এবারও বন্ধ থাকছে রমজানে উমরা-ইতিকাফ

  • মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় প্রধান, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র কাবা, ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র কাবা, ছবি: সংগৃহীত

বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে আসন্ন রমজান মাসেও উমরা পালন, মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীতে ইতিকাফসহ ইফতার আয়োজন হচ্ছে না। সৌদি আরবের নবনিযুক্ত ধর্ম মন্ত্রী এখনও এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেননি। তবে প্রয়োজনীয় সতর্কতা ও নিয়ম মেনে খতমে তারাবি অনুষ্ঠিত ও কিয়ামুল লাইল অনুষ্ঠিত হবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে সৌদি আরবে ১৩ এপ্রিল পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সৌদি আরবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব তীব্রতর হওয়ার প্রেক্ষিতে আগামী মে মাস পর্যন্ত সকল আন্তর্জাতিক ফ্লাইট স্থগিত হওয়ার কারণে ধারণ করা হচ্ছে, আসন্ন রমজান মাসে মুসল্লিদের ব্যাপকভাবে উমরা পালনের সুযোগ হচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

সৌদি আরবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মুসলমানদের রমজান মাসে উমরা পালনের আশা ক্ষীণ থেকে ক্ষীণ হচ্ছে। সৌদি আরবের সিভিল এভিয়েশন অথরিটি কর্তৃক জারি করা সর্বশেষ সুপারিশ অনুসারে, সেদেশের সকল আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ১৭ মে পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।

চলতি বছর উমরার অনুমতি না পেলে টানা দুই বছর সৌদি আরবের বাইরের মুসলমানরা পবিত্র রমজান মাসে উমরা করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। এমন ঘটনা ইতিহাসে আর ঘটেনি। ২০২০ সালে করোনাভাইরাসেরে প্রার্দুভাব এতটাই মারাত্মক হয়েছিল যে, সৌদি আরবে বসবাসকারী লোকেরাও উমরা পালনের অনুমতি পায়নি। মক্কার মসজিদে হারাম ও মদিনার মসজিদে নববীতে স্বল্প পরিসরে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকলেও উমরা পালন একেবারে বন্ধ ছিল।

বিজ্ঞাপন

করোনার প্রকোপ হ্রাসের পর সৌদি কর্তৃপক্ষ ২০২০ সালের ৪ অক্টোবর স্থানীয়দের জন্য উমরা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে। পরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলে ৫ নভেম্বর থেকে বিদেশ থেকে আসা জিয়ারতকারীদের পর্যায়ক্রমে উমরা পালন করার অনুমতি দেয়। কিন্তু চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সৌদি আরবে ব্রিটেন, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকার অনুরূপ ভাইরাস দেখা যাওয়ার আবার আন্তর্জাতিক ফ্লাইট নিষিদ্ধ করা হয়।

এর আগে, সৌদি আরব ২০২১ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সমস্ত আন্তর্জাতিক ফ্লাইট স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছিল, তবে নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ১৭ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ফলে ধরে নেওয়া হচ্ছে, এবারও সৌদি আরবের বাইরের মুসল্লিদের সেভাবে উমরার অনুমতি দেওয়া হবে না।

অবশ্য তিন দিন (১২ মার্চ) আগে সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ ছয় মাসের জন্য হজ ও উমরা খাতে কর্মরত প্রবাসীদের প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছেন। এ ঘোষণায় হজ-উমরা চালুর সম্ভাবনা দেখা দেয়। বিশেষ করে আসন্ন রমজানে উমরা চালুর সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়। কিন্তু এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ঘোষণা এখনও সৌদি কর্তৃপক্ষ দেয়নি। তবে সৌদি গষমাধ্যমসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, করোনোর ভ্যাকসিন গ্রহণ ও ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক হলে স্বাভাবিকভাবে হজ আয়োজন করা হতে পারে। সেক্ষেত্রেও গর্ভবতী নারী, আঠারো বছরের নীচে ও ৬০ বছরের বেশি বয়সী কেউ হজের সুযোগ পাবেন না।

এদিকে সৌদি আরবের নতুন হজ ও উমরামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ড. ইসাম বিন সাদ বিন সাঈদ। তিনি মোহাম্মদ সালেহ বেনতেনের স্থলাভিষিক্ত হন। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে এ পদে দায়িত্ব পালনকারী বেনতেনকে শুক্রবার (১২ মার্চ) সৌদি বাদশাহ সালমান এক ডিক্রি বলে বরখাস্ত করেন।

সৌদি আরবের প্রতিমন্ত্রী এবং মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ড. ইসাম বিন সাদ বিন সাঈদ রাজকীয় আদেশে হজ ও উমরার ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী মনোনীত হন। বিন সাঈদ কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক আইন বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রী নিয়েছেন।

বিন সাঈদ মন্ত্রী পরিষদে বিশেষজ্ঞ ব্যুরোর চেয়ারম্যানের সহকারী হিসাবে যথাক্রমে বিচারিক শাখায় যথাক্রমে ১৯৮৪ ও ২০০৩ সালে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৬ সালে তিনি মন্ত্রিপরিষদে ব্যুরো অফ এক্সপার্টদের প্রধান নিযুক্ত হন। ২০১৫ সালে তিনি আবাসন মন্ত্রী নিযুক্ত হন এবং সৌদি আরবের রিয়েল এস্টেট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালের এপ্রিলে তিনি সিভিল সার্ভিস মন্ত্রীর পদে নিযুক্ত হয়ে ২০১৭ সালের অক্টোবর অবধি সেই দায়িত্বে ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলতি রমজান মাসে মসজিদে নববী ও মসজিদের হারামের ইফতার মাহফিল বাতিলের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। উমরা চালুর ঘোষণা না হওয়ায় রমজানকে কেন্দ্র করে ইফতারের পণ্য ও বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা হতাশা প্রকাশ করেছেন। সবচেয়ে বেশি বেশি হতাশ হয়েছেন, হজ ও উমরার অপেক্ষায় থাকা মুসল্লিরা।