‘রাসূলের জন্মভূমিতে নেতানিয়াহুর প্রবেশ মুসলমানদের জন্য অপমানজনক’
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। গণমাধ্যমে এ নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। সৌদি আরব বৈঠকের বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেছে, অন্যদিকে নেতানিয়াহুর অফিসও এ বিষয়ে মুখ খুলছে না। বৈঠক নিয়ে কেউ মুখ না খুললেও নেতানিয়াহুর সৌদি সফর নিয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস।
হামাসের প্রভাবশালী নেতা সামি আবু যুহরি বলেছেন, ‘সৌদি আরবে দখলদার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর গোপন সফর গোটা মুসলিম উম্মাহর প্রতি অবমাননা। এর মাধ্যমে গোটা মুসলিম বিশ্বকে অপমান করা হয়েছে। একইসঙ্গে এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনি জাতির সব অধিকারকে পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে। এ বিষয়ে সৌদি আরবকে অবশ্যই ব্যাখ্যা দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘নেতানিয়াহুর এই সফরের ঘটনা অত্যন্ত বিপজ্জনক।’ তার মতে, ‘সৌদি আরবে মুসলমানদের পবিত্রতম স্থান মক্কা ও মদিনা অবস্থিত। মক্কায় রয়েছে কাবা শরিফ। সৌদি ভূখণ্ডে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম। এ কারণে মুসলমানদের প্রকাশ্য শত্রু ও তৃতীয় পবিত্রতম স্থান মসজিদে আকসার দখলকারী ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে রাসূলে খোদা (সা.)-এর জন্মভূমিতে প্রবেশ করতে দেওয়া সব মুসলমানের জন্য অপমানজনক।’
সৌদি আরব আর ইসরাইলের মধ্যে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই, ফিলিস্তিন প্রশ্নে ইসরাইলের ঘোর বিরোধী সৌদি আরব। তা সত্ত্বেও ইসরাইলের সঙ্গে গোপনে বৈঠক কেন করল সৌদি প্রশাসন- এর উত্তর এখনও অজানা। তবে বৈঠকের খবর মুসলিম বিশ্বের জন্য বড়সড় ধাক্কাই বটে। বৈঠক প্রশ্নে সরগরম বিশ্বের গণমাধ্যমগুলোও।
তবে কিছু একটা যে হয়েছে, এটা অস্বীকার কোনো উপায় নেই। কারণ, ইসরাইলের শিক্ষামন্ত্রী ইউয়াভ গালান্ট স্বয়ং গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, রোববার (২২ নভেম্বর) দেশের প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরবে গিয়েছিলেন এবং সেখানে গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কর্মকর্তার পাশাপাশি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও।
সৌদি আরব অবশ্য এ কথা অস্বীকার করেছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান জানিয়েছেন, ইসরাইলের দাবি একেবারে মিথ্যা। সৌদি যুবরাজের সঙ্গে পম্পেওর বৈঠক হয়েছে আমেরিকার, কিন্তু সেখানে ইসরাইল ছিলো না।
সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে মধ্যপ্রাচ্যে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমেরিকা। ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে আরব আমিরাত এবং বাহরাইনের। যা নিয়ে মুসলিম বিশ্বে আলোড়ন চলছে।
ফিলিস্তিন এর কড়া সমালোচনা করেছে। এরই মধ্যে সৌদি আরবে নেতানিয়াহুর সফরের খবর বিতর্ক আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ইসরাইলের সঙ্গে ফিলিস্তিনের সম্পর্ক নিয়ে সৌদি আরব সোচ্চার এবং সে কারণেই ইসরাইলের সঙ্গে কোনো রকম কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখে না। তা হলে আচমকা কেন নেতানিয়াহু সৌদি গেলেন? এই প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি।
তবে ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইটগুলো জানিয়েছে, নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত বিমান প্রায় দুই ঘণ্টা সৌদি আরবের মাটিতে ছিল এবং রাত ১২টার দিকে সৌদি আরব থেকে ইসরাইলে ফিরে এসেছে। সৌদির যে শহরে ফ্লাইটটি পৌঁছেছিল, সেখানেই ছিলেন যুবরাজ সালমান। এই বিমান ব্যবহার করে এর আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন নেতানিয়াহু।
গণমাধ্যমগুলো বলেছে, যুবরাজ আর নেতানিয়াহুর মাঝে যদি বৈঠক হয়ে থাকে; তাহলে এটিই হবে সৌদি আরবে কোনো দখলদার প্রধানমন্ত্রীর প্রথম সফর।