মসজিদে নববীর সবচেয়ে প্রবীণ ইমাম অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে
মসজিদে নববীর সবচেয়ে প্রবীণ ইমাম ও খতিব শায়খ আলী আল হুজাইফি মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শায়খ আলী হুজাইফি ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে মসজিদে নববীতে ইমামতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত কারণে (স্ট্রোক) শায়খ হুজাইফি অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সৌদি সংবাদমাধ্যমমে বলা হচ্ছে, এখন তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল।
শায়খ আলী ইবনে আবদুর রহমান আল হুজাইফি শায়খ হুজাইফি নামে বেশি পরিচিত। তিনি মক্কার উত্তরে আল কার্ণ আল মুস্তাকিম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন সৌদি সেনাবাহিনীর একজন ইমাম।
১৯৬১ সালে নিজ এলাকার মাদরাসায় কোরআনে কারিম হিফজ শেষে বালজুরাশির সালাফিয়া মাদরাসা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে বৈজ্ঞানিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন।
১৯৭৫ সালে আল হুজাইফি রিয়াদের ইমাম মুহাম্মদ বিন সৌদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শরিয়াহ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন এবং বৈজ্ঞানিক ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। সেখানে তিনি ইসলামি বিজ্ঞান ও আরবি পড়ান।
এ সময় তিনি বালজুরাশির একটি মসজিদে ইমাম ও ধর্ম প্রচারকের (দাঈ) দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে কায়রোর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শায়খ হুজাইফি পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। পিএইচডি ডিগ্রি লাভের পর কিছুদিন ইমাম মুহাম্মদ বিন সৌদ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।
শায়খ হুজাইফি বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কারি। শায়খ আহমদ আবদুল আজিজ আলজিয়াত, আমের আল সায়াদ উসমান, আবদুল ফাত্তাহ আল কাদি ও হামমাদ আল-আনসারীসগ বিখ্যাত কারিদের কাছ থেকে তিনি কোরআন তেলাওয়াত শিখেছেন। কোরআন তেলাওয়াতের জন্য বিশ্বব্যাপী তার বেশ সুনাম রয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তার কোরআন তেলাওয়াত প্রশংসিত।
তিনি বেশ কিছুদিন কুবা মসজিদে ইমামতি করেছেন। পরে ১৯৭৯ সালে মসজিদে নববীর ইমাম হিসেবে নিয়োগ পান।
মাঝে ১৯৮১-৮২ সালে মক্কার মসজিদে হারামের ইমাম নিযুক্ত হন। এর পর থেকে তিনি মসজিদে নববীতে ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করে চলছেন।
তিনি মদিনার বাদশা ফাহাদ কোরআন প্রিন্টিং প্রেস কমপ্লেক্সের তত্বাবধায়ক কমিটির প্রধান। ১৪৪০ হিজরি সালে তিনি মসজিদে নববীতে সবচেয়ে বেশি ওয়াক্ত নামাজের ইমামতি করেছেন। তিনি গত (১৪৪০ হিজরি সালে) এক বছরে ৯১ ওয়াক্ত ফজর, ২৬ ওয়াক্ত জোহর, ১৪৯ ওয়াক্ত আসর, ১২০ ওয়াক্ত মাগরিব, ৮৪ ওয়াক্ত এশা, ১২ শুক্রবার জুমার নামাজ ও একবার চন্দ্রগ্রহণের নামাজের ইমামতি করেছেন।
শায়খ হুজাইফি ১৯৯৮ সালে সৌদি আরবে অবস্থানকারী বৃটিশ-মার্কিন-ফরাসি সৈন্যদের অবস্থানের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে প্রথাবিরোধী খুতবা দিয়ে ব্যাপক আলোচিত হন। ওই খুতবায় তিনি শিয়াদের বিরুদ্ধে ইসলামের অবস্থান, শিয়াদের দৌরাত্ম সম্পর্কে অনেক কড়া বলেন। ওই সময় ইরানের প্রেসিডেন্ট রাফসানজানি সৌদি আরব সফর করছিলেন। শায়খ হুজাইফির ওই খুতবা তখন ব্যাপক আলোচিত হয়। প্রায় শতাধিক ভাষায় তার খুতবাটি ভাষান্তরিত হয়।