জনপ্রতিনিধিদের যেসব গুণ থাকা চাই

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

‘যখন কোনো অনুপযুক্ত ব্যক্তির ওপর কোনো কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তখন তুমি কেয়ামতের অপেক্ষা করবে’

‘যখন কোনো অনুপযুক্ত ব্যক্তির ওপর কোনো কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তখন তুমি কেয়ামতের অপেক্ষা করবে’

হাদিস শরিফে অযোগ্যের ওপর দায়িত্ব ন্যাস্ত করাকে কেয়ামতের আলামত বলে অবহিত করা হয়েছে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন কোনো অনুপযুক্ত ব্যক্তির ওপর কোনো কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তখন তুমি কেয়ামতের অপেক্ষা করবে।’ –সহিহ বোখারি : ৫৯

সুন্দর সমাজ গঠনে যোগ্য জনপ্রতিনিধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দায়িত্বে অযোগ্য কেউ নিয়োজিত হলে সমাজে অশান্তি নেমে আসা স্বাভাবিক। তাই জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে খুব সতর্ক হওয়া উচিত। ইসলামের দৃষ্টিতে জনপ্রতিনিধির মধ্যে যেসব গুণ থাকা আবশ্যক, এর অন্যতম হলো-

বিজ্ঞাপন

সত্যবাদী হওয়া
জনগণের প্রতিনিধি হওয়ার সবচেয়ে আবশ্যকীয় যোগ্যতা হলো- মুত্তাকি হওয়া, সত্যবাদী হওয়া। কারণ যার মধ্যে আল্লাহর ভয় নেই, যে সত্যবাদী নয়, সে কখনো কারো কল্যাণে কাজ করবে না; বরং লোভ-লালসার মোহে পড়ে সামান্য স্বার্থে জনগণের অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলবে। এরা আল্লাহর চোখে অত্যন্ত নিকৃষ্ট মানুষ। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তিন ব্যক্তির সঙ্গে কেয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা কথা বলবেন না, তাদের (গোনাহ থেকে) পবিত্র করবেন না। বর্ণনাকারী হজরত আবু মুআবিয়া বলেন, তাদের প্রতি তাকাবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। (এরা হলো) বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী শাসক বা রাষ্ট্রপ্রধান ও অহংকারী দরিদ্র ব্যক্তি।’ –সহিহ মুসলিম : ১৯৬

সচ্চরিত্রবান হওয়া
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) অশ্লীল ভাষী ও অসদাচরণের অধিকারী ছিলেন না। তিনি বলতেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম, যে নৈতিকতায় সর্বোত্তম।’ –সহিহ বোখারি : ৩৫৫৯

বিজ্ঞাপন

জনদরদি হওয়া
যে সব সময় জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দেবে, জনগণের সুখ-দুঃখে তাদের পাশে থাকবে, জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করবে না। হজরত আবু মালিহ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদ (রহ.) হজরত মাকিল ইবনে ইয়াসার (রা.)-এর পীড়িত অবস্থায় তাকে দেখতে যান। তখন মাকিল (রা.) তাকে লক্ষ করে বলেন, আমি এমন একটি হাদিস তোমার কাছে বর্ণনা করব, যদি আমি মৃত্যুর মুখোমুখি না হতাম তবে তোমার কাছে তা বর্ণনা করতাম না। আমি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, এমন আমির যার ওপর মুসলিমদের শাসন ক্ষমতা অর্পিত হয়, অথচ এরপর সে তাদের কল্যাণ সাধনে চেষ্টা না করে বা তাদের মঙ্গল কামনা না করে; আল্লাহ তাকে তাদের সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না।’ –সহিহ মুসলিম : ৪৬২৫

স্বেচ্ছাচারী না হওয়া
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি তোমাদের আমার ইচ্ছামতো কোনো জিনিস দিই না এবং আমার ইচ্ছামতো তোমাদের তা থেকে বঞ্চিত করি না। আমি তো শুধু বণ্টনকারী। আমাকে যেখানে ব্যয়ের নির্দেশ দেওয়া হয় সেখানেই ব্যয় করি। -সুনানে আবু দাউদ : ২৯৪৯

আমানতদার হওয়া
জনপ্রতিনিধিত্ব একটি আমানত। এর যথাযথ হক আদায়ের জন্য জনপ্রতিনিধির মধ্যে আমানত রক্ষার যোগ্যতা থাকতে হবে। তা না হলে এটিই তার জন্য লাঞ্ছনার কারণ হবে। হজরত আবু জার (রা.) বলেন, আমি আবেদন করলাম, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি কি আমাকে প্রশাসক পদে প্রদান করবেন? তিনি তখন তার হাত দিয়ে আমার কাঁধে আঘাত করে বলেন, ‘হে আবু জার, তুমি দুর্বল অথচ এটি হচ্ছে একটি আমানত। আর কেয়ামতের দিন এ হবে লাঞ্ছনা ও অনুশোচনা। তবে যে এর হক সম্পূর্ণ আদায় করবে তার কথা ভিন্ন।’ -সহিহ মুসলিম : ৪৬১৩

ন্যায়পরায়ণ হওয়া
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিচ্ছেন আমানতসমূহ তার হকদারদের কাছে পৌঁছে দিতে। আর যখন মানুষের মধ্যে ফয়সালা করবে তখন ন্যায়ভিত্তিক ফয়সালা করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের কতই না সুন্দর উপদেশ দিচ্ছেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। -সুরা আন নিসা : ৫৮

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘সাত রকমের লোক, যাদের আল্লাহ কেয়ামতের দিন তার ছায়ায় আশ্রয় দেবেন, যেদিন তার ছায়া ছাড়া অন্যকোনো ছায়া হবে না। ১. ন্যায়পরায়ণ শাসক...।’ –সহিহ বোখারি : ৬৮০৬

তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম, যে নৈতিকতায় সর্বোত্তম : হাদিস

 

জ্ঞানী ও শিক্ষিত হওয়া
জ্ঞান ও শিক্ষা না থাকলে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করা সম্ভব নয়, জনগণের অধিকার অনুধাবন ও তা সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। জনগণের দাবিগুলো ওপর মহলে যৌক্তিকভাবে উপস্থাপন করে জনগণের কল্যাণের দাবি আদায় করাও সম্ভব নয়। তাই জনপ্রতিনিধি হতে হলে অবশ্যই তার মধ্যে দ্বিনি ও জাগতিক শিক্ষা থাকা আবশ্যকীয়। মিসরের রাজা হজরত ইউসুফ (আ.)-কে মন্ত্রিত্ব গ্রহণের প্রস্তাব করলে তিনি সে মন্ত্রালয়ের দায়িত্ব প্রার্থনা করেন, যে মন্ত্রণালয়ের সংকট দূর করার স্বচ্ছ জ্ঞান মহান আল্লাহ তাকে দিয়েছিলেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ইউসুফ বলেন, আমাকে দেশের ধনভাণ্ডারের ওপর কর্তৃত্ব প্রদান করুন; আমি তো উত্তম রক্ষক, সুবিজ্ঞ।’ -সুরা ইউসুফ : ৫৫

উল্লেখ্য, সাধারণ অবস্থায় যদিও পদ বা নেতৃত্ব প্রার্থনা করা বৈধ নয়; কিন্তু হজরত ইউসুফ (আ.)-এর এই পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে জানা যায় যে বিশেষ অবস্থায় যদি কোনো লোক এটা মনে করে যে জাতি ও রাষ্ট্রের ওপর আগত সংকটের উচিত ব্যবস্থার যথাযথ যোগ্যতা আমার মধ্যে বিদ্যমান, যা অন্যের মধ্যে নেই, তাহলে সে নিজের যোগ্যতা অনুসারে এই বিশেষ পদ প্রার্থনা করতে পারে। হজরত ইউসুফ (আ.) মূলত পদ প্রার্থনাই করেননি; বরং যখন মিসরের রাজা তার সামনে এর প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

সুবিচার করার যোগ্য হওয়া
সাধারণত জনপ্রতিনিধি মানুষের অনেক সমস্যা সমাধান করতে হয়, বিরোধ মীমাংসা করতে হয়, অনেক ক্ষেত্রে বিচারও করতে হয়। তাই একজন যোগ্য জনপ্রতিনিধি হতে হলে অবশ্যই সত্যকে অনুধাবন ও সুবিচার করার যোগ্যতা থাকতে হবে।

হজরত বুরাইদা (রা.) হতে বর্ণিত আছে, নবী করিম (সা.) বলেছেন, বিচারকগণ তিন প্রকারের হয়ে থাকে। দুই প্রকারের বিচারক হচ্ছে জাহান্নামি এবং এক প্রকারের বিচারক হচ্ছে জান্নাতি। জেনেশুনে যে লোক (বিচারক) অন্যায় রায় প্রদান করে সে হচ্ছে জাহান্নামি। সত্যকে সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধি না করেই যে লোক (বিচারক) মানুষের অধিকারসমূহ নস্যাৎ করে সে লোকও জাহান্নামি। আর যে লোক ন্যায়সংগতভাবে ফায়সালা প্রদান করে (বিচারক) সে জান্নাতের অধিবাসী। -তিরমিজি : ১৩২২

প্রতিশোধপরায়ণ না হওয়া
ব্যক্তিগত কারণে প্রতিশোধপরায়ণ না হওয়া নেতৃত্বের সবচেয়ে বড় গুণ, যা নবী করিম (সা.)-এর মধ্যে বিদ্যমান ছিল। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে আছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো ব্যক্তিগত ব্যাপারে কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করতেন না। অবশ্য কেউ আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করলে, তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তার প্রতিশোধ নিতেন।’ –সহিহ বোখারি : ৬১২৬