হারাম সম্পর্কে জড়ানো অবস্থায় ইবাদত-বন্দেগির হুকুম
ইসলাম মহান রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে মনোনীত শ্রেষ্ঠ দ্বীন। কিন্তু এখনকার সমাজে তরুণ-তরুণীদের দ্বীনে ফেরার পথে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক হচ্ছে- নানা ধরনের হারাম সম্পর্কে জড়ানো। এমন অনেকেই আছে, যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমজান মাসে গুরুত্ব দিয়ে রোজা পালন করে, দ্বীনের ব্যাপারেও খুব আগ্রহী। কিন্তু, একটা জায়গায় এসে আটকে গেছে- হারাম রিলেশনশিপ।
নবী-রাসুলের সময় থেকে এখন পর্যন্ত ইসলামের দৃষ্টিতে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক কিংবা প্রেমের সম্পর্ক সম্পূর্ণ হারাম। নারী-পুরুষের একে অপরের সঙ্গে কামনা-বাসনা সহকারে কথাবার্তা, নির্জনে দেখা-সাক্ষাত, ডেটিং, চ্যাটিং, স্পর্শ, হাসাহাসি, দুষ্টামি সবই নিষিদ্ধ। এই রিলেশনশিপ মূলত শয়তানের ফাঁদ। এই ফাঁদে পড়ে নারী-পুরুষ উভয়ে ব্যভিচারের দিকে ধাবিত হয়, যার পরিণতি খুবই ভয়াবহ।
নারী-পুরুষ পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি বিনিময়েও রয়েছে সুস্পষ্ট হুকুম। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা সুস্পষ্ট নীতিমালা ঘোষণা করেছেন। পুরুষদের উদ্দেশ্য করে আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘(হে রাসুল! আপনি) মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা রয়েছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহতায়ালা সে ব্যাপারে খবর রাখেন।’ -সুরা নুর : ৩০
আবার নারীদের উদ্দেশ্য করে আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘(হে রাসুল! আপনি) ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। সাধারণতঃ প্রকাশমান ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বুকের ওপরে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, বাবা, শ্বশুর, ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, স্ত্রীলোক অধিকারভূক্ত বাদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও (এমন) বালক- যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতিত অন্য কারও (সামনে) সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। (এমনকি) তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তওবা করো; যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।’ -সুরা নুর : ৩১
মহান আল্লাহ মানুষকে ব্যভিচারের নিকটবর্তী হতে নিষেধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।’ -সুরা ইসরা : ৩২
তবে দয়াময় আল্লাহ বৈধ উপায়ে বিয়ের মাধ্যমে নিজেদের ভালোবাসা প্রকাশ ও জৈবিক চাহিদা মেটানোর সুযোগ দিয়েছেন। সুতরাং মানুষের কর্তব্য, বিয়ের পূর্বে হারাম সম্পর্কের দিকে পা না বাড়িয়ে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী বিয়ে করা।
তবে হারাম রিলেশন (অবৈধ প্রেম) গোনাহের কারণ হলেও তা শিরক, কুফরি বা মুরতাদ হওয়া মতো গোনাহ নয়। যে এ কারণে তার সব আমল বরবাদ হয়ে যাবে কিংবা তার আমল কবুল হবে না। বরং এ অবস্থায়ও তার নামাজ, রোজা, দান-সদকা, দোয়া, কোরআন তেলাওয়াত ও অন্যান্য নেকির কাজি বরবাদ হবে না। বরং এগুলো সে যদি খালেস নিয়তে যথানিয়মে সম্পাদন করে তাহলে মহান আল্লাহ তা কবুল করবেন বলে আশা করা যায়। কিন্তু হারাম রিলেশনের কারণে গোনাহগার হবে। এ ক্ষেত্রে করণীয় হলো, অনতিবিলম্বে তওবা করে এ পথ থেকে ফিরে আসা।
আল্লাহ আমাদেরকে সর্বপ্রকার পাপাচার থেকে তওবায়ে নাসুহার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তওবায়ে নাসুহা তথা আন্তরিক তওবা করো। আশা করা যায়, তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মন্দ কর্মসমূহ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত।’ -সুরা তাহরিম : ৮
তওবায়ে নাসুহা অর্থ খাঁটি ও নির্ভেজাল তওবা, একনিষ্ঠতা ও আন্তরিকতাপূর্ণ তওবা। অর্থাৎ এমন আন্তরিকতা ও দৃঢ় প্রত্যয় সহকারে তওবা করা যে, তওবাকারী আর কখনও জেনে-বুঝে ওই গোনাহে লিপ্ত হবে না- মর্মে অঙ্গিকার করা।
কোরআন-সুন্নাহর সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা হলো, মুসলিম নারী-পুরুষ উভয়ে অবৈধ সংস্পর্শ, কথা-বার্তা ও দেখা-সাক্ষাৎ, আসক্তি ও সাজ-সজ্জা থেকে বেঁচে থাকা। নিজেদের দ্বীন ও আত্মসম্মান রক্ষা করা।
সুতরাং নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেই হাদিসের ওপর আমল করা জরুরি। যার বাস্তবায়নে তিনি মুসলিম উম্মাহকে দিয়েছেন জান্নাতের নিশ্চয়তা। তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের জিহ্বা ও লজ্জাস্থান হেফাজত করবে; আমি তার জান্নাতের জিম্মাদার হবো।’
আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহর নারী-পুরুষকে অবৈধ আসক্তি, সম্পর্ক, দেখা-সাক্ষাৎ, কথা-বার্তা ও যৌন লালসা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।