সুখের সংসার গঠনে রাসুলের আদর্শ

  • মাওলানা মাহাথির মোবারক, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

 ‘তোমাদের মধ্যে তারাই উত্তম, যারা তাদের স্ত্রীদের জন্য উত্তম’

 ‘তোমাদের মধ্যে তারাই উত্তম, যারা তাদের স্ত্রীদের জন্য উত্তম’

বিয়ে ভালোবাসার এক অটুট বন্ধনের নাম। ভালোবাসা ভালোলাগা দু’টোই মানুষের মনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তবে দু’টোর ক্ষেত্রেই ইসলামি নির্দেশনার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। পশু-পাখি থেকে শুরু করে সমস্ত প্রাণীকে আল্লাহতায়ালা জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির অন্যতম হলো- মানুষ। যার শুরু হয় সর্বপ্রথম জান্নাতে হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টির মধ্য দিয়ে। হজরত আদম (আ.) কে সৃষ্টির পর তার সৃষ্টি হিসেবে সৃষ্টি করা হয় হজরত হাওয়া (আ.) কে। এর পর শুরু হয় মানব বংশ বিস্তারের ধারার। কেয়ামত পর্যন্ত এভাবেই চলবে পৃথিবী।

বলা হয়, একজন পুরুষ একজন নারী ছাড়া জীবনযাপন করতে পারে না। তদ্রূপ একজন নারীও একজন পুরুষ ছাড়া জীবন কাটাতে পারে না। এ কারণে ইসলামে নারীকে পুরুষের অর্ধাঙ্গিনী বলে অভিহিত করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ভালো, উত্তম ও আদর্শ স্বামী কিংবা স্ত্রী তারা, যাদের মাঝে থাকে ভালোবাসা। এ ভালোবাসার প্রেক্ষিতে তাদের সংসার হয় সুখের। আর যখন স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসার জায়গায় ঝগড়া-বিবাদ ও আর হিংসা-প্রতিহিংসা মনে জায়গা করে নেয়, তখন সমাজ-সংসার হয়ে যায় বিষাক্ত, দুনিয়াকে মনে হয় জাহান্নাম। এ কারণেই বোধহয় বলা হয়, সংসার সুখের হয় ভালোবাসা দিয়ে।

স্ত্রীকে ভালোবাসা প্রসঙ্গে হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে তারাই উত্তম, যারা তাদের স্ত্রীদের জন্য উত্তম। আর আমি আমার স্ত্রীদের জন্য তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি।’ -তিরমিজি

বিজ্ঞাপন

হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কোলে হেলান দিয়ে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। -সহিহ বোখারি : ২৯৭

তিনি আরও বলেন, আমি এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই সঙ্গে একই পাত্র হতে (পানি নিয়ে) গোসল করতাম। -সহিহ বোখারি : ২৫০

হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইতিকাফ করতেন তখন আমার দিকে তার মাথা ঝুঁকিয়ে দিতেন। আমি তা আঁচড়ে দিতাম। -সহিহ মুসলিম : ৫৭১

হজরত আয়েশা (রা.) আরও বর্ণনা করেন, আমি ঋতুবতী অবস্থায় পানি পান করতাম এবং পরে নবী করিম (সা.)-কে অবশিষ্টটুকু প্রদান করলে আমি যেখানে মুখ লাগিয়ে (পানি) পান করেছি, তিনিও পাত্রের ওই স্থানে মুখ লাগিয়ে পান করতেন। আবার আমি ঋতুবতী অবস্থায় হাড় খেয়ে তা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দিলে আমি যেখানে মুখ লাগিয়েছিলাম, তিনি সেখানে মুখ লাগিয়ে খেতেন। -সহিহ মুসলিম : ৫৭৯

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার মন খুশি রাখার জন্য আমার সঙ্গে খেলায় দৌঁড় প্রতিযোগিতা করতেন। -ইবনে মাজাহ : ১৯৭৯

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কোনো ব্যক্তি যদি আদর করে তার স্ত্রীর মুখে নিজ হাতে খাবার তুলে তাকে খাইয়ে দেয়, তাহলে প্রতিটি লুকমার বিনিময়ে সে সদকার সওয়াব পাবে। -সুনানে আবু দাউদ : ২৮৬৪

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে আদর করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে ডাকতেন। -বোখারি শরিফ

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমার মুখের খাবার রাসুলুল্লাহ (সা.) খেতেন। আমি গোশত খেয়ে হাড় রেখে দেওয়ার পর হজরত রাসুলুল্লাহ সে হাড়গুলো চুষে চুষে খেতেন। -সহিহ মুসলিম : ৫৭৯

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনও তার স্ত্রীদের গায়ে হাত তুলতেন না। তাদের সঙ্গে রাগারাগি করতেন না, কোনো বকা দিতেন না। -সহিহ বোখারি : ৫২০৪

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের সমস্ত কাজ-কর্মে সহযোগিতা করতেন। -সহিহ বোখারি : ৬৭৬