রজব মাসে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

রজব মাসে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে, ছবি: সংগৃহীত

রজব মাসে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে, ছবি: সংগৃহীত

এখন চলছে আরবি রজব মাস। মাসটি আশহুরে হুরুম তথা সম্মানিত চার মাসের একটি। ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, আশহুরে হুরুমের বৈশিষ্ট্য হলো, এসব মাসে ইবাদতের প্রতি যত্নবান হলে বাকি মাসগুলোতে ইবাদতের তওফিক হয়। আর আশহুরে হুরুমে কষ্ট করে গোনাহ থেকে বিরত থাকতে পারলে অন্য মাসে গোনাহ পরিহার করা সহজ হয়। -আহকামুল কোরআন, জাসসাস: ৩/১১১

তাই আশহুরে হুরুমের অন্তর্গত রজব মাসের মর্যাদা রক্ষায় সচেষ্ট হওয়া উচিত। তবে স্মরণ রাখা দরকার, ইসলামি শরিয়তের পক্ষ থেকে এ মাসের জন্য বিশেষ কোনো নামাজ, বিশেষ কোনো রোজা বা বিশেষ পদ্ধতির কোনো আমলের হুকুম দেওয়া হয়নি। তাই বাজারের অনির্ভরযোগ্য বই-পুস্তকে রজব মাস উপলক্ষে বিশেষ নামাজ ও রোজার যেসব কথা পাওয়া যায়; তা সবই ভিত্তিহীন। এ ধরনের মনগড়া আমল দ্বারা এ মাসের ফজিলত লাভ করা সম্ভব নয়। রজব মাসের বরকত ও ফজিলত হাসিলের জন্য অন্যান্য মাসে পালনীয় ফরজ ইবাদতগুলো যথাযথভাবে পালন করতে হবে এবং নফল ইবাদত বেশি বেশি করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

ইসলামপূর্ব জাহেলি যুগে রজব মাসে মুশরিকদের মধ্যে স্বীয় দেবতা-প্রতীমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু জবাই করার একটি রেওয়াজ ছিল। একে ‘আতিরা’ বলা হত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই শিরকি রেওয়াজের মূলোৎপাটন করেছেন। স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, ‘ইসলামে ‘ফারা’ (উট বা বকরির প্রথম বাচ্চা প্রতীমার উদ্দেশ্যে) জবাই করার কোনো প্রথা নেই এবং ‘আতিরা’ও নেই। অর্থাৎ রজব মাসে প্রতীমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু জবাই করার প্রথাও নেই।’ –সহিহ বোখারি: ২/৮২২

আজকাল রজব মাসে খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতি (রহ.)-এর মাজারে তার ওফাত উপলক্ষে যে ‘উরস’ হয় সেখানে এমন অনেক পশু জবাই করা হয়; যা মূর্খ লোকেরা হজরত খাজা (রহ.) বা তার মাজারের নামে মান্নত করে থাকে। জাহেলি যুগের ‘ফারা’, ‘আতিরা’ আর বর্তমানের এসব জবাইকৃত পশুর মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই।

বিজ্ঞাপন

ইসলাম মতে, আল্লাহ ছাড়া অন্য যে কারও নামে মান্নত করা, তা যদি পীর-বুজুর্গের নামেও হয় তবুও তা শিরক। আমাদের দেশেও খাজা আজমিরি (রহ.)-এর ওফাতকে কেন্দ্র করে জাহেল লোকেরা এমন সব রসম-রেওয়াজ উদ্ভাবন করেছে যা কঠোরভাবে পরিহার করে চলা উচিত। বিভিন্ন স্থানে লাল কাপড়ে মোড়ানো বিরাট ‘আজমিরি ডেগ বা খাজার ডেগ’ বসানো হয়। কোথাও কোথাও মাজারের আদলে অস্থায়ী মাজার স্থাপন করা হয়। এরপর খাজা আজমিরি (রহ.)-এর উদ্দেশ্যে নজর-নিয়াজ ও মান্নতের নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা-পয়সা, চাল-ডাল ইত্যাদি ওঠানো হয়। যা দেওয়াও হারাম এবং ওখান থেকে কিছু খাওয়াও হারাম। যারা এগুলো উঠায় তারা এগুলো দিয়ে আনন্দ-ফূর্তির আয়োজন করে। ঢোল-তবলা ও বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র সহযোগে নাচ-গানের আসর বসায়, যেখানে নারী-পুরুষ একসঙ্গে নাচ-গান ও খাওয়া দাওয়ায় অংশ নেয়, অবাধে মেলামেশা করে এবং নানা ধরনের গর্হিত কাজ করে থাকে, যা নিঃসন্দেহে হারাম।

মনে রাখতে হবে, হজরত খাজা আজমিরি (রহ.) মানুষকে শিরক থেকে মুক্ত করতে ভারতবর্ষে এসেছিলেন। তাওহিদ ও সুন্নতের শিক্ষা দিতে এসেছিলেন। সেখানে তার নামে এসব কাজ গর্হিত পাপ।