ইসলামের দৃষ্টিতে বন্ধুত্ব
মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে বন্ধুত্বের গুরুত্ব অপরিসীম। আরবিতে বন্ধুকে বলা হয়- ‘খলিল’। বন্ধুত্ব এমন একটি সামাজিক বন্ধন, যা মানুষকে আত্মার বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখে। বন্ধুত্বের সর্ম্পক প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বিভিন্নভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন।
হাদিসে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সৎ এবং পরহেজগার বন্ধু নির্বাচনে উৎসাহিত করেছেন। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর ঈমানদার পুরুষ এবং ঈমানদার একে অপরের বন্ধু। তারা ভালো কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। নামাজ প্রতিষ্ঠিত করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও রাসুলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন-যাপন করে। তাদের ওপর আল্লাহ অনুগ্রহ করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী সুকৌশলী।’ -সুরা আত তওবা : ৭১
যেহেতু মানুষ বন্ধু ছাড়া চলতে পারে না; সেহেতু বন্ধু গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। এমন ব্যক্তিকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে হবে, যারা ঈমানদার, ধর্মপ্রাণ, সত্যবাদী, সদাচারী, সৎকাজে অভ্যস্ত এবং নীতিবান।
বিভিন্ন কারণে মানুষের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। কিন্তু আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের ভিত্তিতে যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে সে বন্ধুত্ব সবচেয়ে মজবুত হয়। অপরদিকে নিজের স্বার্থের জন্য উপকার লাভের আশায়, ক্লাব সদস্যের ভিত্তিতে, সামাজিক শ্রেণি ও জাতিগত পরিচিতির ভিত্তিতে যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তা বেশিদিন টেকে না। এ সব ক্ষেত্রে কারও স্বার্থে আঘাত লাগলেই নষ্ট হয়ে যায়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কাউকে ভালোবাসলো, তো আল্লাহর জন্যই ভালোবাসলো, কাউকে ঘৃণা করলো তো আল্লাহর জন্যই ঘৃণা করলো, কাউকে কিছু দিলো তো আল্লাহর জন্যই দিল এবং কাউকে দেওয়া বন্ধ করলো তো আল্লাহর জন্যই দেওয়া বন্ধ করলো, তবে সে তার ঈমানকে পূর্ণ করলো।’ –মিশকাত
ইসলামি স্কলারদের মতে, যারা মহান আল্লাহর প্রেমে পরস্পরকে ভালোবাসে, তার খাতিরে সমবেত হয়, পরস্পরের খবরাখবর নেয় ও পারস্পরিক যোগাযোগ বহাল রাখে, আল্লাহর ভালোবাসাই তাদেরই প্রাপ্য।
ইসলামের দৃষ্টিতে উপযুক্ত লোকদের সঙ্গেই বন্ধুত্ব করা উচিত এবং সারাজীবন ওই বন্ধুত্ব অটুট রাখার জন্য চেষ্টা করা উচিত। যে বন্ধুত্ব আমাদের জীবনের আমূল পরিবর্তন করে দেয়, যে বন্ধুত্ব ছাড়া আমাদের চলা সম্ভব নয়, সে বন্ধুত্ব লালনের জন্য কোরআন ও হাদিসে নির্দেশনা রয়েছে।
শুধুমাত্র আল্লাহর আনুগত্য লাভের আশায় সব বিশ্বাসীকে ভালোবাসা। বেহেশতের সুসংবাদ ওই ব্যক্তির জন্য রয়েছে, যে অন্য সব উদ্দেশ্য বাদ দিয়ে শুধুমাত্র বন্ধুর ভালোমন্দ জানার জন্য বন্ধুত্বের খাতিরে বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে দুর্নীতি, মুনাফেকি ও আত্মম্ভরিতা পরিহার করা। এগুলো হৃদয়ে পরিবর্তন সৃষ্টি করে এবং বন্ধুত্ব নষ্ট করে। পারস্পরিক বন্ধুদের মাঝে সামাজিক সৌজন্য চর্চা করা। তারা কোনো দাওয়াত দিলে তা রক্ষা করা। দয়ার বিনিময়ে দয়া জানানো। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। তাদেরকে খাটো বা বিদ্রুপ না করা।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্তায়ালা আরও ইরশাদ করেন, ‘আপনি নিজেকে তাদের সঙ্গে আবদ্ধ রাখুন, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। যার মনকে আমার স্মরণ থেকে অবচেতন করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্যকলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার আনুগত্য করবেন না।’ -সুরা কাহাফ : ২৮
একজন ভালো বন্ধুর কি কি গুণ থাকা দরকার এ সম্পর্কে ইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেন, যার মধ্যে তিনটি গুণ আছে তাকে বন্ধু হিসেবে নির্বাচন করা উচিৎ। গুণগুলো হলো- বন্ধুকে হতে হবে জ্ঞানী ও বিচক্ষণ, বন্ধুর চরিত্র হতে হবে সুন্দর ও মাধুর্যময়, বন্ধুকে হতে হবে নেককার ও পুণ্যবান।
অনেক সময় চরম শত্রুও বন্ধুত্বের ছদ্মবেশে এসে ভীষণ সর্বনাশ করে। ইবলিশ শয়তানও হজরত আদম (আ.)-এর কাছে বন্ধুর বেশে এসে তাদের ধোঁকায় ফেলেছিল। সুতরাং ভালো গুণের অধিকারী ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব করাই মুসলমানের কাম্য।