যে হৃদয়ে আল্লাহ আছেন, সেখানে ডিপ্রেশন থাকতে পারে না

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

যে হৃদয়ে আল্লাহ আছেন, সেখানে ডিপ্রেশন থাকতে পারে না

যে হৃদয়ে আল্লাহ আছেন, সেখানে ডিপ্রেশন থাকতে পারে না

যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, মন্দ ঘটনা আমাদের মন খারাপ করে দেয়। এটি খুবই স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু এই মন খারাপের মাত্রা কিংবা স্থায়িত্ব যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে যায়- তখন সেটিকে বলে ডিপ্রেশন। তবে ইসলামি স্কলাররা ডিপ্রেশনের একটু ভিন্ন সংজ্ঞা দিযেছেন। তাদের মতে, আপনি এবং আপনার স্রষ্টার মধ্যকার দুরত্বের নাম ডিপ্রেশন। নবীি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী হজরত খাদিজা (রা.) খুব ধনী ঘরের মেয়ে ছিলেন। বিলাসিতার মধ্যে বড় হয়েছেন। নবী কারিম (সা.)-এর ইসলাম প্রচারের কারণে অন্যান্য গোত্র যখন কোরাইশদের অবরোধ দিল, তখন নবী কারিম (সা.) আর হজরত খাদিজা (রা.)-এর গোত্রের শিশুদের আড়াই বছর তীব্র কষ্টে থাকতে হয়। এমনকি ক্ষুধার তাড়নায় গাছের পাতা পর্যন্ত খেয়েছিলেন।

হজরত বিলাল (রা.) ছিলেন হাবশি ক্রীতদাস। ইসলাম কবুলের অপরাধে তাকে মরুভূমির রোদে ফেলে রাখা হতো, তার গায়ের চর্বি গলে যেতো। তারপরও তার মুখে লেগে থাকতো প্রশান্তি, রোদের তেজ তার কালিমার তেজের কাছে পরাজিত হতো।

বিজ্ঞাপন

ইমাম ইবনে তাইমিয়া জীবনে আট বছর জেল খেটেছেন, জেলেই ইন্তেকাল করেছেন। অথচ তিনি কী বলেছিলেন, জানেন? বলেছিলেন, দুনিয়াতেও একটা জান্নাত আছে, আমি আমার হৃদয়ে সে জান্নাতের খোঁজ পেয়েছি।

গান শোনা, সিনেমা দেখা, মোটিভেশনাল বই পড়া কিংবা মানুষের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে যদি ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি মিলত, তবে গায়ক লিনকিন পার্ক আত্মহত্যা করলেন কেন? কিংবা অভিনেতা সুশান্ত শিং সুইসাইড করলেন কেন? মোটিভেশন গুরু ডেল কার্নেগি আত্মহত্যা করেছিলেন কেন?

বিজ্ঞাপন

আল্লাহতায়ালা, ইসলাম, ঈমান আর ডিপ্রেশন এক অন্তরে একসঙ্গে থাকতে পারে না। যদি আপনার মনে বিন্দুমাত্র ডিপ্রেশন থাকে, তার মানে আপনার হৃদয়ে আল্লাহ নাই, বরং ওখানে শয়তান বাসা বেঁধেছে।

যারা ডিপ্রেশনে পড়ে কিংবা আত্মহত্যা করে, মোটাদাগে দেখবেন, এরা অজ্ঞেয়বাদী না হয় অবিশ্বাসী। কোনো মুসলিম যদি ডিপ্রেশনের শিকার হন, তাহলে আপনার ঈমান নিয়ে ভেবে দেখার সময় এসেছে।

এবার অনেকেই তেড়ে এসে বলবেন, আমার পরিস্থিতি আপনি বুঝবেন না, আমার ফ্যামিলি প্রবলেম, মানি প্রবলেম, স্বামী প্রবলেম...। আরে ভাই, থামেন তো!

কোন পরিস্থিতির গল্প শোনান আপনি? বউ ভালো না? হজরত লুত (আ.)-এর স্ত্রীও ভালো ছিলো না। আর হজরত আছিয়ার স্বামী ছিলেন কে জানেন? ফেরাউন।

আরও শুনবেন? চেষ্টা করেও কিছু হচ্ছে না তাই ডিপ্রেশন? হজরত নুহ (আ.) প্রায় হাজার বছর দাওয়াত দিয়ে আশি জনকে দাওয়াত কবুল করাতে পেরেছিলেন। আপনজন কষ্ট দিয়েছে? অপবাদ দিয়েছে?

হজরত ইউসুফ (আ.)-এর ভাইয়েরা তাকে কুয়ার মধ্যে ফেলে দিয়ে চলে গেলো। সুন্দরী জুলেখার সঙ্গে ব্যভিচার না করায় উল্টো অপবাদ দিয়ে সাত বছরের জেল দেওয়া হলো!

এরপর আপনি কোন পরিস্থিতির গল্প শোনাবেন?

চলুন দেখি, পবিত্র কোরআন কী বলছে। হজরত ইবরাহিম (আ.) যখন বার্ধক্যে উপনীত, আল্লাহর পক্ষ থেকে একদল ফেরেশতা এসে তখন তাকে এক জ্ঞানী পুত্রের সুসংবাদ শোনাল। বিস্ময়ভরা কণ্ঠে হজরত ইবরাহিম (আ.) জিজ্ঞেস করলেন, আমাকে তো বার্ধক্য পেয়ে বসেছে, এরপরও তোমরা আমাকে এ সুসংবাদ দিচ্ছ? কীসের ভিত্তিতে তোমরা এ সুসংবাদ দিচ্ছ? ফেরেশতারা বলল, আমরা তো সত্য কথাই বলছি। আপনাকে সত্য সুসংবাদই দিচ্ছি। বার্ধক্য আপনাকে স্পর্শ করেছে করুক, এ বৃদ্ধ বয়সেই আপনার সন্তান হবে। আপনি নিরাশদের দলে যাবেন না। হজরত ইবরাহিম (আ.) তাদের কথার জবাবে বললেন, পথভ্রষ্টরা ছাড়া আর কে আপন প্রতিপালকের রহমত থেকে নিরাশ হতে পারে? -সুরা হিজর : ৫৩-৫৬

যারা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়, তাদেরকে বলা হলো পথভ্রষ্ট! এরপরও আপনি আমাকে ডিপ্রেশনের গল্প শোনাবেন?

আরেকটা গল্প শুনুন। হজরত ইয়াকুব (আ.)-এর সর্বাধিক প্রিয় সন্তান ছিলেন হজরত ইউসুফ (আ.)। কিন্তু তার ভাইয়েরা বাবার এই আদরকে সহজে মেনে নিতে পারেনি তাই কৌশলে তাকে একদিন বাবার কাছ থেকে নিয়ে গিয়ে কূপে ফেলে দিল। আল্লাহর অসীম কুদরতে কূপ থেকে উঠে এসে একদিন তিনি মিসরের ধনভাণ্ডারের দায়িত্বশীল হলেন। আর যে ভাইয়েরা তাকে নিয়ে চক্রান্ত করেছিল, দুর্ভিক্ষের শিকার হয়ে তারা খাবার আনতে হাজির হলো তার কাছে। এরপর এক কৌশলে তিনি তার সহোদর বিন ইয়ামিনকে নিজের কাছে রেখে দেন।

দুই ছেলে হারিয়ে হজরত ইয়াকুব (আ.) অন্য ছেলেদের বললেন, ‘হে আমার ছেলেরা! তোমরা যাও, ইউসুফ ও তার ভাইয়ের সন্ধান করো। তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চিত জেনো, আল্লাহর রহমত থেকে তো কাফের ছাড়া অন্য কেউ নিরাশ হতে পারে না।’ -সুরা ইউসুফ : ৮৭

আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়

 

শেষ লাইনটা আবার পড়েন তো! শুধু তাই না আল্লাহর রহমত থেকে ডিপ্রেসড হয়ে যাওয়া কবিরা গোনাহ। এই নিন হাদিস, বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন, ‘হাবরু হাজিহিল উম্মাহ’-এই উম্মতের বিদ্বান ব্যক্তি। তিনি বলেছেন, ‘সবচেয়ে বড় কবিরা গোনাহ হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা, আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিশ্চিন্ত হয়ে যাওয়া আর আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে পড়া।’ -মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক : ১৯৭০১

গান বাজনা, সিনেমা বিংবা বই আপনাকে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি দিতে পারবে না। ডিপ্রেশনের একমাত্র চিকিৎসা হলো- আল্লাহর দিকে ফেরত আসা। আপনার শয়তান যখন আপনাকে বলছে, তোর অনেক কষ্ট, তোর চেয়ে কষ্টে কেউ নাই, তখন আল্লাহ বলছেন, ‘কষ্টের সঙ্গেই তো স্বস্তি আছে। অবশ্যই কষ্টের সঙ্গেই স্বস্তি আছে৷’ -সুরা আলাম নাশরাহ : ৫-৬

শেষকথা, অভিনেতা সুশান্ত শিং রাজপুত সুইসাইড করেছেন। অথচ তার ছিচোড়ে সিনেমা ছিলো মোটিভেশনাল, সুইসাইড বিরোধী একটা ছবি। ছবি তাকে ডিপ্রেশন থেকে ফেরাতে পারলো না। শেষ ছয় মাস তিনি চিকিৎসা নিচ্ছিলেন, লাভ হলো না। শরীরের রোগের চিকিৎসা আছে, মনের রোগের ভ্যাকসিন চিকিৎসা বিজ্ঞানে নাই। এখন পর্যন্ত যার মোটিভেশনাল বই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে বলে দাবি করা হয়, সেই ডেল কার্নেগি শেষ জীবনে আত্মহত্যা করেছেন। মোটিভেশনের ফেরিওয়ালা নিজের বেঁচে থাকার এতটুকু মোটিভেশন জোগাড় করতে পারলেন না!

চার্লি চ্যাপলিন। সর্বকালের সেরা কমেডিয়ান। পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষকে হাসানো মানুষটির বোকা হাসির আড়ালে কী ব্যাথা লুকিয়ে ছিলো, কেউ জানলো না। নিজেকে শেষ করে দিলেন।

তাহলে সমাধান কী? ‘জেনে রেখ, আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমেই অন্তরের সত্যিকারের প্রশান্তি লাভ করা যায়।’ –সুরা রাদ : ২৮

আল্লাহতায়ালার দিকে ফিরে আসুন। কোরআনের দিকে ফিরে আসুন। যে অন্তরে রাহমানুর রাহিমের ভালোবাসা থাকে, যে হৃদয়ে আল্লাহ থাকেন, সে হৃদয়ে ডিপ্রেশন থাকতে পারে না।