যাদের জন্য ফেরেশতারা মাগফিরাতের দোয়া করেন

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নামাজের পর নামাজের স্থানে বসে থাকা লোকদের জন্য ফেরেশতারা মাগফিরাতের দোয়া করেন

নামাজের পর নামাজের স্থানে বসে থাকা লোকদের জন্য ফেরেশতারা মাগফিরাতের দোয়া করেন

এমন কিছু আমল রয়েছে, যেগুলোর কারণে ফেরেশতারা মাগফিরাতের দোয়া করে। আর ফেরেশতাদের দোয়া আল্লাহতায়ালা কবুল করবেন- এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং এ সব আমলের দ্বারা মাগফিরাতের আশা করা যায়। কাজেই এ আমলগুলোর প্রতি যত্নবান হওয়া দরকার। যেন রাব্বে কারিমের ক্ষমা লাভ করতে পারি।

নামাজের পর নামাজের স্থানে বসে থাকা
যে সব আমলের কারণে ফেরেশতারা মাগফিরাতের দোয়া করে এর মধ্যে অন্যতম হলো- নামাজের পর অজু অবস্থায় নামাজের স্থানে (কিংবা মসজিদে) বসে থাকা। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘কোনো ব্যক্তি নামাজের পর নামাজের স্থানে যতক্ষণ পবিত্র অবস্থায় বসে থাকে, ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে; তারা বলে- আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দাও, তার প্রতি দয়া কর।’ –সহিহ বোখারি : ৪৪৫

বিজ্ঞাপন

এক নামাজের পর আরেক নামাজের অপেক্ষায় মসজিদে অবস্থান
এক নামাজের পর আরেক নামাজের অপেক্ষায় মসজিদে অবস্থান করা অনেক বড় ফজিলতের বিষয়। এটি আল্লাহতায়ালার কাছে অনেক পছন্দনীয় আমল; এমন পছন্দনীয় যে, আল্লাহতায়ালা ফেরেশতাদের সঙ্গে তার ওই বান্দাদের বিষয়ে গর্ব করেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, একবার আমরা হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে মাগরিবের নামাজ আদায় করলাম। নামাজের পর যারা বাড়িতে ফেরার ফিরে গেল, কিন্তু কিছু মানুষ এশার নামাজের অপেক্ষায় মসজিদেই থেকে গেল। এরই মধ্যে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাঁপাতে হাঁপাতে কাপড় গুটিয়ে দ্রুত তাশরিফ আনলেন। বললেন, তোমরা (যারা আরেক নামাজের অপেক্ষায় মসজিদে অবস্থান করছ তারা) সুসংবাদ গ্রহণ কর। তোমাদের রব আসমানের বিশেষ এক দরজা উন্মুক্ত করেছেন। তিনি তোমাদের নিয়ে তার ফেরেশতাদের সঙ্গে গর্ব করে বলছেন, তোমরা দেখ আমার বান্দাদের! তারা এক ফরজ (নামাজ) আদায়ের পর আরেক ফরজ (নামাজ) আদায়ের অপেক্ষায় রয়েছে।’ -সুনানে ইবনে মাজাহ : ৮০১

এ থেকেই বোঝা যায়, এক নামাজের পর আরেক নামাজের অপেক্ষায় মসজিদে অবস্থান আল্লাহর কাছে কত প্রিয় আমল। আর এ আমলের কারণে ফেরেশতারাও মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনো ব্যক্তি এক নামাজের পর যতক্ষণ আরেক নামাজের অপেক্ষায় (মসজিদে) থাকে সে নামাজে রয়েছে বলেই গণ্য হয়; যতক্ষণ সে পবিত্র অবস্থায় থাকে। আর ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে; ফেরেশতারা বলেম, হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করে দাও, তার প্রতি দয়া কর। -সহিহ মুসলিম : ৬৪৯

বিজ্ঞাপন

পবিত্র অবস্থায় রাত্র যাপন
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় অজু করে ঘুমানো উচিত। এ ব্যাপারে হাদিস শরিফে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। একবার নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারা ইবনে আযেব (রা.)-কে বললেন, যখন তুমি ঘুমানোর জন্য বিছানায় যাও তখন নামাজের অজুর মতো অজু কর। অতপর ডান কাত হয়ে শোও। -সহিহ বোখারি : ২৪৭

পবিত্র অবস্থায় রাত্র যাপনের ফজিলতের কথা অন্য আরও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। এর মাধ্যমে ফেরেশতাদের দোয়া পাওয়া যায় এবং মাগফিরাত লাভ হয়। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায় রাত্র যাপন করে একজন ফেরেশতা তার শিয়রে অবস্থান করে। যখনই সে জাগ্রত হয় ফেরেশতা বলে, আল্লাহ আপনি আপনার (অমুক) বান্দাকে মাফ করে দিন; সে পবিত্র অবস্থায় রাত্র যাপন করেছে। -সহিহ ইবনে হিব্বান : ১০৫১

ফজর ও আসরের নামাজ জামাতে আদায়
ফজরের নামাজ হলো দিনের শুরুর নামাজ আর আসরের নামাজ হলো- দিনের শেষ নামাজ। আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে রাতে নিযুক্ত ফেরেশতারা ফজরের সময় আসমানে উঠে যায়। আর দিনের ফেরেশতারা ফজরের সময় আগমন করে। তেমনি দিনে নিযুক্ত ফেরেশতারা আসরের পর আসমানে চলে যায় আর রাতে নিযুক্ত ফেরেশতারা আগমন করে। দিনের ফেরেশতারা ফজরের সময় এসে আল্লাহর কিছু বান্দাদের নামাজরত দেখে। তেমনি আসরেও তাদেরকে নামাজরত দেখে। অর্থাৎ তাদের আগমন এবং যাওয়ার সময় আল্লাহর কিছু বান্দাদের নামাজরত দেখে। তেমনি রাতের ফেরেশতারাও। তখন তারা আল্লাহর কাছে সেভাবেই রিপোর্ট পেশ করে এবং তাদের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করে।

বিষয়টি হাদিস শরিফে এভাবে বিবৃত হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, রাতে নিযুক্ত ফেরেশতারা এবং দিনে নিযুক্ত ফেরেশতারা ফজর ও আসরের নামাজে একত্রিত হয়। ফজরের সময় রাতের ফেরেশতারা আসমানে চলে যায় এবং দিনের ফেরেশতারা কাজে যোগ দেয়। তেমনি আসরের সময় দিনে নিযুক্ত ফেরেশতারা আসমানে চলে যায় আর রাতের ফেরেশতারা কাজে যোগ দেয়। আসমানে গেলে তাদের রব তাদের জিজ্ঞাসা করেন, আমার বান্দাদের কী অবস্থায় দেখে এসেছ? তখন তারা উত্তরে বলে, আমরা যখন গিয়েছি তখন তাদের নামাজরত দেখেছি। আবার যখন ফিরেছি তখনও নামাজরত দেখেছি। সুতরাং হে রব! আপনি কেয়ামতের দিন তাদের ক্ষমা করে দিন। -সহিহ ইবনে খুজায়মা : ৩২২

রুগি দেখতে যাওয়া
রুগি দেখতে যাওয়া, রুগির সেবা-শুশ্রুষা করা অনেক বড় ফজিলতের কাজ। এটা এক মুসলিমের ওপর অপর মুসলিমের হকও বটে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, এক মুসলিমের ওপর অপর মুসলিমের ছয়টি হক রয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, কী সেই হকগুলো? তখন হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন তার সঙ্গে দেখা হবে সালাম দেবে। দাওয়াত করলে দাওয়াত কবুল করবে। তোমার কাছে উপদেশ-পরামর্শ চাইলে কল্যাণকামিতার সঙ্গে উপদেশ-পরামর্শ দেবে। হাঁচির পর আলহামদুলিল্লাহ বললে এর জবাব দেবে (ইয়ারহামুকাল্লাহ বলে)। যখন অসুস্থ হবে তাকে দেখতে যাবে, শুশ্রুষা করবে। মৃত্যুবরণ করলে জানাজা ও দাফনে শরিক হবে। -সহিহ মুসলিম : ২১৬২

রুগি দেখতে যাওয়ার সবচেয়ে বড় ফজিলত হলো, এর দ্বারা গোনাহ মাফ হওয়ার আশা করা যায়। সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য ইস্তেগফার করতে থাকে। হজরত হাসান ইবনে আলি (রা.) অসুস্থ হলে হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) একবার তাকে দেখতে গেলেন। তখন হজরত আলী (রা.) বললেন, আপনি কি বেড়ানোর উদ্দেশে এসেছেন, নাকি রুগি দেখতে এসেছেন? তখন তিনি উত্তরে বললেন, বরং রুগি দেখতে এসেছি। তখন হজরত আলী (রা.) বললেন, আমি হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, কেউ যদি সকালে কোনো অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজ-খবর নিতে যায় তার সঙ্গে সত্তর হাজার ফেরেশতা সঙ্গ দেয় এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য ইস্তেগফার করতে থাকে এবং জান্নাতে তার একটি বাগান লাভ হয়। আর যদি সন্ধ্যায় রুগি দেখতে যায় তাহলে সত্তর হাজার ফেরেশতা তার সঙ্গ দেয় এবং সকাল পর্যন্ত তার জন্য ইস্তেগফার করতে থাকে। আর জান্নাতে সে একটি বাগানের অধিকারী হয়। -মুসনাদে আহমাদ : ৯৭৫