বালা-মুসিবত থেকে রক্ষার উপায়



মুফতি মো. রফিকুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম
অর্থ : যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট

অর্থ : যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট

  • Font increase
  • Font Decrease

কোনো রোগের কারণ ও উৎসমূল চিহ্নিত করার মাধ্যমে যেমন ওই রোগ থেকে প্রতিকারের উপায় তালাশ করা সহজ হয়, তেমনিভাবে বালা-মুসিবতের কারণ অনুধাবনের মাঝেই নিহিত রয়েছে তা থেকে উত্তরণের উপায়। নিম্নে সে বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-

তাওহিদ, রেসালাত ও আখেরাতে নির্ভেজাল বিশ্বাস
মানুষের যাবতীয় পঙ্কিলতা ও বিপর্যয়ের প্রধান কারণ হচ্ছে শিরক। অন্তর থেকে শিরক বিদূরিত হলে পাপের আশঙ্কা যেমন হ্রাস পায়, তেমনি জীবন থেকে পাপরাশি মৃতপাতার মতো ঝরে পড়ে। পাশাপাশি রেসালতের প্রতি নিখাদ বিশ্বাস ও বিশ্বনবীর মহিমাসমুজ্জ্বল পূতঃপবিত্র জীবনাদর্শ একনিষ্ঠ অনুসরণের মাধ্যমেই মানুষ গড়তে পারে পবিত্র মধুর জীবনধারা। আর আখেরাতের ওপর অকৃত্রিম বিশ্বাস এবং মহান প্রভুর সমীপে উপস্থিত হয়ে পার্থিব জীবনের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের জার্রা জার্রা হিসাব প্রদানের ভয় মানুষকে রাখে সকল প্রকার অসৎ প্রবৃত্তি থেকে দূরে। ফলে মানুষের জীবন থেকে পাপপ্রবৃত্তি সমূলে উৎপাটিত হয়ে যায় এবং পাপের প্রগাঢ় তিমিরাচ্ছন্নতা যেসব বালা-মুসিবত ডেকে নিয়ে আসে, সেসব থেকেও সে পরিত্রাণ লাভ করে সুনিশ্চিতভাবে। তবে এসব বিশ্বাসমালা হতে হবে নির্ভেজাল, নিখুঁত ও সংশয়মুক্ত- যেন বিশ্বাসীর যাপিত জীবনের প্রতিটি পদক্ষেগে রচিত হয় তার বাস্তব ও কর্মময় সাক্ষ্য।

এ তিনটি মৌলিক শিক্ষা আত্মস্থ করেই আরবের আইয়্যামে জাহেলিয়াতের অসভ্য মানুষগুলো এমনভাবে পরিবর্তিত হয়েছিলেন। যার দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত ধরাধামে আর কখনও পরিলক্ষিত হয়নি, আর সততা ইনসাফ ও বীরত্বে, মানবপ্রেম ও সৌহার্দ্য, সাধনায়-কৃচ্ছ্রতায়, ন্যায় প্রতিষ্ঠায় ও অন্যায় প্রতিরোধে, ত্যাগ ও সর্বমানবিক মমতা ও দায়িত্ববোধে উদ্দীপিত এসব সোনার মানুষই ছিলেন সর্বকালের সর্বশেষ্ঠ মানুষ।

পাপের আবিলতা থেকে মুক্ত থাকা
মানুষের স্বঘোষিত প্রকাশ্য শত্রু ইবলিসের প্রতারণার বিভ্রম যেহেতু সর্বক্ষণ তাকে ঘিরে রেখেছে, সেহেতু মানব প্রকৃতিতে পাপের প্রবণতা থাকা খুবই স্বাভাবিক। প্রবৃত্তি, সমাজ, পারিপার্শ্বিকতা ও প্রযুক্তির অপব্যবহার তাকে অধিকতর উৎসাহ জোগায় পাপের পঙ্কিল নর্দমায় সাঁতার কাটতে। এভাবে অব্যাহত পাপের কৃষ্ণথাবা মানুষের শ্বেতশুভ্র অন্তর্লোকে সৃষ্টি করে তমসাচ্ছন্ন মতিভ্রম। ফলে আসমানি গজবের নিরন্তর তরঙ্গপ্রবাহ মানবজীবনে বয়ে আনে ধ্বংসের তাণ্ডবনৃত্য। তাই যাবতীয় বালা-মুসিবত থেকে মুক্তিলাভের জন্য আমাদের পাপমুক্ত জীবন গড়ার প্রত্যয়ে কঠোর প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করতে হবে।

মুসিবত উত্তরণে সাধারণ করণীয় বিষয়
অন্যান্য বালা-মুসিবত উত্তরণে জরুরি যে বিষয়গুলো আমাদের গুরুত্বের সাথে স্মরণ রাখতে হবে সেগুলো হচ্ছে-

অন্তরে সাহস রাখা
বালা-মুসিবতের সময় গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য অন্তরে সাহস রাখা এবং মেজাজ স্থির রাখা। বিপদে ধৈর্যহারা হয়ে বিভিন্ন প্রকার শিরক কিংবা কুফরিসুলভ কথাবার্তা বললে, তা কখনোই বিপদ-আপদকে লাঘব করে না, বরং জিল্লতির মাত্রাকে বৃদ্ধি কারে দেয় শতগুণ!

হতাশ না হওয়া
বিপদ এবং মুসিবতে কোনোপ্রকার হতাশায় আক্রান্ত না হয়ে আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী থাকাই প্রত্যেক মুমিনের দায়িত্ব। কেননা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া কবিরা গোনাহ আর কোনো মানুষের জন্য শোভন কিংবা সমীচীন নয়, তার প্রতিপালকের করুণা থেকে হতাশায় নিপতিত হওয়া। কোরআন মাজিদে আশাব্যঞ্জক ভঙ্গিতে যেভাবে বিঘোষিত হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।’ -সুরা যুমার : ৫৩

সুরা আলমনাশরাহে আল্লাহ পাক প্রদান করেছেন প্রশান্তিদায়ক প্রতিশ্রুতির কথা, ‘কষ্টের সঙ্গেই তো স্বস্তি আছে। নিশ্চয়ই কষ্টের সঙ্গেই আরাম আছে।’ -আয়াত : ৫-৬

মহানবীর হাদিস শরিফেও আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে যাওয়াকে সর্বাপেক্ষা বড় গোনাহ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। -মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক

তাই বালা-মুসিবতের সময় আমাদের হতে হবে আশাদীপ্ত হৃদয়ে কর্মমুখর।

আল্লাহর ওপর নিশ্চিন্তে ভরসা রাখা
যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে দুশ্চিন্তা তার জীবনে প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা প্রাণঘাতী মহামারিও তাকে উদ্বিগ্ন ও পেরেশান করতে সক্ষম হয় না। কেননা আল্লাহর ওপর নিশ্চিন্তে ভরসাস্থাপনকারী ব্যক্তি থাকে সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর কুদরতি জিম্মায়। ফলে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুলকারীর যাবতীয় উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বুদবুদের মতো মিলিয়ে যায়, তার দুঃখ পরিণত হয় আনন্দে আর অনিরাপত্তার স্থান দখল করে নিরাপত্তার অচ্ছেদ্যজাল। সুরা তালাকে সে অভয়বাণী যেভাবে উচ্চারিত হয়েছে, তা এরকম- ‘যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।’ -আয়াত : ৩

আল্লাহর জিকির
বালা-মুসিবত উত্তরণে উঠতে-বসতে, চলতে-ফিরতে আল্লাহর জিকির তথা আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহকে পরম শ্রদ্ধা ও যত্নে উচ্চারণ ও সেগুলো স্মরণ রেখেই যাবতীয় কাজকর্ম সম্পাদন করা একান্ত অপরিহার্য। পবিত্র কোরআনে যেমনটি ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি পরম করুণাময়ের জিকির থেকে বিমুখ থাকে, আমি তার জন্য এক শয়তানকে নিয়োজিত করে দিই। ফলে সে হয়ে যায় তার সাথী।’ -সুরা যুখরুফ : ৩৬

সুরা ত্বহায় বলা হয়েছে, ‘যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ থাকবে, তার জন্য হবে নিশ্চিত এক সংকুচিত জীবন।’ -আয়াত : ১২৪

জিকিরের মাধ্যমে অন্তরের প্রশান্তি অর্জিত হয়, বিপদ-আপদ বিদূরিত হয়ে যায় আর প্রতিপ্রাপ্য হয় মহান প্রভুর পক্ষ থেকে নিরাপত্তা।

অর্থ : কষ্টের সঙ্গেই তো স্বস্তি আছে। নিশ্চয়ই কষ্টের সঙ্গেই আরাম আছে

 

কোরআন তেলাওয়াত
সর্বশেষ ও চূড়ান্ত আসমানি কিতাব কোরআন সুনিশ্চিতভাবে মানুষের জন্য শিফা ও রহমত। মানুষের দৈহিক ও আত্মিক আরোগ্য লাভের মাধ্যম। মহান আল্লাহপাক যেমনটি বলেছেন, ‘আমি কোরআনে যা কিছু নাজিল করেছি, যা মুমিনদের জন্য শিফা ও রহমত!’ -সুরা বনী ইসরাঈল : ৮২

মুসিবতের রাহুথাবায় জীবনের পথপরিক্রমা সংকীর্ণ হয়ে গেলে কিংকর্তব্যবিমুঢ় পথহারাকে এই কোরআনই বাতলে দেয় সঠিক পথের দিশা। তাই বালা-মুসিবতের সময় অধিকহারে অর্থসহ কোরআন তেলাওয়াত খুবই ফলদায়ক ও তাৎপর্যবাহী।

একাকিত্ব পরিহার এবং সৎসঙ্গ অন্বেষণ
মুসিবতের সময় একাকিত্ব পরিহার করে নেক্কার ও বুদ্ধিদীপ্ত সঙ্গীর সঙ্গে সময় কাটানো একান্ত অপরিহার্য। কেননা, নিঃসঙ্গ মানুষকে চিরশত্রু শয়তান সহজে ধোঁকা দিতে পারে। ফলে ইবলিশি কূহকে পড়ে বিপদমুক্তির আশায় অধিকতর বিপদের ধ্বংস-গহ্বরে নিমজ্জিত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।

অধিকহারে দান-সদকা
হজরত রাসুলে মকবুল (সা.) বলেছেন, ‘গোপনে দান প্রতিপালকের ক্রোধকে নির্বাপিত করে।’ –তাবরানি

তিনি চন্দ্রগ্রহণের সময় নামাজ, দাসমুক্তি, বেশি বেশি জিকির এবং দান-সদকা করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। কেননা এসব কাজ বালা-মুসিবত থেকে পরিত্রাণ লাভের মাধ্যম। হাফেজ ইবনুল কায়্যিম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিভিন্ন প্রকার বালা-মুসিবত প্রতিরোধে দান-সদকার তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব রয়েছে, যদিও দানকারী পাপী, অত্যাচারী; এমনকি ছোটখাটো কুফরিকারীও হয়।’

নফল নামাজ
হজরত রাসুলে কারিম (সা.) কোনো বিষয়ে চিন্তাগ্রস্ত বা পেরেশান থাকলে নামাজে নিমগ্ন হতেন বলে আবু দাউদ শরিফে বর্ণিত হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি। আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামও বিপদে নিপতিত হলে নামাজে মনোযোগী হতেন বলে বিশ্বনবীর আরেকটি বর্ণনা থেকে অবগত হওয়া যায়। মহাগ্রন্থ আল কোরআনেও বালা-মুসিবত উত্তরণে নামাজ আদায়ের তাকিদ দিয়ে বলা হয়েছে, ‘তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য কামনা করো।’ -সুরা বাকারা : ৪৫

ধৈর্যশীল হওয়া
বালা-মুসিবতে ধৈর্যধারণকারীদের জন্য মহাপ্রতিদানের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআনে কারিমের নব্বই স্থানে সবরের কথা আলোচনা করেছেন। সুরা বাকারার ১৫৩ নম্বর আয়াতে তিনি বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ্ ধৈর্য অবলম্বনকারীদের সঙ্গে আছেন।’

মহানবী (সা.) এক বর্ণনায় সবরকে ‘জ্যোতি’ হিসেবে এবং আরেক হাদিসে ধৈর্যের বিনিময় ‘জান্নাত’ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা ধৈর্যের চেয়ে উৎকৃষ্ট এবং ব্যাপকতর দান কাউকে দেননি।’ –সুনানে আবু দাউদ

হজরত আলী (রা.)-এর মতে, ‘ঈমানের ক্ষেত্রে সবরের উপমা হলো- দেহের মধ্যে মাথার ন্যায়, যার ধৈর্য নেই, তার ঈমান নেই।’

আমলে সালেহ করা
বিভিন্ন নেক আমলের মাধ্যমে মহামহিম স্রষ্টার নিকট বিপদ দূরীকরণের জন্য বিনীত প্রার্থনা উপস্থাপন করাও মুসিবত উত্তরণে সবিশেষ ফলদায়ক বলে হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায় পাওয়া যায়। পবিত্র কোরআনেও বিভিন্নভাবে আমলে সালেহর মাধ্যমে বিপদমুক্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। যেমন সুরা আরাফে বলা হয়েছে, ‘অবশ্যই আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের অতীব নিকটবর্তী।’ -আয়াত : ৫৬

নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘সৎকর্ম সম্পাদন বালা-মুসিবত, বিপদাপদ ও জিল্লতি থেকে রক্ষার মাধ্যম।’ -আত তারগিব

দোয়া 
বিপদ-আপদে তো অবশ্যই, যেকোনো প্রয়োজনে, প্রতি মুহূর্তে মানুষ তার মহান প্রতিপালকের নিকট কাতর প্রার্থনা জানাবে- এ তো খুবই স্বাভাবিক কথা। আল্লাহতায়ালা এই ধরনের আর্তিকে যে বিশেষ পছন্দ করেন, সেটাও হাদিসের বর্ণনা থেকে আমরা অবগত হতে পারি। কিন্তু সংকট উত্তরণের বিজ্ঞানসম্মত পন্থা কিংবা কার্যকর কর্মপদ্ধতি এড়িয়ে শুধু দোয়া-মোনাজাতের শিক্ষা নবী কারিম (সা.) দেননি। কেননা সংকট উত্তরণে যথাযথ উপায় অন্বেষণে অনিচ্ছুক অকর্মণ্য মানুষের প্রার্থনা মহান আল্লাহর দরবারে কোনো আবেদন জাগায় না। দৃষ্টান্ত হিসেবে আমরা মহানবীর নেতৃত্বে সংঘটিত সর্বাত্মক সশস্ত্র যুদ্ধগুলোর কথা এ প্রসঙ্গে স্মরণ করতে পারি। সেসব যুদ্ধে সৈন্যসংখ্যা কিংবা অস্ত্রশস্ত্র সবদিক দিয়ে কয়েকগুণ পিছিয়ে থেকেও মুসলিম সৈন্যদলের সিপাহশালার বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তার সৈন্যদলকে অমিতবিক্রমে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করতেন, তারপরই আল্লাহর দরবারে হতেন ফরিয়াদমুখর। সুতরাং বিপদাপদে আমাদেরও বাস্তবসম্মত, কার্যকর ও বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থা গ্রহণের পরই মহান প্রভুর দরবারে আকুল আকুতি জানাতে হবে।

পাশাপাশি এ কথাও গভীর প্রতীতী রাখতে হবে যে, সমগ্র বিশ্ববাসীর সম্মিলিত কর্মপ্রচেষ্টাও বিফল, ব্যর্থ হতে বাধ্য যদি তাতে মহান প্রভুর ইশারা না থাকে। সুতরাং আমাদের গৃহীত শত পদক্ষেপও ফলশূন্য হতে পারে, যদি আমরা বিপদ-আপদে রাব্বে কারিমের দরবারে আকুতিমুখর ধরনা না দিই।

   

ঈমানের স্বাদ ও মিষ্টতা কী?



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ঈমানের স্বাদ সবাই আস্বাদন করতে পারে না, ছবি : সংগৃহীত

ঈমানের স্বাদ সবাই আস্বাদন করতে পারে না, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, হজরত জিবরাইল (আ.) রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, এবার আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন, রাসুল (সা.) বললেন, ‘ঈমান হলো, তুমি ঈমান রাখবে আল্লাহর প্রতি, তার (আল্লাহর) ফেরেশতাদের প্রতি, তার কিতাবসমূহের প্রতি, তার রাসুলদের প্রতি এবং শেষ দিবসের (কেয়ামত) প্রতি। (এবং) তুমি ঈমান রাখবে তাককিরের ভালো-মন্দের প্রতি।’ হজরত জিবরাইল (আ.) বললেন, আপনি সত্য বলেছেন। -সহিহ মুসলিম : ৮

ঈমানের স্বাদ
হজরত আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী কারিম (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করবে ওই ব্যক্তি, যে আল্লাহকে রবরূপে, ইসলামকে দ্বীনরূপে এবং মুহাম্মাদ (সা.)-কে রাসুলরূপে সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করবে। -সহিহ মুসলিম : ৩৪

সুস্বাদু খাদ্যের স্বাদ সেই বুঝতে পারে যার জিহ্বায় স্বাদ আছে। রোগ-ব্যাধির কারণে নষ্ট হয়ে যায়নি। তদ্রূপ ঈমান ও যাবতীয় আমলের স্বাদও ওই খোশনসিব ব্যক্তিই অনুভব করে, যে সম্পূর্ণ সন্তুষ্টিচিত্তে ও সর্বান্তকরণে আল্লাহকে রব ও পরওয়ারদিগার এবং মুহাম্মদ (সা.)-কে রাসুল ও আদর্শ এবং ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন ও জীবন ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করে।

আল্লাহতায়ালা, নবী মুহাম্মদ (সা.) ও ইসলামের সঙ্গে যার সম্পর্ক কেবলই বংশগত ও প্রথাগত বা কেবলই চিন্তাগত ও বুদ্ধিগত পর্যায়েই নয় বরং সে আল্লাহর বন্দেগি, মুহাম্মদ (সা.)-এর আনুগত্য এবং ইসলামের অনুসরণকে মনেপ্রাণে নিজের জীবনে গ্রহণ করে নেবে। সেই ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারবে। -মাআরিফুল হাদিস : ১/৯১

ঈমানের মিষ্টতা
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, তিনটি গুণ যার মধ্যে থাকবে সে ঈমানের মিষ্টতা অনুভব করবে। আল্লাহ ও তার রাসুল তার কাছে সবকিছু থেকে অধিক প্রিয় হওয়া, কাউকে ভালোবাসলে শুধু আল্লাহরই জন্য ভালোবাসা, আর কুফুরিতে ফিরে যাওয়াকে এমন ঘৃণা করা, যেমন সে ঘৃণা করে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে। -সহিহ বোখারি : ১৬

এই হাদিসের বিষয়বস্তুও আগের হাদিসের বিষয়বস্তুর প্রায় কাছাকাছি। উপস্থাপনায় কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। এই হাদিসে বলা হচ্ছে, ঈমানের মিষ্টতা ওই ব্যক্তিই অনুভব করতে পারবে, যে আল্লাহ ও তার রাসুলের ভালোবাসায় পরিপূর্ণ সমর্পিত থাকবে; আল্লাহ ও তার রাসুলকে জগতের সবকিছু থেকে বেশি ভালোবাসবে। অন্য কারও প্রতি যদি তার ভালোবাসা হয়, তা হবে সম্পূর্ণ এই ভালোবাসার অধীন। আর ইসলাম তার এতই প্রিয় যে, ইসলাম থেকে ফিরে যাওয়া, কুফুরিতে লিপ্ত হওয়া তার কাছে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার সমতুল্য। -মাআরিফুল হাদিস : ১/৯১

;

মসজিদ নির্মাণ করবে দাউদ কিম

কোরিয়ার প্রতিটি গলি থেকে ভেসে আসবে আজানের সুর



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
জমি কেনার দলিল হাতে দাউদ কিম, ছবি : সংগৃহীত

জমি কেনার দলিল হাতে দাউদ কিম, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কয়েক বছর আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী দক্ষিণ কোরিয়ান ইউটিউবার দাউদ কিম মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। এরই মধ্যে মসজিদের জন্য জমিও কিনেছেন তিনি। ইনস্টাগ্রামে ওই জমি ও তার দলিলের ছবি শেয়ার করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক এই নওমুসলিম। তিনি দেশটির ইঞ্চোন শহরে মসজিদটি নির্মাণ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন।

ইনস্টাগ্রামে কিম লিখেছেন, ‘অবশেষে আপনাদের সাহায্যে আমি ইঞ্চোনে মসজিদ নির্মাণের জন্য জমি ক্রয়ের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছি। খুব শিগগিরই জায়গাটিতে মসজিদ নির্মিত হবে। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না আমার এই স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে।’

ওই পোস্টে তিনি আরও লেখেন, ‘ওই জমিতে মসজিদের পাশাপাশি একটি ইসলামিক পডকাস্ট স্টুডিও তৈরির ইচ্ছা আমার। সত্যি এটি একটি দুঃসাহসিক পদক্ষেপ, এতে বহু সমস্যার সম্মুখীন হওয়া লাগতে পারে। তবে আমার বিশ্বাস- আমি এগুলো সম্পন্ন করতে সক্ষম হব।’

দাউদ কিম আশাবাদ ব্যক্ত করে লিখেছেন যে, ‘এমন একটি দিন আসবে, যেদিন কোরিয়ার প্রতিটি গলি আজানের সুমধুর ধ্বনিতে ভরে উঠবে। এ জন্য আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

কিম ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন। এরপর ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে তিনি সারাবিশ্বে বিখ্যাত বনে যান। জনপ্রিয় এই ইউটিউবার তার নিয়মিত ব্লগে ইসলামিক বিভিন্ন কনটেন্ট, নামাজ পড়ার ভিডিওসহ নানা কিছুই পোস্ট করে থাকেন। ২০২২ সালে কিম বাংলাদেশ ভ্রমণ করেন। বাংলাদেশ ঘুরে তিনি পবিত্র উমরা পালন করতে সৌদি আরব যান।

দক্ষিণ কোরিয়ার এই গায়ক ইউটিউবিং করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ান। ঘুরতে ঘুরতে তিনি ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও তিউনিশিয়া যান। দেশগুলোতে গিয়ে ইসলাম ধর্মকে কাছ থেকে দেখে ও বুঝে তিনি আকৃষ্ট হন। ইসলামের জীবনবিধান দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে পুরোপুরি মুসলমান হয়ে যান।

দক্ষিণ কোরিয়া উত্তর-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ। যা কোরিয় উপদ্বীপের দক্ষিণ অংশ নিয়ে গঠিত। সিউল দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম শহর ও রাজধানী। সিউল বিশ্বের শীর্ষ ১০টি ধনী শহরের তালিকায় থাকা একটি শহর।

দক্ষিণ কোরিয়ায় ইসলামের উপস্থিতি খুবই সামান্য। ২০০৫ সালেও দেশটির আদমশুমারিতে মুসলিমদের কোনো বিভাগের সদস্য হিসেবে ধরা হত না। বর্তমানে দেশটিতে ২ লাখ মুসলিম রয়েছে, যাদের বেশিরভাগ বিভিন্ন মুসলিম প্রধান দেশ থেকে আসা অভিবাসী এবং কিছু ধর্মান্তরিত বাসিন্দা। দেশটিতে ২১টি মসজিদ, ১৩টি ইসলামিক সেন্টার ও ১৪০টির মতো নামাজের স্থান রয়েছে।

১৯৬৯ সালে কোরিয়ান সরকার প্রদত্ত জমিতে গড়ে ওঠে সিউল কেন্দ্রীয় মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার। সিউল সেন্ট্রাল মসজিদ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম মসজিদ। যা হেনামডং সিউলে অবস্থিত। মসজিদটি ইতিমধ্যে বিশ্বের অনন্য সুন্দর মসজিদ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে।

;

তীব্র গরম মুমিনকে যা শিক্ষা দেয়



মাওলানা ফখরুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম
গরম থেকে বাঁচতে ফুটপাতের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মাথায় পানি দিচ্ছেন, ছবি : রাজু আহমেদ

গরম থেকে বাঁচতে ফুটপাতের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মাথায় পানি দিচ্ছেন, ছবি : রাজু আহমেদ

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে এখন চলছে গ্রীষ্মকাল। ফলে তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। বস্তুত শীত, গরম, রোদ, বৃষ্টি সবই আল্লাহর দেওয়া। তীব্র শীত আর প্রচণ্ড গরমে রয়েছে মুমিনে জন্য শিক্ষা। জনজীবন অতিষ্ট হওয়া গরম আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর আজাবের কথা। তাই তীব্র তাপদাহের সময় দয়াময় আল্লাহতায়ালার কাছে বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার করা জরুরি।

পৃথিবীতে ইসলামই একমাত্র ধর্ম, যেখানে মানবতার কল্যাণ সাধনকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। ফলে তীব্র গরমের সময় ইবাদত-বন্দেগি সহজ করেছে ইসলাম। হজরত আবু জার (রা.) বলেন, এক সফরে আমরা আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম।
এক সময় মোয়াজ্জিন জোহরের আজান দিতে চেয়েছিল। তখন নবী কারিম (সা.) বলেন, গরম কমতে দাও। কিছুক্ষণ পর আবার মোয়াজ্জিন আজান দিতে চাইলে নবী কারিম (সা.) পুনরায় বলেন, গরম কমতে দাও।
এভাবে তিনি (নামাজ আদায়ে) এত বিলম্ব করলেন যে, আমরা টিলাগুলোর ছায়া দেখতে পেলাম।
এরপর নবী কারিম (সা.) বলেন, গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ হতে। কাজেই গরম প্রচণ্ড হলে উত্তাপ কমার পর নামাজ আদায় করো। -সহিহ বোখারি : ৫৩৯
বর্ণিত হাদিসের আলোকে বিধান হলো, অতীব গরমের সময় কিছুটা বিলম্ব করে জোহরের নামাজ আদায় করা সুন্নত।

গরমের সময় এমন কিছু আমল রয়েছে, যেগুলোর সওয়াব অনেক। একজন মুমিন সেসব আমল করে সহজেই আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারেন। ওই সব আমলের কয়েকটি হলো-

নফল রোজা
গরমের রোজা শীতের থেকে বেশি কষ্টকর। গরমের কষ্ট উপেক্ষা করে যদি নফল রোজা রাখা যায়, তাহলে আল্লাহতায়ালা বেশি নেকি দেবেন। সাহাবায়ে কেরাম ও পূর্ববর্তী বুজুর্গরা বেশি সওয়াবের আশায় গরমকালে রোজা রাখতেন।

পিপাসার্তকে পানি পান করানো
পিপাসার্তকে পানি পান করানো একটি উত্তম কাজ। আর যদি প্রচণ্ড গরমে কাউকে ঠাণ্ডা পানি পান করানো হয়, তাহলে তো কাজটি আরও উত্তম হবে। এক ব্যক্তি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করলেন, ‘কোন দান উত্তম? তিনি বললেন, ‘পানি পান করানো।’ -সুনানে নাসাই : ৫৪৫৬
ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, ‘তৃষ্ণার্তের তৃষ্ণা নিবারণ সর্বোত্তম মহৎ কাজের একটি।’
হাদিসের অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সদকা বা দান জাহান্নামের আগুন নির্বাপণ করে। আর পানি পান করানো উত্তম সদকা।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৭৪৩৫

নফল নামাজ
অতিরিক্ত গরম হলো- জাহান্নামের নিশ্বাস, তাই জাহান্নামের ভয়ে বেশি করে এবং লম্বা লম্বা সুরা দিয়ে নফল নামাজ আদায় করা উত্তম। হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন গরম বেশি পড়বে, তখন বেশি নামাজ আদায় করো। কারণ অতিরিক্ত গরম হলো- জাহান্নামের নিশ্বাস।’ -মেশকাত : ৫৯১

গরম থেকে শিক্ষা
গরমের তীব্রতা থেকে মুমিনের জন্য রয়েছে শিক্ষা। কেননা জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ পৃথিবীর আগুনের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি। তাই এ গরম থেকে জাহান্নামের তীব্রতা অনুমান করে গোনাহ থেকে মুক্ত থাকা। হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জাহান্নাম তার প্রতিপালকের কাছে এ বলে নালিশ করেছিল, হে আমার প্রতিপালক! (দহনের প্রচণ্ডতায়) আমার এক অংশ আরেক অংশকে গ্রাস করে ফেলছে। ফলে আল্লাহ তাকে দুইটি শ্বাস ফেলার অনুমতি দেন। একটি শীতকালে অপরটি গ্রীষ্মকালে। আর তাই তোমরা গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড উত্তাপ এবং শীতকালে তীব্র ঠাণ্ডা অনুভব করো।’ -সহিহ বোখারি : ৫৪৫৫

গ্রীষ্মকালকে গালমন্দ না করা
আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে, গরিবদের মাঝে সুমিষ্ট ফল বিতরণ করা। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করা। ঘামে ভেজা শরীরে জনসমাগমে গমন না করা। গরমের সময় প্রবাহিত ঘামের গন্ধ যেন অন্যের কষ্টের কারণ না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখা। গ্রীষ্মকালকে গালমন্দ না করা বিষয়টিও খেয়াল রাখার নির্দেশ দেয় ইসলাম।

বৃষ্টির জন্য নামাজ
প্রচণ্ড গরমে একপশলা বৃষ্টির জন্য মুমিনরা আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী। শস্য ফলানোসহ পশুপাখির খাবারের জন্য যেমন বৃষ্টি দরকার, তেমনি তীব্র তাপদাহে সৃষ্ট নানা জটিলতা ও কষ্ট থেকে মুক্তি পেতেও আল্লাহর রহমতের বৃষ্টি খুব প্রয়োজন। এমন পরিস্থিতিতে দয়াময় আল্লাহতায়ালার দরবারে বৃষ্টি কামনা করে নামাজ পড়া ও দোয়া করা সুন্নত। পরিভাষায় এই নামাজের নাম ‘ইসতিসকা’ বা বৃষ্টির নামাজ।

ইসলামের শিক্ষা হলো- সর্বাবস্থায় বান্দা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করবে। প্রচণ্ড গরমের সময়ও এর ব্যতিক্রম নয়। তীব্র তাপদাহের সময় মানুষের উচিৎ জাহান্নামের গরমের কথা স্মরণ করা। জাহান্নাম থেকে বাঁচতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষে আত্মনিয়োগ করা।

একটু শান্তির জন্য দুনিয়ার জীবনে গরমের কষ্ট ও তীব্রতা থেকে বাঁচার জন্য যদি আমরা সম্ভবপর সব উপায় অবলম্বন করতে পারি, তাহলে আখেরাতের আজাব ও ভয়াবহতা থেকে বাঁচার জন্য আমলদার এবং সাধনাকারী হওয়া জরুরি।

;

৪০ বছর ধরে মদিনায় বিনামূল্যে চা-কফি খাওয়ানো বৃদ্ধের মৃত্যু



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
চা-কফি নিয়ে বসে আছেন শায়খ ইসমাইল আল-জাইম আবু আল-সাবা, ছবি : সংগৃহীত

চা-কফি নিয়ে বসে আছেন শায়খ ইসমাইল আল-জাইম আবু আল-সাবা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র মদিনা জিয়ারতকারীদের অনেকের কাছে পরিচিত নাম শায়খ ইসমাইল আল-জাইম আবু আল-সাবা। গত ৪০ বছর ধরে তিনি পবিত্র হজ-উমরা পালনকারীদের মাঝে বিনামূল্যে চা, কফি, রুটি ও খেজুর বিতরণ করেছেন। অনেক বাংলাদেশি হাজি তার হাতে চা-কফি পান করেছেন।

সদাহাস্য সিরিয়ান এই নাগরিক মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) ৯৬ বছর বয়সে মদিনায় ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে হারামাইনের খবর সরবরাহকারী ভেরিফায়েড পেইজ ‘ইনসাইড দ্য হারামাইন’ এই খবর জানিয়ে তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে।

জানা যায়, প্রতিদিন ৪০টি ফ্লাস্কে করে চা-কফি আনতেন তিনি। এ জন্য একটি বিশেষ ট্রলি ব্যবহার করতেন, মসজিদে নববিতে যাওয়া অন্যতম পথ জায়েদিয়া এলাকায় বসতেন তিনি। সবুজ চা, লাল চাসহ নানা স্বাদের চা বানিয়ে আনতেন। থাকত চিনিযুক্ত, চিনিমুক্ত চা-কফি। এছাড়া এলাচযুক্ত চা, পুদিনা চা, বিভিন্নরকমের মশলাযুক্ত চা আনতেন।

তিনি রাস্তার পাশে বসে পথচারীদের মধ্যে চা, কফি, খেজুর, রুটি ও বিস্কুট বিনামূল্যে বিতরণ করতেন। এই কাজে তাকে সহযোগিতা করতেন ছেলেরা। কেউ কিছু দিতে চাইলে বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখান করতেন।

গত বছর সৌদি আরবের প্রভাবশালী পত্রিকা আল আরাবিয়া তাকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

সিরিয়ার নাগরিক শায়খ ইসমাইল প্রায় ৪০ বছর ধরে মদিনায় বসবাস করে আসছিলেন। মদিনার কুবা এভিনিউতে একটি সাধারণ বাড়িতে বসবাস করলেও নিজের সম্পদ পুরোটাই উৎসর্গ করেছিলেন হজ ও উমরা যাত্রীদের খেদমতে।

টানা চার দশক ধরে অনন্য এই সেবার কারণে সবার কাছে তিনি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার পাত্রে পরিণত হন। তার মৃত্যুতে মদিনায় শোকের ছায়া নেমে আসে। বাংলাদেশের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্মৃতিচারণের পাশাপাশি শোকপ্রকাশ করে তার জন্য দোয়া কামনা করেছেন।

;