রোগীর সেবায় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ

  • মাহমুদ আহমদ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

বিভিন্ন কারণে মানুষ অসুস্থ হতেই পারে। আমাদের আত্মীয়স্বজন এবং পাড়াপ্রতিবেশী অসুস্থ হলে তাদের জন্য আমাদের কিছু করণীয় রয়েছে। অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া, তার সেবা শুশ্রুষা করা এবং তার জন্য উপযুক্ত খাদ্য সামগ্রী নিয়ে যাওয়া ও তার খোঁজ খবর নেয়া ইসলামি শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত।

হজরত আলী (রা.) বলেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি সকালে কোনো মুসলমান রোগীকে দেখতে যায়, সত্তর হাজার ফিরিশতা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য নেক দোয়া করতে থাকে। যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় কোনো মুসলমান রোগীকে দেখতে যায়, পরদিন সকাল পর্যন্ত নেক দোয়া করতে থাকেন। আর তাকে জান্নাতের একটি বাগান দান করা হয়।’ (তিরমিজি শরিফ)।

বিজ্ঞাপন

রোগীর সেবা-যত্ন করাকে আল্লাহ ও তার রাসুল অনেক পছন্দ করতেন। এমনকি অসুস্থ ব্যক্তির সেবা-যত্নকে স্বয়ং আল্লাহতায়ালার সেবা-যত্নের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। সুবহান আল্লাহ। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহতায়ালা কেয়ামতের দিন মানুষকে ডেকে বলবেন- হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, তখন তুমি আমাকে দেখতে (সেবা-যত্ন করতে) আসনি।

বিজ্ঞাপন

মানুষ বলবে- হে প্রভু! আপনি রাব্বুল আলামিন, আমি কিভাবে আপনার সেবা করব? আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে পারনি যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল; কিন্তু তখন তুমি তাকে দেখতে যাওনি।

তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে (অসুস্থ ব্যক্তিকে) দেখতে যেতে (সেবা-যত্ন করতে) তাহলে সেখানে আমার দেখা পেতে? (মুসলিম ও মিশকাত)

রোগীর সেবা-যত্ন করার মাধ্যমে আমরা সহজেই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারি। আমরা যখন কোন রোগীকে দেখতে যাব তখন তার পুণ্যকর্মগুলো স্মরণ করে কথা বলতে পারি। কেননা হাদিসে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যখন তুমি কোনো রোগীর কাছে যাবে কিংবা মরণোন্মুখ ব্যক্তির কাছে যাবে, তখন তার সঙ্গে মঙ্গলজনক কথাবার্তা বলো। কেননা তুমি যা বলো ফিরিশতাগণ তার ওপর আমিন আমিন বলে।’ (মুসলিম ও মিশকাত)

রোগী দেখতে যাওয়া ও তার সেবার করায় অনেক পুণ্য নিহিত এমনকি আকাশ থেকে ফেরেশতাও তার জন্য দোয়া করতে থাকেন। যেভাবে হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যায়, তখন আকাশ থেকে এক ফিরিশতা তাকে লক্ষ্য করে বলতে থাকে, মোবারক হও তুমি এবং মোবারক হোক তোমার এই পথ চলা এবং তুমি জান্নাতে একটি স্থান করে নিলে।’ (ইবনে মাজাহ)

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন বেদুঈনকে দেখতে গেলেন। আর তার নিয়ম এই ছিল যে, যখন তিনি কোনো রোগীকে দেখতে যেতেন তখন বলতেন-

‘লা- বা’সা তুহু-রুন ইনশাআল্লাহ।’

অর্থ : ‘ভয় নেই, আল্লাহর মেহেরবানীতে আরোগ্য লাভ করবে, ইনশাআল্লাহ।’ (বোখারি, মুসলিম, মিশকাত)

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমাদের মধ্যে কেউ যখন অসুস্থ হতো তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ডান হাত রোগীর শরীরে বুলাতেন এবং বলতেন-

‘আজহাবিল বা’সা রব্বান না-সি, ওয়াশফি আনতাশ শা-ফি-, লা শিফাআ’ ইল্লা শিফা উকা শিফা-আ’ লা ইউগাদিরু সুক্বমা।

অর্থ : ‘হে মানুষের প্রতিপালক! এ রোগ দূর কর এবং আরোগ্য দান কর, তুমিই আরোগ্য দানকারী। তোমার আরোগ্য ব্যতিত কোনো আরোগ্য নেই। এমন আরোগ্য, যা বাকী রাখে না কোনো রোগ।’ (বোখারি, মিশকাত)

আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে সুস্থ রাখুন আর যারা অসুস্থ আছেন তাদেরকে আরোগ্য দান করুন, আমিন।

লেখক: ইসলামী গবেষক ও কলামিস্ট, ই-মেইল- [email protected]