নিজ এলাকায় দ্বীনী কাজ করা
আমি এমন অনেক আলেম-উলামাকে চিনি, যারা দেশের খুবই বিখ্যাত। কিংবা ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু নিজ গ্রামের বাড়িতে তাদের খুব একটা পরিচিতি নেই। আসলে পরিচিতি হওয়া কোনো মূখ্য বিষয় নয়। মূখ্য বিষয় হলো, এলাকায় দ্বীনী কাজের সঙ্গে লেগে থাকা।
অনেক ছাত্রকে যখন জিজ্ঞাসা করি। দাওরায়ে হাদিসে শেষ করেছেন। ঢাকায় চাকরি-বাকরি করছেন। কিন্তু নিজ এলাকায় দ্বীনী পরিবেশ তৈরিতে কী কী কাজ করছেন?
তখন অনেক ভাবলেশহীনভাবে বলেন, আমাকে এলাকায় কেউ তেমন একটা চেনে না। সেই ছোট থেকেই ঢাকায় থেকে পড়াশোনা করেছি। পড়াশোনা শেষে ঢাকাতেই রয়ে গেছি। এ কারণে এলাকার মানুষের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই, উঠাবসা নেই; কেউ তেমন চেনেও না।
জিজ্ঞাসা করলাম, তাহলে বাড়িতে গিয়ে কী করেন?
উত্তর: মসজিদে যাই। নামাজ পড়ে চলে আসি। বাড়িতে সময় কাটাই।
কিন্তু আদৌ অবস্থা কাম্য নয়। হতে পারে, আপনার যোগ্যতা ও সম্মান অনুযায়ী নিজ এলাকায় সেভাবে সমাদর পান না। তারা সেভাবে মূল্যায়ন করে না। তাই বলে, নিজ এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে না, এটা হতে পারে না।
মনে রাখতে হবে, আপনি যত বড় ব্যক্তিই হোন না কেন। নিজ এলাকায় তাদেরই একজন। তাদের সমন্তানসম। সুতরাং সেখানে আপনাকে অতিরিক্ত মূল্যায়ন কিংবা কদর কমই করা হবে। কিন্তু এ কারণে নিজ এলাকার দ্বীনী কাজ, ইসলামের প্রচার-প্রসার ও সমাজ উন্নয়নমূলক কাজ ছেড়ে দেওয়া যাবে না।
হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বীন প্রচারের কাজ শুরু করেছেন নিজ পরিবার থেকে। তারপর নিজ বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে। তারপর নিজ শহরে। পরে দূরে। আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেছেন, ‘মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই (জাহান্নামের) আগুন থেকে রক্ষা করো।’ –সুরা আত তাহরিম : ৬
কোরআনে কারিমে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি নিকটতম আত্মীয়দেরকে সতর্ক করে দিন।’ –সুরা আশ শোয়ারা : ২১৪
বর্ণিত আয়াতে সাধারণ মুসলিমদেরকে বলা হয়েছে, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো। অতঃপর জাহান্নামের আগুনের ভয়াবহতা উল্লেখ করে এ কথাও বলা হয়েছে, যারা জাহান্নামের যোগ্য পাত্র হবে, তারা কোনো শক্তি, দলবল, খোশামোদ অথবা ঘুষের মাধ্যমে জাহান্নামে নিয়োজিত কঠোরপ্রাণ ফেরেশতাদের কবল থেকে আত্মরক্ষা করতে সক্ষম হবে না।
এ আয়াত থেকে প্রকাশ পায় যে, আল্লাহর আজাব থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য প্রচেষ্টা চালানোর মধ্যেই কোনো মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য সীমাবদ্ধ নয়। বরং যে পরিবারটির পরিচালনার দায়িত্ব তার কাঁধে স্থাপন রয়েছে, তার সদস্যরা যাতে আল্লাহর প্রিয় মানুষরূপে গড়ে উঠতে পারে সাধ্যমত সে শিক্ষা দেওয়াও তার কাজ। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককেই তার অধীনস্ত লোকদের সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। শাসকও দায়িত্বশীল, তাকে তার অধীনস্ত লোকদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। নারী তার স্বামীর বাড়ী এবং তার সন্তান-সন্ততির তত্ত্বাবধায়ক, তাকে তাদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে।’ –সহিহ বোখারি : ৮৯৩
মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘আপনি মক্কাবাসী ও পাশ্ববর্তীদেরকে ভয় প্রদর্শন করেন।’ -সুরা আনআম : ৯২
বর্ণিত আয়াতগুলোতে স্পষ্টভাবে প্রথমে নিজে, তারপর স্বীয় পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং নিজ এলাকা, নিজ শহরে দ্বীনী কাজের প্রচার-প্রসারে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নবীর ওয়ারিস হিসেবে বর্তমানে এ কাজের দায়িত্ব আলেমদের ওপর।
এ কারণে নিজ গ্রাম, মহল্লা ও এলাকার প্রতি খেয়াল করা উচিত। সাধ্যানুপাতে দ্বীনী কাজে জড়ানো উচিত। সপ্তাহে সম্ভব না হলে অন্তত মাসে একবার হলেও নিজ এলাকায় সময় দিন। মানুষের দ্বীনী উন্নতির জন্য কাজ করুন।