নেদারল্যান্ডসে ধর্ম চর্চার পাশাপাশি রাজনীতিতেও মুসলমানরা সক্রিয়
নেদারল্যান্ডসের জনসংখ্যা ২ কোটির কাছাকাছি। তন্মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। ইসলাম দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। নেদারল্যান্ডসের চারটি বড় শহর আমস্টারডাম, রটারড্যাম, দ্য হেগ ও উট্রেচটে বেশিরভাগ মুসলিম বসবাস করেন।
নেদারল্যান্ডসে ইসলামের আগমন ঘটে ১৬ শতাব্দীতে। তখন প্রাথমিকভাবে কিছু সংখ্যক ওসমানি (অটোম্যান) ব্যবসায়ী দেশটির বন্দর শহরগুলোতে বসতি স্থাপন শুরু করেছিলেন। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে বহু মুসলমান রাজনৈতিক আশ্রয়ে নেদারল্যান্ডসে আসেন।
১৭ শতাব্দীতে নেদারল্যান্ডসে প্রথম মসজিদ নির্মিত হয়। বর্তমানে নেদারল্যান্ডসে ৫শ’ এর অধিক মসজিদ রয়েছে। এসব মসজিদের নিয়মিত আজান ও নামাজ হয়। দেশের প্রায় সব মসজিদেই সাউন্ড সিস্টেমে আজান দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও রাজধানীর মসজিদে এ ব্যবস্থার অনুমোদন ছিলো না। বহু চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে এবার রাজধানী আমস্টারডামে প্রথমবারের মতো মাইকে আজানে ধ্বনি শোনা গেলো।
শুক্রবার (১৬ নভেম্বর) আমস্টারডামের মুসলিমরা নামাজের আগে ব্লু মসজিদে প্রথমবারের মতো মাইকে আজানের ব্যবস্থা করে। মসজিদের মুখপাত্র নূরদীন উইল্ডম্যান গণমাধ্যমকে বলেন, বিভিন্ন প্রক্রিয়া পেরিয়ে মাইকে আজান দেওয়ার ব্যবস্থা করতে দেরি হয়ে যায়। তার পরও আজান শুনে আমস্টারডামের মানুষ আনন্দবোধ করেছেন।
ব্লু মসজিদ কর্তৃপক্ষ এর আগের শুক্রবার (৯ নভেম্বর) মাইকে আজানের ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু অজ্ঞাত পরিচয়ধারীরা অডিও সিস্টেমের কেবল কেটে দেওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।
উইল্ডম্যান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, নেদারল্যান্ডসের প্রায় সব মসজিদে বছরের পর বছর ধরে মাইকে আজানের ব্যবস্থা রয়েছে এবং মসজিদগুলোতে উচ্চ স্বরে আজান দেওয়াও হয়। তবে রাজধানী আমস্টারডামে এবারই প্রথমবারের মতো আজান দেওয়া হলো।
মাইকে আজান দেওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। কেউ কেউ এর সমালোচনা করলেও সাধারণ প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক। মসজিদে আগত মুসল্লি এবং বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা স্থানীয়রা তাদের মুঠোফোনে আবেগঘন ও আনন্দপূর্ণ মুহূর্তটি রেকর্ড করে রাখে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে এটা নিয়ে ইতিবাচক সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেন, আজান শুনে প্রথমবার মসজিদে আসার কথা। কেউ লিখেন, আজানের সুর ভালো লাগার কথা।
পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে নামাজের আগে মাইকে আজান দিতে মুসলমানরা বিভিন্ন ঝামেলার মুখোমুখি হন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কখনও কখনও যুক্তি দেয়, আজানের আওয়াজের মাধ্যমে স্থানীয় বাসিন্দাদের অসুবিধা সৃষ্টি করবে।
নেদারল্যান্ডসের সংবিধান অনুযায়ী দেশটিতে ধর্মের স্বাধীনতা সুরক্ষিত। ১৯৮০ সালে বিধিবদ্ধ একটি আইনের মাধ্যমে এ সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। তবে আইন অনুযায়ী স্থানীয় পৌরসভা কর্তৃপক্ষ আজান ব্যবস্থাকে সময়কাল ও আয়তনে সীমাবদ্ধ করতে পারে, কিন্তু তা নিষিদ্ধ করতে পারে না।
নেদারল্যান্ডসে মুসলিম নারীরা স্কার্ফ, হিজাব ও বোরকা পরে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাজারে চলাফেরা করতে পারেন। সরকার মুসলমানদের ধর্মীয় ঐতিহ্য ও আচার-অনুষ্ঠানে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করে না। বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা লাভে মুসলমানদের কোনো ধরনের বৈষম্যের শিকার হতে হয় না।
নেদারল্যান্ডস পুলিশে যেসব মুসলিম নারী অফিসের অভ্যন্তরে কাজ করেন, তারা হিজাব পরে কর্মক্ষেত্রে যেতে পারেন। এটা অনুমোদিত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা হয়। রাজনীতিতে মুসলমানরা বেশ সক্রিয়। ১৫০ সদস্যবিশিষ্ট পার্লামেন্টে সবসময় মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব থাকে।
নেদারল্যান্ডসের রাজধানীর আগে ২০১৩ সালের এপ্রিলে সুইডেনের মুসলিমরা দক্ষিণ স্টকহোমের ফিত্তজা মসজিদে সর্বপ্রথম লাউড স্পিকারে আজান দেওয়া হয়।
-অনইসলাম অবলম্বনে