এক দশকে জাপানে মুসলমানের সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ
‘সূর্যোদয়ের দেশ’ বলে পরিচিত জাপান বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিপর্যয়ের পরও বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে দারুণ অগ্রগতি অর্জন করে দেশটি। প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত পূর্ব এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র ছয় হাজার ৮৫২টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। চারটি বড় দ্বীপ হনশু, হোক্কাইডো, কিওশু ও শিকোকুতেই দেশটির মোট আয়তনের ৯৭ শতাংশ। জাপানের ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ এলাকা পাহাড়ি।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জাপানের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের অন্যতম প্রধান দাতা দেশ জাপান। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সংঘটিত নানা যুদ্ধাপরাধের কারণে তাদের সঙ্গে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্কে টানাপড়েন রয়েছে। এ ছাড়া চীনের সঙ্গে তাদের পানিসীমা ও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে পরমাণু ইস্যুতে বিরোধ চলছে। জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে অন্যতম বৃহৎ এই দেশটির মানুষ মূলত চারটি দ্বীপের শহরগুলোতে বসবাস করে।
বিশ্বযুদ্ধের পর বেশিরভাগ সময়ই দেশটির ক্ষমতায় ছিল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। দলটি প্রথম ক্ষমতাচ্যুত হয় ২০০৯ সালে। ক্ষমতায় আসে ডেমোক্রেটিক পার্টি। তবে ২০১২ সালে আবারও ক্ষমতায় ফেরে এলডিপি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দেশটির দ্রুত উত্থানের মূল কৃতিত্ব তাদের গাড়ি ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশশিল্পের বিকাশ। জাপানের বহু ব্র্যান্ড আজও বিশ্বজুড়ে প্রবল জনপ্রিয়।
ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ জাপান। তিনটি ট্যাকটোনিক প্লেটের ওপর অবস্থিত জাপানে বিশ্বের মোট ভূমিকম্পের ২০ শতাংশ অনুভূত হয়। দেশটিতে সর্বশেষ বড় ধরনের ভূমিকম্প হয় ২০১১ সালের মার্চে। এতে প্রায় ১৬ হাজার লোক নিহত হয়। ফুকুশিমার দেইচি পরমাণু প্রকল্প এই ভূমিকম্প ও এর থেকে সৃষ্ট সুনামিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দেশটির রাজধানী টোকিও। তিন লাখ ৭৭ হাজার ৯৪৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশে জনসংখ্যা প্রায় ১২ কোটি ৬৮ লাখ ৮০ হাজার।
জাপানে মুসলিমরা সংখ্যালঘু হলেও দেশটিতে ক্রমেই ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। জাপানে গত এক দশকে মুসলিম জনসংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি হয়েছে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে মসজিদের সংখ্যাও বেড়ে গেছে।
পূর্ব এশীয় দেশগুলোর মধ্যে জাপানে ইসলাম সব থেকে দ্রুতগতিতে বিস্তার লাভ করার খেতাবপ্রাপ্ত। দেশটিতে মুসলিম জনসংখ্যা আগে ছিল ১ লাখ ১০ হাজার তা বেড়ে বর্তমানে ২ লাখ ৩০ হাজার হয়েছে।
দ্য ইকোনমিস্টের খবরে বলা হয়েছে, জাপানের সরকার দেশটিতে বিদেশি শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দিয়েছে।
জাপানের বৃহত্তম দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে দক্ষিণের কিউশুর মেক্কা বেপ্পুতে একটি চারতলা বিল্ডিংয়ের প্রতি শুক্রবারে কয়েক হাজার মুসলিম পুরুষ ও নারী মসজিদে নামাজ আদায় করেন।
জাপানে পড়তে আসা বিদেশি শিক্ষার্থীরা অনেকেই রিতসুমেইকান এশিয়া প্যাসিফিক ইউনির্ভাসিটিতে পড়াশোনা করেন। পাশাপাশি তারা শহরের বিভিন্ন হোটেলগুলোতে খণ্ডকালীন কাজ করে থাকেন। কিছু বিদেশি ব্যক্তি মাছ ধরার নৌকায় কাজ করেন এবং অন্যরা জাহাজ নির্মাণ শিল্পে কাজ করেন।
জাপানের ওয়াসেদা ইউনিভার্সিটির টানাডা হিরোফুমির এক জরিপ অনুযায়ী, ২০১০ সালে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১০ হাজার। কিন্তু ২০১৯ সালের শেষের দিকে সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৩০ হাজারে। এর মধ্যে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ ধর্মান্তরিত হয়েছেন।
জাপানে ১১০টির বেশি মসজিদ রয়েছে। এশিয়া প্যাসিফিক ইউনির্ভাসিটির অধ্যাপক ও বিপ্পু মুসলিম সংগঠনের নেতা মোহাম্মদ তাহির আব্বাস মুসলমানদের এ পরিবর্তনে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি ২০০১ সালে পাকিস্তান থেকে স্নাতকের শিক্ষার্থী হিসেবে দেশটিতে পড়তে আসেন, ওই সময়ে দেশটিতে ২৪টি মসজিদ ছিল। সে সময় কিউশুতে কোনো মসজিদ ছিল না বলেও তিনি জানান।