ইসলামে হিজড়াদের অধিকার

  • ইসরাত জাহান সারা, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ইসলামি স্কলাররা মতে দিয়েছেন, হিজড়াদের অবহেলা করা যাবে না। তাদের গালি দেওয়া যাবে না

ইসলামি স্কলাররা মতে দিয়েছেন, হিজড়াদের অবহেলা করা যাবে না। তাদের গালি দেওয়া যাবে না

সমাজে হিজড়াদের অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে ইসলাম দিক-নির্দেশক। ইসলাম মতে, মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। তদ্রূপ হিজড়াও মহান আল্লাহর সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব আশরাফুল মাখলুকাতের এক অনন্য মানব সম্প্রদায়। সুরা ত্বীনের ৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি শ্রেষ্ঠতম-সুন্দর আকৃতিতে।’

বাংলা একাডেমীর সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান বলছে, ‘হিজড়া’ শব্দটি হিন্দি ভাষা থেকে এসেছে। হিজড়া বিষয়ক গবেষকদের মতে, হিজড়া শব্দটি এসেছে ফার্সি থেকে। ফার্সি ভাষায় হিজড়া অর্থ হলো- ‘সম্মানিত ব্যক্তি।’

নারীও নয় আবার পুরুষও নয়, এ ধরনের এক শ্রেণির মানুষকে আমরা প্রায়ই রাস্তাঘাটে বিভিন্ন রকম অঙ্গভঙ্গি করে চাঁদা তুলতে দেখি, এই অবহেলিত শ্রেণির লোকদেরকে ‘হিজড়া’ বলা হয়।

বিজ্ঞাপন

হিজড়াদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হিজড়া শব্দকে তারা অভিশাপ বা গালি হিসেবে মনে করেন। তারা এক ধরনের প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধীরা সমাজে নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করলে হিজড়ারা এসব থেকে বঞ্চিত। সমাজ তাদেরকে বোঝা মনে করে দূরে ঠেলে দেয়। তাদের প্রতি ঘৃণা নয় বরং ভালোবাসা ও স্নেহ দরকার। প্রতিবন্ধী মানুষের যেমন শারীরিক ত্রুটি থাকে তদ্রূপ এটিও একটি ত্রুটি।

মনে রাখতে হবে, মহান আল্লাহর কাছে মানুষের বাহ্যিক আকার-আকৃতির কোনো মূল্য নেই। হাশরের ময়দানে তিনি দেখবেন শুধু মানুষের আমল। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা তোমাদের চেহারা এবং সম্পদ দেখেন না বরং তিনি তোমাদের হৃদয় এবং আমলসমূহ দেখেন।’ -সহিহ মুসলিম : ৬৭০৮

বিজ্ঞাপন

ইসলামি স্কলাররা মতে দিয়েছেন, হিজড়াদের অবহেলা করা যাবে না। তাদের গালি দেওয়া যাবে না। তাদেরকে নিয়ে উপহাস করা যাবে না। তারা সম্পত্তির উত্তরাধিকার লাভ করবে। তাদের ওপর ইসলামের বিধান কার্যকর হবে। যার মধ্যে মেয়েলি ভাব বেশি তার ওপর নারীদের বিধান এবং যার মধ্যে পুরুষের স্বভাব বেশি বিদ্যমান, তার ওপর পুরুষদের বিধান কার্যকর হবে।

ইসলাম মানবতার ধর্ম। তাই ইসলাম হিজড়াদের পূর্ণাঙ্গ মানুষ মনে করে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে অঙ্গ ও আকৃতির ভিত্তিতে মানুষকে ভাগ করা হয়নি। আল্লাহতায়ালার কাছে সব ত্রুটিহীন অথবা ত্রুটিপূর্ণ মানুষই সমান এবং হাশরের ময়দানে সব ধরনের মানুষই জিজ্ঞাসিত হবে। সে জন্যই সকলের মতো নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত- পালন করা হিজড়াদের ওপর ফরজ।

ইসলামের দৃষ্টিতে সব মানুষ সমান। ইমান ও তাকওয়া হচ্ছে- মানুষের মর্যাদার মানদণ্ড। যে যত বেশি মুত্তাকি, আল্লাহ তাকে তত বেশি ভালোবাসেন। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন, ‘হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে; পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে পারো। তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন, যে বেশি মুত্তাকি।’ -সুরা হুজুরাত : ১৩