শ্রীলঙ্কার মুসলমানদের অগ্রযাত্রা



সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা, অতিথি লেখক, ইসলাম
শ্রীলঙ্কার ঐতিহাসিক রেড মসজিদ

শ্রীলঙ্কার ঐতিহাসিক রেড মসজিদ

  • Font increase
  • Font Decrease

শ্রীলঙ্কা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ রাষ্ট্র এবং সার্কের সদস্য। ১৯৭২ সালের আগে এই দ্বীপ সিলোন নামে পরিচিত ছিল। দেশটির বাণিজ্যিক রাজধানী কলম্বো এবং এটি প্রধান শহর। প্রাচীনকাল থেকেই শ্রীলঙ্কা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত। সিংহলি সম্প্রদায় এই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী। উত্তর দিকের স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে তামিল সম্প্রদায় দেশের সর্ববৃহৎ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে মুর, বার্ঘের, কাফির ও মালয় উল্লেখযোগ্য। শ্রীলঙ্কা চা, কফি, নারকেল, রাবার উৎপাদন ও রফতানিতে বিখ্যাত।

নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যসংবলিত সমুদ্রসৈকত, সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য শ্রীলঙ্কাকে সারা পৃথিবীর পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এর ভৌগোলিক অবস্থান এবং ‘গভীর আশ্রয়স্থল’ প্রাচীন সিল্ক রোডের সময় থেকে আধুনিক মেরিটাইম সিল্ক রোড পর্যন্ত একে অত্যন্ত কৌশলগত গুরুত্ব দিয়েছে।

সিংহলি সম্প্রদায় শ্রীলঙ্কার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী। শ্রীলঙ্কার মুসলমানরা ‘মুর’ নামে পরিচিত। পরিসংখ্যান অনুযায়ী তারা দেশটিতে তৃতীয় বৃহত্তম জাতিগত সম্প্রদায়। দেশটির মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশের অধিক মুসলমান। বর্তমানে শ্রীলঙ্কায় এক হাজার ৫০০ মসজিদ, ১০০ কোরআন শিক্ষা কেন্দ্র এবং দুই শতাধিক মাদরাসা ও স্বতন্ত্র ইসলামি শিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে যেগুলো ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত।

মূলত শ্রীলঙ্কার মুসলিম জনগোষ্ঠী দেশটির গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। দেশটিতে রয়েছে ঐতিহাসিক ও প্রাচীন অনেক মসজিদ। শ্রীলঙ্কার মধ্যাঞ্চল ডাম্বুল্লার সবচেয়ে বড় মসজিদের বয়স ৬০ বছরের বেশি। কেটচিমালাই মসজিদটি শ্রীলঙ্কার বেরুওয়ালায় অবস্থিত। সাদা, লম্বা ও উঁচু মিনারের এ মসজিদের চার দিক নারকেল গাছ দিয়ে বেষ্টিত। প্রাচীন আরবি স্থাপত্য রীতিতে নির্মিত মসজিদটি দূর থেকে দেখতে অনেকটা ছবির মতো মনে হয়। দেশটিতে দাওয়াতে তাবলিগের কাজ ব্যাপকভাবে চালু আছে। তাবলিগের মারকাজ গ্র্যান্ডপাস রোডের মসজিদটিও বেশ বিখ্যাত।

দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় মুসলিম জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমান। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটিতে মুসলমানরা এখন দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় গোষ্ঠী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে বাড়ছে মুসলিমবিদ্বেষও। দেশটিতে মুসলিম জনসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধির কারণে বাড়ছে মুসলিম স্থাপনা ও অবকাঠামো। রাজনীতিতে সংখ্যালঘু মুসলমানদের রাজনৈতিক দল ‘শ্রীলঙ্কান মুসলিম কংগ্রেস’ বেশ প্রভাবশালী। অন্য রাজনৈতিক দলেও মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ রয়েছে। শ্রীলঙ্কায় দেওবন্দ নেসাবের অনুসরণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মাদরাসাও রয়েছে। এখানকার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলমান দাওয়াত ও তাবলিগের কাজের সাথে যুক্ত। দেশটিতে ইসলামি আন্দোলনের ভিত্তিও বেশ মজবুত। আর লঙ্কান মুসলমানরা খুবই ধর্মপরায়ণ। প্রতি বছর প্রায় তিন হাজার মুসলমান শ্রীলঙ্কা থেকে হজ পালন করে থাকেন যদিও শ্রীলঙ্কান মুসলমানরা সৌদি আরবের কাছে হজের কোটা বাড়ানোর আবেদন করে আসছে দীর্ঘ দিন ধরেই। গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে শ্রীলঙ্কার নতুন সংবিধানে সংখ্যালঘুদের অধিকার সংরক্ষণে বিশেষ বিধান যুক্ত করা হয়েছে। তার পরও দেশটিতে মুসলিম বিদ্বেষ বাড়ছে। সঙ্কুচিত হচ্ছে মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নাগরিক মর্যাদা, যা দেশটিতে বসবাসরত মুসলিমদেরকে অনিরাপদ করে তুলেছে।

জুমার নামাজ পড়ে বের হচ্ছেন শ্রীলঙ্কান মুসলমানরা

 

শ্রীলঙ্কার মুসলমানদের দ্বীনি তাবলিগের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে প্রচুর সামাজিক কাজের সাথে জড়িত যা তাদের দিয়েছে আলাদা পরিচিতি ও বিশেষ মর্যাদা। সব মিলিয়ে বলা চলে, সেখানকার মুসলমানরা বেশ ভালোই ছিলেন স্বকীয়তা ও পরিচিতি নিয়ে। কিন্তু সে অবস্থার এখন দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। সম্প্রতি দেশটিতে মুসলিম বিদ্বেষ আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এ জন্য বর্তমান সরকারের মুসলিমবিদ্বেষী নীতিকে প্রধানত দায়ী করা হচ্ছে।

দেশটিতে মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকার সঙ্কুচিত করা হচ্ছে বলে জোরালো অভিযোগ উঠেছে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে। চলমান বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ সে দিকেই অঙ্গুলি নির্দেশ করে। নানা অজুহাতে দেশটিতে মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর অনাকাক্সিক্ষতভাবে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। এমনকি হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে ইবাদত-বন্দেগিতেও। সে ধারাবাহিকতায় করোনার অজুহাতে দেশটির মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের প্রবেশাধিকার খুবই সীমিত করা হয়। কলম্বোর গল হাইওয়ে রোডের পাশে লোয়ার বারাতেল্লি সড়কে অবস্থিত আল হাসাদ মসজিদে জুমার দিনে ৫০ জনের অধিক মুসল্লি সেখানে প্রবেশের অধিকার পায় না। এটিই হচ্ছে সেখানকার বাস্তবচিত্র। আরব সাগরের কলম্বোর এ অংশের উপকূলঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা এই চারতলা মসজিদে পুরুষ ও মহিলা মিলে হাজারখানেক মুসলমান নামাজ পড়তে পারে। কিন্তু করোনার অজুহাত দেখিয়ে এখন মাত্র ৫০ এর সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। জুমার সময় ৫০ জন মুসল্লিকে মসজিদে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হলেও অন্য ওয়াক্তের নামাজে ৪০ জনের বেশি অনুমতি পান না। কলম্বোজুড়ে থাকা অসংখ্য মসজিদে এ নিয়ম। অথচ বাস ও ট্রেনের মতো গণপরিবহন চলছে, কলম্বোতে আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট হচ্ছে, ছোট গ্যালারি দর্শকে পরিপূর্ণ। চলছে অফিস-আদালত ও মার্কেট। ঠাসাঠাসি করে যাত্রী নিয়ে চলছে বাস, খোলা শপিংমল। খুলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। কিন্তু নিয়মের কড়াকড়ি শুধু মসজিদে। এতে বিরক্ত শ্রীলঙ্কার মুসলমানরা যা দেশটিতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ।

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারীর শুরুতে খুবই নাজুক অবস্থার মুখে পড়েছিল লঙ্কার মুসলমানরা। করোনায় শ্রীলঙ্কার কোনো মুসলমান মারা গেলে তার লাশ পুড়িয়ে ফেলা হতো। বিপুলসংখ্যক মুসলমানের লাশ এভাবে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে করোনায় মৃত্যুর অজুহাতে। এরপর সোচ্চার হয় স্থানীয় মুসলমানরা। তাদের তুমুল আন্দোলনের মুখে মুসলমানদের লাশ পুড়িয়ে ফেলার নীতি থেকে সরে আসে মাহিন্দা রাজাপাকসে সরকার।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, মুসলিমদের লাশ পুড়িয়ে ফেলা শুরু হলে পার্লামেন্ট ভবনের সামনে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়; যদিও করোনার দোহাই দিয়ে মুসলমানদেরকে আন্দোলন থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল। লাশ পোড়ানোর বিরুদ্ধে মুসলমানদের তীব্র আন্দোলনের খবর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন মুসলিম দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা চাপ দেন লঙ্কান সরকারকে। অনেকটা বাধ্য হয়েই দেশটির সরকার মুসলমানদের লাশ পোড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।

কেটচিমালাই মসজিদ

 

শুধু কলম্বো শহরেই প্রচুর মুসলমানের বসবাস রয়েছে। এ ছাড়াও দেশের সব অঞ্চলেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলমানের বসবাস। শ্রীলঙ্কার মুসলমানরা আর্থিকভাবে বেশ সচ্ছল। বেশিরভাগই ব্যবসায়ী। মুসলমানদের অর্থনৈতিক শক্তিটা পছন্দ করছে না বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী সিংহলিরা। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় স্থানীয় একেশ্রেণীর উগ্রবাদী বৌদ্ধ প্রতিনিয়তই মুসলিম বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে এবং তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতাও সৃষ্টি করছে। আগের সরকারগুলোর সময় বেশ কয়েকজন মুসলমান মন্ত্রী ছিলেন। সিরিসেনা সরকারের সময় এই সংখ্যা ছিল ছয়। কিন্তু রাজাপাকসে সরকারে মুসলমান মন্ত্রী মাত্র একজন যা ক্ষমতাসীনদের মুসলিম বিদ্বেষের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

লঙ্কান মুসলমানদের অন্যতম ব্যবসা বিদেশ থেকে টাইলস আমদানি। এখন এই ব্যবসা বন্ধ করতে নানা ধরনের শর্তকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে সরকার, এমন অভিযোগও রয়েছে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে। ২০১৯ সালে কলম্বোর এক গির্জায় বোমা হামলা চালানো হলে অনেক লোক নিহত হয়। এ ঘটনার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মুসলমানদেরই দায়ী করা হয়। ফলে দেশটির মুসলমানরা নানাভাবে জুলুম-নির্যাতনের শিকার হতে থাকেন। পরিকল্পিতভাবে বিদ্বেষ ছড়ানো হয় মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। তাদের ধর্মীয় ও নাগরিক অধিকার সঙ্কুচিত করা হয়। আর এই প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। ফলে লঙ্কান মুসলমানরা এখন বিষম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

মূলত দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় মুসলিম জনসংখ্যা যতই বাড়ছে, ততই পরিকল্পিতভাবে বিদ্বেষও ছড়ানো হচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে মুসলমানদের অগ্রযাত্রা রোধ করার জন্য ক্ষমতাসীনদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে একটি ধর্মান্ধ ও উগ্রবাদী গোষ্ঠী মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নানাবিধ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এ অবস্থায় লঙ্কান মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় বিশ্ব মুসলিমকে এগিয়ে আসতে হবে। ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালাতে হবে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে। বিশেষ করে ওআইসি, আরব লিগসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ; অন্যথায় ঐতিহ্যবাহী লঙ্কান মুসলমানদের স্বকীয়তা ও ঐতিহ্য কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে।

   

৪০ বছর ধরে মদিনায় বিনামূল্যে চা-কফি খাওয়ানো বৃদ্ধের মৃত্যু



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
চা-কফি নিয়ে বসে আছেন শায়খ ইসমাইল আল-জাইম আবু আল-সাবা, ছবি : সংগৃহীত

চা-কফি নিয়ে বসে আছেন শায়খ ইসমাইল আল-জাইম আবু আল-সাবা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র মদিনা জিয়ারতকারীদের অনেকের কাছে পরিচিত নাম শায়খ ইসমাইল আল-জাইম আবু আল-সাবা। গত ৪০ বছর ধরে তিনি পবিত্র হজ-উমরা পালনকারীদের মাঝে বিনামূল্যে চা, কফি, রুটি ও খেজুর বিতরণ করেছেন। অনেক বাংলাদেশি হাজি তার হাতে চা-কফি পান করেছেন।

সদাহাস্য সিরিয়ান এই নাগরিক মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) ৯৬ বছর বয়সে মদিনায় ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে হারামাইনের খবর সরবরাহকারী ভেরিফায়েড পেইজ ‘ইনসাইড দ্য হারামাইন’ এই খবর জানিয়ে তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে।

জানা যায়, প্রতিদিন ৪০টি ফ্লাস্কে করে চা-কফি আনতেন তিনি। এ জন্য একটি বিশেষ ট্রলি ব্যবহার করতেন, মসজিদে নববিতে যাওয়া অন্যতম পথ জায়েদিয়া এলাকায় বসতেন তিনি। সবুজ চা, লাল চাসহ নানা স্বাদের চা বানিয়ে আনতেন। থাকত চিনিযুক্ত, চিনিমুক্ত চা-কফি। এছাড়া এলাচযুক্ত চা, পুদিনা চা, বিভিন্নরকমের মশলাযুক্ত চা আনতেন।

তিনি রাস্তার পাশে বসে পথচারীদের মধ্যে চা, কফি, খেজুর, রুটি ও বিস্কুট বিনামূল্যে বিতরণ করতেন। এই কাজে তাকে সহযোগিতা করতেন ছেলেরা। কেউ কিছু দিতে চাইলে বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখান করতেন।

গত বছর সৌদি আরবের প্রভাবশালী পত্রিকা আল আরাবিয়া তাকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

সিরিয়ার নাগরিক শায়খ ইসমাইল প্রায় ৪০ বছর ধরে মদিনায় বসবাস করে আসছিলেন। মদিনার কুবা এভিনিউতে একটি সাধারণ বাড়িতে বসবাস করলেও নিজের সম্পদ পুরোটাই উৎসর্গ করেছিলেন হজ ও উমরা যাত্রীদের খেদমতে।

টানা চার দশক ধরে অনন্য এই সেবার কারণে সবার কাছে তিনি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার পাত্রে পরিণত হন। তার মৃত্যুতে মদিনায় শোকের ছায়া নেমে আসে। বাংলাদেশের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্মৃতিচারণের পাশাপাশি শোকপ্রকাশ করে তার জন্য দোয়া কামনা করেছেন।

;

দানের এক ডিম সোয়া দুই লাখ রুপিতে বিক্রি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
নিলামে তোলা সেই ডিম ও ক্রেতা দানিশ হামিদ, ছবি : সংগৃহীত

নিলামে তোলা সেই ডিম ও ক্রেতা দানিশ হামিদ, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সাধারণ একটা মুরগির ডিম নিলামে তুলে বিক্রি হয় ভারতীয় মুদ্রায় সোয়া দুই লাখ রুপি, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় তিন লাখ টাকা। একটি ডিমের এমন দাম মেলায় অবাক অনেকেই। মাত্র ছয় রুপির একটি ডিমের এত দাম কী করে হলো? কেনই বা নিলামে চড়ানো হলো ডিমটি?

ঘটনা ভারত অধিকৃত কাশ্মীর উপত্যকার সোপোর জেলার মাল মাপানপুরা গ্রামের একটি মসজিদের।

খবরে প্রকাশ, মসজিদ কমিটি সিদ্ধান্ত নেয় যে, ঈদ উপলক্ষে বাড়ি বাড়ি ঘুরে তারা নগদ অর্থ আর বিভিন্ন সামগ্রী দান হিসেবে সংগ্রহ করবে। এ সময় কেউ নগদ অর্থ দিয়েছেন, কেউ থালা-বাসন, মুরগি বা চাল দান করেছেন।

মসজিদ কমিটির এক সদস্য নাসির আহমেদ জানান, ‘আমরা দান সংগ্রহ করছিলাম। তার মধ্যেই একটা ছোট বাড়ি থেকে এক নারী মাথা নিচু করে বেরিয়ে আসেন। আমার কাছে এসে একটা ডিম দিয়ে বলেন, তার দানটা যেন আমি গ্রহণ করি।’ ওই নারী খুবই গরিব। একটা ভাঙাচোরা ছোট্ট ঘরে একমাত্র ছেলের সঙ্গে বাস করেন।

ছয় রুপি দামের সাধারণ ডিমটি গরিব ওই নারী যে আবেগ নিয়ে খোদার নামে দান করেছিলেন, সেটাই ডিমটাকে ‘অমূল্য’ করে তুলে। কমিটির সবার সঙ্গে আলোচনা করে ডিমটাকে নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ওই নারীর পরিচয় প্রকাশ না করেই নাসির আহমেদ ডিমটাকে নিলামে তোলার কথা ঘোষণা করেন। তিনি নিজেই ১০ রুপি নিয়ে নিলামে প্রথম দর হাঁকেন।

প্রথমেই ডিমটার দাম উঠেছিল ১০ হাজার ভারতীয় টাকা। তারপরে দর বাড়ানো হয়। একটা সময় দাম বাড়তে থাকে, তিন দিন পর্যন্ত নিলাম করা হয় ডিমটি। প্রথম দুই দিনে ১০, ২০, ৩০ আর ৫০ হাজার ভারতীয় টাকা পর্যন্ত দর উঠে। প্রতিবারই ডিমটা ফেরত নিয়ে নেওয়া হতো। এরপর শেষ দিনে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত নিলাম চলবে, এরকম একটা ঘোষণা করা হয়। শেষ দিনের নিলামে উপস্থিত ছিলেন সোপোরের ব্যবসায়ী দানিশ হামিদ।

নিলামে দুবার হাঁক দেওয়া হয় ৫৪ হাজার ভারতীয় রুপির। একেবারে শেষ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা হামিদ দর হাঁকেন- ‘৭০ হাজার।’ পরে দাম বাড়তে থাকে এক পর্যায়ে দাম উঠে সোয়া দুই লাখে। সব মিলিয়ে বিক্রি হয় দুই লাখ ২৬ হাজার ৩৫০ ভারতীয় রুপি। 

দানিশ হামিদ জানান, তিনি ডিমটাকে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখার জন্য ভালো একটা ফ্রেম বানাবেন।

;

সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে শঙ্কা হাবের



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হাবের মতবিনিময় সভা, ছবি : সংগৃহীত

হাবের মতবিনিময় সভা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। বাংলাদেশ থেকে আগামী মাসের ৯ মে থেকে হজফ্লাইট শুরুর কথা রয়েছে। অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান ৮৫ হাজার ২৫৭ জন হজযাত্রী। অথচ এখনও সৌদি আরবে হাজিদের বাড়ি ভাড়া করা সম্ভব হয়নি।

এমনকি হজযাত্রীদের মীনায় অবস্থানের জায়গা (তাঁবু) এবং সার্ভিস প্রোভাইডার (সৌদি আরবের মোয়াল্লিম) এখনও নির্ধারণ হয়নি। প্রকাশ করা হয়নি চূড়ান্ত ফ্লাইট সিডিউল। এসব কারণে হজ এজেন্সি কর্তৃপক্ষ সৌদি আরবে হাজিদের বাড়ি ভাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতির জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অব্যবস্থাপনাকে দুষছেন হজ এজেন্সির মালিকদের সংগঠন হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব)।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) রাতে ‘হজ ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় সংগঠনটির সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম এসব কথা বলেন। রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারস ইনস্টিটিউটে আয়োজিত আলোচনা সভায় সারাদেশের হজ এজেন্সির প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

সভায় হাব সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, অব্যবস্থাপনার কারণে আমরা চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছি। কোনো হাজি যেন হজে গিয়ে কষ্ট না পান, সে জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। হাব সভাপতি বলেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয়ে কোনো কর্মকর্তা স্থায়ী না, তারা দুই-তিন বছর পরপর বদলি হন, হজের আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে তাদের স্বচ্ছ কোনো ধারণা নেই। তাদের কারণে হজ ব্যবস্থাপনা কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হোক তা আমরা চাই না।’

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা হজ ব্যবস্থাপনায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এজেন্সি মালিকদের সঙ্গে পরামর্শ করেন না বলেও অভিযোগ হাবের। এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘হজ ব্যবস্থাপনা আবার চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। আমরা আগেই ধর্ম মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিলাম, হজ ব্যবস্থাপনা এ বছর চ্যালেঞ্জিং হবে। এজেন্সি কোটা সর্বনিম্ন ১০০ জন রাখতে আমরা অনুরোধ করেছিলাম। ধর্ম মন্ত্রণালয় হজযাত্রীর সংখ্যা কমাতে অনাগ্রহী হয়। সর্বোচ্চ এজেন্সি কোটা ৩০০ থাকা স্বত্বেও কি কারণে ৫০০ জন করা হলো তা বোধগম্য নয়। ধর্মমন্ত্রী এজেন্সি প্রতি ৪০০ জন কোটা রাখার নির্দেশনা দেওয়া স্বত্বেও ধর্ম সচিব ৫০০ জন কোটা নির্ধারণ করলেন। কেন করলেন তা আমাদের বোধগম্য নয়।’

হাব সভাপতি বলেন, ‘সৌদি সরকার ৫৬ এজেন্সির মাধ্যমে হজ কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তাব দিলেও আমরা তার বিরোধিতা করেছিলাম। কারণ এজেন্সিতে যাত্রীসংখ্যা বেশি হলে সব যাত্রীকে সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে বৃদ্ধ হাজিদের জন্য সঠিকভাবে সেবা প্রাপ্তিতে বিঘ্ন ঘটে। কিন্তু এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিবের ভূমিকা যথার্থ ছিল না।’

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কারণে এখনও সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া সম্ভব হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হজযাত্রীদের বাড়ি ভাড়ার জন্য এজেন্সির প্রতিনিধিদের সৌদিতে যেতে হয়। প্রতি বছর প্রতিনিধিদের সৌদি যেতে মাল্টিপল ভিজিট ভিসা দেওয়া হয়ে থাকে। পরিচালক হজ অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী এজেন্সিগুলো পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে ভিজিট ভিসার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু ধর্ম মন্ত্রণালয় এখনও হজ এজেন্সির প্রতিনিধিদের ভিজিট ভিসার ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ। তারা সৌদি আরবে না গেলে বাড়ি ভাড়া সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। এজেন্সির প্রতিনিধি ছাড়া বাড়ি ভাড়া করা যাবে না এবং বাড়ি ভাড়া করা না গেলে হজ ভিসা করা যাবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘সৌদি আরবে বাংলাদেশ হজ মিশন আছে। জেদ্দা কনসাল জেনারেল (হজ) আছেন, তারা চাইলেই সৌদি আরবে সরকারি নিবন্ধিত হাজিদের বাড়ি ভাড়া করতে পারেন। তারপরও ধর্ম সচিবের নেতৃত্বে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে লোকবল নিয়ে দীর্ঘদিন সৌদি আরবে অবস্থান সরকারিভাবে বাড়ি ভাড়া করা হয়েছে। কিন্তু বেসরকারি এজেন্সির বাড়ি ভাড়া জন্য সৌদি যেতে ভিসার ব্যবস্থা করতে ধর্ম মন্ত্রণালয় ব্যর্থ হয়েছে। বাড়ি ভাড়ার জন্য এজেন্সি প্রতিনিধিরা সৌদি যেতে না পারলে বিশাল সংখ্যক হজযাত্রীর বাড়ি ভাড়া কীভাবে সম্ভব?’

তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর দেশ থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের সৌদি নেওয়া হয় হজে সহায়তাকারী হিসেবে। এতে দেশের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। এ প্রেক্ষাপটে সিদ্ধান্ত হয়েছিল এ বছর বাংলাদেশ থেকে কোনো সহায়তাকারী নেওয়া হবে না। সৌদি আরবে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের দায়িত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু অজানা কারণে বাংলাদেশ থেকে হজ সহায়তাকারী নেওয়া হচ্ছে।’

হাব সভাপতি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা কখনও বেসরকারি হজযাত্রীদের খোঁজ-খবরও নেন না। সরকারি চার-পাঁচ হাজার হাজির জন্য এই বিশাল সংখ্যক জনবল দেশ থেকে নেওয়া দেশের অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। সব চেয়ে বেশি হাজি যায় হজ এজেন্সির মাধ্যমে, তাদের জন্য সহায়তাকারী বেশি প্রয়োজন। তাই সহায়তাকারী হিসেবে হজ এজেন্সিকে ভিসা সুবিধা নিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে হজ ব্যবস্থাপনা চ্যালেঞ্জের মুখে। ধর্ম মন্ত্রণালয়কে হাব এ বিষয়ে আগেই সতর্ক করেছিল। কিন্তু ধর্ম মন্ত্রণালয় তা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে। হজযাত্রীদের কল্যাণে সুশৃঙ্খল হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজ করতে হবে।’

সভায় উপস্থিত ছিলেন- হাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী, সহ-সভাপতি মাওলানা ফজলুর রহমান, মহাসচিব ফারুক আহমদ সরদার, মহাসচিব ফারুক আহমদ সরদার, জনসংযোগ সচিব মুফতি মুহাম্মদ জুনায়েদ গুলজার প্রমুখ।

উল্লেখ্য, চলতি বছর বাংলাদেশের জন্য এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮টি কোটা নির্ধারণ করেছিল সৌদি আরব। কিন্তু কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও হজের নির্ধারিত কোটা পূরণ হয়নি। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে গাইড ও মোনাজ্জেমসহ হজপালনে সৌদি আরব যাবেন ৮৫ হাজার ২৫৭ জন।

;

যেভাবে ধরে রাখবেন রমজানের ভালো অভ্যাসগুলো



মাওলানা ফখরুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম
রমজানে অর্জিত ভালো অভ্যাসগুলো ধরে রাখার চেষ্টা করা, ছবি : সংগৃহীত

রমজানে অর্জিত ভালো অভ্যাসগুলো ধরে রাখার চেষ্টা করা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, মানুষ ৩ সপ্তাহের প্রচেষ্টায় নিজেদের ভালো অভ্যাস গঠনে তৈরি করতে পারে। কোনো মানুষ যদি নিয়মিত ভালো কাজ করে তবে সে নিয়মিত কাজের একটি অভ্যাস তার মধ্যে তৈরি হয়। যেমন- নিয়মিত নামাজ পড়লে নামাজের অভ্যাস তৈরি হয়, রোজা রাখলে রোজাপালনের অভ্যাস তৈরি হয়; আবার মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করে ধৈর্যধারণ করলে তাও তৈরি হয়। আর মুমিন-মুসলমানের এসব অভ্যাস তৈরিতে রমজান কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

রমজানে যে ব্যক্তি নিয়মিত রোজা রাখে, নামাজ আদায় করে, ধৈর্যধারণ করে- আল্লাহর ইচ্ছায় ওই ব্যক্তির মাঝে ভালো অভ্যাসগুলো তৈরি হয়। আবার রমজানের পরে অনেকেই সেসব ভালো গুণ থেকে দূরে সরে যায়। কিন্তু উচিৎ ছিলো, গুণগুলো ধরে রাখা। রমজানে অর্জিত ভালো অভ্যাসগুলো ধরে রাখার রয়েছে বেশ কিছু উপায়। সেগুলো হলো-

সপ্তাহে ২ দিন রোজাপালন
রমজানের পর প্রত্যেক সপ্তাহে ২ দিন রোজাপালনের চেষ্টা করা। তাতে খারাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা সহজ হয়। রোজা মানুষকে শুধু আধ্যাত্মিক উপকারই দেয় না বরং তাতে শারীরিক স্বাস্থ্যগত অনেক উপকারও রয়েছে।

স্বাস্থ্য গবেষণায় দেখা যায়, রোজাপালন মানুষের শরীর ও মনের জন্য অনেক উপকারি। রোজায় মানুষের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বেড়ে যায়। ঘুম, মনোযোগ ও শারীরিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি পায়। নার্ভের কার্যকারিতা বৃদ্ধি ও উন্নতি হয়।

আর সপ্তাহে ২ দিন রোজাপালন সুন্নতের অনুসরণও বটে। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি সপ্তাহে ২ দিন (সোম ও বৃহস্পতিবার) রোজা রাখতেন। ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সোমবার এবং বৃহস্পতিবার মানুষের কাজের হিসাব আল্লাহর কাছে পৌছানো হয়। আর আমি এটি ভালোবাসি যে, রোজা পালনরত অবস্থায় আমার কাজে হিসাব পৌছানো হোক।’ -জামে তিরমিজি

দান-সদকা অব্যাহত রাখা
দানের অভ্যাস অব্যাহত রাখা। কেননা দান-সহযোগিতা মানুষকে মানসিক প্রশান্তি দেয়। রমজানে যেভাবে বেশি সওয়াব লাভের আশায় মানুষ দান-সদকা করে, রমজান পরবর্তী সময়েও গরিবদের দান-সদকার অভ্যাস চালু রাখা।

দানের কার্যকারিতা শুধু আখেরাতে নয়, বরং দুনিয়াতেও লাভ হয়। কেননা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দান-সাদকা মানুষের বিপদ-আপদ দূর করে দেয়।’ দান-সদকার ফলে সমাজের গরিব ও অসহায় মানুষ সুন্দর জীবন-যাপন করতে পারে। তাতে পাস্পরিক সুসম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে সুন্দর সমাজ তৈরি হয়।

নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত
রমজানের পরে নির্ধারিত একটি সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ কোরআন মাজিদ তেলাওয়াতের অভ্যাস তৈরি রাখা। যেভাবে রমজান মাসে মানুষ নির্ধারিত সময়ে কোরআন তেলাওয়াত করে থাকে।

কোরআন তেলাওয়াত মানুষের মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তির জন্য সহায়ক। এটা উত্তম ইবাদতও বটে। কোরআন পরকালে শুধু তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশই করবে না বরং দুনিয়াতে অনেক অন্যায় ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে।

অর্থসহ কোরআন মাজিদ পড়া
রমজানের পর সামান্য সময়ের জন্য হলেও কোরআন অধ্যয়ন তথা অর্থসহ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ পড়া। রমজানের পরে কোরআন বুঝার নিয়মিত চেষ্টা অব্যাহত রাখলে, একটা সময় কোরআন বুঝা সহজ হয়ে যাবে। আর সে আলোকে গড়ে ওঠবে মানুষ জীবন।

কোরআনে কারিমের জ্ঞান বাস্তবায়ন
রমজান মাসে কোরআনের যেসব জ্ঞান অর্জন করেছে মানুষ। রমজানের পরেও তা যথাযথ বাস্তবায়নের চেষ্টা করা। কোরআনে কারিমের সব ঘটনাগুলোই অর্থবহ এবং পরিপূর্ণ। কোরআনের সে ঘটনাগুলোর আলোকেই নিজেদের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করা সহজ হয়।

যখনই কোরআনের কোনো ঘটনা বা জ্ঞান অর্জন হয়, তখনই সে ঘটনা বা গুণ দিয়ে নিজেকে মূল্যয়ন করুন। যদি তা থেকে থাকে আলহামদুলিল্লাহ। আর সে গুণ না থাকলে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা।

দোয়া করা
কোরআনের অনেক ঘটনায় দোয়ার কথা এসেছে। কল্যাণ লাভে দোয়ার রয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব। রমজান মাসে দোয়া যেভাবে মানুষের কার্যতালিকা থেকে বাদ যায়নি। রমজান পরবর্তী সময়েও তা অব্যাহত রাখা জরুরি। কেননা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দোয়াই ইবাদত।’

আল্লাহতায়ালা প্রতিদিনই মানুষকে ডেকে ডেকে বলেন, তার কাছে দোয়া করার জন্য। নিজের গোনাহ মাফের আহ্বান করেন, রিজিক চাওয়ার আহ্বান করেন। সুতরাং যারা রমজানের পরেই আল্লাহর কাছে নিয়মিত দিনে-রাতে দোয়ার অভ্যাস গঠন করবে, তারাই সফলকাম হবে।

ভালো কাজে আগ্রহী হওয়া
প্রতিবেশি কিংবা বন্ধুর সঙ্গে ভালো অভ্যাস গঠনে পরস্পরের সঙ্গে সহযোগিতা করা। একে অপরের সঙ্গে ভালো আচরণ করা। কারো মাঝে অন্যায় বা খারাপ আচরণ থাকলে তা থেকে বেঁচে থাকতে ভালো কাজ বা গুণের পরামর্শ দেওয়া। একে অপরকে নিয়মিত ভালো কাজের প্রতি উৎসাহিত করা।

ভালো কাজের প্রতি উৎসাহ দিতে একটি গ্রুপ তৈরি করা যেতে পারে। যেখানে প্রতিদিনই নির্ধারিত একটা সময় ভালো কাজের আলোচনা হতে পারে। হতে পারে তা কোরআন শিক্ষা বা গবেষণার আসর।

প্রতিদিন নিজেকে মূল্যয়ন করা
প্রতিটি মানুষেরই উচিত নিয়মিত নিজের কাজের মূল্যয়ন করা। আর তাতে ভেসে উঠবে ভালো ও মন্দ কাজ প্রতিচ্ছবি। নিজেকে মূল্যয়নে কোরআনে সে আয়াতটি বেশি বেশি স্মরণ করা উচিত। তাহলো, ‘তোমার কিতাব (কাজের হিসাব) পাঠ কর। আজ তোমার হিসাব (কাজের মূল্যয়ন) গ্রহণে তুমিই যথেষ্ট।’ -সুরা বনি ইসরাইল : ১৪

প্রতিদিন নিজের কাজের মূল্যয়ন অব্যাহত রাখলে গোনাহমুক্ত জীবন লাভ সম্ভব হবে। পরকালে নিজেদের কাজের হিসাব প্রদানও হবে সহজ। আর তাতেই আলোকিত জীবন লাভ করবে মুমিন।

;