উড়োজাহাজ সাজানো হলো আরবি ক্যালিগ্রাফি দিয়ে
প্রাচীনকাল থেকেই আরবি ক্যালিগ্রাফিকে আরবীয় সংস্কৃতির অপরিহার্য অংশ মনে করা হয়। এটা তাদের ঐতিহ্য। ক্যালিগ্রাফি এমন সম্মোহনী এক শিল্প, যা আরব-অনারব সবাইকে তার সৌন্দর্যের প্রতি মোহাচ্ছন্ন করে। আর আরবরা যেহেতু শৌখিন জাতি, তাই শখ পূরণে তারা অনেক কিছুই করে থাকে। তাদের শখ পূরণকে রাষ্ট্রীয়ভাবেও গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়।
এরই অংশ হিসেবে সৌদির ভিশন ২০৩০-এর আওতায় সৌদি আরবের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আরবি ক্যালিগ্রাফির বিকাশে ২০২০ সালকে ‘আরবি ক্যালিগ্রাফি বর্ষ’ ঘোষণা করেছে। ২০২০ সালের এপ্রিল মাস থেকে শুরু হয়েছে বিশেষ এই বর্ষ। তবে, বৈশ্বিক মহামারি করোনার সেভাবে বছরটি উদযাপন করতে না পারলেও ‘আরবি ক্যালিগ্রাফি বর্ষের’ আবেদন বিশ্ববাসীর পৌঁছাতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে দেশটি। সেই সঙ্গে চলতি বছরকেও ‘আরবি ক্যালিগ্রাফি বর্ষের’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এরই অংশ হিসেবে অভিনব এক উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি আরবের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও উড়োজাহাজ সংস্থা ফ্লাইনাস। ফ্লাইনাস তাদের একটি উড়োজাহাজকে আরবি ক্যালিগ্রাফি দিয়ে সাজিয়েছে।
ফ্লাইনাসের পরিচালক বান্দার আল মুহান্না জানান, ‘আরবি ক্যালিগ্রাফির বছর’ উদযাপনের উদ্যোগে অংশীদার হতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। আরবি ক্যালিগ্রাফিকে ভাষার ঐশ্বর্য ও নান্দনিকতা তুলে ধরতে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহায়তা আয়োজিত এ উদ্যোগের অংশীদার হয়েছি।’
‘আরবি ক্যালিগ্রাফি বছর’-এর লোগো দিয়ে উড়োজাহাজ সাজানোর মাধ্যমে আরবি ক্যালিগ্রাফির গুরুত্ব, সৌন্দর্য ও আরব পরিচয়ে গর্ব করার বিষয়টি ফ্লাইটের যাত্রীদের সামনে তুলে ধরাই কোম্পানির প্রধান উদ্দেশ্য।
আরব নিউজে ফ্লাইনাসের উড়োজাহাজ সাজানোর খবর জানিয়ে বলা হয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আরবি ক্যালগ্রাফি শিল্পকে জ্ঞানের উৎস হওয়ার পাশাপাশি নান্দনিক তত্ত্ব হিসেবে এর সম্প্রসারণই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।
ক্যালিগ্রাফি বর্ষকে সামনে রেখে সংস্কৃতিমন্ত্রী প্রিন্স বদর বিন আব্দুল্লাহ সৌদি আরবের প্রতিটি অঞ্চলেই বেশ কিছু কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। কর্মসূচির অন্যতম হলো- মদিনা মোনাওয়ারার ‘দারুল কলম কেন্দ্রের’ আরবি ক্যালিগ্রাফির বিকাশ ও সর্বজনীনের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ। ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নামকরণে বছরব্যাপী কেন্দ্রটি ক্যালিগ্রাফির প্রচার ও বিকাশে কাজ করছে।
এ লক্ষ্যে দেশের বড় বড় ক্যালিগ্রাফারদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। একই সঙ্গে এর অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের অভিজ্ঞ শিল্পীদের এনে একটি আন্তর্জাতিক ক্যালিগ্রাফি প্ল্যাটফর্মের আয়োজন করা। তা ছাড়া আরবি ক্যালিগ্রাফি ও চিত্রশিল্পে মদিনা নগরীর প্রাচীন ঐতিহ্য রয়েছে। কোরআনে কারিম ও হাদিসে নববী (সা.)-এর সংকলন ও লিপিবদ্ধ হওয়ার মধ্য দিয়ে আরবি ‘লিপি’র নতুন যে ধারার সূচনা হয়েছে, এসব তারই ধারাবাহিকতা।
রাজধানী রিয়াদ ও জেদ্দায়ও এ বর্ষকে সামনে রেখে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিপর্যায়ে নানা আয়োজন করা হচ্ছে। সৌন্দর্যপ্রেমীরা নিজেদের বাসা-বাড়ির দেয়ালকে আরবি ক্যালিগ্রাফির ছোঁয়ায় মোহনীয় করে তুলছেন, হাইওয়ের পাশের বিভিন্ন বড় বড় স্থাপনায়ও দেখা যাচ্ছে আরবি ক্যালিগ্রাফির সাজসজ্জা।
এর আগে খুবার, জেদ্দা ও রিয়াদে দেশের বিশিষ্ট চিত্রশিল্পীদের নিয়ে ‘দেয়ালে আরবি ক্যালিগ্রাফি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে দেয়ালে আরবি লিপির সুন্দর ব্যবহারের ওপর বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এরই ফলস্বরূপ শহরগুলোতে সড়কের পাশের বড় বড় স্থাপনায়ও আরবি ক্যালিগ্রাফির সাজসজ্জা লক্ষ করা যাচ্ছে। মুসলিম উম্মাহর ইবাদতের কেন্দ্রভূমি পবিত্র কাবাগৃহের কিসওয়া বা গিলাফের কারুকাজের দায়িত্বও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ওপর।
সোনা-রুপার সুতা দিয়ে গিলাফের অনিন্দ্যসুন্দর ক্যালিগ্রাফির মাধ্যমে প্রতিবছর তাতে সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়। কাবার চারপাশে অন্তত ২০ টুকরা কাপড়ের ওপর কোরআনের আয়াত ও নানা ইসলামি উক্তি লেখা হয়।
আরবীয়দের সভ্যতা ও সংস্কৃতিজুড়ে ক্যালিগ্রাফি স্বতন্ত্র একটি জায়গা দখল করে আছে। ইসলামপূর্ব বহু যুগ আগে থেকে আরব ও এ অঞ্চলের মানুষের ক্যালিগ্রাফিচর্চা অন্তত তারই প্রমাণ বহন করে।
-আরব নিউজ অবলম্বনে