ইসলামে বিজয়ের গুরুত্ব অপরিসীম

  • মাহমুদ আহমদ, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ইসলামে বিজয়ের গুরুত্ব অপরিসীম

ইসলামে বিজয়ের গুরুত্ব অপরিসীম

বিজয়ের আনন্দ তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। বিজয়ের আনন্দে পুরো জাতি আজ উদ্ভাসিত। আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য ত্যাগ করতে হয়েছে অনেক কিছু, দিতে হয়েছে লাখো প্রাণের তাজা রক্ত।

ইসলাম স্বাধীনতাকে যেমন গুরুত্ব দিয়েছে, তেমনি দেশপ্রেম ও দেশাত্মবোধকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইসলামে দেশপ্রেমকে ঈমানের অংশ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। দেশের স্বাধীনতা অর্জন ও বিজয় উদযাপন উপলক্ষে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করাই ইসলামের নির্দেশ।

বিজ্ঞাপন

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হৃদয়ে যেমন ছিল স্বদেশ প্রেম তেমনি তার পবিত্র সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুদের মাঝেও বিদ্যমান ছিল। স্বদেশের প্রতি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে ভালোবাসা ছিল তা অসাধারণ।

হিজরতের পর মদিনায় হজরত আবু বকর (রা.) ও হজরত বেলাল (রা.) জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। অসুস্থ অবস্থায় তাদের মনেপ্রাণে প্রিয় স্বদেশ মক্কার স্মৃতিচিহ্ন জেগে উঠেছিল। তারা জন্মভূমি মক্কার কথা স্মরণ করে আবেগে আপ্লুত হয়ে কবিতা আবৃত্তি করতে লাগলেন। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের মনের এ অবস্থা দেখে প্রাণভরে দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ! আমরা মক্কাকে যেমন ভালোবাসি, তেমনি তার চেয়েও বেশি মদিনার ভালোবাসা আমাদের অন্তরে দান করুন।’ -সহিহ বোখারি

বিজ্ঞাপন

হজরত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলাম প্রচারের কারণে নিজের মাতৃভূমি ত্যাগ করে হিজরত করেছিলেন মদিনায়। দীর্ঘ ১০ বছর নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর সফলতার সঙ্গে নিজ দেশ স্বাধীন করেন। অর্জন করেন মহান স্বাধীনতা ও বিজয়। তিনি মক্কা থেকে মদিনার পথে হিজরতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার পূর্বে তার মুখ ফেরালেন জন্মভূমি মক্কার দিকে। তিনি বার বার ফিরে তাকাচ্ছেন মক্কার দিকে, চোখ থেকে অশ্রম্ন ঝরছে। মক্কার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে কেঁদে কেঁদে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন, ‘হে মক্কা! তুমি আমার কাছে সমস্ত স্থান থেকে অধিক প্রিয়, আমি মক্কাকেই ভালোবাসি। আমার মন মানছে না। কিন্তু তোমার লোকেরা আমাকে এখানে থাকতে দিল না, সবকিছুর মালিক তুমি। মক্কার মানুষদেরকে ঈমানের আলোয় উজ্জ্বল করো। ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত কর।’ -মুসনাদ আহমদ ও তিরমিজি

একটু ভেবে দেখুন! স্বদেশের প্রতি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কতই না গভীর প্রেম ছিল। যে দেশের লোকরা তার ওপর এতো জুলুম অত্যাচার করেছে, তার পরেও মাতৃভূমির প্রতি কত অগাধ ভালোবাসা। একেই বলে স্বদেশপ্রেম। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই আহ্বান করেছেন, তখনই সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহু এ ডাকে সবোর্তভাবে সাড়া দিয়েছেন। তারা জানতেন, নিজেদের বিশ্বাস, আদর্শ ও ধর্মমত প্রতিষ্ঠার জন্য একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের প্রয়োজন।

ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য তারা যেমন আন্তরিক ছিলেন, তেমনি নিবেদিত প্রাণ ছিলেন দেশপ্রেম ও দেশের স্বাধীনতা রক্ষায়। মাতৃভূমির প্রতি হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালোবাসার বহি:প্রকাশ দেখুন, হজরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘আমি খায়বর অভিযানে খাদেম হিসেবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে গেলাম। অভিযান শেষে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন ফিরে এলেন, উহুদ পাহাড় তার দৃষ্টিগোচর হলো। তখন মহানবী (সা.) বললেন, এই পাহাড় আমাদেরকে ভালোবাসে আর আমরাও একে ভালোবাসি।’ -সহিহ বোখারি

বিশ্বনবী (সা.) তার নিজ আমল দ্বারা তার উম্মতকে বিজয়ের আনন্দ উপভোগের শিক্ষা দিয়েছেন। মহানবী (সা.) মক্কা বিজয়ের আনন্দে প্রথমেই তিনি ৮ রাকাত নফল নামাজ আদায় করেছিলেন।
মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, এমনকি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়েও স্বাধীনতার চেতনাকে জাগ্রত করে বিশ্বনবী (সা.) মানুষ হিসেবে তাদেরকে নিজের পরিচয়, সম্মান, আত্মমর্যাদাবোধ প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে দুনিয়ার ইতিহাসে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। তিনি যেমন অসংখ্য দাসকে নিজ খরচে মুক্ত করেছেন, তেমনি সমগ্র বিশ্বকে দিয়েছিলেন স্বাধীনতার প্রকৃতস্বাদ।

আল্লাহপাকের কাছে এ কামনা করি, আমাদেরকে যেন পুনরায় দাসত্বের জীবনে জড়িয়ে পড়তে না হয়। নিজ দেশের প্রতি, দেশের সম্পদের প্রতি আমাদের অনেক বেশি ভালোবাসা সৃষ্টি করতে হবে। আল্লাহপাক আমাদেরকে সেই তাওফিক দান করুন।