‘ভাস্কর্য বানিয়ে শ্রদ্ধা জানানো শরিয়ত সম্মত নয়’

  • নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় অনুষ্ঠিত হয় শীর্ষ আলেমদের বৈঠক, ছবি: সংগৃহীত

যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় অনুষ্ঠিত হয় শীর্ষ আলেমদের বৈঠক, ছবি: সংগৃহীত

মানব মূর্তি ও ভাস্কর্য যেকোনো উদ্দেশে তৈরি করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কোনো মহৎ ব্যক্তি ও নেতার ভাস্কর্য স্থাপন করে শ্রদ্ধা জানানো শরিয়ত সম্মত নয়। তাতে মুসলিম মৃতের আত্মার কষ্ট হয়। কারও প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও তার স্মৃতিকে জাগ্রত রাখতে ভাস্কর্য নির্মাণ না করে, শতকরা ৯২ ভাগ মানুষের বিশ্বাস ও চেতনার আলোকে কোরআন-সুন্নাহ সমর্থিত কোনো উত্তম বিকল্প সন্ধান করা যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেন দেশের আলেম সমাজ।

শনিবার (৫ ডিসেম্বর) ভাস্কর্য নির্মাণ, ওয়াজ মাহফিলে মাইকের সীমিত ব্যবহার, আলেম-উলামাদের বিরুদ্ধে কটূক্তিসহ চলমান অস্থিরতা এবং জাতীয় সংকট বিষয়ে আলেম-উলামাদের করণীয় শীর্ষক দেশের শীর্ষ আলেমদের বৈঠক থেকে এ প্রস্তাবনা পেশ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

ঢাকার জামিয়া মাদানিয়া যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন- কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল্লামা মাহমূদুল হাসান।

পরামর্শ বৈঠকে শুধুমাত্র আমন্ত্রিত উলামা ও সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

বিজ্ঞাপন

রূদ্ধদ্বার বৈঠকে সারাদেশ থেকে দেড় শতাধিক প্রতিনিধিত্বশীল আলেম অংশ নেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, মূর্তি ও ভাস্কর্য বিষয়ে বেফাক সভাপতির পক্ষ থেকে আলেমদের মতামত সম্বলিত একটি চিঠি প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠানো হবে, সেই সঙ্গে একটি প্রতিনিধি দল আলেমদের প্রস্তাবনার বিষয়বস্তু বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন।

এ ছাড়া আলেমদের বৈঠক থেকে পাঁচটি প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। প্রস্তাবনাগুলো পাঠ করেন শিবচর জামিয়াতুস সুন্নাহ মাদরাসার মুহতামিম ও মাওলানা মাহমুদুল হাসানের জামাতা মুফতি নেয়ামতুল্লাহ আল ফরিদী। প্রস্তাবনায় বলা হয়-

১. মানব মূর্তি ও ভাস্কর্য যেকোনো উদ্দেশে তৈরি করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কোনো নেতাকে ভাস্কর্য বানিয়ে শ্রদ্ধা জানানো শরিয়তসম্মত নয়। এতে মুসলিম মৃতের আত্মার কষ্ট হয়। কারও প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও তার স্মৃতিকে জাগ্রত রাখতে মূর্তি ও ভাস্কর্য নির্মাণ না করে শতকরা ৯০ ভাগ জনগণের বিশ্বাস ও চেতনার আলোকে কোরআন-সুন্নাহ সমর্থিত কোনো উত্তম বিকল্প সন্ধান করা যুক্তিযুক্ত।

২. আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবমাননা, কার্টূন, বিষোদগার ইত্যাদির তীব্র নিন্দা জানাই। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নাশের লক্ষে উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডে বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অবমাননাকর আচরণের ওপর কঠোর নজরদারি এবং দোষীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে এসব অপকর্ম বন্ধ করা হোক।

৩. বিগত সময়ে ঈমানি আন্দোলনে গ্রেফতারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার করা হোক। এ সংক্রান্ত বিষয়ে সারাদেশে আলেম-উলামা ও ইমাম-খতিবসহ সাধারণ মুসলমানদের ওপর সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করা হোক। ধোলাইপাড় চত্বরের পাশে ক্ষতিগ্রস্থ পুনঃনির্মিত মসজিদ নামাজের জন্য অবিলম্বে উম্মুক্ত করে দেওয়া হোক।

৪. সম্প্রতি শব্দ দূষণ ও জনদুর্ভোগের অজুহাতে দ্বীনি মাহফিলে লাউডস্পিকার ব্যবহারে প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টি তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। অপরদিকে সাধারণ শব্দদূষণ তথা উচ্চস্বরে গান-বাজনা ইত্যাদি বিষয়ে কোনো প্রশাসনিক উদ্যোগ নেই বললেই চলে। কেবল ওয়াজ মাহফিল নিয়ে শব্দ দূষণের অজুহাতে বিশেষ নির্দেশনা অনভিপ্রেত। অতএব জনগণের কল্যাণের পথে অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে সকল দ্বীনী মাহফিল যথানিয়মে অনুষ্ঠানের অবাধ সুযোগ প্রদান করা হোক।

৫. যে সব বিষয় শরিয়তে নিষিদ্ধ, সেসব বিষয়ে কোরআন-সুন্নাহর আলোকে সঠিক বক্তব্য তুলে ধরা আলেমদের দায়িত্ব। অথচ একশ্রেণির মানুষ আলেমদের বিরুদ্ধে বিষোদগার ও দায়িত্বহীন আচরণ করছে। কেউ কেউ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনাশের উস্কানি দিচ্ছে। এসবের খোঁজ-খবর রাখা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করা সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্ব। উস্কানিমূলক বক্তব্য অবমাননাকর মন্তব্য ও গান, মিছিল-মিটিং সমাজে অস্থিরতা বৃদ্ধি করবে। উলামায়ে কেরাম এসব বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ার আশঙ্কা প্রবল। সরকারকে এসবের উপযুক্ত প্রতিবিধান করতে হবে অন্যথায় দেশব্যাপী উদ্বৃত্ত বিশৃংখলা অস্থিরতায় সরকার এড়িয়ে যেতে পারবে না। বিশেষ করে ইসলাম ও বাংলাদেশ বিরোধী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ করা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব।

বৈঠকে শীর্ষ আলেমদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর প্রতিনিধি মুফতি জসীমুদ্দীন, আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর প্রতিনিধি মাওলানা নাজমুল হাসান, মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, আল্লামা আব্দুল হালীম বোখারীর প্রতিনিধি মাওলানা আবু তাহের নদভী, আল্লামা মুফতি রুহুল আমীন, আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদি, আল্লামা আব্দুল হামিদ (পীর সাহেব মধুপুর), আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস, আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মুফতি মনসুরুল হক, আল্লামা সাজিদুর রহমান, মাওলানা আব্দুল মতিন বিন হুসাইন, মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী, মুফতি আরশাদ রাহমানী, মুফতি মুহাম্মাদ আলী, মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ, মুফতি জাফর আহমদ, প্রিন্সিপাল মিজানুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা মোবারকুল্লাহ, আল্লামা আব্দুর রহমান হাফেজ্জী, মাওলানা মামুনুল হক, মুফতি শফিকুল ইসলাম, মাওলানা হিফজুর রহমান, মাওলানা উবাইদুর রহমান মাহবুব, মাওলানা রশিদুর রহমান ফারুক (পীর সাহেব বরুণা), মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী, মাওলানা শাব্বির আহমদ রশিদ, মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া, মাওলানা আব্দুল বাছির, আল্লামা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী, মাওলানা আব্দুল্লাহ হাসান (পীর সাহেব বাহাদুরপুর), মুফতি কেফায়াতুল্লাহ আযহারী, মুফতি আহমাদ আলী, মাওলানা নুর আহমদ কাসেম, মাওলানা নেয়ামাতুল্লাহ আল ফরিদী, মাওলানা খুবাইব, মাওলানা হাসান জামিল, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মাওলানা মুহিব্বুর রহমান খান, মুফতি লুৎফুর রহমান ফরায়েজী, মুফতি গোলাম রহমান, মাওলানা আব্দুল আউয়াল, মাওলানা আশরাফ আলী, মাওলানা হাফিজুর রহমান সিদ্দিক, মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন রাজু, মাওলানা শওকত হোসেন সরকার ও মাওলানা মুনাওয়ার হুসাইন প্রমূখ।

বৈঠকে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন মাওলানা মাহমূদুল হাসান। উদ্বোধনী বক্তব্যে হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শান ও মান রক্ষাকে ঈমানি দায়িত্ব উল্লেখ করে রাসূল অবমাননার সকল পথ বন্ধ করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি। সেই সঙ্গে ভাস্কর্য ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে আলেমদের আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শরিয়তসম্মত সমাধানে পৌঁছা অতীবও প্রয়োজন বলেও মতামত দেন মাওলানা মাহমূদুল হাসান।

তিনি আরও বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নৈতিক ব্যবহার কাম্য। এতে যারা দ্বীনের কাজ করেন, তাদের শরিয়তের নীতিমালা এবং আচরণগত সুস্থতা বজায় রাখতে হবে। পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ, পরনিন্দা আদর্শবান মানুষের পক্ষে শোভা পায় না। ওয়াজ-মাহফিল, বক্তৃতা ও আলোচনায় তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের আইনগত দিক বিবেচনা খুবই জরুরি। ছবি, কথা ও ভিডিওতে কঠিন আইনগত সমস্যার সম্ভাবনা থাকে। তাই এসবের নিরাপদ ও নির্দোষ ব্যবহার নিশ্চিত করা আবশ্যক।