কেয়ামতের দিন যারা সুপারিশ করবেন

  • উবায়দুল হক খান, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

হাশরের দিন রাসুলুল্লাহ সা. সবার আগে সুপারিশকারী হবেন

হাশরের দিন রাসুলুল্লাহ সা. সবার আগে সুপারিশকারী হবেন

হজরত রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কেয়ামতের দিন তিন শ্রেণির লোক সুপারিশ করবে। এক. নবী-রাসুলগণ, দুই. উলামায়ে কেরাম ও তিন. শহিদগণ। -মেশকাত শরিফ : ৫৩৭০

এ ছাড়া বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায়, সকল নবী-রাসুল, আওলিয়ায়ে কেরাম, আলেম-উলামা, কোরআনের হাফেজ, নামাজ, রোজা, কোরআন, দরুদ ইত্যাদি কেয়ামতের কঠিন দিনে (এমন কি কবরে) সুপারিশ করবে।

বিজ্ঞাপন

কোরআন ও হাফেজের সুপারিশ

যে ব্যক্তি কোরআন শরিফ পড়ে এবং কোরআনকে সমুন্নত রাখে আর এর মধ্যে বর্ণিত হালালকে হালাল এবং হারামকে হারাম জানে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং তার পরিবারস্থ লোকদের মধ্যে থেকে এমন দশজন ব্যক্তি সম্পর্কে তার সুপারিশ কবুল করবেন, যাদের জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়েছে। -মুসনাদে আহমদ

বিজ্ঞাপন

আলেম ও নেককার বান্দার সুপারিশ

হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের কোনো কোনো ব্যক্তি বিরটা দলের জন্য সুপারিশ করবে। আবার কেউবা নিজ আত্মীয়-স্বজনের জন্য সুপারিশ করবে। আবার কেউ একজন লোকের জন্য সুপারিশ করবে। শেষ পর্যন্ত আমার সব উম্মত বেহেশতে প্রবেশ করবে। -সুনানে তিরমিজি

অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, জাহান্নামিদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো হবে। অতঃপর জান্নাতবাসীদের মধ্যে থেকে এক ব্যক্তি তাদের নিকট দিয়ে অতিক্রম করবে। ফলে জাহান্নামিদের এক ব্যক্তি তাকে বলবে, হে ব্যক্তি! আপনি কি আমাকে চিনতে পারছেন না? আমি ওই ব্যক্তি, যে (তৃষ্ণার সময়) আপনাকে পানি পান করিয়ে ছিলাম। তাদের মধ্যে থেকে অন্য এক ব্যক্তি বলবে, আমি ওই ব্যক্তি, যে অজুর জন্য আপনাকে পানিরপাত্র দিয়েছিলাম। ফলে তার জন্য সুপারিশ করা হবে, অতঃপর তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। -মেশকাত শরিফ : ৫৩৬৪

কোরআন মাজিদ এবং রোজার সুপারিশ

রোজা এবং কোরআন মাজিদ উভয়ই বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা আরজ করবে, হে আল্লাহ! আমি তাকে দিনের বেলা খানা-পিনা থেকে বিরত রেখেছি, কাজেই আমার সুপারিশ কবুল করুন। আর কোরআন মাজিদ বলবে, হে আল্লাহ! আমি তাকে রাতের বেলা আরামের নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি, কাজেই আমার সুপারিশ কবুল করুন। তখন তাদের উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে। -মুসনাদে আহমদ

সুরা মুলক বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, নিশ্চয় কোরআন মাজিদে ত্রিশ আয়াত বিশিষ্ট একখানা সুরা আছে, যা তার তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে। তা হচ্ছে- সুরা মুলক। -সুনানে আবু দাউদ

কোরআন মাজিদ ও রোজাও বান্দার জন্য সুপারিশ করবে

আল্লাহর অলিদের সুপারিশ

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আবুল জাদয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আমার উম্মতের এক ব্যক্তির সুপারিশে বনী তামিম গোত্রের লোক সংখ্যা থেকেও অধিক লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে। -সুনানে তিরমিজি

অন্য বর্ণনায় আছে, যখন মুমিন (আল্লাহর অলিগণ) দেখবে, তারা মুক্তি পেয়ে গেল, তখন তাদের মুমিন ভাইদের জন্য তারা আল্লাহর কাছে আবেদন করবে- হে আমার প্রতিপালক! তারা আমাদের ভাই, যাদেরকে তুমি জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছ। তারা আমাদের সঙ্গে নামাজ পড়ত, আমাদের সঙ্গে রোজা রাখত এবং আমাদের সঙ্গে সৎকাজ করত। তখন আল্লাহ বলবেন, যাদের অন্তরে শুধুমাত্র এক দিনার ওজন পরিমাণ ঈমান পাবে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আস। তাদের মুখমণ্ডল তথা আকৃতিকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দেওয়া হয়েছে। অতঃপর আল্লাহর অলিরা জাহান্নামিদের নিকট যাবেন। এসে দেখবেন, কেউ কেউ পা পর্যন্ত, কেউ পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত আগুনে ডুবে আছে। এর মধ্যে যাদের তারা চিনবে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আসবে। -সহিহ বোখারি : ৭০০১

রাসুলে কারিম (সা.) শাফায়াতে কুবরার অধিকারী

হজরত রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কেয়ামতের দিন আমিই হবো সমস্ত নবী-রাসুলদের ইমাম, আমিই হবো সুপারিশকারী; এতে আমার কোনো গর্ব নেই। -সুনানে তিরমিজি

সহিহ বোখারি শরিফে বর্ণিত আছে, হজরত রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কেয়ামতের দিন হাশরবাসীরা বিক্ষিপ্তভাবে ছোটাছুটি করে একজন অন্যজনের নিকট যাবে। অতঃপর তারা হজরত আদম আলাইহিস সালামের নিকট এসে বলবে, আপনি রবের নিকট আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। তখন তিনি বলবেন, আমি এখন এ কাজে উপযুক্ত নই। তোমাদের এ ব্যাপারে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের নিকট যাওয়া উচিত। কেননা তিনি হচ্ছেন পরম করুণাময় আল্লাহর খলিল। সুতরাং তারা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের নিকট এসে সুপারিশ প্রার্থনা করবে। তিনিও বলবেন, আমি এ কাজে সক্ষম নই। সুপারিশের জন্য তোমরা হজরত মুসা আলাইহিস সালামের কাছে যাও। কেননা তিনি আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। অতঃপর তারা মুসা আলাইহিস সালামের নিকট আসবে এবং সুপারিশ প্রার্থনা করবে। তিনি বলবেন, আমিও সক্ষম নই। তবে তোমাদের হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের কাছে যাওয়া উচিত। কেননা তিনি হচ্ছেন, রুহুল্লাহ। তখন তারা ঈসা আলাইহিস সালামের কাছে আসবে এবং সুপারিশ প্রার্থনা করবে। তিনিও বলবেন, আমি এ ব্যাপারে সক্ষম নই। তবে তোমাদের হজরত সাইয়িদুনা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট যাওয়া উচিত। তখন তারা আমার নিকট আসবে, আর আমি তাদের আশ্বস্ত করে বলব, আমিই এ ব্যাপারে সক্ষম। তখন আমি আমার প্রতিপালকের নিকট অনুমতি প্রার্থনা করবো। -সহিহ বোখারি : ৪৭১২, ৭৫১০

বর্ণিত হাদিস থেকে বোঝা গেল, হজরত রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হচ্ছেন শাফায়াতে কুবরার অধিকারী। অর্থাৎ, তার আগে কেউই সুপারিশ করতে পারবে না। সকল নবী-রাসুল, আওলিয়ায়ে কিরাম, আলেম, নামাজ, রোজা, কোরআন, দরুদ ইত্যাদি সুপারিশ করবে, কিন্তু এ সব সুপারিশ হবে শাফায়াতে কুবরা তথা রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুপারিশের পর। তার কাছে মানুষজন সুপারিশের জন্য আসলে তিনি তাদেরকে ফিরিয়ে দেবেন না। আর এসবই হবে দয়াময় আল্লাহর সামনে।