বিভক্তির কারণে বিহারে আসন কমেছে মুসলিম প্রার্থীদের
ভারতের সর্বশেষ জনগণনার প্রতিবেদন মতে, বিহারের সীমান্তবর্তী চার জেলা- কিষেণগঞ্জ, কাটিহার, আরারিয়া ও পূর্ণিয়ায় মুসলমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার তুলনায় অনেক বেশি। কিষেণগঞ্জে মুসলমান জনসংখ্যা ৬৮ শতাংশ, কাটিহারে ৪৪, আরারিয়ায় ৪৩ ও পূর্ণিয়ায় ৩৮ শতাংশ। এর স্পষ্ট প্রভাবে দেখা গেল, সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে। এসব এলাকায় মুসলিম প্রার্থীরা জয় পেলেও সামগ্রিকভাবে বিহারে মুসলমানদের আসন কমেছে।
ভারতের তৃতীয় বৃহৎ রাজ্য বিহারে মুসলমানরা মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৭ শতাংশ। কয়েকটি বিধানসভা আসনে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে এবং কমপক্ষে ৫০টি বিধানসভা আসনের ভাগ্য নির্ধারণ করে মুসলমানেরা। সেখানে ২৪৩ আসনের মধ্যে মুসলিম প্রার্থীরা এবার জয় পেয়েছে মাত্র ১৯ আসনে। যা গতবারের চেয়ে ৫টি কম। মূলত মুসলিমরা বহুদলে ভাগ হয়ে যাওয়ার কারণে তাদের আসন কমেছে।
২০১৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনে ২৪ মুসলিম বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। গতবারের চেয়ে এবার ৫ মুসলিম বিধায়ক কম। ২০১০ সালে ছিলেন ১৬ মুসলিম বিধায়ক।
রাজ্যটিতে এবারের নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় জনতা দল আরজেডি থেকে সর্বাধিক ৮ বিধায়ক জিতেছেন। এর পর আসাদউদ্দিন ওয়াইসির দল মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (মিম) থেকে ৫ বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। জাতীয় কংগ্রেস থেকে নির্বাচিত হয়েছেন চারজন। এ ছাড়া সিপিআইএম এবং বহুজন সমাজবাদী পার্টি বিএসপি থেকে একজন করে মুসলিম বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন।
বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ও জয়ী দল জেডিইউ ১১ মুসলিম বিধায়ককে টিকিট দিলেও একজনও জয়ী হতে পারেননি। অভিযোগ রয়েছে, এমনসব আসন থেকে তাদের টিকিট দেওয়া হয়েছে, যেখানে তাদের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম।
১৯৫২ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মুসলিম বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৯৮৫ সালে। সেবার এই সংখ্যা ছিল ৩৪।
এবারের বিধানসভা নির্বাচনে আরজেডি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন- মুহাম্মদ ইসরাফিল মনসুরী। তিনি কণ্টী কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছেন। একই দলের নরকাটিয়া কেন্দ্র থেকে জিতেছেন শামিম আহমেদ। এ ছাড়া আরজেডি প্রার্থী আলী আশরাফ সিদ্দিকী (নাথনগড়), মুহাম্মদ নেহালউদ্দিন (রফিগঞ্জ), আখতারুল ইসলাম শাহীন (সমস্তিপুর), ইউসুফ সালাউদ্দিন (সিমরি বখতিয়ারপুর), সাউদ আলম (ঠাকুরগঞ্জ) মুহাম্মদ কামরান (গোবিন্দপুর) জয়ী হয়েছেন।
মিম-এর যারা জয়ী হয়েছেন, তারা হলেন- আখতারুল ইমান (অমৌর), মুহাম্মদ আনজার নায়ীমী (বাহাদুরগঞ্জ), সৈয়দ রুকুনুদ্দিন আহমেদ (বাইসি), শাহনওয়াজ (জকিহাট) ও মুহাম্মদ ইজাহার আসফি (কোচাধামন) জয়ী হয়েছেন।
কংগ্রেস থেকে নির্বাচিত হয়েছেন- আবিদুর রহমান (আরারিয়া), শাকিল আহমেদ খান (কাদোয়া), মুহাম্মদ আফাক আলম (কসবা), ইজহারুল হুসাইন (কিষাণগঞ্জ)।
এ ছাড়া সিপিআই (এমএল-এল) থেকে নির্বাচিত হয়েছেন- মাহবুব আলম (বলরামপুর)। বিএসপি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন মুহাম্মদ জামান খান (চেইনপুর)।
শুধু মুসলিম আসন কমেছে তা নয়, নির্দল ও নারী বিধায়কের সংখ্যাও কমেছে। এবার বিহার বিধানসভায় মাত্র একজন নির্দল বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। সুমিত কুমার সিংহ নামের ওই বিধায়ক জামুই জেলার চাকাই কেন্দ্র থেকে বিজয়ী হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ছিলেন হেভিওয়েট প্রার্থী আরজেডির সাবিত্রী দেবী। ৫৮১ ভোটে সাবিত্রী দেবীকে হারিয়েছেন সুমিত।
পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৬৭ সালের (অবিভক্ত বিহার) বিধানসভা নির্বাচনে ৩৩ জন নির্দলীয় বিধায়ক ছিলেন। যা এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি। ১৯৯০ সালে ৩০ জন ছিলেন নির্দলীয়। ১৯৯৫ সালে ১২ জন, ২০০০ সালে ২০ জন। ২০০৫ সালের নির্বাচনে শেষ বারের মতো দুই অঙ্কের নির্দলীয় বিধায়ক বিধানসভায় ঠাঁই পেয়েছিলেন। ২০১০ সালে সংখ্যাটা নেমে দাঁড়ায় ৬। গত বারের নির্বাচনে এই সংখ্যা ছিল ৪। এ বার তা নেমে হয়েছে ১।
২০১৫ সালের তুলনায় এবারের বিধানসভা নির্বাচনে নারী বিধায়কের সংখ্যা ২ জন কমেছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে ২৮ জন নারী বিধায়ক ছিলেন। এবার এই সংখ্যা কমে ২৬ জনে দাঁড়িয়েছে।
উল্লেখ্য, বিহারে মোট বিধানসভা আসন ২৪৩টি। ক্ষমতায় যেতে দরকার ১২২ আসন। তন্মধ্যে এনডিএ জোট জিতেছে ১২৫ আসন। বিরোধী মহাজোটের ঝুলিতে গেছে ১১০ আসন। নির্দল অন্য দল জিতেছে ৮ আসন।