অন্যের সফলতায় আপনার রিজিক কমবে না
-
-
|

আল্লাহ ক্যালিগ্রাফি, ছবি: সংগৃহীত
অন্য কারও সফলতায় আমার-আপনার রিজিক কম হয় না। কেউ কারও রিজিকি, উন্নতি-সমৃদ্ধি নিতে পারে না। তাই হিংসা ত্যাগ করুন। মনে কোনো বিদ্বেষ জন্ম নিলে তা পরিত্যাগ করুন। পরিবার ও সমাজে শান্তি নেম আসবে। পরস্পরে হানাহানি কমে যাবে।
কথাগুলো শুনতে সহজ, কিন্তু হৃদয়ে গেঁথে নিতে সময় লাগে, তাই না? কারণ আমরা মানুষ! আমাদের মন তুলনা করতে ভালোবাসে। কে কোথায় পৌঁছালো, কে কতটা এগিয়ে গেলো, আর আমি কোথায় পড়ে রইলাম?
যখন কেউ নতুন গাড়ি কিনে, বড় বাড়ি বানায় কিংবা চাকরিতে প্রমোশন পায়- তখন এক মুহূর্তের জন্য হলেও মনে প্রশ্ন জাগে, ‘আমি কেন পেলাম না? আমি কি কম পরিশ্রম করছি? আমি কি কম যোগ্য?’
কিন্তু জানেন কি? এই প্রশ্নগুলোর ভারে আপনি নিজেই নিজেকেই কষ্ট দিচ্ছেন, মনকে বিষিয়ে তুলছেন, শান্তি কেড়ে নিচ্ছেন।
মনে রাখবেন, হিংসা একটা বিষ। এটা ধীরে ধীরে মানুষের হৃদয়কে জ্বালিয়ে দেয়, কিন্তু কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না। অন্যের উজ্জ্বলতা যদি আপনার চোখে ধাঁধা লাগায়, তবে ভাবুন তো- আপনিও তো চান আপনার জীবনেও আলো আসুক! তাহলে কেন সেই আলোকে স্বাগত না জানিয়ে, ঈর্ষার অন্ধকারকে আঁকড়ে ধরে থাকবেন?
বিশ্বাস রাখুন, আল্লাহতায়ালা আপনার জন্য যা নির্ধারণ করেছেন, তা কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। কারও সাফল্য আপনার ভাগ্যের দরজা বন্ধ করে দেবে না। বরং হয়তো সেটাই হবে আপনার নতুন পথের দিশা, নতুন অনুপ্রেরণা।
তাই সর্বাগ্রে নিজের হৃদয়কে হিংসা মুক্ত করুন। ঈর্ষার আগুনে নিজেকে পোড়ানোর বদলে অন্যের সফলতায় হাসুন, তাদের জন্য দোয়া করুন। কারণ, আল্লাহতায়ালা যখন কাউকে কিছু দেন, তখন তিনি অন্য কারও অংশ থেকে কমিয়ে দেন না। তার ভান্ডারে অফুরন্ত নেয়ামত রয়েছে।
আপনার সময়ও আসবে, আপনার মুহূর্তও আসবে। শুধু ধৈর্য্য ধরুন, নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন, আর মনে রাখুন- আল্লাহতায়ালার দেওয়া রিজিক কখনও শেষ না। নেক কাজ আর উন্নত হৃদয় থাকলেই একদিন আপনাকেও স্পর্শ করবে- ইনশাআল্লাহ।
রিজিক আরবি শব্দ। আল্লামা ইবনে ফারিস (রহ.) বলেন, ‘সময় অনুযায়ী আসা দানকে রিজিক বলা হয়। এ ছাড়া রিজিক শব্দটি শুধু দান অর্থেও ব্যবহৃত হয়। রিজিক মানে হলো- সময় অনুযায়ী প্রদান করা আল্লাহতায়ালার বিশেষ দান।’
বিখ্যাত আরবি অভিধানপ্রণেতা আল্লামা আবু নসর জাওহারি (রহ.) লিখেছেন, ‘যার মাধ্যমে মানুষ উপকৃত হয়, তা-ই রিজিক। তিনি আরও লিখেছেন, ‘রিজিক মানে বিশেষ দান।’ -আস সিহাহ: ৪৪০
আল্লামা ইবনে মানজুর (রহ.) লিখেছেন, ‘রিজিক দুই প্রকার- ১. দেহের জন্য রিজিক হলো- খাদ্য। ২. অন্তর ও আত্মার জন্য রিজিক হলো জ্ঞান।’ -লিসানুল আরব, ইবনে মানযুর: ৫/২৩৯
মনে রাখতে হবে, প্রতিটি প্রাণীর জীবনধারণের জন্য আল্লাহতায়ালার বিশেষ দানকে রিজিক বলা হয়, যা নির্ধারিত সময়ে প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী প্রদান করা হয়; আর তার মাধ্যমে প্রাণীটির সার্বিক উপকার সাধিত হয়।
রিজিক সেটাই, যা বান্দার উপকারে আসে। উপকারে আসার বিষয়টিও ব্যাপক। এর মধ্যে ইহকাল ও পরকাল অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং কোনো ব্যক্তি মানুষ বা প্রাণী যদি ইহকালে রিজিকপ্রাপ্ত না হয়, পরকালে সে অবশ্যই তা পাবে। অনুরূপভাবে যা কিছু মানবদেহ ও আত্মার খোরাক মেটায়, তা-ই রিজিক।
মোটকথা, আল্লাহর এক বিশেষ অনুগ্রহের নাম রিজিক, যা তিনি মানুষসহ সব প্রাণীকে নির্ধারিত সময়ে প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী দিয়ে থাকেন।