শাফায়াত: কারা করবেন, কাদের জন্য করবেন?



মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেমী, অতিথি লেখক, ইসলাম
নবীজির সুপারিশের পর হিসাব শুরু হবে

নবীজির সুপারিশের পর হিসাব শুরু হবে

  • Font increase
  • Font Decrease

শাফায়াত মানে সুপারিশ ও সাহায্য। বিভিন্ন কাজে আমরা বিভিন্ন মানুষের জন্য সুপারিশ করে থাকি। কাউকে কোনো কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য কিংবা কাউকে কোনো ঝামেলা ও বিপদ থেকে মুক্ত করার জন্য সুপারিশ করা হয়ে থাকে।

সুপারিশের মাধ্যেমে অন্য মানুষের উপকার করা মূখ্য উদ্দেশ্য হয়। বিষয়টি আমাদের কাছে স্পষ্ট। আমাদের আলোচ্য বিষয়ে শাফায়াত বা সুপারিশ বলতে আখেরাতের সুপারিশ বুঝানো হচ্ছে।

শাফায়াত সম্পর্কে মৌলিক কথা
আমরা বিশ্বাস করি, কুল কায়েনাত ও বিশ্বের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা হলেন- মহান আল্লাহ। তার কোনো শরিক নেই, তিনি একক। তার একার সিদ্ধান্তে সকল জগত পরিচালিত হয়। তার সমকক্ষ কেউ নেই। কারণ, তিনি ছাড়া বাকি সবকিছুই হলো তার সৃষ্টি। সৃষ্টি কখনও স্রষ্টার মতো হতে পারে না।

মানুষের মৃত্যুর পর কবর জগতে অবস্থান করবে। কবরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারলে তার কবরের সঙ্গে জান্নাতের একটা সম্পর্ক হবে; আর উত্তর দিতে না পারলে জাহান্নামের সঙ্গে সম্পর্ক হবে। পুণরুত্থান পর্যন্ত মানুষ কবরে থাকবে। কেয়ামতের ময়দানে সবাই একত্রিত হবে। সকলের হিসাব-কিতাব হবে। হিসাব-কিতাবের পর অনেকেই জান্নাতে চলে যাবে। আবার অনেকে যাবে জাহান্নামে। জাহান্নামে যারা যাবে তাদের দু’টি শ্রেণি রয়েছে। এক শ্রেণির জাহান্নামি স্থায়ী। তাদের ঈমান না থাকায় তারা চিরস্থায়ী জাহান্নামি। কোনোদিন জাহান্নাম থেকে বের হবে না। আরেক শ্রেণির জাহান্নামি হলো অস্থায়ী। তাদের ঈমান ছিল তবে নেক আমল কম ছিল কিংবা গোনাহ ছিল, যে কারণে তারা জাহান্নামি হয়েছে। তারা বিভিন্ন উপায়ে জাহান্নাম থেকে বের হয়ে জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ পাবে।

কেয়ামতের ময়দানে মানুষ একত্রিত হওয়ার পর ভয়াবহ অবস্থা হবে। সূর্যের তাপে মানুষের মগজ পর্যন্ত গলে যাবে। কেয়ামতের ময়দানের ভয়াবহতা সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে বিস্তর আলোচনা রয়েছে। এই ভয়াবহতা থেকে মুক্তির জন্য হিসাব-কিতাব শুরু হওয়া দরকার। হিসাব শুরুর জন্য মহান আল্লাহর কাছে সুপারিশ করা দরকার। কে করবে সুপারিশ? সবাই পেরেশান। সকল মানুষ মিলে হজরত আদম আলাইহিস সালামের কাছে যাবে, তাকে সুপারিশের অনুরোধ করবে। তিনি অক্ষমতা প্রকাশ করবেন। এভাবে আরও অনেক নবী-রাসুলের কাছেই যাবে। সবাই নিজেদের অক্ষমতা প্রকাশ করবে। সবশেষে হজরত ঈসা (আ.)-এর কাছে যাওয়ার পর তিনিও অক্ষমতা প্রকাশ করে বলবেন, তোমরা সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যাও। সবাই নবীজির কাছে এসে অনুরোধ করবে, যেন তিনি মহান আল্লাহর কাছে সুপারিশ করেন। নবীজি আল্লাহর আরশের নিচে সিজদায় লুটিয়ে পড়বেন। দীর্ঘক্ষণ সিজদার পর মহান আল্লাহ ডাক দিয়ে বলবেন, ‘হে মুহাম্মদ! আপনার মাথা তুলুন, আপনি সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ গৃহীত হবে; আপনি চান, আপনার চাওয়া কবুল করা হবে।’ –সহিহ বোখারি : ৩৩৪০

নবীজির সুপারিশের পর হিসাব শুরু হবে। এটাই প্রথম সুপারিশ। এই শাফায়াতকে শাফায়াতে উজমা কিংবা কুবরা অর্থাৎ সর্ববৃহৎ শাফায়াত বলা হয়। এটাই মাকামে মাহমুদ।

শাফায়াতের প্রয়োজনীয়তা
আল্লাহতায়ালা ইচ্ছা করলে মাফ করে দিতে পারেন, তাহলে আবার শাফায়াত কেন? এর উত্তর হলো- শাফায়াত মূলত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কিংবা আমলের সম্মান প্রদর্শন। যাদেরকে আল্লাহ শাফায়াত করার অনুমতি দেবেন তারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা, আল্লাহর কাছে রয়েছে তাদের সম্মান ও মর্যাদা। এই সম্মান ও মর্যাদার বহিঃপ্রকাশের জন্যই মূলত শাফায়াতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যেসব আমলের শাফায়াত কবুল করা হবে বলে হাদিস রয়েছে, সেগুলোর সম্মান ও গুরুত্ব বুঝানো উদ্দেশ্য।

শাফায়াতের প্রকারভেদ
কোরআন ও হাদিস গবেষণা করে কাজি ইয়াজ (রহ.) বলেন শাফায়াত পাঁচ প্রকার-
১. হাশরের ময়দানে হিসাব শুরুর সুপারিশ। এই শাফায়াত নবীজির সঙ্গে খাস।
২. একদল লোককে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশেরে সুপারিশ। আর এটাও শুধু আমাদের নবীজির জন্য প্রযোজ্য। অন্য কেউ এরূপ সুপারিশের সুযোগ পাবে না।
৩. জাহান্নাম অবধারিত হয়েছে এমন একদল লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য সুপারিশ। নবী আলাইহিস সালাম ছাড়াও আল্লাহর ইচ্ছানুসারে অনেকে এই সুপারিশ করবে।
৪. জাহান্নামের শাস্তি ভোগকারী লোকদের জাহান্নাম থেকে মুক্তির সুপারিশ। রাসুল আলাইহিস সালাম, ফেরেশতা, নেককার মুমিনসহ অনেকেই এ ধরনের সুপারিশ করবেন।
৫. জান্নাতে মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য শাফায়াত। -হাশিয়ায়ে নববি : ১/১০৪

সবাই আল্লাহর অনুমতিতে সুপারিশ করতে পারবে
শাফায়াত মূলত মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি সীমাহীন অনুগ্রহের কিয়দংশ মাত্র। শাফায়াতের একচ্ছত্র মালিক কেবল আল্লাহ। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে শাফায়াত করার অনুমতি দিবেন। তার অনুমতি ছাড়া কেউ সুপারিশ করতে পারবে না। দুনিয়ার মতো না যে, প্রভাবশালী কেউ এসে ছাড়িয়ে নিয়ে যাবে নিজের প্রভাব খাটিয়ে। সেখানে আল্লাহ ছাড়া কারও কোনো প্রভাব চলবে না। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তারা কি আল্লাহ ব্যতীত সুপারিশকারী গ্রহণ করেছে? বলুন, তাদের কোনো এখতিয়ার না থাকলেও এবং তারা না বুঝলেও? বলুন, সমস্ত সুপারিশ আল্লাহরই ক্ষমতাধীন, আসমান ও জমিনে তারই সাম্রাজ্য। অতঃপর তারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।’ -সুরা যুমার : ৪৩-৪৪

কারা শাফায়াত থেকে বঞ্চিত হবে?
কেয়ামত দিবসে অনুষ্ঠিত শাফায়াত থেকে বঞ্চিত হবে যারা শিরক ও কুফুরির গোনাহে লিপ্ত ছিল এবং এর ওপর মারা গেছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী, সে ব্যক্তিকে কে বাঁচাতে পারে যার ওপর আজাবের ফয়সালা হয়ে গেছ, তুমি কি তাকে বাঁচাতে পার যে জাহান্নামে রয়েছে?’ -সুরা যুমার : ১৯

বর্ণিত আয়াতের আলোকে বুঝা গেল, এসব জাহান্নামীদের জন্য কোনো শাফায়াতকারী নেই। নেই কোনো রক্ষাকারী। তাদের ব্যাপারে কোনো শাফায়াত গ্রহণ করা হবে না। কারণ, তারা ঈমানশূন্য। এ ছাড়া যারা আল্লাহর দীনের মধ্যে বিকৃতি এনেছে অথবা এর মধ্যে পরিবর্তন করেছে তাদের অবস্থাও সম্পূর্ণ আশঙ্কাজনক। কারণ, তারা হাউজে কাউসারের পানি পান করতে পারবে না। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে এই বলে তাড়িয়ে দেবেন, ‘দূর হও, ধ্বংস হও যারা আমার পর (দীনের মধ্যে) পরিবর্তন বা রদবদল করেছ।’ –সহিহ বোখারি : ৬৫৮৪

তাই সবাইকে অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে। আল্লাহ ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পুরোপুরিভাবে মেনে চলতে হবে এবং কোনো অবস্থাতেই আল্লাহর দীনের অপব্যাখ্যা করা যাবে না, সম্পূর্ণ অবিকৃতভাবে তা গ্রহণ করতে হবে। বস্তুত তাওহিদ হচ্ছে- মানুষের চিরমুক্তির সুনিশ্চিত সনদ আর শিরক হচ্ছে ধ্বংসের মূল। তাই তাওহিদবাদী ঈমানদার লোক মহাপাপী হলেও মুক্তি পাবে। আর মুশরিক মহাজ্ঞানী ও গুণধর হলেও অমার্জনীয় অপরাধী। এ জন্য ইসলামের নবী বলেছেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে এই শাফায়াত ইনশাআল্লাহ সে ব্যক্তি লাভ করবে, যে আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক না করা অবস্থায় মারা গেছে।’ -সহিহ মুসলিম : ১৯৯

কারা কারা শাফায়াত করতে পারবে?
১. আমাদের নবীজি শাফায়াত করবেন। রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাফায়াতের মাধ্যমে সর্বপ্রথম কেয়ামতের ময়দানে হিসাব-কিতাব শুরু হবে। সেটা হল শাফায়াতে কুবরা। হিসাব শুরু হওয়ার আগেই নবীজির শাফায়াতে নবীজির কিছু উম্মত বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। হিসাব কিতাবের পর নবীজির অনেক উম্মত জাহান্নামি হবে, তাদেরকে শাফায়াত করে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। জাহান্নামে যাওয়ার পর অনেকেই নবীজির শাফায়াতের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের পর জান্নাতে প্রবেশ করবে। জান্নাতে যাওয়ার পর জান্নাতিদের মর্যাদা বুলন্দির জন্যও নবীজি শাফায়াত করবেন। এভাবে বিভিন্ন স্তরেই নবীজির শাফায়াতের কথা হাদিসে এসেছে।
২. আমাদের নবীজি ছাড়াও সকল নবী-রাসুল স্বীয় উম্মতের জন্য শাফায়াত করবেন।
৩. অনেক ফেরেশতাদের শাফায়াত কবুল করা হবে।
. নবীজির উম্মতের মধ্য থেকে নেককার ও নাবালেগ বাচ্চারা শাফায়াত করার সুযোগ পাবে। নেককারদের মাঝে আল্লাহর অলি, শহীদ, হাফেজে কোরআন ও উলামায়ে কেরামের কথা হাদিসে এসেছে।
৫. এমনকি নেক আমলও শাফায়াতের সুযোগ পাবে। যেমন সুরা বাকার ও সুরা আলে ইমরান তেলাওয়াতকারীদের জন্য শাফায়াত করবে।
৬. মহান আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে অনেক মুমিনকে মাফ করবেন, জাহান্নাম থেকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।

নবীজিকে আল্লাহর ওয়াদা
আমার প্রভু আমার সঙ্গে অঙ্গীকার করেছেন যে, তিনি আমার উম্মতের মধ্যে সত্তর হাজার লোককে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যাদের কোনো হিসাবও নেওয়া হবে না এবং শাস্তি প্রদান করা হবে না। আর প্রতি হাজারের সঙ্গে থাকবে আরও সত্তর হাজার। আর আমার পরওয়ারদিগারের তিন মুঠি পরিমাণ।’ -সুনানে তিরমিজি : ২৪৩৭

যে আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক না করা অবস্থায় মারা গেছে, সে নবীর শাফায়াত পাবে 

 

আল্লাহতায়ালা নবীজির কাছে ওয়াদা করেছেন এবং স্বয়ং আল্লাহতায়ালাও নিজের কুদরতি মুষ্ঠি দ্বারা তিন মুষ্ঠি পরিমাণ উম্মতে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন, এটাও হুকমি শাফায়াত। নবীজির সম্মানে আল্লাহতায়ালা এই পরিমাণ উম্মতকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।

মুমিন কর্তৃক শাফায়াত প্রসঙ্গে
মুমিন মুসলমানগণ অন্য মুসলমানদের জন্য শাফায়াত করবেন। মুমিনদের মাঝে সাহাবায়ে কেরাম, শহীদ, অলি, হাফেজে কোরআন, উলামায়ে কেরাম এবং অপ্রাপ্তবয়স্ত সন্তান সবাই অন্তর্ভুক্ত। এ বিষয়ে বহু হাদিস রয়েছে।

সন্তান কর্তৃক পিতা-মাতার জন্য সুপারিশ
হজরত হারেস ইবন আকইয়াশ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা আবু বারযা (রা.)-এর নিকট কোনো এক রাতে উপস্থিত ছিলাম, সেই রাতে তিনি নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট থেকে হাদিস বর্ণনা করেন, তিনি বলেন আমি হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘যে দুই মুসলিমের চারটি সন্তান মারা যাবে, আল্লাহ তার দয়ার বরকতে তাদের উভয়কে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। সাহাবিগণ জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহ রাসুল! তিনজন মারা গেলে? তিনি বললেন, তিনজন মারা গেলেও (তিনি তাদের উভয়কে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন); সাহাবিগণ জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহ রাসুল! দুইজন মারা গেলে? তিনি বললেন, দু’জন মারা গেলেও।’ -মুসনাদে আহমাদ : ১৭৮৫৯

মুমিনদের মাঝে শাফায়াতকারী নির্দিষ্ট না
মুমিনদের অনেকেই শাফায়াতের সুযোগ পাবে, তবে তাদেরকে নির্দিষ্ট করা যাবে না। কারণ, শাফায়াতের জন্য ঈমানের ওপর মৃত্যুবরণ করা জরুরি। আর কে ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করল তা নির্দিষ্ট করা অসম্ভব। তাই কাউকে সুনির্দিষ্টভাবে ধারণা করা যাবে না যে, সে আমার জন্য শাফায়াত করতে পারবে। যেমন একজন পীর সাহেব, হাফেজে কোরআন কিংবা আলেম। আমরা সুধারণা করতে পারি যে, তিনি নেককার মানুষ, হতে পারে তারা অন্যদের জন্য শাফায়াতের সুযোপ পাবেন; কিন্তু এই সুধারণা পর্যন্তই সীমিত থাকতে হবে, কাউকে সুনির্দিষ্টভাবে শাফায়াতকারী বলা যাবে না।

শাফায়াতের অপেক্ষা করা যাবে না
আমাদের উচিত ঈমান ও আমল নিয়ে কবরে যাওয়ার চেষ্টা করা। শাফায়াতের অপেক্ষা না করা। এই আশা করা যাবে না যে, আমার ছেলে হাফেজ, সে আমাকে সুপারিশ করে জান্নাতে নিয়ে যাবে।

তবে শাফায়াত পাওয়ার জন্য যেসব আমল রয়েছে সেগুলো বেশি বেশি করতে হবে। ছেলেমেয়েকে হাফেজ, আলেম ও দীনদার বানানোর চেষ্টা করতে হবে। নাবালেগ বাচ্চা মারা গেলে সবর করতে হবে। শাফায়াতের মাঝে নবীজির শাফায়াত সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী ও কার্যকর এবং সুনিশ্চিত। তাই নবীজির সুন্নাহ মোতাবেক জীবন গড়তে হবে, নবীজির ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করতে হবে। হে আল্লাহ! তোমার নবীর শাফায়াত নসিব করো। আমিন।

   

ঈমানের স্বাদ ও মিষ্টতা কী?



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ঈমানের স্বাদ সবাই আস্বাদন করতে পারে না, ছবি : সংগৃহীত

ঈমানের স্বাদ সবাই আস্বাদন করতে পারে না, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, হজরত জিবরাইল (আ.) রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, এবার আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন, রাসুল (সা.) বললেন, ‘ঈমান হলো, তুমি ঈমান রাখবে আল্লাহর প্রতি, তার (আল্লাহর) ফেরেশতাদের প্রতি, তার কিতাবসমূহের প্রতি, তার রাসুলদের প্রতি এবং শেষ দিবসের (কেয়ামত) প্রতি। (এবং) তুমি ঈমান রাখবে তাককিরের ভালো-মন্দের প্রতি।’ হজরত জিবরাইল (আ.) বললেন, আপনি সত্য বলেছেন। -সহিহ মুসলিম : ৮

ঈমানের স্বাদ
হজরত আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী কারিম (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করবে ওই ব্যক্তি, যে আল্লাহকে রবরূপে, ইসলামকে দ্বীনরূপে এবং মুহাম্মাদ (সা.)-কে রাসুলরূপে সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করবে। -সহিহ মুসলিম : ৩৪

সুস্বাদু খাদ্যের স্বাদ সেই বুঝতে পারে যার জিহ্বায় স্বাদ আছে। রোগ-ব্যাধির কারণে নষ্ট হয়ে যায়নি। তদ্রূপ ঈমান ও যাবতীয় আমলের স্বাদও ওই খোশনসিব ব্যক্তিই অনুভব করে, যে সম্পূর্ণ সন্তুষ্টিচিত্তে ও সর্বান্তকরণে আল্লাহকে রব ও পরওয়ারদিগার এবং মুহাম্মদ (সা.)-কে রাসুল ও আদর্শ এবং ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন ও জীবন ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করে।

আল্লাহতায়ালা, নবী মুহাম্মদ (সা.) ও ইসলামের সঙ্গে যার সম্পর্ক কেবলই বংশগত ও প্রথাগত বা কেবলই চিন্তাগত ও বুদ্ধিগত পর্যায়েই নয় বরং সে আল্লাহর বন্দেগি, মুহাম্মদ (সা.)-এর আনুগত্য এবং ইসলামের অনুসরণকে মনেপ্রাণে নিজের জীবনে গ্রহণ করে নেবে। সেই ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারবে। -মাআরিফুল হাদিস : ১/৯১

ঈমানের মিষ্টতা
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, তিনটি গুণ যার মধ্যে থাকবে সে ঈমানের মিষ্টতা অনুভব করবে। আল্লাহ ও তার রাসুল তার কাছে সবকিছু থেকে অধিক প্রিয় হওয়া, কাউকে ভালোবাসলে শুধু আল্লাহরই জন্য ভালোবাসা, আর কুফুরিতে ফিরে যাওয়াকে এমন ঘৃণা করা, যেমন সে ঘৃণা করে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে। -সহিহ বোখারি : ১৬

এই হাদিসের বিষয়বস্তুও আগের হাদিসের বিষয়বস্তুর প্রায় কাছাকাছি। উপস্থাপনায় কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। এই হাদিসে বলা হচ্ছে, ঈমানের মিষ্টতা ওই ব্যক্তিই অনুভব করতে পারবে, যে আল্লাহ ও তার রাসুলের ভালোবাসায় পরিপূর্ণ সমর্পিত থাকবে; আল্লাহ ও তার রাসুলকে জগতের সবকিছু থেকে বেশি ভালোবাসবে। অন্য কারও প্রতি যদি তার ভালোবাসা হয়, তা হবে সম্পূর্ণ এই ভালোবাসার অধীন। আর ইসলাম তার এতই প্রিয় যে, ইসলাম থেকে ফিরে যাওয়া, কুফুরিতে লিপ্ত হওয়া তার কাছে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার সমতুল্য। -মাআরিফুল হাদিস : ১/৯১

;

মসজিদ নির্মাণ করবে দাউদ কিম

কোরিয়ার প্রতিটি গলি থেকে ভেসে আসবে আজানের সুর



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
জমি কেনার দলিল হাতে দাউদ কিম, ছবি : সংগৃহীত

জমি কেনার দলিল হাতে দাউদ কিম, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কয়েক বছর আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী দক্ষিণ কোরিয়ান ইউটিউবার দাউদ কিম মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। এরই মধ্যে মসজিদের জন্য জমিও কিনেছেন তিনি। ইনস্টাগ্রামে ওই জমি ও তার দলিলের ছবি শেয়ার করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক এই নওমুসলিম। তিনি দেশটির ইঞ্চোন শহরে মসজিদটি নির্মাণ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন।

ইনস্টাগ্রামে কিম লিখেছেন, ‘অবশেষে আপনাদের সাহায্যে আমি ইঞ্চোনে মসজিদ নির্মাণের জন্য জমি ক্রয়ের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছি। খুব শিগগিরই জায়গাটিতে মসজিদ নির্মিত হবে। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না আমার এই স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে।’

ওই পোস্টে তিনি আরও লেখেন, ‘ওই জমিতে মসজিদের পাশাপাশি একটি ইসলামিক পডকাস্ট স্টুডিও তৈরির ইচ্ছা আমার। সত্যি এটি একটি দুঃসাহসিক পদক্ষেপ, এতে বহু সমস্যার সম্মুখীন হওয়া লাগতে পারে। তবে আমার বিশ্বাস- আমি এগুলো সম্পন্ন করতে সক্ষম হব।’

দাউদ কিম আশাবাদ ব্যক্ত করে লিখেছেন যে, ‘এমন একটি দিন আসবে, যেদিন কোরিয়ার প্রতিটি গলি আজানের সুমধুর ধ্বনিতে ভরে উঠবে। এ জন্য আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

কিম ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন। এরপর ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে তিনি সারাবিশ্বে বিখ্যাত বনে যান। জনপ্রিয় এই ইউটিউবার তার নিয়মিত ব্লগে ইসলামিক বিভিন্ন কনটেন্ট, নামাজ পড়ার ভিডিওসহ নানা কিছুই পোস্ট করে থাকেন। ২০২২ সালে কিম বাংলাদেশ ভ্রমণ করেন। বাংলাদেশ ঘুরে তিনি পবিত্র উমরা পালন করতে সৌদি আরব যান।

দক্ষিণ কোরিয়ার এই গায়ক ইউটিউবিং করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ান। ঘুরতে ঘুরতে তিনি ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও তিউনিশিয়া যান। দেশগুলোতে গিয়ে ইসলাম ধর্মকে কাছ থেকে দেখে ও বুঝে তিনি আকৃষ্ট হন। ইসলামের জীবনবিধান দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে পুরোপুরি মুসলমান হয়ে যান।

দক্ষিণ কোরিয়া উত্তর-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ। যা কোরিয় উপদ্বীপের দক্ষিণ অংশ নিয়ে গঠিত। সিউল দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম শহর ও রাজধানী। সিউল বিশ্বের শীর্ষ ১০টি ধনী শহরের তালিকায় থাকা একটি শহর।

দক্ষিণ কোরিয়ায় ইসলামের উপস্থিতি খুবই সামান্য। ২০০৫ সালেও দেশটির আদমশুমারিতে মুসলিমদের কোনো বিভাগের সদস্য হিসেবে ধরা হত না। বর্তমানে দেশটিতে ২ লাখ মুসলিম রয়েছে, যাদের বেশিরভাগ বিভিন্ন মুসলিম প্রধান দেশ থেকে আসা অভিবাসী এবং কিছু ধর্মান্তরিত বাসিন্দা। দেশটিতে ২১টি মসজিদ, ১৩টি ইসলামিক সেন্টার ও ১৪০টির মতো নামাজের স্থান রয়েছে।

১৯৬৯ সালে কোরিয়ান সরকার প্রদত্ত জমিতে গড়ে ওঠে সিউল কেন্দ্রীয় মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার। সিউল সেন্ট্রাল মসজিদ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম মসজিদ। যা হেনামডং সিউলে অবস্থিত। মসজিদটি ইতিমধ্যে বিশ্বের অনন্য সুন্দর মসজিদ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে।

;

তীব্র গরম মুমিনকে যা শিক্ষা দেয়



মাওলানা ফখরুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম
গরম থেকে বাঁচতে ফুটপাতের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মাথায় পানি দিচ্ছেন, ছবি : রাজু আহমেদ

গরম থেকে বাঁচতে ফুটপাতের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মাথায় পানি দিচ্ছেন, ছবি : রাজু আহমেদ

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে এখন চলছে গ্রীষ্মকাল। ফলে তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। বস্তুত শীত, গরম, রোদ, বৃষ্টি সবই আল্লাহর দেওয়া। তীব্র শীত আর প্রচণ্ড গরমে রয়েছে মুমিনে জন্য শিক্ষা। জনজীবন অতিষ্ট হওয়া গরম আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর আজাবের কথা। তাই তীব্র তাপদাহের সময় দয়াময় আল্লাহতায়ালার কাছে বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার করা জরুরি।

পৃথিবীতে ইসলামই একমাত্র ধর্ম, যেখানে মানবতার কল্যাণ সাধনকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। ফলে তীব্র গরমের সময় ইবাদত-বন্দেগি সহজ করেছে ইসলাম। হজরত আবু জার (রা.) বলেন, এক সফরে আমরা আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম।
এক সময় মোয়াজ্জিন জোহরের আজান দিতে চেয়েছিল। তখন নবী কারিম (সা.) বলেন, গরম কমতে দাও। কিছুক্ষণ পর আবার মোয়াজ্জিন আজান দিতে চাইলে নবী কারিম (সা.) পুনরায় বলেন, গরম কমতে দাও।
এভাবে তিনি (নামাজ আদায়ে) এত বিলম্ব করলেন যে, আমরা টিলাগুলোর ছায়া দেখতে পেলাম।
এরপর নবী কারিম (সা.) বলেন, গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ হতে। কাজেই গরম প্রচণ্ড হলে উত্তাপ কমার পর নামাজ আদায় করো। -সহিহ বোখারি : ৫৩৯
বর্ণিত হাদিসের আলোকে বিধান হলো, অতীব গরমের সময় কিছুটা বিলম্ব করে জোহরের নামাজ আদায় করা সুন্নত।

গরমের সময় এমন কিছু আমল রয়েছে, যেগুলোর সওয়াব অনেক। একজন মুমিন সেসব আমল করে সহজেই আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারেন। ওই সব আমলের কয়েকটি হলো-

নফল রোজা
গরমের রোজা শীতের থেকে বেশি কষ্টকর। গরমের কষ্ট উপেক্ষা করে যদি নফল রোজা রাখা যায়, তাহলে আল্লাহতায়ালা বেশি নেকি দেবেন। সাহাবায়ে কেরাম ও পূর্ববর্তী বুজুর্গরা বেশি সওয়াবের আশায় গরমকালে রোজা রাখতেন।

পিপাসার্তকে পানি পান করানো
পিপাসার্তকে পানি পান করানো একটি উত্তম কাজ। আর যদি প্রচণ্ড গরমে কাউকে ঠাণ্ডা পানি পান করানো হয়, তাহলে তো কাজটি আরও উত্তম হবে। এক ব্যক্তি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করলেন, ‘কোন দান উত্তম? তিনি বললেন, ‘পানি পান করানো।’ -সুনানে নাসাই : ৫৪৫৬
ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, ‘তৃষ্ণার্তের তৃষ্ণা নিবারণ সর্বোত্তম মহৎ কাজের একটি।’
হাদিসের অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সদকা বা দান জাহান্নামের আগুন নির্বাপণ করে। আর পানি পান করানো উত্তম সদকা।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৭৪৩৫

নফল নামাজ
অতিরিক্ত গরম হলো- জাহান্নামের নিশ্বাস, তাই জাহান্নামের ভয়ে বেশি করে এবং লম্বা লম্বা সুরা দিয়ে নফল নামাজ আদায় করা উত্তম। হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন গরম বেশি পড়বে, তখন বেশি নামাজ আদায় করো। কারণ অতিরিক্ত গরম হলো- জাহান্নামের নিশ্বাস।’ -মেশকাত : ৫৯১

গরম থেকে শিক্ষা
গরমের তীব্রতা থেকে মুমিনের জন্য রয়েছে শিক্ষা। কেননা জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ পৃথিবীর আগুনের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি। তাই এ গরম থেকে জাহান্নামের তীব্রতা অনুমান করে গোনাহ থেকে মুক্ত থাকা। হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জাহান্নাম তার প্রতিপালকের কাছে এ বলে নালিশ করেছিল, হে আমার প্রতিপালক! (দহনের প্রচণ্ডতায়) আমার এক অংশ আরেক অংশকে গ্রাস করে ফেলছে। ফলে আল্লাহ তাকে দুইটি শ্বাস ফেলার অনুমতি দেন। একটি শীতকালে অপরটি গ্রীষ্মকালে। আর তাই তোমরা গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড উত্তাপ এবং শীতকালে তীব্র ঠাণ্ডা অনুভব করো।’ -সহিহ বোখারি : ৫৪৫৫

গ্রীষ্মকালকে গালমন্দ না করা
আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে, গরিবদের মাঝে সুমিষ্ট ফল বিতরণ করা। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করা। ঘামে ভেজা শরীরে জনসমাগমে গমন না করা। গরমের সময় প্রবাহিত ঘামের গন্ধ যেন অন্যের কষ্টের কারণ না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখা। গ্রীষ্মকালকে গালমন্দ না করা বিষয়টিও খেয়াল রাখার নির্দেশ দেয় ইসলাম।

বৃষ্টির জন্য নামাজ
প্রচণ্ড গরমে একপশলা বৃষ্টির জন্য মুমিনরা আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী। শস্য ফলানোসহ পশুপাখির খাবারের জন্য যেমন বৃষ্টি দরকার, তেমনি তীব্র তাপদাহে সৃষ্ট নানা জটিলতা ও কষ্ট থেকে মুক্তি পেতেও আল্লাহর রহমতের বৃষ্টি খুব প্রয়োজন। এমন পরিস্থিতিতে দয়াময় আল্লাহতায়ালার দরবারে বৃষ্টি কামনা করে নামাজ পড়া ও দোয়া করা সুন্নত। পরিভাষায় এই নামাজের নাম ‘ইসতিসকা’ বা বৃষ্টির নামাজ।

ইসলামের শিক্ষা হলো- সর্বাবস্থায় বান্দা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করবে। প্রচণ্ড গরমের সময়ও এর ব্যতিক্রম নয়। তীব্র তাপদাহের সময় মানুষের উচিৎ জাহান্নামের গরমের কথা স্মরণ করা। জাহান্নাম থেকে বাঁচতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষে আত্মনিয়োগ করা।

একটু শান্তির জন্য দুনিয়ার জীবনে গরমের কষ্ট ও তীব্রতা থেকে বাঁচার জন্য যদি আমরা সম্ভবপর সব উপায় অবলম্বন করতে পারি, তাহলে আখেরাতের আজাব ও ভয়াবহতা থেকে বাঁচার জন্য আমলদার এবং সাধনাকারী হওয়া জরুরি।

;

৪০ বছর ধরে মদিনায় বিনামূল্যে চা-কফি খাওয়ানো বৃদ্ধের মৃত্যু



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
চা-কফি নিয়ে বসে আছেন শায়খ ইসমাইল আল-জাইম আবু আল-সাবা, ছবি : সংগৃহীত

চা-কফি নিয়ে বসে আছেন শায়খ ইসমাইল আল-জাইম আবু আল-সাবা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র মদিনা জিয়ারতকারীদের অনেকের কাছে পরিচিত নাম শায়খ ইসমাইল আল-জাইম আবু আল-সাবা। গত ৪০ বছর ধরে তিনি পবিত্র হজ-উমরা পালনকারীদের মাঝে বিনামূল্যে চা, কফি, রুটি ও খেজুর বিতরণ করেছেন। অনেক বাংলাদেশি হাজি তার হাতে চা-কফি পান করেছেন।

সদাহাস্য সিরিয়ান এই নাগরিক মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) ৯৬ বছর বয়সে মদিনায় ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে হারামাইনের খবর সরবরাহকারী ভেরিফায়েড পেইজ ‘ইনসাইড দ্য হারামাইন’ এই খবর জানিয়ে তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে।

জানা যায়, প্রতিদিন ৪০টি ফ্লাস্কে করে চা-কফি আনতেন তিনি। এ জন্য একটি বিশেষ ট্রলি ব্যবহার করতেন, মসজিদে নববিতে যাওয়া অন্যতম পথ জায়েদিয়া এলাকায় বসতেন তিনি। সবুজ চা, লাল চাসহ নানা স্বাদের চা বানিয়ে আনতেন। থাকত চিনিযুক্ত, চিনিমুক্ত চা-কফি। এছাড়া এলাচযুক্ত চা, পুদিনা চা, বিভিন্নরকমের মশলাযুক্ত চা আনতেন।

তিনি রাস্তার পাশে বসে পথচারীদের মধ্যে চা, কফি, খেজুর, রুটি ও বিস্কুট বিনামূল্যে বিতরণ করতেন। এই কাজে তাকে সহযোগিতা করতেন ছেলেরা। কেউ কিছু দিতে চাইলে বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখান করতেন।

গত বছর সৌদি আরবের প্রভাবশালী পত্রিকা আল আরাবিয়া তাকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

সিরিয়ার নাগরিক শায়খ ইসমাইল প্রায় ৪০ বছর ধরে মদিনায় বসবাস করে আসছিলেন। মদিনার কুবা এভিনিউতে একটি সাধারণ বাড়িতে বসবাস করলেও নিজের সম্পদ পুরোটাই উৎসর্গ করেছিলেন হজ ও উমরা যাত্রীদের খেদমতে।

টানা চার দশক ধরে অনন্য এই সেবার কারণে সবার কাছে তিনি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার পাত্রে পরিণত হন। তার মৃত্যুতে মদিনায় শোকের ছায়া নেমে আসে। বাংলাদেশের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্মৃতিচারণের পাশাপাশি শোকপ্রকাশ করে তার জন্য দোয়া কামনা করেছেন।

;