নারীর মর্যাদাকে সমুন্নত করেছে হিজাব
-
-
|

নারীর মর্যাদাকে সমুন্নত করেছে হিজাব, ছবি: সংগৃহীত
মানবজীবনে পোশাক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পোশাক শুধু আব্রু বা সম্ভ্রম সংশ্লিষ্ট বিষয় নয়; বরং ঋতুর সঙ্গেও জড়িয়ে আছে পোশাক। পোশাক নিয়ে কথা বলে মানুষের রুচি-অভিরুচি এবং সংস্কৃতি। আর পোশাকের ব্যাপারে তো ধর্ম-দর্শনের বক্তব্য খুবই স্পষ্ট। তবে অহংকারের পোশাক মানুষের কাম্য হতে পারে না।
দেশে-সমাজে প্রচলিত পোশাকের বাইরে গিয়ে ভিন্ন ধাচের পোশাক ধারণের বিষয়টিও স্বাভাবিক নয়। তবে পোশাকে শৈলী বা ফ্যাশনের বিষয় থাকতে পারে। সমাজে প্রচলিত পোশাকের উন্নত রূপ দিতে পারে শৈলী। তবে ফ্যাশন এবং ট্রেন্ডের (প্রবণতা, ঝোঁক) পার্থক্য আমাদের উপলব্ধি করতে হবে। ফ্যাশন হলো শৈলী বা সৌন্দর্যের বিষয়। এখানে কাপড়ের বুনন, রঙ, ডিজাইন ও কার্টিং বিবেচনার বিষয় হতে পারে। দৃষ্টিকটু কোনো বিষয় শৈলীতে প্রশ্রয় পাবে না। আর ট্রেন্ড হলো- খেপামি, যা শৈলীর বিপরীত বিষয়।
সমাজে প্রচলিত পোশাকের সঙ্গে এর কোনো মিল থাকে না। উদ্ভট ও অস্বাভাবিক বিষয় প্রশ্রয় পায় ট্রেন্ডে। মানুষের স্বাভাবিক মূল্যবোধের বিপরীতে ট্রেন্ডের অবস্থান। তাই বলা চলে ফ্যাশন বা শৈলী হলো ইতিবাচক বিষয়, আর ট্রেন্ড বা খেপামি হলো নেতিবাচক বিষয়। সমাজের প্রচলিত বিষয়কে আরবি ভাষায় বলা হয় ‘উরফ।’
প্রচলিত বিষয়কে সৌন্দর্যমণ্ডিত করা মানবমর্যাদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। তবে প্রচলিত বিষয়ের সঙ্গে যদি কোনো হারাম উপাদান যুক্ত হয়ে যায়, তবে তা নিষিদ্ধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
পোশাক প্রসঙ্গে বক্তব্য আছে ধর্ম-দর্শনের। ‘হিজাব’ একটি ইসলামি পরিভাষা। বিষয়টি নিয়ে অনেক ভুল বক্তব্য আছে। সে ভুল অপনোদনে আন্তর্জাতিক হিজাব দিবস পালন করা হচ্ছে। এ উপলক্ষ্যে প্রথমবারের মতো ‘হিজাব র্যালি’ অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। গত শনিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে থেকে র্যালিটি শুরু হয়ে টিএসসি হয়ে রাসেল টাওয়ার ঘুরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে শেষ হয়।
আন্তর্জাতিক হিজাব দিবস উপলক্ষে র্যালির আয়োজন করে ‘প্রোটেস্ট অ্যাগেইনস্ট হিজাবোফোবিয়া-ঢাকা ইউনিভার্সিটি’ নামের একটি সংগঠন। সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা অন্যান্য ক্ষেত্রে পোশাকের স্বাধীনতার কথা বলে থাকি; কিন্তু যখন হিজাবের কথা আসে, তখন স্বাধীনতার সম্মানটা কেউ করে না। হিজাব আমাদের অধিকার। আমাদের কাজ দিয়ে বিবেচনা করুন, পোশাক দিয়ে নয়।’
র্যালিটির অন্যতম আয়োজক স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্রসংসদ নামের একটি সংগঠনের আহ্বায়ক জামালুদ্দিন খালেদ সমাবেশে বলেন, ‘যারা ফ্যাসিবাদের আমলে হিসাব-নিকাব পরিধান করেছেন, তারা বিভিন্নভাবে হেনস্তার শিকার হয়েছেন। শুধু হিজাব-নিকাবই নয়, যারা দাঁড়ি রাখতেন; টুপি পরতেন, তারাও বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। পশ্চিমারা এগুলাকে এক ধরনের জঙ্গীবাদের চিহ্ন হিসেবে উপস্থাপন করেন। এমন সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার জন্যই মূলত আমাদের এ প্রচেষ্টা।
আন্তর্জাতিক হিজাব দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানের কথা আমরা জানলাম, জানলাম তাদের বক্তব্য ও দাবির কথা। ‘হিজাব’ আসলে কোনো সাম্প্রতিক বা অধুনাকালের বিষয় নয়। হিজাব অনেক পুরানো বিষয় এবং ধর্মের বিধান। হিজাবের মাধ্যমে নারীর মর্যাদাকে সমুন্নত করা হয়েছে। অবশ্য এ বিধানের মাহাত্ম্য সেক্যুলার তথা ইহলৌকিকবাদীদের বোঝার কথা নয়। মুসলিম নামধারী অনেকেও বিষয়টা বোঝেন না।
‘হিজাব’ নামের যে পোশাক, এটা কোনো ফ্যাশন বা ব্যক্তিগত রুচির বিষয় নয়। হিজাব মুসলিম নারীদের জন্য ফরজ। এটা মুসলিম নারীদের জন্য কোনো ঐচ্ছিক বিষয় নয়; বরং বিষয়টি তাদের অধিকারের অন্তর্ভুক্তও বটে। আল্লাহতায়ালার বিধানকে মান্য করাই মানুষের কর্তব্য; তার বিধানকে অমান্য করে কি প্রকৃত মুসলিম হওয়া যায়?
‘হিজাব’ পিছিয়ে পড়ার মত কোনো বিষয় নয়। বরং হিজাব পরেই দেশে-বিদেশে মুসলিম মহিলারা এগিয়ে যাচ্ছেন এবং পালন করছেন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ও হিজাব তথা পর্দার বিধান মেনেই মুসলিম মহিলারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
ফলে বলা চলে, পর্দার বিধান নারীদের ব্যক্তিত্বে নতুন মাত্রা দেয় এবং মর্যাদার সঙ্গে কর্ম সম্পাদনে সাহায্য করে। আর সে সত্যই আজ প্রমাণিত; সুস্পষ্ট!
অতিথি লেখক ইসলাম