করোনা ও আম্পানে কলকাতার ঈদ



ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
কলকাতা রেড রোডের ঐতিহাসিক ঈদ জামাত এবার দেখা যাবে না, ছবি: সংগৃহীত

কলকাতা রেড রোডের ঐতিহাসিক ঈদ জামাত এবার দেখা যাবে না, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজভবন, ইডেন গার্ডেন হয়ে ময়দানের সামনে দাঁড়িয়েছি। হেঁটে হেঁটে কলকাতার হৃদপিণ্ড নামে খ্যাত এই সবুজ অংশে ঘুরে দেখতে আমার বেশ ভালো লাগে। ভ্রমণের শেষ হয় গঙ্গার তীরে।

ময়দানে তখন সন্ধ্যার আবছায়া। ২০১৯ সালের শীতকালটিও বেশ জাঁকালো। আমাদের সামনে কলকাতার বিখ্যাত ফুটবল ক্লাব ঘরগুলোর প্যাভিলিয়নের কুয়াশা-মাখানো আলো জ্বলছে।

ময়দানের একেক অংশে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মোহামেডান ক্লাবের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য কার্যক্রম চলে। কলকাতা শহরের সামাজিক বিন্যাসটিও ফুটবল বিভাজনের মতো। ইস্টবেঙ্গল পূর্ববাংলা থেকে আগত রিফিউজি বাঙালদের ক্লাব, মোহনবাগান ঘঁটি হিন্দু বাঙালিদের আর মোহামেডান মুসলিম বাঙালিদের। এখন অবশ্য হিন্দিভাষী হিন্দু-জৈন মাড়োয়াড়ী ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের বড় পৃষ্ঠপোষক আর কলকাতায় বসবাসকারী উর্দুভাষী উত্তর ভারতীয় মুসলমানরা মোহামেডানের জোরালো সমর্থক।

'মোহামেডান ক্লাব প্রাঙ্গণ থেকে ইমাম সাহেব কলকাতার বিখ্যাত ঈদ জামাতের খুতবা দেন', জানালেন সহযাত্রী সাবির গাফফার। কলকাতা পার্ক সার্কাস এলাকার সাবিরকে চিনি কুড়ি বছর ধরে। মানবাধিকার বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে পরিচয়ে নেপালে। সেই থেকে কলকাতা গেলেই দেখা হয় বর্তমান শেকসপিয়ার সরণি বা আগের থিয়েটার রোডের সাবিরের সঙ্গে।

বৃহত্তর পার্ক সার্কাস মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা। ওদিকেই বাংলাদেশ দূতাবাস, লাইব্রেরি। একাত্তরের মুক্তিসংগ্রামের অনেক কিছু মিশে আছে থিয়েটার রোডের চারপাশে। অবিভক্ত বাংলার অন্যতম প্রধান নেতা সোহরাওয়ার্দীর অনেক সম্পত্তি আছে সেখানে, যেগুলো এখন চ্যারিটি, ওয়েলফেয়ার বা ওয়াকফের অধীনে জনসেবামূলক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।

সাবির কলকাতার ঈদের বিবরণ দিতে গিয়ে ময়দানের বুকে রেড রোডের জামাতের কথা বলেন। মোহামেডান ক্লাবে দাঁড়ানো ইমাম সাহেবের পেছনে আট-দশ লাখ মানুষের ঈদ জামাত পুরো ময়দান ছাপিয়ে পার্শ্ববর্তী এসপ্ল্যানেড, ধর্মতলা, চৌরঙ্গী হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। কলকাতার এই প্রধান জামাতে শুভেচ্ছা জানাতে মূখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রায়-সকল রাজনীতিবিদগণই আসেন।

কলকাতা উৎসবের জন্য প্রসিদ্ধ শহর। দুর্গাপূজার সময় যেমন এক বর্ণিল কলকাতার দেখা পাওয়া যায়, ঈদের সময়ও তেমন চিত্র দেখা যায়। মধ্য কলকাতায় প্রধান ও সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত হয় ময়দানের রেড রোডে। উত্তর কলকাতায় বড়বাজার-চিৎপুরের নাখোদা মসজিদে হয় আরেক বৃহত্তম জামাত। নাখোদা মসজিদ কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের সবচেয়ে বড় মসজিদ, যেখানে লাখ মানুষের নামাজ আদায়ের সুযোগ আছে। দক্ষিণ কলকাতায় সবচেয়ে বড় জামাত হয় টালিগঞ্জের টিপু সুলতান মসজিদে।

কলকাতায় টিপু সুলতান মসজিদ একটি নয়, দু'টি। একটি দক্ষিণে টালিগঞ্জে। অন্যটি মধ্য কলকাতার ধর্মতলায়, সেখানেও ঈদ জামাত হয়। প্রধান প্রধান ঈদ জামাত ছাড়াও কলকাতার মুসলিম অঞ্চলে অনেকগুলো ঈদ জামাত হয়। যার মধ্যে উত্তরে দমদমের কৈখালী, আটঘরা, উল্টোডাঙ্গা, গোবরা, রাজাবাজার, তালতলা, মানিকতলায়। মধ্য-পূর্ব কলকাতায় তিলজলা, পার্ক সার্কাস ময়দান, তোপসিয়া, কসবায়। দক্ষিণে আলীপুর, মেটিয়াবুরুজ, মোমিনপুর, ঢাকুরিয়ায়।

এ বছর করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে কলকাতার চিরচেনা ঈদ জামাত দেখা যাবেনা। বাংলাদেশ এবং বিশ্বের প্রায়-সকল দেশেও ঈদ জামাত হবে সীমিত আকারে। কারণ ২৪ বা ২৫ মে ঈদ হবে লকডাউনের মধ্যে চরম করোনার প্রকোপজনিত পরিস্থিতিতে ।

বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতিতে কলকাতার রেড রোডের বিখ্যাত ঈদের নামাজ স্থগিত করে দিয়েছে আয়োজক খিলাফত কমিটি। এ বার মসজিদ বা মাঠে-ময়দানে ঈদের নামাজ স্থগিত রাখার জন্য পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ৪০ হাজারের বেশি মসজিদের কাছে নোটিস পাঠানো হচ্ছে বলে ওয়াকফ বোর্ডের তরফে জানানো হয়েছে।

খিলাফত কমিটির কলকাতা শাখার সম্পাদক সৈয়দ মহাম্মদ সাঈদ মিডিয়ায় বলেন, ‘রেড জ়োনের আওতায় থাকা কলকাতায় করোনার সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। তাই পারস্পরিক দূরত্বের বিধি না-মেনে রেড রোডে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগমে ঈদের নামাজ পড়াটা বড় ঝুঁকি হয়ে যাবে। তাই তা স্থগিত রাখা হচ্ছে।’ মুসলিমদের উদ্দেশে তার আবেদন, ‘আপনারা দীর্ঘ এক মাস কষ্ট করে মসজিদে না-গিয়ে বাড়িতে নামাজ পড়ছেন। ঈদের নামাজটাও একটু কষ্ট করে নিজের নিজের বাড়িতে সপরিবারে বা এলাকায় সীমিত পরিসরে পড়ুন।’

একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতার নাখোদা মসজিদ এবং ধর্মতলা ও টালিগঞ্জের টিপু সুলতান মসজিদ। রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান, হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি আব্দুল গনি এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেন, ‘আগামী কয়েক মাস বড় চ্যালেঞ্জ। করোনা থেকে বাঁচতে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখাটা ভীষণ জরুরি। তাই ঈদে মসজিদ বা ময়দানে জমায়েত না-করে পাড়ায়, বাড়িতে নামাজ পড়ার জন্য ওয়াকফ বোর্ডের তরফে রাজ্যের প্রায় ৪০ হাজার মসজিদে নোটিস পাঠানো হচ্ছে।’

ঈদের দিনে রেড রোডে অন্তত আট-দশ লক্ষ মানুষ নামাজ পড়েন। কিন্তু এ বার সেখানে নামাজ হলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হলে করোনা ভয়াবহ আকার নেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

তাছাড়া নাখোদা মসজিদে এবং সংলগ্ন রাস্তা মিলিয়ে অন্তত ৬০ হাজার থেকে এক লক্ষ মানুষ ঈদের নামাজ পড়েন। ওই মসজিদের ট্রাস্টি নাসের ইব্রাহিম মনে করেন, 'বড়বাজার এলাকা কলকাতার সর্বাধিক বিপজ্জনক জায়গা। এই তল্লাটের নাখোদা মসজিদে ঈদে বিপুল সংখ্যক মানুষের জমায়েত করাটা বড় ঝুঁকি হয়ে যাবে। তাই এ বার বড় আকারে মসজিদে ইদের জমায়েত হবে না।’

একই মনোভাব জানিয়ে ধর্মতলা ও টালিগঞ্জের টিপু সুলতান মসজিদের কো-ট্রাস্টি তথা টিপু সুলতান পরিবারের সদস্য শাহিদ আলম বলেন, ‘ঈদে এই দুই মসজিদে মিলিয়ে অন্তত ২০ থেকে ৩০ হাজার মানুষের সমাগম হয়। করোনা এড়াতে এ বার তা সীমিত করা হয়েছে। সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মুহম্মদ কামরুজ্জামানও এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন।

বৈশ্বিক মহামারি করোনা পৃথিবীকে স্তব্ধ ও নিঃশব্দ করেই ক্ষান্ত হয়নি, মানুষের পারিবারিক, সামাজিক জীবন এবং ধর্মচর্চা আর উৎসবকেও সীমিত করে দিয়েছে। করোনার কারণে এমন অভূতপূর্ব ও অচেনা পৃথিবীর কথা ইতিহাস ভুলতে পারবেনা কোনদিনও।

অথচ উপমহাদেশের যেসব শহর ঐতিহ্যবাহী ঈদ উৎসবের জন্য খ্যাত, কলকাতা তার অন্যতম। দিল্লি, আগ্রা, আজমির, লক্ষ্ণৌ, লাহোর, হায়দারাবাদ, ঢাকার মতো কলকাতার ঈদও বর্ণিল আয়োজনে সমৃদ্ধ। কিন্তু করোনার প্রকোপের মধ্যেও স্মরণকালের ভয়াবহ সাইক্লোনের আঘাতে চরমভাবে আক্রান্ত মহানগর কলকাতা। তছনছ হয়ে গেছে সুপ্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী নগর বিন্যাস। লণ্ডভণ্ড পুরো মহানগরী।

কলকাতায় এই প্রাকৃতিক আঘাতের কারণ ঘূর্ণিঝড় আম্পান, থাই ভাষার প্রকৃত উচ্চারণে যা উম পুন, যার তাণ্ডবে ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে আর কলকাতাতেই মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের। বৃহস্পতিবার (২১ মে) এ তথ্য জানান স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শতাব্দী প্রাচীন কলকাতার ইতিহাসে অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা দিয়েছে। ঔপনিবেশিক আমলের ঝড়ে ভেঙেছে চার্চের টাওয়ার, গঙ্গা থেকে নৌকা গিয়ে আছড়ে পড়েছে ডাঙ্গায়, যে কারণে শহরের একটি জায়গার নাম উল্টোডাঙ্গা। তদুপরি অতীতে প্লেগে, মন্বন্তরে, মহামারীতে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গেছে কলকাতায়।

তবে, এবার করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে আম্পান নামক সাইক্লোনে রাজ্যের সমুদ্র তীরবর্তী দক্ষিণাঞ্চলের জেলাসমূহ এবং রাজধানী কলকাতার অপরিসীম ক্ষতি হয়েছে। দমবন্ধ ভয়ের মধ্যে কেটেছে তিলোত্তমা কলকাতার নাগরিকদের সাইক্লোন কবলিত একটি দিন।

সাইক্লোনের প্রচণ্ড আঘাতে দমদমের নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গার ভেঙে গেছে আর রানওয়েতে থৈথৈ করছে পানি। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় উপড়ে পড়েছে শত শত গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটিসহ অনেক ছোটবড় স্থাপনা। শতাধিক মানুষের মৃত্যু আর সম্পদের ধ্বংসের মাধ্যমে করোনাকালে অমোচনীয় ছাপ রেখে সাইক্লোন আম্পান।

২০২০ সালে করোনার আগ্রাসী পরিস্থিতিতে সাইক্লোন আম্পানের প্রচণ্ড আঘাতে তিলোত্তমা মহানগর কলকাতায় যে চরম দুর্যোগের সৃষ্টি হয়েছে, তাতে ঈদুল ফিতরের আনুষ্ঠানিকতা পালন অসম্ভব বিষয়। তবে শত বিরূপতাতেও ঈদের প্রীতি, শুভেচ্ছা, সৌহার্দ্য ও ভালোবাসার স্পর্শ থাকবে মানুষের অন্তরে অন্তরে।

   

যে গ্রামে জাকাত-ফেতরা নেওয়ার কেউ নেই



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
গ্রামের মানুষের মাঝে ছাগল বিতরণ করা হচ্ছে, ছবি : সংগৃহীত

গ্রামের মানুষের মাঝে ছাগল বিতরণ করা হচ্ছে, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সম্মিলিত ও সুপরিকল্পিত উদ্যোগে বদলে গেছে প্রত্যন্ত একটি গ্রামের চিত্র। গ্রামটির সকল পরিবার হয়েছে সচ্ছল। ওই গ্রামে এখন আর ফেতরা কিংবা জাকাত নেওয়ার মানুষ নেই। সবাই স্বাবলম্বী।

কিশোরগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার দানাপাটুলি ইউনিয়নের চাঁদের হাসি গ্রাম। এই চাঁদের হাসি গ্রামের দরিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশনের এমন উদ্যোগের ফলে বদলে গেছে গ্রামের দৃশ্যপট।

সংগঠনটি নিজ গ্রামের গন্ডি পেরিয়ে এখন পার্শ্ববর্তী গ্রামের মানুষদের স্বাবলম্বী করতে উদ্যোগ নিয়েছে। এমন প্রশংসনীয় কাজ করা সংগঠনটির নেই নিবন্ধন, নেই বাহারি অফিস। তারা প্রচারে নয়, কাজে বিশ্বাসী। যার প্রমাণ, ফাউন্ডেশনের জনকল্যাণমূলক নানা কাজ।

জানা গেছে, ২০০৩ সালে চাঁদের হাসি গ্রামের প্রয়াত মাওলানা হেলান উদ্দিনের প্রচেষ্টায় দরিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে গ্রামে সকল পরিবারের ফেতরা ও জাকাত একসঙ্গে করে অসহায়-গরীব মানুষের মাঝে বিতরণ করে আসছে। এভাবে দীর্ঘ ২১ বছরে এই কার্যক্রমের ফলে চাঁদের হাসি গ্রামে এখন আর ফেতরা ও জাকাত নেওয়া মতো মানুষ নেই। ইতোমধ্যে সংগঠনটি গ্রামের ৮০ জন অসহায় গরীব মানুষকে ঘর তৈরি করে দিয়েছে।

২ বছর আগে চাঁদের হাসি গ্রামের দরিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশনের সহায়তা ঘর পেয়েছেন ওহেদ আলী। তিনি জানান, ঘর পেয়ে মাথা গুজার ঠাঁই হয়েছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভালোভাবেই চলছে তার সংসার।

মাহমুদ বেগম নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী জানান, তার পরিবার দরিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশনের সহায়তা ঘর ও সেলাই মেশিন পেয়েছেন। তার বাবা নেই মা ও ছোট বোনকে নিয়ে ঘরে বসবাস করছেন। সেলাই মেশিনের মাধ্যমে মানুষের জামা কাপড় সেলাই করে নিজেও স্বাবলম্বী হয়েছেন।

চাঁদের হাসি দরিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুদ আলম জানান, ২০০৩ সালে আমাদের সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এলাকার চলনশীল মানুষের ফেতরা ও জাকাত একসঙ্গে করে আমরা কাজ করে থাকি। এভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করার পর থেকে ইসলামের বিধি মোতাবেক যে ৮টি খাত রয়েছে সে হিসাবে বর্তমানে আমাদের গ্রামে জাকাত-ফেতরা নেওয়ার মতো কোনো মানুষ নেই।

সংগঠনটি গ্রামের অসহায় ও গরীব মানুষকে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সহায়তাও দিয়ে আসছে। গ্রামের বেকারত্ব ঘোচাতে অসহায় ও গরীব মানুষের মাঝে গরু, ছাগল, সেলাই মেশিন, অটোরিকশা ও ভ্যান গাড়ি বিতরণ করেছে।

;

রাজধানীতে শীতল পানি বিতরণ করল ইসলামী ছাত্র আন্দোলন



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
দেশব্যাপী শীতল পানি ও শরবত বিতরণ কর্মসূচী পালন ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের, ছবি : সংগৃহীত

দেশব্যাপী শীতল পানি ও শরবত বিতরণ কর্মসূচী পালন ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

তীব্র তাপদাহে সৃষ্ট সংকটে দেশব্যাপী শীতল পানি ও শরবত বিতরণ কর্মসূচী পালন করছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ।

বিভিন্ন জেলা, থানা, ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভ্রাম্যমাণ ভ্যান নিয়ে পথচারী, দিনমজুর, রিকশাচালকসহ তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে ঠান্ডা পানি বিতরণ করেছে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ। এছাড়া খাবার স্যালাইন ও পকেট রুমাল বিতরণ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৬৬ ও ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডে শ্রমজীবী ও পথচারীদের মাঝে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর পূর্বের ডেমরা থানা শাখার উদ্যোগে বিশুদ্ধ শীতল পানি, স্যালাইন ও ওয়ালেট টিস্যু বিতরণ কর্মসূচি পালন করা হয়।

ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক শেখ মুহাম্মাদ মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর পূর্ব শাখার সহ-সভাপতি মুহাম্মাদ মাইনুল ইসলাম, ডেমরা থানা শাখার সভাপতি শাহাদাত হোসেন মৃধা, সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক রাফিইন বিন আমজাদ, কফিল উদ্দিনসহ থানা ও ওয়ার্ড নেতৃবৃন্দ।

এ সময় প্রধান অতিথি শেখ মুহাম্মাদ মাহবুবুর রহমান বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, জলাধার ভরাট ও অবাধে বৃক্ষ নিধনের ফলেই অসহনীয় তাপদাহে নগরে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। সাময়িক স্বস্তির জন্য আমরা শীতল পানির বিতরণ কর্মসূচি পালন করছি। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই সমাধানের জন্য নগরকে সবুজায়ন ও বসবাসের উপযোগী করতে রাষ্ট্রকেই যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে।

নগর সহ-সভাপতি মাইনুল ইসলাম বলেন, যতদিন তীব্র তাপদাহ থাকবে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর পূর্বের উদ্যোগে নগরজুড়ে বিশুদ্ধ শীতল পানি বিতরণ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

;

দুনিয়ার জীবনের বাস্তবতা প্রকাশ পেয়েছে যে আয়াতে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কোরআন মাজিদ, ছবি : সংগৃহীত

কোরআন মাজিদ, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ইতিহাসজুড়ে দেখা গেছে, মানুষ সবসময়ই তার প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। কারণ মানুষ প্রকৃতিগতভাবে অভাব নিয়েই দুনিয়ায় এসেছে। দুইভাবে মানুষ বিপদগ্রস্ত হচ্ছে কিংবা বিপদে পড়ছে। এক. মানুষের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো ঠিকমতো চিহ্নিত না করা। দুই. ভুল পথে চাহিদা মেটানোর প্রবণতা।

এই দুই বিপদজনক পথ সঠিকভাবে অতিক্রমের জন্যই আল্লাহতায়ালা যুগে যুগে নবী-রাসুলদেরকে পাঠিয়েছেন। আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী নবীরা মানুষকে শিক্ষা দিতেন। যেমন কোরআনের বক্তব্য যদি মানুষ বুঝতে পারে এবং সেই অনুযায়ী আমল করে তাহলে তার শক্তিসামর্থ্য যেমন বাড়বে তেমনি পরিত্রাণ পাবে এবং যেকোনো বিপদ বা ভুল পথে পরিচালিত হওয়া থেকে নাজাত পাবে।

কোরআন মাজিদের সুরা হাদিদের ২০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা জেনে রাখো যে, দুনিয়ার জীবন ক্রীড়া-কৌতুক, শোভা-সৌন্দর্য, তোমাদের পারস্পরিক গর্ব-অহঙ্কার এবং ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে আধিক্যের প্রতিযোগিতা মাত্র।

এর উপমা হলো- বৃষ্টির মতো, যার উৎপন্ন ফসল কৃষকদের আনন্দ দেয়, তারপর তা শুকিয়ে যায়, তখন তুমি তা হলুদ বর্ণের দেখতে পাও, তারপর তা খড়-কুটায় পরিণত হয়। আর আখেরাতে আছে কঠিন আজাব এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর দুনিয়ার জীবনটা তো ধোকার সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়।’

বর্ণিত আয়াতটি আমাদের কাছে জীবনের বাস্তবতা তুলে ধরেছে এভাবে-
ক্ষণস্থায়ী দুনিয়া মোটেই ভরসা করার যোগ্য নয়। পার্থিব জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা কিছু হয় এবং যাতে দুনিয়াদার ব্যক্তি মগ্ন ও আনন্দিত থাকে, প্রথমে সেগুলো ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে পার্থিব জীবনের মোটামুটি বিষয়গুলো যথাক্রমে এই- প্রথমে ক্রীড়া, এরপর কৌতুক, এরপর সাজ-সজ্জা, এরপর পারস্পরিক অহমিকা, এরপর ধন ও জনের প্রাচুর্য নিয়ে পারস্পরিক গর্ববোধ।

উল্লেখিত ধারাবাহিকতায় প্রতিটি অর্থেই মানুষ নিজ অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে। কিন্তু কোরআন মাজিদ বলে যে, এ সবই হচ্ছে সাময়িক ও ক্ষণস্থায়ী।

প্রকৃতপক্ষে, কোরআন মাজিদের এই আয়াতে বলা হচ্ছে, ‘মানুষ যখন শিশু থাকে তখন সে খেলা করে, সে তার যৌবনকে উদ্দেশ্যহীনভাবে অতিবাহিত করে, তার যৌবনে সে পৃথিবীর সাজসজ্জা ও সৌন্দর্যে মগ্ন থাকে এবং তার মধ্য বয়সে ও বার্ধক্যে সে অহংকার এবং সম্পদ ও সন্তানদের নিয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়!’

তাই পৃথিবীটা একটা খেলা। এমতাবস্থায় খেয়াল রাখা, কোনোভাবেই ধোঁকায় না পড়া। আমরা যদি কোনো উচ্চ অবস্থানে পৌঁছি তাহলে অহংকারী না হওয়া, যদি পতন ঘটে কিংবা অবস্থা নীচের দিকে চলে যায়- তাহলেও নিরাশ না হওয়া।

আয়াতে বর্ণিত পাঁচটি বিশেষ শব্দ দিয়ে মানবজাতির জন্য তাদের বাস্তবতাকে এভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এতে বোঝানো হয়েছে এর প্রতিটিই হচ্ছে একেকটি ফাঁদ এবং মানুষ এসবে জড়িয়ে পড়ে।

;

৯ বছর পর উমরার সুযোগ পেলেন ইরানিরা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
গত ৯ বছরের মধ্যে ইরানি উমরাযাত্রীদের প্রথম দল উমরা পালনের জন্য সৌদি আরব যাচ্ছেন, ছবি : সংগৃহীত

গত ৯ বছরের মধ্যে ইরানি উমরাযাত্রীদের প্রথম দল উমরা পালনের জন্য সৌদি আরব যাচ্ছেন, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দীর্ঘ ৯ বছরের বিরতির পর পশ্চিম এশিয়ার দেশ ইরানের নাগরিকরা পবিত্র উমরা পালনের জন্য তেহরান থেকে পবিত্র মক্কা নগরীর উদ্দেশে যাত্রা করেছেন। সোমবার (২২ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৯ বছরের মধ্যে ইরানি উমরাযাত্রীদের প্রথম দল সোমবার পবিত্র উমরা পালনের জন্য সৌদি আরবের উদ্দেশে যাত্রা করেছে বলে ইরানের সরকারি বার্তাসংস্থা জানিয়েছে। মূলত সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই শক্তিশালী দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন হয়েছে।

এর আগে দীর্ঘদিন দূরে থাকার পর গত বছরের মার্চ মাসে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সম্মত হয় মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ ইরান ও সৌদি আরব। এর ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দেশের মধ্যে আবারও সম্পর্ক নতুন মাত্রা পায়। আর উভয় দেশের সম্পর্কের অগ্রগতির পেছনে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ছিল চীন।

২০১৬ সাল থেকে থেকে মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই বড় দেশের মধ্যে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল না। ওই বছর সৌদি আরব সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের দায়ে শিয়া ধর্মীয় নেতা শেখ নিমর আল নিমরসহ ৪৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর তেহরানের সৌদি দূতাবাসে হামলা হয়েছিল। আর তারপর দুই দেশের সম্পর্কে অবনতি ঘটে।

মূলত ইরানি বিক্ষোভকারীরা তেহরানে সৌদি দূতাবাসে হামলার পর ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে সৌদি আরব ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। তারপর থেকে সুন্নি এবং শিয়া-নেতৃত্বাধীন এই প্রতিবেশীদের মধ্যে উত্তেজনা প্রায়ই জারি ছিল। এই দুই দেশ একে অপরকে নিজের আঞ্চলিক আধিপত্যের জন্য হুমকি হিসাবে বিবেচনা করে থাকে।

এ ছাড়া সিরিয়া এবং ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধসহ বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক সংঘাতে ইরান ও সৌদি একে অপরের বিরোধী পক্ষ হয়ে কার্যত পরোক্ষ লড়াইয়ে নিয়োজিত ছিল। আর তাই সুন্নি-সংখ্যাগরিষ্ঠ সৌদি আরব এবং শিয়া নেতৃত্বাধীন ইরানের মধ্যে উত্তেজনা ছিল প্রায়ই অনেক বেশি।

গত বছর সম্পর্ক পুনরায় শুরু হওয়ার আগে ইরানিরা শুধুমাত্র হজপালন করতে সৌদি আরব যেতে পারত।

রয়টার্স বলছে, তেহরানের প্রধান বিমানবন্দরে ৮৫ জন উমরাযাত্রীর বিদায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইরানে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ বিন সৌদ আল আনজি।

;