মাহে রমজানে বরকতে সমৃদ্ধ যে দু’টি বিষয়
আল্লাহপাকের অপার কৃপায় আজ আমরা পবিত্র মাহে রমজানের তৃতীয় রোজা সুস্থতার সাথে অতিবাহিত করেছি, আলহামদুলিল্লাহ। এছাড়া আজ ছিল মাহে রমজানের প্রথম জুমার দিন।
আল্লাহপাকের দরবারে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি এজন্য যে তিনি আমাদেরকে সুস্থতার সাথে রোজা রাখার তৌফিক দিচ্ছেন। রমজান আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভ করার বিশেষ মাধ্যম। তাই এ দিনগুলোতে আমরা তার সন্তুষ্টির জন্য যে কাজই করি না কেন, তিনি তাতে অনেক কল্যাণ দান করেন।
মাহে রমজানে বিশেষ বরকতে সমৃদ্ধ যে দু’টি বিষয় তা হচ্ছে সেহেরি ও ইফতার। কেনান, এতে বরকত রয়েছে। এ সম্পর্কে হজরত নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজানে সেহেরি খাও, কেননা সেহেরির মাঝে বরকত রয়েছে’ (মুসলিম)।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, ‘আমাদের ও কিতাবীদের (বনী ইসরাইলিদের) রোজার পার্থক্য হলো সেহেরি খাওয়া’ (মুসলিম)।
তাই বলা যায়, রোজার সাথে সেহেরি খাওয়ার সম্পর্ক বিদ্যমান। অনেকে এমনও আছেন, সেহেরি খায় ঠিকই কিন্তু গভীর রাতে খেয়ে ফেলেন, যা মোটেও ঠিক নয়। বোখারি শরিফের একটি হাদিসে এভাবে উল্লেখ রয়েছে যে, মহানবী (সা.) এর সেহেরি খাওয়া আর ফজরের নামাজের আজানের মাঝে পঞ্চাশ আয়াত তেলাওয়াত করার সময় অবশিষ্ট থাকতো।
মুসলিম শরিফে বলা হয়েছে, হজরত রাসুল করিম (স.) হজরত বেলালের আজান শুনে সেহেরি খাওয়া বাদ দিতে বারন করেছেন। কেননা, হজরত বেলাল (রা.) রাত থাকতেই আজান দিয়ে দেয়’। তাই সেহেরির যে সময় নিদ্ধারণ আছে সেই সময়ই সেহেরি খাওয়া উচিত।
এছাড়া মহানবী (সা.) সেহেরি খাওয়াতে কিছুটা বিলম্ব করতে এবং ইফতার সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে করাকে পছন্দ করতেন এবং তিনি (সা.) তার উম্মতকে এই নির্দেশই দিয়েছেন, তারাও যেন এমনটি করেন।
এ বিষয়ে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘লোকেরা যতদিন দ্রæত ইফতার করবে, ততদিন কল্যাণের মাঝে অবস্থান করবে’ (বোখারি)।
অপর এক স্থানে এভাবে বর্ণিত হয়েছে, হজরত উমার ইবনুল খাত্তাব (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যখন রাত ঐ (পূর্ব) দিক হতে আসে এবং ঐ (পশ্চিম) দিকে চলে যায় আর সূর্য ডুবে যায় তখন যেন রোজাদার ইফতার করে নেই’ (বোখারি)।
মহানবী (সা.) ইফতারে যে দোয়া করতেন:
মহানবী (সা.) ইফতারের সময় দোয়ায় রত থাকতেন। তিনি (সা.) ইফতারের পূর্বে দোয়া করতেন- ‘আল্লাহুম্মা লাকা সূমতু ওয়াবিকা আমানতু ওয়া লাকা রিজকিকা আফতারতু বিরাহমাতিকা’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার জন্য রোজা রেখেছি, আর তোমারই ওপর ঈমান এনেছি এবং তোমারই রহমতের রিজিক দ্বারা ইফতার করছি’ (মুসলিম)।
এছাড়া ইফতার শেষেও তিনি মহান আল্লাহপাকের শুকরিয়া জ্ঞাপন করে দোয়া করতেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত-তিনি বলেন, হজরত নবী করিম (সা.) যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন, ‘যাহাবা জ্জামায়ু ওয়াবতাল্লাতি উরুকু ওয়া ছাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহ’ অর্থাৎ পিপাসা দূর হলো, শিরা উপশিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান তবে প্রতিদান স্থির হলো’ (আবু দাউদ)।
মহানবী (সা.) যা দিয়ে ইফতার করতেন:
আমরা জানি, মহানবী (সা.) খেজুর আর পানি দিয়ে ইফতার করতেন। আমার প্রিয় নবী, বিশ্বনবী (সা.) অত্যন্ত সাধারণ ইফতার করতেন। তিনি (সা.) সূর্যাস্তের সাথে সাথে সামান্য কয়েকটি তাজা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। যদি তাজা খেজুর না পেতেন, তবে শুকনা খেজুর, আর যদি তাও না পেতেন, তবে কয়েক ঢোক পানি পান করে ইফতার করতেন (বোখারি-মুসলিম)।
আমাদের উচিত হবে যথা সময়ে ইফতার ও সেহেরি করা। ইফতার শুধু নিজে করলেই হবে না বরং অন্যান্যদেরকেও ইফতার করাতে হবে।
আমরা যেখানে বসবাস করি, এর আশপাশে যারা অসহায় এবং গরীব রয়েছে তাদের প্রতি এ রমজানে আমাদেরকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।
তাই আসুন, সেহেরি ও ইফতারের কল্যাণের প্রতি খেয়াল রেখে সময়মত সেহেরি ও ইফতার করি আর আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করি।
লেখক: ইসলামী গবেষক ও কলামিস্ট, ই-মেইল: [email protected]