আল্লামা শফীকে হত্যার অভিযোগে ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা
ধর্মীয় অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক আমির আল্লামা আহমদ শফীকে হত্যার অভিযোগে ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আসামিরা সবাই হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মী।
বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রামের তৃতীয় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিপলু কুমার দের আদালতে মামলাটি করেন আল্লামা আহমদ শফীর শ্যালক মাওলানা মাইনুদ্দিন। তিনি হেফাজতের কোনো পদে নেই। বাদির আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবু হানিফ বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। মামলায় বাদিসহ ৬ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয়েছে মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনিরকে। দুই নম্বর আসামী মাওলানা মামুনুল হক। অন্যরা হলেন- মাওলানা মীর ইদ্রিস, হাবিব উল্লাহ, আহসান উল্লাহ, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়েজী, মুফতি নুরুজ্জামান নোমানী, আব্দুল মতিন মো. শহীদুল্লাহ, মো. রিজুয়ান আরমান, মো. নজরুল ইসলাম, হাসানুজ্জামান, মো. এনামুল হাসান ফারুকী, মীর সাজেদ, মাওলানা জাফর আহমেদ, মীর জিয়াউদ্দিন, আহমদ, জুবাইর মাহমুদ, এইচ এম জুনায়েদ, আনোয়ার শাহা, মো. আহমদ কামাল, মো. নাছির উদ্দিন, কামরুল ইসলাম কাছেমী, মো. হাসান, ওবায়দুল্লাহ ওবাইদ, জুবাইর, মুহাম্মদ, আমিনুল হক, রফিক সোহেল, মবিনুল হক, নাঈম, হাফেজ সায়েম উল্লাহ ও মাওলানা হাসান জামিল।
এর আগে বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে প্রয়াত শাহ আহমদ শফীর জীবনকর্ম, অবদান শীর্ষক আলোচনা ও মতবিনিময় সভায় আল্লামা শফীকে হত্যার অভিযোগ তুলেছিলেন হেফাজত ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাইনুদ্দীন রুহী।
তিনি বলেন, ‘হুজুরের জীবদ্দশায় হাটহাজারী মাদরাসায় হামলা, ভাংচুর করা হয়। হুজুরের ওপর নির্যাতন করা হয়। গৃহবন্দী করে উনার খাবার-ওষুধ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। হুজুর অসুস্থ হয়ে পড়লে উনাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স আসতে বাধা দেওয়া হয়। এভাবে নির্যাতন করে আহমদ শফী হুজুরকে শাহাদাতবরণ করতে বাধ্য করা হয়েছে। উনাকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে এবং রাতে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।’
মৃত্যুর আগে আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীও আল্লামা শফীকে অসম্মান করেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাবুনগরী ক্ষমতার লোভে অনেকের কাছে বলেছেন, এই বুড়া (শফী) এখনও মরছে না কেন, আমরা কখন আমীর হব? বাবুনগরী আরও অনেকবার অনেকের সামনে হুজুরকে অসম্মান করে কথা বলেছেন। জালেমরা জুলুম-অত্যাচার চালিয়েছে শফী হুজুরের ওপর। হুজুরের সঙ্গে বেয়াদবি করেছে। এমনকি তাকে নির্মমভাবে আহতও করা হয়েছে।’
বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে আল্লামা শফীর হত্যাকারী ও হত্যার পরিকল্পনাকারীদেরও চিহ্নিত করার আহ্বান জানিয়ে রুহী বলেন, ‘আহমদ শফী হুজুরকে হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করা এবং বিচারের মুখোমুখি করা সরকারের দায়িত্ব। তদন্ত হোক, অসুবিধা কি? তদন্ত হলে কাদের এত ভয়? সমস্যাটা কোথায়?’
২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বরে ১০৩ বছর বয়সে আল্লামা শাহ আহমদ শফী বার্ধক্যজনিত কারণে ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।