বালা-মুসিবত থেকে রক্ষার উপায়



মুফতি মো. রফিকুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম
অর্থ : যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট

অর্থ : যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট

  • Font increase
  • Font Decrease

কোনো রোগের কারণ ও উৎসমূল চিহ্নিত করার মাধ্যমে যেমন ওই রোগ থেকে প্রতিকারের উপায় তালাশ করা সহজ হয়, তেমনিভাবে বালা-মুসিবতের কারণ অনুধাবনের মাঝেই নিহিত রয়েছে তা থেকে উত্তরণের উপায়। নিম্নে সে বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-

তাওহিদ, রেসালাত ও আখেরাতে নির্ভেজাল বিশ্বাস
মানুষের যাবতীয় পঙ্কিলতা ও বিপর্যয়ের প্রধান কারণ হচ্ছে শিরক। অন্তর থেকে শিরক বিদূরিত হলে পাপের আশঙ্কা যেমন হ্রাস পায়, তেমনি জীবন থেকে পাপরাশি মৃতপাতার মতো ঝরে পড়ে। পাশাপাশি রেসালতের প্রতি নিখাদ বিশ্বাস ও বিশ্বনবীর মহিমাসমুজ্জ্বল পূতঃপবিত্র জীবনাদর্শ একনিষ্ঠ অনুসরণের মাধ্যমেই মানুষ গড়তে পারে পবিত্র মধুর জীবনধারা। আর আখেরাতের ওপর অকৃত্রিম বিশ্বাস এবং মহান প্রভুর সমীপে উপস্থিত হয়ে পার্থিব জীবনের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের জার্রা জার্রা হিসাব প্রদানের ভয় মানুষকে রাখে সকল প্রকার অসৎ প্রবৃত্তি থেকে দূরে। ফলে মানুষের জীবন থেকে পাপপ্রবৃত্তি সমূলে উৎপাটিত হয়ে যায় এবং পাপের প্রগাঢ় তিমিরাচ্ছন্নতা যেসব বালা-মুসিবত ডেকে নিয়ে আসে, সেসব থেকেও সে পরিত্রাণ লাভ করে সুনিশ্চিতভাবে। তবে এসব বিশ্বাসমালা হতে হবে নির্ভেজাল, নিখুঁত ও সংশয়মুক্ত- যেন বিশ্বাসীর যাপিত জীবনের প্রতিটি পদক্ষেগে রচিত হয় তার বাস্তব ও কর্মময় সাক্ষ্য।

এ তিনটি মৌলিক শিক্ষা আত্মস্থ করেই আরবের আইয়্যামে জাহেলিয়াতের অসভ্য মানুষগুলো এমনভাবে পরিবর্তিত হয়েছিলেন। যার দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত ধরাধামে আর কখনও পরিলক্ষিত হয়নি, আর সততা ইনসাফ ও বীরত্বে, মানবপ্রেম ও সৌহার্দ্য, সাধনায়-কৃচ্ছ্রতায়, ন্যায় প্রতিষ্ঠায় ও অন্যায় প্রতিরোধে, ত্যাগ ও সর্বমানবিক মমতা ও দায়িত্ববোধে উদ্দীপিত এসব সোনার মানুষই ছিলেন সর্বকালের সর্বশেষ্ঠ মানুষ।

পাপের আবিলতা থেকে মুক্ত থাকা
মানুষের স্বঘোষিত প্রকাশ্য শত্রু ইবলিসের প্রতারণার বিভ্রম যেহেতু সর্বক্ষণ তাকে ঘিরে রেখেছে, সেহেতু মানব প্রকৃতিতে পাপের প্রবণতা থাকা খুবই স্বাভাবিক। প্রবৃত্তি, সমাজ, পারিপার্শ্বিকতা ও প্রযুক্তির অপব্যবহার তাকে অধিকতর উৎসাহ জোগায় পাপের পঙ্কিল নর্দমায় সাঁতার কাটতে। এভাবে অব্যাহত পাপের কৃষ্ণথাবা মানুষের শ্বেতশুভ্র অন্তর্লোকে সৃষ্টি করে তমসাচ্ছন্ন মতিভ্রম। ফলে আসমানি গজবের নিরন্তর তরঙ্গপ্রবাহ মানবজীবনে বয়ে আনে ধ্বংসের তাণ্ডবনৃত্য। তাই যাবতীয় বালা-মুসিবত থেকে মুক্তিলাভের জন্য আমাদের পাপমুক্ত জীবন গড়ার প্রত্যয়ে কঠোর প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করতে হবে।

মুসিবত উত্তরণে সাধারণ করণীয় বিষয়
অন্যান্য বালা-মুসিবত উত্তরণে জরুরি যে বিষয়গুলো আমাদের গুরুত্বের সাথে স্মরণ রাখতে হবে সেগুলো হচ্ছে-

অন্তরে সাহস রাখা
বালা-মুসিবতের সময় গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য অন্তরে সাহস রাখা এবং মেজাজ স্থির রাখা। বিপদে ধৈর্যহারা হয়ে বিভিন্ন প্রকার শিরক কিংবা কুফরিসুলভ কথাবার্তা বললে, তা কখনোই বিপদ-আপদকে লাঘব করে না, বরং জিল্লতির মাত্রাকে বৃদ্ধি কারে দেয় শতগুণ!

হতাশ না হওয়া
বিপদ এবং মুসিবতে কোনোপ্রকার হতাশায় আক্রান্ত না হয়ে আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী থাকাই প্রত্যেক মুমিনের দায়িত্ব। কেননা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া কবিরা গোনাহ আর কোনো মানুষের জন্য শোভন কিংবা সমীচীন নয়, তার প্রতিপালকের করুণা থেকে হতাশায় নিপতিত হওয়া। কোরআন মাজিদে আশাব্যঞ্জক ভঙ্গিতে যেভাবে বিঘোষিত হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।’ -সুরা যুমার : ৫৩

সুরা আলমনাশরাহে আল্লাহ পাক প্রদান করেছেন প্রশান্তিদায়ক প্রতিশ্রুতির কথা, ‘কষ্টের সঙ্গেই তো স্বস্তি আছে। নিশ্চয়ই কষ্টের সঙ্গেই আরাম আছে।’ -আয়াত : ৫-৬

মহানবীর হাদিস শরিফেও আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে যাওয়াকে সর্বাপেক্ষা বড় গোনাহ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। -মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক

তাই বালা-মুসিবতের সময় আমাদের হতে হবে আশাদীপ্ত হৃদয়ে কর্মমুখর।

আল্লাহর ওপর নিশ্চিন্তে ভরসা রাখা
যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে দুশ্চিন্তা তার জীবনে প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা প্রাণঘাতী মহামারিও তাকে উদ্বিগ্ন ও পেরেশান করতে সক্ষম হয় না। কেননা আল্লাহর ওপর নিশ্চিন্তে ভরসাস্থাপনকারী ব্যক্তি থাকে সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর কুদরতি জিম্মায়। ফলে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুলকারীর যাবতীয় উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বুদবুদের মতো মিলিয়ে যায়, তার দুঃখ পরিণত হয় আনন্দে আর অনিরাপত্তার স্থান দখল করে নিরাপত্তার অচ্ছেদ্যজাল। সুরা তালাকে সে অভয়বাণী যেভাবে উচ্চারিত হয়েছে, তা এরকম- ‘যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।’ -আয়াত : ৩

আল্লাহর জিকির
বালা-মুসিবত উত্তরণে উঠতে-বসতে, চলতে-ফিরতে আল্লাহর জিকির তথা আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহকে পরম শ্রদ্ধা ও যত্নে উচ্চারণ ও সেগুলো স্মরণ রেখেই যাবতীয় কাজকর্ম সম্পাদন করা একান্ত অপরিহার্য। পবিত্র কোরআনে যেমনটি ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি পরম করুণাময়ের জিকির থেকে বিমুখ থাকে, আমি তার জন্য এক শয়তানকে নিয়োজিত করে দিই। ফলে সে হয়ে যায় তার সাথী।’ -সুরা যুখরুফ : ৩৬

সুরা ত্বহায় বলা হয়েছে, ‘যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ থাকবে, তার জন্য হবে নিশ্চিত এক সংকুচিত জীবন।’ -আয়াত : ১২৪

জিকিরের মাধ্যমে অন্তরের প্রশান্তি অর্জিত হয়, বিপদ-আপদ বিদূরিত হয়ে যায় আর প্রতিপ্রাপ্য হয় মহান প্রভুর পক্ষ থেকে নিরাপত্তা।

অর্থ : কষ্টের সঙ্গেই তো স্বস্তি আছে। নিশ্চয়ই কষ্টের সঙ্গেই আরাম আছে

 

কোরআন তেলাওয়াত
সর্বশেষ ও চূড়ান্ত আসমানি কিতাব কোরআন সুনিশ্চিতভাবে মানুষের জন্য শিফা ও রহমত। মানুষের দৈহিক ও আত্মিক আরোগ্য লাভের মাধ্যম। মহান আল্লাহপাক যেমনটি বলেছেন, ‘আমি কোরআনে যা কিছু নাজিল করেছি, যা মুমিনদের জন্য শিফা ও রহমত!’ -সুরা বনী ইসরাঈল : ৮২

মুসিবতের রাহুথাবায় জীবনের পথপরিক্রমা সংকীর্ণ হয়ে গেলে কিংকর্তব্যবিমুঢ় পথহারাকে এই কোরআনই বাতলে দেয় সঠিক পথের দিশা। তাই বালা-মুসিবতের সময় অধিকহারে অর্থসহ কোরআন তেলাওয়াত খুবই ফলদায়ক ও তাৎপর্যবাহী।

একাকিত্ব পরিহার এবং সৎসঙ্গ অন্বেষণ
মুসিবতের সময় একাকিত্ব পরিহার করে নেক্কার ও বুদ্ধিদীপ্ত সঙ্গীর সঙ্গে সময় কাটানো একান্ত অপরিহার্য। কেননা, নিঃসঙ্গ মানুষকে চিরশত্রু শয়তান সহজে ধোঁকা দিতে পারে। ফলে ইবলিশি কূহকে পড়ে বিপদমুক্তির আশায় অধিকতর বিপদের ধ্বংস-গহ্বরে নিমজ্জিত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।

অধিকহারে দান-সদকা
হজরত রাসুলে মকবুল (সা.) বলেছেন, ‘গোপনে দান প্রতিপালকের ক্রোধকে নির্বাপিত করে।’ –তাবরানি

তিনি চন্দ্রগ্রহণের সময় নামাজ, দাসমুক্তি, বেশি বেশি জিকির এবং দান-সদকা করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। কেননা এসব কাজ বালা-মুসিবত থেকে পরিত্রাণ লাভের মাধ্যম। হাফেজ ইবনুল কায়্যিম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিভিন্ন প্রকার বালা-মুসিবত প্রতিরোধে দান-সদকার তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব রয়েছে, যদিও দানকারী পাপী, অত্যাচারী; এমনকি ছোটখাটো কুফরিকারীও হয়।’

নফল নামাজ
হজরত রাসুলে কারিম (সা.) কোনো বিষয়ে চিন্তাগ্রস্ত বা পেরেশান থাকলে নামাজে নিমগ্ন হতেন বলে আবু দাউদ শরিফে বর্ণিত হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি। আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামও বিপদে নিপতিত হলে নামাজে মনোযোগী হতেন বলে বিশ্বনবীর আরেকটি বর্ণনা থেকে অবগত হওয়া যায়। মহাগ্রন্থ আল কোরআনেও বালা-মুসিবত উত্তরণে নামাজ আদায়ের তাকিদ দিয়ে বলা হয়েছে, ‘তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য কামনা করো।’ -সুরা বাকারা : ৪৫

ধৈর্যশীল হওয়া
বালা-মুসিবতে ধৈর্যধারণকারীদের জন্য মহাপ্রতিদানের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআনে কারিমের নব্বই স্থানে সবরের কথা আলোচনা করেছেন। সুরা বাকারার ১৫৩ নম্বর আয়াতে তিনি বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ্ ধৈর্য অবলম্বনকারীদের সঙ্গে আছেন।’

মহানবী (সা.) এক বর্ণনায় সবরকে ‘জ্যোতি’ হিসেবে এবং আরেক হাদিসে ধৈর্যের বিনিময় ‘জান্নাত’ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা ধৈর্যের চেয়ে উৎকৃষ্ট এবং ব্যাপকতর দান কাউকে দেননি।’ –সুনানে আবু দাউদ

হজরত আলী (রা.)-এর মতে, ‘ঈমানের ক্ষেত্রে সবরের উপমা হলো- দেহের মধ্যে মাথার ন্যায়, যার ধৈর্য নেই, তার ঈমান নেই।’

আমলে সালেহ করা
বিভিন্ন নেক আমলের মাধ্যমে মহামহিম স্রষ্টার নিকট বিপদ দূরীকরণের জন্য বিনীত প্রার্থনা উপস্থাপন করাও মুসিবত উত্তরণে সবিশেষ ফলদায়ক বলে হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়। পবিত্র কোরআনেও বিভিন্নভাবে আমলে সালেহর মাধ্যমে বিপদমুক্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। যেমন সুরা আরাফে বলা হয়েছে, ‘অবশ্যই আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের অতীব নিকটবর্তী।’ -আয়াত : ৫৬

নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘সৎকর্ম সম্পাদন বালা-মুসিবত, বিপদাপদ ও জিল্লতি থেকে রক্ষার মাধ্যম।’ -আত তারগিব

দোয়া 
বিপদ-আপদে তো অবশ্যই, যেকোনো প্রয়োজনে, প্রতি মুহূর্তে মানুষ তার মহান প্রতিপালকের নিকট কাতর প্রার্থনা জানাবে- এ তো খুবই স্বাভাবিক কথা। আল্লাহতায়ালা এই ধরনের আর্তিকে যে বিশেষ পছন্দ করেন, সেটাও হাদিসের বর্ণনা থেকে আমরা অবগত হতে পারি। কিন্তু সংকট উত্তরণের বিজ্ঞানসম্মত পন্থা কিংবা কার্যকর কর্মপদ্ধতি এড়িয়ে শুধু দোয়া-মোনাজাতের শিক্ষা নবী কারিম (সা.) দেননি। কেননা সংকট উত্তরণে যথাযথ উপায় অন্বেষণে অনিচ্ছুক অকর্মণ্য মানুষের প্রার্থনা মহান আল্লাহর দরবারে কোনো আবেদন জাগায় না। দৃষ্টান্ত হিসেবে আমরা মহানবীর নেতৃত্বে সংঘটিত সর্বাত্মক সশস্ত্র যুদ্ধগুলোর কথা এ প্রসঙ্গে স্মরণ করতে পারি। সেসব যুদ্ধে সৈন্যসংখ্যা কিংবা অস্ত্রশস্ত্র সবদিক দিয়ে কয়েকগুণ পিছিয়ে থেকেও মুসলিম সৈন্যদলের সিপাহশালার বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তার সৈন্যদলকে অমিতবিক্রমে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করতেন, তারপরই আল্লাহর দরবারে হতেন ফরিয়াদমুখর। সুতরাং বিপদাপদে আমাদেরও বাস্তবসম্মত, কার্যকর ও বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থা গ্রহণের পরই মহান প্রভুর দরবারে আকুল আকুতি জানাতে হবে।

পাশাপাশি এ কথাও গভীর প্রতীতী রাখতে হবে যে, সমগ্র বিশ্ববাসীর সম্মিলিত কর্মপ্রচেষ্টাও বিফল, ব্যর্থ হতে বাধ্য যদি তাতে মহান প্রভুর ইশারা না থাকে। সুতরাং আমাদের গৃহীত শত পদক্ষেপও ফলশূন্য হতে পারে, যদি আমরা বিপদ-আপদে রাব্বে কারিমের দরবারে আকুতিমুখর ধরনা না দিই।

   

কবরের জীবন সহজ হওয়ার দোয়া



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
জান্নাতুল বাকি, ছবি : সংগৃহীত

জান্নাতুল বাকি, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কবরের আজাব দেখানো হয়েছিলো, ফলে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি কখনও কবরের চেয়ে ভয়াবহ দৃশ্য দেখিনি।’ -সুনানে তিরমিজি : ২৩০৮

নবী কারিম (সা.) আরও বলেন, ‘তোমরা মৃতদেরকে দাফন করা বাদ দিয়ে দেবে, এ ভয় না থাকলে আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম, যেন তিনি তোমাদেরকে কবরের কিছু আজাব শুনিয়ে দেন।’ -সহিহ মুসলিম : ৭১০৬

হাদিসে এসেছে, ‘যে মুমিন ব্যক্তি মুনকার-নাকিরের প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর দিতে পারবে, তাকে কবরে জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দেওয়া হবে, তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দেওয়া হবে, ফলে সে জান্নাতের সিগ্ধ হাওয়া ও সুগন্ধি পেতে থাকবে।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৪৭৫৩

এগুলো দেখার পর সে বলবে, ‘হে আল্লাহ! দ্রুত কেয়ামত সংঘটিত করুন, যাতে আমি আমার পরিবার এবং সম্পদের দিকে ফিরে যেতে পারি।’ -সহিহুল জামে : ১৬৭৬

আর কাফের-মুশরেকদের জন্য কবরকে সংকীর্ণ করে দেওয়া হবে এবং সে তার জাহান্নামের স্থানটি দেখতে পাবে। ফলে ভয়ে আল্লাহকে বলবে, ‘হে রব! কেয়ামত সংঘটিত করবেন না।’ -আল মুসনাদ : ১৮৬৩৭

এজন্য হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের আজাব এবং ফেতনা থেকে বারবার পানাহ চাইতেন। আমরাও নবী কারিম (সা.)-এর ভাষায় এভাবে দোয়া করতে পারি-

اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُبِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল ক্বাবরি।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাই। -সহিহ বোখারি : ৮৩২

হজরত উরওয়াহ ইবনে যুবাইর (রহ.) থেকে বর্ণিত, হজরত আয়েশা (রা.) তাকে বলেছেন যে, আল্লাহর রাসুল (সা.) নামাজে দোয়া বলতেন- (উচ্চারণ) আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল ক্বাবরি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসিহিদ দাজ্জালি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়া ফিতনাতিল মামাতি, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মাছামি ওয়াল মাগরামি।

অর্থ : হে আল্লাহ! কবরের আজাব থেকে, মাসিহে দাজ্জালের ফেতনা থেকে এবং জীবন ও মৃত্যুর ফেতনা থেকে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ্! গোনাহ ও ঋণগ্রস্ততা থেকেও আপনার নিকট আশ্রয় চাই। তখন এক ব্যক্তি তাকে বলল, আপনি কতই না ঋণগ্রস্ততা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। তিনি (আল্লাহর রাসুল সা.) বললেন, যখন কোনো ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে তখন কথা বলার সময় মিথ্যা বলে এবং ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে। -সহিহ বোখারি : ৮৩২

;

তুরস্কের প্রবীণ আলেম ড. লুতফি দুগানের ইন্তেকাল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
লুতফি দুগান, ছবি : সংগৃহীত

লুতফি দুগান, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

তুরস্কের প্রবীণ আলেম রাজনীতিবিদ ও ধর্মবিষয়ক অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান ড. লুতফি দুগান ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন।

সোমবার (৪ নভেম্বর) আংকারার বাসকেন্ট ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৯৩ বছর।

তার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়ে এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেন, ‘তুরস্কের ধর্মবিষয়ক সাবেক প্রধান ও ইসলামি পণ্ডিত লুতফি দুগানের মৃত্যুত আমি গভীর শোক জানাচ্ছি। মহান আল্লাহ তার ওপর অনুগ্রহ করুন এবং তার পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়দের ধৈর্য ধারণের তাওফিক দিন।’

লুতফি দুগান ১৯৩০ সালে গুমুশানে প্রদেশের সালিয়াজি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মুহাম্মদ ফাহমি আফেন্দির কাছে তিনি পবিত্র কোরআন শিক্ষা লাভ করেন এবং খালু হাফেজ ফাওজি আফেন্দির কাছে হিফজ সম্পন্ন করেন।

তৎকালীন সময়ের বড় বড় আলেমদের কাছে আরবি ভাষা, কেরাত ও তাজবিদ বিষয়ক শিক্ষা লাভ করেন। স্থানীয় উজকান মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন।

পরবর্তীতে ১৯৫৪ সালে ধর্মবিষয়ক অধিদপ্তরের আওতায় অনুষ্ঠিত ইফতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিভিন্ন শহরের সহকারী মুফতি ও মুফতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শরিয়া বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন এবং ধর্মবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপ্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপর ১৯৬৮ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিনি এই বিভাগের প্রধান ছিলেন।

তুরস্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজমুদ্দিন এরবেকানের আহ্বানে তিনি রাজনীতিতে যুক্ত হন এবং দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮০ সালে সংঘটিত অভ্যুত্থানের পর তিনি চার মাস কারাবন্দি ছিলেন। বহু ভাষায় পারদর্শী এই আলেম ১৯৮৭ সালে ইসলামিক সায়েন্স রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিশিং ফাউন্ডেশন নামে একটি ইসলামি গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন এবং এর ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

;

জলবায়ু সম্মেলনে চালু হলো ধর্মীয় প্যাভিলিয়ন



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কপ-২৮ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ধর্মীয় প্যাভিলিয়ন উদ্বোধন, ছবি : সংগৃহীত

কপ-২৮ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ধর্মীয় প্যাভিলিয়ন উদ্বোধন, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘কনফারেন্স অব দ্য পার্টিস’(কপ-২৮) জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সবচেয়ে বড় সম্মেলন। ৩০ নভেম্বর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলা জলবায়ু সম্মেলনের চতুর্থদিনে প্রথমবারের মতো চালু হয়েছে ধর্মীয় প্যাভিলিয়ন। জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় বিশ্বাসী সম্প্রদায় ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করতেই তা চালু করা হয়।

প্যাভিলিয়ন আয়োজনে সহযোগিতা করে কপ-২৮ প্রেসিডেন্সি, সহনশীলতা ও সহাবস্থান মন্ত্রনালয়, দি হলি সি, জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) ও মুসলিম কাউন্সিল অফ এল্ডার্স।

৪ ডিসেম্বর (রোববার) প্যাভিলিয়নের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান, সহনশীলতা ও সহাবস্থান বিষয়ক মন্ত্রী শেখ নাহিয়ান বিন মুবারক আল নাহিয়ান ও পোপ ফ্রান্সিসের প্রতিনিধি ভ্যাটিকান স্টেট সেক্রেটারি কার্ডিনাল পিয়েত্রো প্যারোলিন। এই প্যাভিলিয়নের মাধ্যমে বিশ্বাসী সম্প্রদায় ও ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বিজ্ঞানী ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সংযোগ তৈরি করাই প্রধান লক্ষ্য।

এ সময় ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন মিসরের বিশ্বখ্যাত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যান্ড ইমাম শায়খ ড. আহমদ আল-তাইয়েব এবং পোপ ফ্রান্সিস। তারা জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবেলায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

আল-আজহারের গ্র্যান্ড ইমাম বলেন, ‘মুসলিম কাউন্সিল অব এল্ডার্সের ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ সত্যিই নানা কারণে প্রশংসনীয়। প্রথমত, কপ-২৮ এর আবুধাবি আন্তঃধর্মীয় বিবৃতিতে স্বাক্ষর করার জন্য এখানে বিভিন্ন ধর্মীয় ব্যক্তিত্বকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দ্বিতীয়ত, কপ-২৮ এ প্রথমবারের মতো ফেইথ প্যাভিলিয়ন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জের সময়ে ধর্মীয় নেতাদের কণ্ঠস্বর শোনানোর জন্য মূল্যবান সুযোগ তৈরি হয়েছে।’

এ সময় আল-আজহারের ইমাম গাজায় নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের জীবন রক্ষায় ধর্মীয় নেতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

পোপ ফ্রান্সিস বলেন, ‘আজ বিশ্বের এমন জোটের প্রয়োজন যা কারো বিরুদ্ধে নয়; বরং সবার উপকারে কাজ করবে। আসুন, ধর্মীয় প্রতিনিধি হিসাবে আমরা একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করি যেন আমরা দেখাতে পারি, পরিবর্তন সম্ভব। যেন সবাইকে সম্মানজনক ও টেকসই জীবনধারা দেখাতে পারি। আসুন, আমরা বিশ্বনেতাদের আমাদের সাধারণ ঘর রক্ষা করার জন্য বলি।’

কপ-২৮ এর সভাপতি ড. সুলতান আল জাবের বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের রাজনীতি, সীমানা বা ধর্ম নিয়ে চিন্তা করে না। তাই জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় আমাদের সাফল্য নিশ্চিত হবে ওই সময় যখন আমরা সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে পারব। কারণ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সামাজিক দায়িত্ববোধ ও সচেতনতা প্রচারে ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের গ্রহের সুরক্ষায় ধর্মীয় নেতারা ঐতিহাসিক মুহূর্তে একত্রিত হয়েছে।

;

যেসব নেয়ামত পরীক্ষার বিষয়



মাওলানা ফখরুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম
স্ত্রী-সন্তানের প্রতি ভালোবাসায় সতর্ক থাকা, ছবি : সংগৃহীত

স্ত্রী-সন্তানের প্রতি ভালোবাসায় সতর্ক থাকা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মানুষের আসল আবাস জান্নাত। কিছু দিনের জন্য তাদের দুনিয়ায় পাঠানো হয়েছে। আবার আমাদেরকে জান্নাতে যেতে হবে। তবে এমনিতেই নয়, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে। দুনিয়ায় মানুষকে ভালো-মন্দ, আনন্দ-বেদনা, আলো-অন্ধকার, সুখ-দুঃখ অবস্থায় জীবন অতিবাহিত করতে হয়। দুনিয়ার এই পরীক্ষার ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে আমরা দুঃখ-দুর্দশা, রোগ-শোক, অভাব-অনটন ইত্যাদিকেই কেবল আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা মনে করি। কিন্তু বাস্তবতা হলো- দুঃখ-দুর্দশা, রোগ-শোক ইত্যাদি অপ্রীতিকর অবস্থা যেমন পরীক্ষা তেমনি সুখ-শান্তি, সম্পদ-প্রাচুর্য, আরাম-আয়েশ, স্বস্তি-সুস্থতা ইত্যাদি প্রীতিকর অবস্থাও পরীক্ষার বিষয়।

স্ত্রী-সন্তানের প্রতি ভালোবাসায় সতর্ক থাকা
এমন পরীক্ষার বিষয় হলো- স্ত্রী-সন্তানকে ভালোবাসা এবং স্বাস্থ্য-সুস্থতা ও রূপ-গঠন। বিষয় দুটি আল্লাহতায়ালার নেয়ামতও বটে। তাই এই দুই বিষয় থেকে সতর্ক থাকা।

ইসলামি স্কলাররা বলেন, মানুষ সবচেয়ে বেশি মহব্বত করে স্ত্রী ও সন্তানকে। তাদেরকে নিয়েই তার যত কল্পনা ও পরিকল্পনা। তাদের জন্যেই তার জীবন ও যৌবন সে তিলে তিলে ক্ষয় করে। এমন ভালোবাসার মানুষগুলো ও তাদের ভালোবাসার ক্ষেত্রগুলো পরীক্ষার বিষয়। স্ত্রী-সন্তান এবং তাদের ভালোবাসা যেন আল্লাহর হুকুম পালন এবং তার সন্তুষ্টি লাভের পথে বাধা হতে না পারে- এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা। দয়াময় আল্লাহতায়ালাও আমাদের এভাবে সতর্ক করেছেনে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কতক স্ত্রী ও কতক সন্তান তোমাদের শত্রু। সুতরাং তোমরা তাদের সম্পর্কে সচেতন থাকো।’ -সুরা তাগাবুন : ১৪

যে স্ত্রী ও সন্তানের জন্য এত মহব্বত, যাদের জন্য মরণপণ এত সংগ্রাম, তারাই শত্রুতে পরিণত হতে পারে, যদি তাদের ভালোবাসায় নিজের দায়িত্ব পালনে অবহেলা করা হয়, আল্লাহর হক বা বান্দার হক নষ্ট করা হয়।

বিদ্যা-বুদ্ধি ও দৈহিক নেয়ামত সম্পর্কে সচেতন থাকা
আল্লাহতায়ালা মানুষকে আত্মিক, দৈহিক, আর্থিক, ছোট, বড়- যাকে যে নেয়ামত দান করেছেন; সেই নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে এবং তা আল্লাহর হুকুমমতো ব্যবহার করতে হবে। যাকে আল্লাহতায়ালা বিদ্যা-বুদ্ধির নেয়ামত দান করেছেন তাকে ওই জ্ঞান ও বিদ্যার হক ও দাবি কী- তা জেনে সেগুলো আদায় করার চেষ্টা করতে হবে।

যাকে আল্লাহতায়ালা স্বাস্থ্য-সুস্থতা ও রূপ-গঠনের নেয়ামত দান করেছেন তাকে এর শোকর আদায়ের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। এই নেয়ামত যেন তাকে অহংকারী না বানাতে পারে এবং যারা এ নেয়ামত পায়নি তাদের প্রতি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের ভাব যেন পয়দা না হয়, সে ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতে হবে।

তেমনি ইলম ও বিদ্যা অর্জন করে গর্বিত হওয়া যাবে না। যাকে আল্লাহতায়ালা ইলমের ক্ষেত্রে তার মত মর্যাদা দান করেননি তার প্রতি যেন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও অহংকারের আচরণ না হয় এবং ইলম অনুযায়ী আমল থেকে গাফেল না হয়।

যে সুখ-শান্তি ও অর্থ-প্রাচুর্যের নেয়ামত পেয়েছে, সে যেন নেয়ামতের দাতাকে না ভোলে। আখেরাত থেকে গাফেল না হয়। শান্তি ও প্রাচুর্যের নেয়ামত পেয়ে খুশিতে মাতোয়ারা না হয়। আরাম-আয়েশ ও বিলাসিতায় মত্ত না হয়।

মোটকথা, আল্লাহতায়ালা মানুষকে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে, ছোট-বড় যত নেয়ামত দান করেছেন; ওই নেয়ামতের শোকর আদায় করব। এর হক ও দাবিগুলো জেনে সেসব আদায় করার চেষ্টা করব। এভাবে যদি আমরা কষ্ট-ক্লেশ, বিপদ-মসিবত ইত্যাদি প্রতিকূল ও অবাঞ্ছিত অবস্থায় সবর করি এবং সুখ-শান্তি, স্বস্তি-সুস্থতা ইত্যাদি অনুকূল ও বাঞ্ছিত অবস্থায় শোকর করি তাহলে নেয়ামত ও মসিবত সবই আমাদের জন্য কল্যাণকর হবে, আখেরাতের পাথেয় হবে এবং মর্তবা বুলন্দির কারণ হবে।

মুমিন এমনই হয়- এটিই প্রকাশ পেয়েছে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ বাণীতে, ‘ঈমানদারের অবস্থা কী অপূর্ব! তার সবকিছুই তার জন্য কল্যাণকর। আর এ শুধু মুমিনেরই বৈশিষ্ট্য। যদি সে সুখ-সচ্ছলতা পায় তাহলে শোকর করে, ফলে তা তার জন্য কল্যাণের হয়। আর যদি দুঃখ-অনটনের শিকার হয় তাহলে সবর করে, ফলে তা-ও তার জন্য কল্যাণের হয়।’ -সহিহ মুসলিম : ২৯৯৯

আল্লাহতায়ালা আপন রহমতে প্রত্যেক মুমিন-মুসলিমকে মসিবত ও নেয়ামতের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করুন। সমস্ত খায়ের ও কল্যাণ দান করুন এবং সব ধরনের অকল্যাণ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

;