হাফেজে কোরআনের সম্মান ও মর্যাদা
মুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশি হাফেজদের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি হাফেজরা বরাবরই কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছেন। করেছেন বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকাকে সম্মানিত। তাদের অনন্য অবদানে প্রায়ই বিশ্বমিডিয়ায় শিরোনাম হচ্ছে- বাংলাদেশ।
শুধু দুনিয়া নয়, পবিত্র কোরআন হিফজকারী তথা হাফেজরা আখেরাতেও সম্মানিত। মহান আল্লাহ তাদেরকে অনেক সম্মানিত করেছেন। হাদিস শরিফে আছে, তাদের ব্যাপারে অনেক খোশখবর!
পবিত্র কোরআন সর্বশেষ ঐশী গ্রন্থ। আল্লাহ কোরআন মাজিদকে কেয়ামত পর্যন্ত আগত মানুষের জন্য হেদায়েতের মাধ্যম হিসেবে মনোনীত করেছেন এবং পৃথিবীর শেষদিন পর্যন্ত রক্ষার অঙ্গীকার করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি এবং অবশ্যই আমিই তার রক্ষক।’ -সুরা হিজর : ৯
হাফেজরা সর্বশ্রেষ্ঠ বাণী কোরআনের ধারক। একাধিক আয়াত ও হাদিসে কোরআনের ধারক-বাহক হাফেজদের বিশেষ মর্যাদার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে নিজে কোরআন শেখে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়।’ -সহিহ বোখারি : ৫০২৮
হাফেজে কোরআন সর্বোত্তম ব্যক্তি এবং সম্মানিত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। কারণ তারা বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করেন। আর বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াতকারীদের ব্যাপারে নবী কারিম (সা.) জানিয়েছেন, তারা আল্লাহর পরিজন।
হজরত আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, কিছু মানুষ আল্লাহর পরিজন। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল, তারা কারা? তিনি বলেন, কোরআন তেলাওয়াতকারীরা আল্লাহর পরিজন এবং তার বিশেষ বান্দা।’ -ইবনে মাজাহ : ২১৫
পবিত্র কোরআন হেফজ করা, চর্চা করা এতটাই ফজিলতপূর্ণ কাজ যে, রাসুল (সা.) তার হেফজকারীদের ফেরেশতাদের সঙ্গে তুলনা করেছেন। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) ইরশাদ করেন, কোরআনের হাফেজ, পাঠক, লিপিকর সম্মানিত ফেরেশতাদের মতো। খুব কষ্টকর হওয়া সত্ত্বেও যে বারবার কোরআন পাঠ করে, সে দ্বিগুণ পুরস্কার পাবে। -সহিহ বোখারি : ৪৯৩৭
দুনিয়াতে যারা কোরআন শিখবে এবং কোরআন অনুযায়ী আমল করবে, হেফজ করবে, কেয়ামতের দিন তাদের বিশেষ সংবর্ধনা দেওয়া হবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, কোরআন কেয়ামত দিবসে হাজির হয়ে বলবে, হে আমার প্রভু! একে (কোরআনের বাহককে) অলংকার পরিয়ে দিন। তারপর তাকে সম্মান ও মর্যাদার মুকুট পরানো হবে। সে আবার বলবে, হে আমার প্রভু! তাকে আরো পোশাক দিন। সুতরাং তাকে মর্যাদার পোশাক পরানো হবে। সে আবার বলবে, হে আমার প্রভু! তার প্রতি সন্তুষ্ট হোন। কাজেই তিনি তার ওপর সন্তুষ্ট হবেন। তারপর তাকে বলা হবে, তুমি একেক আয়াত পাঠ করতে থাকো এবং ওপরের দিকে উঠতে থাকো। এমনিভাবে প্রতি আয়াতের বিনিময়ে তার একটি করে সওয়াব (মর্যাদা) বাড়ানো হবে। -জামে তিরমিজি : ২৯১৫
পবিত্র কোরআন হেফজ করতে পারা আল্লাহর নেয়ামতসমূহের অন্যতম। এই নেয়ামতের ব্যাপারে ঈর্ষা করাও জায়েজ। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, দুই ব্যক্তি ছাড়া অন্যকারো সঙ্গে ঈর্ষা করা যায় না। এক ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন এবং সে তা দিন-রাত তেলাওয়াত করে। আর তা শুনে তার প্রতিবেশীরা বলে, হায়! আমাদের যদি এমন জ্ঞান দেওয়া হতো, যেমন অমুককে দেওয়া হয়েছে, তাহলে আমিও তার মতো আমল করতাম। অন্য ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করেছেন এবং সে সত্য ও ন্যায়ের পথে সম্পদ খরচ করে। এ অবস্থা দেখে অন্য এক ব্যক্তি বলে, হায়! আমাকে যদি অমুক ব্যক্তির মতো সম্পদ দেওয়া হতো, তাহলে সে যেমন ব্যয় করছে, আমিও তেমন ব্যয় করতাম।’ -সহিহ বোখারি : ৫০২৬
কেয়ামতের দিন কোরআনের হাফেজদের মা-বাবাকে বিশেষ সম্মান দেবেন আল্লাহতায়ালা। এ বিষয়ে হজরত সাহল ইবনে মুআজ আল জুহানি (রহ.) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করে এবং তা অনুযায়ী আমল করে, কেয়ামতের দিন তার মা-বাবাকে এমন মুকুট পরানো হবে যার আলো সূর্যের আলোর চেয়েও উজ্জ্বল হবে। ধরে নাও, যদি সূর্য তোমাদের ঘরে বিদ্যমান থাকে (তাহলে তার আলো কিরূপ হবে?)। তাহলে যে ব্যক্তি কোরআন অনুযায়ী আমল করে তার ব্যাপারটি কেমন হবে, তোমরা ধারণা করো তো!’ -সুনানে আবু দাউদ : ১৪৫৩
নবী কারিম (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে কোরআনের ধারক-বাহকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। যারা ৩০ পারা কোরআন হেফজ করে তা ধরে রাখে, তার ওপর আমল করে, তারাও সেই সম্মানের যোগ্য। হজরত আবু মুসা আশআরি (রহ.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই বৃদ্ধ মুসলিমকে সম্মান করা, কোরআনের ধারক-বাহক ও ন্যায়পরায়ণ শাসকের প্রতি সম্মান দেখানো মহান আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অন্তর্ভুক্ত।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৪৮৪৩
মুখস্থ করার অভ্যাস সবার সমান নয়। সে হিসেবে বলা যায়, যারা পবিত্র কোরআন মুখস্থ করেন- তারা অবশ্যই প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী। একজন হাফেজে কোরআন পরকালে বিশেষ সম্মানে ভূষিত হবেন। দুনিয়াতেও হাফেজে কোরআনকে দেওয়া হয় বিশেষ সম্মান ও মার্যাদা। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন উদ্যোগে হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক বেশ কয়েকটি দেশে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বমানের হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা। এসব প্রতিযোগিতার মূল্যমান যেমন বিশ্বমানের, তেমন এর গুরুত্বও ভিন্ন।
এসব প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন বয়সী বাংলাদেশি হাফেজরা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে অংশগ্রহণ করছেন। এসব প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা শীর্ষস্থান অধিকার করে দেশের সুনাম বয়ে আনছেন। বিশ্বপরিমণ্ডলে ছড়িয়ে দিচ্ছেন, বাংলাদেশের সুনাম ও খ্যাতি।