নিন্দা ও অপ্রীতিকর সমালোচনায় করণীয়
দুনিয়ার স্বাভাবিক রীতি হলো, ভালো কোনো কাজ করতে গেলে, কোনো বিষয়ে কিছু অর্জন করলে, কোনো সাফল্য পেলে- তাকে শুধু শুধু সমালোচনা ও অপ্রীতিকর সমালোচনার শিকার হতে হয়। এটা অনেকটা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে সমালোচনা জবাব দেন, কেউ আবার চুপ থেকে নিজের কাজটি আপন মনে করে যান। উল্লেখিত পরিস্থিতিতে কী করতে হবে, এ বিষয়ে ইসলাম যুগান্তকারী পরামর্শ দিয়েছে।
ওই সব পরামর্শের আলোকে ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, যারা অজ্ঞ ও মূর্খ তারা সকল সৃষ্টির স্রষ্টা মহান আল্লাহকেও গালি দিয়েছে, সুতরাং আমরা সাধারণ লোকজনের কাছ থেকে কী আশা করতে পারি? আমরাতো ভুল-ভ্রান্তিতে নিমজ্জিত। আপনাকে সর্বদাই এমন তীব্র সমালোচনা ও নিন্দার অসমাপনীয় ঝড়ের মুখে পড়তে হবে- যার তীব্র আক্রমণ অন্তহীন যুদ্ধের মতো।
যখন আপনি উন্নতি করবেন, নিজেকে প্রকাশিত করবেন, নিজেকে উদ্ভাসিত করবেন এবং অন্যের ওপর প্রভাব বিস্তার করবেন, তখনই অগ্রাহ্য, অবজ্ঞা ও নিন্দা আপনার ভাগ্যে বরাদ্দ হবে, যে পর্যন্ত না আপনি ভূ-গর্ভস্থ সুরঙ্গ পথে কিংবা আকাশচুম্বী মইয়ে চড়ে জনগণ থেকে পালিয়ে যাবেন, সে পর্যন্ত তারা আপনার নিন্দা ও আপনার চরিত্রে দোষ-ক্রটি খোঁজা থেকে বিরত হবে না। সে কারণেই, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি মর্ত্যবাসী (যতদিন আপনি এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকবেন), ততক্ষণ পর্যন্ত আহত হওয়ার, (মানসিক আঘাত পাওয়ার) অপমানিত হওয়ার ও নিন্দিত হওয়ার প্রত্যাশা করুন। একটি বিষয় আপনাকে গভীরভাবে দেখতে হবে, আর তা হলো- মাটিতে বসে আছে এমন ব্যক্তি মাটিতে পড়ে যায় না। মানুষেরা মৃত কুকুরকে লাথি মারতে যায় না।
অতএব, ধাৰ্মিকতায়, বিদ্যা-বুদ্ধিতে, আচার-আচরণে ও ধন-সম্পদে উৎকর্ষতায় আপনি তাদেরকে ছাড়িয়ে যাওয়াতেই আপনার প্রতি তাদের ক্রোধ। যদি না আপনি আপনার সকল প্রতিভাকে বিসর্জন দিয়ে এবং নিজেকে সকল প্রশংসাযোগ্য গুণ হতে বঞ্চিত করে- নির্বোধ, অথর্ব, তুচ্ছ, নগণ্য, মূল্যহীন ও তাদের নিকট নির্বিঘ্ন, অনুপকারী, অক্ষতিকর ও গোবেচারা হয়ে যান তবে তাদের দৃষ্টিতে আপনি এমন এক সীমালঙ্ঘনকারী ও পাপী- যার ভুলের ও পাপের প্রায়শ্চিত্ত করা যায় না। তারা আপনার জন্য ঠিক এ সমাধানই আকাঙ্ক্ষা করে।
তাই তাদের অপমান ও নিন্দার মুখে ধৈর্যশীল হয়ে থাকুন। যদি আপনি তাদের কথায় মর্মাহত হন এবং তাদেরকে আপনার ওপর প্রভাব বিস্তার করতে সুযোগ দেন, তবে আপনার জন্য তারা কী চায় তা আপনি বুঝতে পারবেন। তাদের কথায় আপনি আহত, বিব্রত ও রাগান্বিত হলে আপনারই ক্ষতি হবে। আর তারা এটাই চায় যে, আপনি ক্রুদ্ধ, রুষ্ট ও ব্যথিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হোন। তার বদলে (রাগান্বিত না হয়ে), তাদের প্রতি সবচেয়ে সুন্দর আচরণ প্রদর্শনের মাধ্যমে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন। তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন এবং তাদের ফন্দির (চক্রান্তের) কারণে যাতনাবোধ করবেন না। আপনার প্রতি তাদের অবজ্ঞা শুধুমাত্র আপনার মূল্য ও গুণই বৃদ্ধি করে।
আপনি অবশ্যই তাদের মুখ বন্ধ করতে পারবেন না, কিন্তু তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে তাদের যা বলার আছে তা অগ্রাহ্য করে তাদের নিন্দা ও সমালোচনাকে আপনি কবর দিতে (স্মৃতির পাতা হতে মুছে ফেলতে বা ভুলে যেতে) পারবেন। কোরআনে কারিমের ভাষায়, ‘বলুন, তোমাদের আক্রোশে তোমরাই মরো।’ -সুরা আলে ইমরান : ১১৯
প্রকৃতপক্ষে, আপনার গুণাবলিকে বাড়িয়ে এবং আপনার প্রতিভাকে উন্নত করে আপনি তাদের ক্রোধকে বর্ধিত করতে সক্ষম হবেন। আপনার উন্নতিতে ঈর্ষাকারীরা ক্রুব্ধ হবে, ফলে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে; আর এভাবেই- নিজেকে উন্নত করে তাদেরকে ক্রুব্ধ পরিণামে ক্ষতিগ্রস্ত করে, আপনি তাদের প্রতিশোধ নিতে পারেন। আপনি যদি সবার নিকট গৃহীত হতে চান ও সবার ভালোবাসা পেতে চান, তবে আপনি এমন জিনিস পেতে চান যা পাওয়া অসম্ভব। মনে রাখতে হবে, সবার ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা পেতে চাইলেও তা আপনি পাবেন না।