাসবিহ-তাহলিল ও তাকবির আদায় করা
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক আদম সন্তানকেই ৩৬০টি গ্রন্থির ওপর সৃষ্টি করেছেন (আর প্রতিটি গ্রন্থির কিছু সদকা রয়েছে)। সুতরাং যে ব্যক্তি ওই সংখ্যা পরিমাণ ‘আল্লাহু আকবার’ বলল, ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বলল, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলল, ‘সুবহানাল্লাহ’ বলল, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলল, মানুষের চলার পথ থেকে পাথর, কাঁটা অথবা একটি হাড় সরাল, ভালো কাজের আদেশ করল কিংবা মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করল (এবং সব মিলে ৩৬০ সংখ্যক পুণ্যময় কাজ করল), সে ওই দিন এমতাবস্থায় সন্ধ্যা যাপন করল, সে নিজেকে জাহান্নাম থেকে দূরে করে নিলো। -সহিহ মুসলিম: ২২২০

বিজ্ঞাপন

চল্লিশ দিন তাকবিরে উলার সঙ্গে নামাজ আদায় করা
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে একাধারে চল্লিশ দিন তাকবিরে উলার (প্রথম তাকবির) সঙ্গে জামাতে নামাজ আদায় করবে আল্লাহতায়ালা তাকে দু’টি জিনিস থেকে মুক্তি দেবেন। ১. জাহান্নাম হতে মুক্তি ও ২. মুনাফিকি হতে মুক্তি। -সুনানে তিরমিজি: ২৪১

বেশি বেশি দান করা
সাহাবি হজরত আদি ইবনে হাতেম (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী কারিম (সা.) কে বলতে শুনেছি, ‘তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো যদিও এক টুকরো খেজুর সদকা করে হয়।’ –সহিহ বোখারি: ১৪১৭

জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তি চেয়ে দোয়া করা
আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তিনবার আল্লাহতায়ালার কাছে জান্নাত প্রার্থনা করে, জান্নাত তখন বলে, হে আল্লাহ! তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। আর যে ব্যক্তি তিনবার আল্লাহর কাছে জাহান্নাম হতে মুক্তি চায়, জাহান্নাম তখন আল্লাহতায়ালার কাছে বলে, হে আল্লাহ! তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিন। -সুনানে তিরমিজি: ২৫৭২

জোহরের ফরজ নামাজের পূর্বে এবং পরে চার রাকাত নামাজ আদায় করা
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জোহরের আগে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত নামাজ আদায় করবে, মহান আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেবেন। -ইবনে মাজাহ: ১১৬০

মানুষের সঙ্গে মধুময় আচরণ
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেবো না কোনো ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম হারাম এবং জাহান্নামের জন্য কোনো ব্যক্তি হারাম? যে ব্যক্তি মানুষের কাছাকাছি (জনপ্রিয়) সহজ-সরল, নম্রভাষী ও সদাচারী। -সুনানে তিরমিজি: ২৪৮৮

চোখকে গোনাহ থেকে হেফাজত করা
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, জাহান্নামের আগুন দু’টি চোখকে স্পর্শ করবে না- ১. আল্লাহতায়ালার ভয়ে যে চোখ ক্রন্দন করে। ২. আল্লাহর রাস্তায় যে চোখ পাহারা দিয়ে রাত পার করে। -সুনানে তিরমিজি: ১৬৩৯

ফরজ রোজার পাশাপাশি বেশি বেশি নফল রোজা রাখা
নবী করিম (সা.) বলেন, ‘রোজা (জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার জন্য) ঢালস্বরূপ।’ –সহিহ বোখারি: ১৮৯৪

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে একদিন রোজা রাখবে, আল্লাহতায়ালা ওই এক দিনের বিনিময়ে তার থেকে জাহান্নামকে ৭০ বছর (পরিমাণ পথ) দূরে রাখবেন। -সহিহ বোখারি: ২৮৪০

কন্যাসন্তানদের ভালোভাবে লালন-পালন করা
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ভিখারিণী দু’টি কন্যা সঙ্গে করে আমার কাছে এসে কিছু ভিক্ষা চাইল। আমার কাছে একটি খেজুর ছাড়া আর কিছু ছিলো না। আমি তাকে তা দিয়ে দিলাম। খেজুরটি সে দু’ভাগ করে কন্যা দু’টিকে দিয়ে দিলো। তা থেকে সে নিজে কিছুই খেল না। এরপর সে উঠে বের হয়ে গেল। তারপর নবী করিম (সা.) আমাদের কাছে এলে তার কাছে ওই ঘটনা শোনালাম। ঘটনা শুনে তিনি বললেন, যে ব্যক্তি একাধিক কন্যা নিয়ে সঙ্কটাপন্ন হবে এবং সে তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। সে কন্যাসন্তান তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে অন্তরাল (পর্দা) হবে। -সহিহ বোখারি: ১৪১৮