কলকাতায় অনুষ্ঠিত হলো বাংলা কবিতা উৎসব



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

কলকাতা: কলকাতা থেকে প্রকাশিত সাংস্কৃতিক খবর সাহিত্যপত্রের আয়োজনে ৩৪ ও ৩৫তম বাংলা কবিতা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গত ৪ ডিসেম্বর। অনুষ্ঠানটির উদ্বোধন করেন কবি কমল দে সিকদার।

উদ্বোধন করে কবি কমল দে সিকদার বলেন, এত বছর ধরে একক উদ্যোগে একটা লিটিল ম্যাগাজিন কীভাবে চালাচ্ছেন সম্পাদক কাজল চক্রবর্তী ভাবলে আশ্চর্য হতে হয়, শুধু তাই নয় এই পত্রিকার প্রায় প্রতিটি সংখ্যা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এত সমৃদ্ধ হয়ে প্রকাশিত হয়, সচেতন পাঠক সংগ্রহে রাখতে বাধ্য হন। আরও বিস্ময়ের জায়গা এই যে একটা লিটিল ম্যাগাজিন কী করে পাঁচ হাজার টাকা অর্থমূল্যের সাহিত্য-পুরস্কার দেয়।

উৎসবের শুরুতে পৃথিবীজুড়ে কোভিডে মৃত মানুষদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

উৎসবটি হওয়ার কথা ছিল ৪ ও ৫ ডিসেম্বর। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে একদিনে সীমাবদ্ধ রাখা হয়। সূচনা হয়েছিলো ১৯৮৭ সালের ২০ ডিসেম্বর। ভারত-বাংলাদেশের কবিদের নিয়ে এই উৎসব হয়ে আসছে। এ বছর সল্টলেকের পূর্বশ্রী প্রেক্ষাগৃহে কোভিড বিধি মেনে অনুষ্ঠিত হলো ৩৪-৩৫তম বাংলা কবিতা উৎসব।

প্রধান অতিথি রথীন কর তার অভিভাষণে বলেন, কাজল চক্রবর্তীর এসব কাজের পাশাপাশি যে কাজটি আমাকে মুগ্ধ করে সেটি হলো বিভিন্ন ব্যক্তিকে নিয়ে সম্পাদিত প্রামাণ্য গ্রন্থগুলো।

সাংস্কৃতিক খবরের ১৭৪তম উৎসব সংখ্যাটির আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন করেন মাসুদ করিম এবং কাজল চক্রবর্তীর হাইকু কাব্যগ্রন্থটির আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন করেন কবি রুনা রায়।

সম্পাদকের কিছুকথা বলতে গিয়ে কাজল চক্রবর্তী জানান, ১৯৯৬ সাল থেকে পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্র আমাদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রেক্ষাগৃহ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছে। আপনারা জানেন শহর কোলকাতায় এক বছর আগেই কোন হল পাবার নিশ্চয়তা কেউ জোগাড় করতে পারে না। পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্র আমাদের জন্য সেটা করে, আমি আজ জানিয়ে রাখছি আগামী বছরের ডিসেম্বর মাসের প্রথম রোববার ৩৬তম বাংলা কবিতা উৎসব হবে এখানেই। এবছরে উৎসব দুদিন হবার কথাছিলো, প্রকৃতি যে দুর্যোগের ঘনঘটা আমাদের মাতিয়ে রেখেছে, সেখানে আগামীকাল উৎসবের ঘোষণা ফিরিয়ে নিলাম। আজকেই ৩৪-৩৫তম বাংলা কবিতা উৎসব শেষ হবে। আপনারা ভাবতেই পারেন কবিতা হলো একান্তে পাঠের বিষয়, সেখানে উৎসব কেন? হ্যাঁ আমিও আপনাদের সঙ্গে সহমত, কবিতা নিয়ে উৎসব হয় না তবে এই ‘উৎসব’ শব্দটি কেন? উৎসব শব্দটি আমাদের বিভিন্ন কবির স্বকণ্ঠের সঙ্গে পরিচয় ঘটায়, আর যেটা হয় সেটা মেলবন্ধন। মাতৃভাষার দেশ বাংলাদেশ থেকে যারা এসেছেন তারা আমাদের ভালোবেসে নিজ দায়িত্বে এসেছেন। আমার সামান্য সামর্থে আমি বাংলাদেশের কবিদের এক হাজার টাকা ও পশ্চিমবাংলার কবিদের ২শ’ টাকা দিয়ে সঙ্গে স্মারক, সাংস্কৃতিক খবরের উৎসব সংখ্যা দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবো।

বাংলা কবিতা উৎসবে প্রদত্ত হয় সাংস্কৃতিক খবর পদক’, ‘বিষ্ণু দে পুরস্কার’ ও ‘সমীর চন্দ পুরস্কার’। ভিসার জটিলতার কারণে কবি মাহমুদ কামাল ও কবি সাবেদ আল সাদ ২০২১ সালের ‘বিষ্ণু দে পুরস্কার (২০২১)’ নিতে আসতে পারেননি। একই কারণে ‘সাংস্কৃতিক খবর পদক (২০২১) গ্রহণ করতে পারেন নি কবি ও সাংবাদিক আবদুর রশীদ চৌধুরী। ২০২০ সালের ‘বিষ্ণু দে পুরস্কার গ্রহণ করেন কবি গৌরশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রহণ করে তিনি জানান, পেশায় চিকিৎসক হলেও আমাদের সাহিত্যের পাঠ নিতে হতো, সেই পাঠ নিতে গিয়ে আমি শ্রদ্ধেয় কবি বিষ্ণুদের ছাত্র ছিলাম একসময়, তার নামাঙ্কিত এই পুরস্কার আমাকে আরো ভালো লেখার প্রেরণা জোগাবে। সাংস্কৃতিক খবর পদক (২০২০) প্রতিনিধি মারফৎ গ্রহণ করেন কবি স্বপন রায়।

উৎসব মঞ্চে এবছর প্রথম প্রদান করা হয় ‘সমীর চন্দ পুরস্কার-২০২১’। এই পুরস্কার প্রবর্তনের বিষয়ে সাংস্কৃতিক খবর সম্পাদক কাজল চক্রবর্তী জানান, সমীর আমার স্কুলের বন্ধু, স্কুলের পাঠ শেষ করে সমীর আর্ট কলেজে ভর্তি হয়। শৈশব থেকেই ওর আঁকার প্রতি ঝোক ছিলো সেটা আভিধানিক হয় আর্ট কলেজের পাঠান্তে। একসময়ে বোম্বের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে বিখ্যাত আর্ট ডিরেকটার হিসেবে নিজের জায়গা করে নেয় সমীর। ওর জীবদ্দশায় সর্বশেষ শিল্প নির্দেশিত ফিল্ম দুটি হলো ‘রাবন’ ও ‘মনের মানুষ’। ওঁর অকাল প্রয়াণে এবছর থেকে ‘সমীর চন্দ পুরস্কার’ চালু হলো। এই পুরস্কার গ্রহণ করেন মাসুদ করিম ড. আনিসুজ্জামানকে নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র ‘বাতিঘর’র জন্য।

ছবি: বার্তা২৪.কম

পুরস্কার গ্রহণ করে তিনি জানান, সমীর চন্দ পুরস্কার অবশ্যই আমাকে আরো ভালো কাজ করতে প্রেরণা দেবে। ধন্যবাদ জানাচ্ছি সাংস্কৃতিক খবরকে আমাকে নির্বাচন করার জন্য। পরের পর্বে বাংলাদেশ থেকে আগত চারজন কবি জরিনা আখতার, নাসরীন সুলতানা, সৈয়দা নাজনীন আখতার, ইসমত জেরিন স্মিতা একসঙ্গে মঞ্চে ওঠেন। জরিনা শুরু করেন কবিতা, কানে জেগে থাকে সেই অমোঘ লাইন ‘রঙিন ঘুড়ি ওড়াতে চায় মন’। ইসমত জেরিন স্মিতা একপা এগিয়ে বলেন, “সময়কে আলিঙ্গন করে সে আমার প্রেম।

পরের পর্বে কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের জেলার কবিরা মঞ্চে উঠে আসেন। সৌমিত বসু কবিতা পড়াবার আগে জানান, যে সময়ে মুড়িমুড়কির মতো কবিতা নিয়ে উৎসব হতো না সেইসময়ে এই কবিতা উৎসব ছিলো, আজ এত বছর ধরে চলমান এই উৎসবে ইতিহাস জড়িয়ে আছে। ইতিহাসের অন্য দিকটা এইরকম আমাদের আশির দশককে একা সাংস্কৃতিক খবরের সম্পাদক কাজল চক্রবর্তী পাদপ্রদীপের আলোয় এনেছে, কাজলের উপন্যাস, গল্প, কবিতা কতদূর কী থাকবে সেটা আমরা কেউই জানি না, মহাকাল জানে, কিন্তু যেটা আমরা জানি আশির দশকের জন্য কাজলের এই পরিশ্রম সবাই মনে রাখতে বাধ্য। একে একে আশির দশকের সুমিত্রা দত্তচৌধুরী, অলোক বিশ্বাস, অদীপ ঘোষ, গৌতমকুমার দে, কাশীনাথ দাস চাকলাদার, পীযূষ বাকচি, পঙ্কজ মন্ডল প্রায় এক রকমের কথা বলেন, পড়েন কবিতা।

পরের পর্বে মঞ্চে আসেন অমল কর, বিমল রায়, সসীমকুমার বাড়ৈ, খগেশ্বর দাস, রুহুল আমিন হক মন্ডল, অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়, নবনীতা বসু হক, তাজিমুর রহমান, ভবানীশংকর চক্রবর্তী ও মোহাম্মদ সাদউদ্দীন।

শেষের ঠিক আগের পর্বে কবিতা পড়েন দর্পণা গঙ্গোপাধ্যায়, অভিজিৎ বিশ্বাস, শ্রী পিনাকী রায়, অনিমেষ চন্দন, শঙ্খশুভ্র পাত্র, শোভন বিশ্বাস, সন্দীপ জানা, অনিন্দিতা মুখার্জী সাহা, অনিমেষ রায়, মৃন্ময় ভৌমিক, শ্রীরাজীব দত্ত, মধুবন চক্রবর্তী, রীতা বেরা পাল ও প্রলয় বসু। সকলেই কবিতা পাঠে স্বমহিমায় উজ্জ্বল ছিলেন। শেষ পর্বে মঞ্চে আসেন সল্টলেকের বাসিন্দা কবি রথীন কর, ইমানুল হক, অনিল দা ও কাজল চক্রবর্তী। প্রত্যেকেই তাদের পাঠে ছিলেন অনন্য। এঁদের কবিতা পাঠের আগে মঞ্চে আসীন বাংলাদেশ সরকারের প্রথম সচিব (প্রেস) শ্রী রঞ্জন সেনকে ফলক, পত্রিকা ও গ্রন্থ দিয়ে বরণ করে নেন রীতা বেরা পাল।

উৎসব উদ্বোধনের কথা ছিলো শ্রী সেনের, বিশেষ কাজে আটকে পড়ায় তিনি দেরিতে আসেন। তার শুভেচ্ছা ভাষণে জানান, আমি এই রকম উদ্যোগে সামিল হতে পেরে খুশি, বাংলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সুযোগ্য কন্যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে বর্তমান বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে, সেই রাষ্ট্রটির ভাষাও বাংলা। এটাও বাংলা কবিতা উৎসব। এখানে বাংলাদেশের কবিদের উপস্থিতির কথাও জানলাম। আমি একটা বিশেষ কাজে আটকে পড়ায় সময়মতো আসতে পারিনি, আমাকে মার্জনা করবেন। আমি এই বাংলা কবিতা উৎসবের উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি কামনা করছি।

ঘড়ির কাটা সে সময়ে রাত ৮টা পার করে ফেলেছে, উৎসব শেষ করার আগে কাজল চক্রবর্তী উপস্থিত সকলকে মঞ্চে ডেকে নেন, কবি নাসরীন সুলতানার আনা ঢাকার মিষ্টি দিয়ে সকলকে আপ্যায়ন করে ৩৪ ও ৩৫তম বাংলা কবিতা উৎসব শেষ হয়।

   

নজরুল চর্চার স্বীকৃতিতে সম্মানিত সোমঋতা মল্লিক



কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
নজরুল চর্চার স্বীকৃতিতে সম্মানিত সোমঋতা মল্লিক/বার্তা২৪.কম

নজরুল চর্চার স্বীকৃতিতে সম্মানিত সোমঋতা মল্লিক/বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease
 
ছায়ানট (কলকাতা) নজরুল চর্চায় নিবেদিত অগ্রণী প্রতিষ্ঠান। সভাপতি শিল্পী সোমঋতা মল্লিকের নেতৃত্বে শুধু ভারত বা বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে ছায়ানট।
 
নজরুল জীবন ও সাহিত্যকর্মের নিরিখে বছরব্যাপী অনুষ্ঠান পালনের পাশাপাশি ছায়ানট প্রকাশ করেছে নতুনের গান, জীবনীভিত্তিক ক্যালেন্ডার ও বর্ণময় প্রকাশনা। গবেষণা করছে নজরুল জীবনের গুরুত্বপূর্ণ প্রপঞ্চ।
 
কলকাতায় নজরুল স্মৃতিধন্য জনপদ ও স্থাপনাসমূহকে ধ্বংস, দখল ও অবলুপ্তির কবল থেকে রক্ষা করার কৃতিত্ব ছায়ানটের। সেসব স্থানে তথ্য ফলক দিয়ে সংরক্ষণের আওতায় এনেছে সংগঠনটি।
 
নজরুল জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে আলীপুর জেল কিংবা রাঁচি মানসিক হাসপাতাল ছিল তাৎপর্যবাহী। ছায়ানট সেসব স্থানে নজরুল কর্নাল ও তথ্যফলক দিয়ে নজরুলের সংগ্রামমুখর জীবনের ঐতিহাসিক পরম্পরাকে সজিব রেখেছে।
 
নজরুলচর্চায় নিবেদিত ছায়ানট (কলকাতা) - এর সভাপতি সোমঋতা মল্লিক স্বীকৃতি পেয়েছেন কলকাতার 'অন্বেষণ পরিবার' নামক সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সাহিত্য সংগঠন কর্তৃক। তাকে এ উপলক্ষে সম্মান প্রদান করেন সংগঠনের শ্রী অমিতাভ। 
 
বার্তা২৪.কম'কে শিল্পী সোমঋতা মল্লিক বলেন, 'যেকোনো সম্মাননা কাজের প্রণোদনা আরো বাড়িয়ে দেয়। বিশ্বময় নজরুল চর্চা এগিয়ে চলুক, এই প্রত্যাশায় আমি ও ছায়ানট কাজ করে যাবে।'
 
;

কলকাতায় দুদিনব্যাপী 'নজরুল কবিতা উৎসব'



কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
কলকাতায় দুদিনব্যাপী 'নজরুল কবিতা উৎসব'

কলকাতায় দুদিনব্যাপী 'নজরুল কবিতা উৎসব'

  • Font increase
  • Font Decrease

গত ৪ এবং ৫ এপ্রিল রবীন্দ্র সদন চত্বরে অবনীন্দ্র সভাগৃহে ছায়ানট (কলকাতা) - এর উদ্যোগে 'নজরুল কবিতা উৎসব ২০২৪' অনুষ্ঠিত হয়। দু দিনে শতাধিক শিল্পী একক/দলীয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। বিকেল ৫টা-রাত্রি ৯টা অনুষ্ঠিত হয় এই কবিতা উৎসব।

পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ছায়ানটের সভাপতি সোমঋতা মল্লিক। নজরুল কবিতা উৎসবের উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট কবি এবং পশ্চিমবঙ্গ কবিতা আকাদেমির সভাপতি
মাননীয় সুবোধ সরকার। ৪ এপ্রিল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. শেখ কামাল উদ্দীন, অধ্যক্ষ- হিঙ্গলগঞ্জ মহাবিদ্যালয় ও সভাপতি- নজরুল চর্চা কেন্দ্র। তাঁর আলোচনার বিষয় ছিল 'বাংলা সাহিত্যে অভিনবত্বের দিশারী নজরুল'। ৫ এপ্রিল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. শেখ মকবুল ইসলাম (ডি. লিট.), বিভাগীয় প্রধান, বাংলা বিভাগ, সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল মিশন কলেজ, কলকাতা'। কাজী নজরুল ইসলামের ব্যক্তিগত জীবনের পাশাপাশি তাঁর সৃষ্টি নিয়ে গবেষণার অনেকখানি অবকাশ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন ড. শেখ মকবুল ইসলাম।

একক পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করেন ঊর্মিলা সেন, অতসী নন্দ গোস্বামী, বর্ণালী সরকার, পীতম ভট্টাচার্য, শম্পা দাস,
তাপস চৌধুরী, সুদীপ্ত রায়, শম্পা বটব্যাল, শুভদীপ চক্রবর্তী, নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যায়, আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবযানী বিশ্বাস, ইন্দ্রাণী লাহিড়ী, শাশ্বতী ঘোষ, দেবলীনা চৌধুরী, সৌমিতা নস্কর, মিতালী ভট্টাচার্য্য, সুকন্যা রায়, তৃষিতা সাহা, এরিসা কামিলা, ইনশ্রী নাথ, শতাক্ষী নাথ, সোনালী চট্টোপাধ্যায়, মোনামি সামন্ত, দোয়েল চ্যাটার্জী, চিত্রা সোম বাসু, গোপা ভট্টাচার্য্য রায়, ইন্দ্রাণী নাগ, ডক্টর সৌমিত্র নারায়ণ শূর, মিতালী মুখার্জী, দীপ্তি বর্মন, অন্বেষা মুখার্জী, রাকা দাস, দেবলীনা দাশগুপ্ত, শর্মিলা মাজী, মোনালিসা শীল, অপর্না চক্রবর্তী, দীপিকা গোস্বামী, পাপিয়া ভট্টাচার্য, সৃজিতা ঘোষ, শাশ্বতী বাগচী, প্রাযুক্তা চক্রবর্তী, জয়িতা দত্ত এবং রুনা মুখার্জি।

দলীয় পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করেন ছায়ানট (কলকাতা), আন্তরিক, বরানগর প্রতিশ্রুতি, নৈহাটি বঙ্কিম স্মৃতি সংঘ, আরশি হরিণঘাটা, প্রেরণা আবৃত্তি অনুশীলন কেন্দ্র, আমরা অ আ ক খ স্বরবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণ, অন্বেষণ, কাব্যপথিক, শ্রুতিবৃত্ত, আবৃত্তিওয়ালা, শৃণ্বন্তু, বৈখরী, পাঠশালা, অনন্ত উড়ান, অনুরণন, চেতনা, শ্রুতিকথন, যাদবপুর কথাছন্দ এবং প্রতিধ্বনি - এর শিল্পীবৃন্দ।

সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন সোমা মুখোপাধ্যায়, অপরাজিতা মল্লিক, দেবলীনা চৌধুরী এবং রাকা দাস।

ছায়ানটের সভাপতি সোমঋতা মল্লিক বলেন, "এ বছর দ্বিতীয়বারের মতো আমরা 'নজরুল কবিতা উৎসব' - এর আয়োজন করলাম। আমাদের প্রাণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টি নিয়ে ২ দিন ব্যাপী এই বিশেষ আয়োজনে বাচিকশিল্পীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আমরা আপ্লুত।
অনেক বাচিক শিল্পীকে আমরা সুযোগ দিতে পারিনি, আমরা সত্যিই ক্ষমাপ্রার্থী, আগামী বছর আরও বেশীদিন ধরে এই আয়োজন করার চেষ্টা করব। কাজী নজরুল ইসলামের লেখা জনপ্রিয় কবিতার পাশাপাশি বেশ কিছু স্বল্পশ্রুত কবিতা আমরা শুনতে পেলাম এই কবিতা উৎসবে - এখানেই আয়োজনের সার্থকতা।"

;

বয়সের ভারে শীর্ণ, তবু আজ ও ছুটেছে ১৫১ বছরের ট্রাম



ঋত্বিক মুখোপাধ্যায়, কলকাতা
-কলকাতার রাজপথে এখনও ছুটে চলছে ট্রাম

-কলকাতার রাজপথে এখনও ছুটে চলছে ট্রাম

  • Font increase
  • Font Decrease

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বদলেছে সবকিছু। হয়েছে বিবর্তন। পুরনোকে বিদায় জানিয়ে নুতনকে স্বাগত জানিয়েছে মানুষ। পুরনো যা কিছু এখন দেখা যায় জাদুঘরে কিংবা কারও ব্যক্তিগত সংগ্রহে। একইভাবে সময়ের সঙ্গে তাল রেখে বদলেছে এক সময়ের ভারতবর্ষের রাজধানী কলকাতা । সময়ের পরিবর্তনে এখন যা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের প্রধান শহর।

অন্য আর পাঁচটা শহরের মত গতি পেয়েছে কল্লোলিনী কলকাতা। তবে ১৫১ বছর আগের কলকাতার একটা খন্ডচিত্রের অংশ ট্রাম এখনও দিব্যি চলছে কলকাতার বুকে । গেল ২৪ ফেব্রুয়ারি ছিল কলকাতার ট্রামের জন্মদিন । ১৮৭৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ আমলে প্রথমবার শুরু রাস্তা দিয়ে চলে ঘোড়ায় টানা কাঠের ট্রাম।

শিয়ালদা থেকে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত প্রথমবার ছুটেছিল সেই ট্রাম। এই বছর কলকাতার সেই ট্রাম যাত্রা পা রাখতে চলেছে একশো একান্ন বছরে ৷ তবে প্রযুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ট্রামেরও বিবর্তন হয়েছে। ১৯০২ সালের ২৭ মার্চ ধর্মতলা খিদিরপুর-রুটে প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রাম চলেছিল।

অনেকেই হয়তো জানেন না যে, ভারতে কলকাতা ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি শহরে একসময় চলত ট্রাম ৷ কলকাতার পর তৎকালীন মাদ্রাজ, দিল্লি, বোম্বে, কানপুর, ভাভনগর, নাসিক এবং পাটনাতেও শুরু হয়েছিল ট্রাম পরিষেবা। এমনকী ব্রিটিশ ইন্ডিয়ায় করাচি এবং কলম্বোতেও ছিল ট্রাম পরিষেবা। তবে সেগুলি সবই পরে বন্ধ হয়ে যায়। কল্লোলিনী কলকাতার জীর্ণকায়ে ট্রাম কোনওমতে বাঁচিয়ে রেখেছে নিজের অস্তিত্ব।

একসময় রমরম করে স্বমহিমায় শহরের বুক চিঁড়ে ঘণ্টির শব্দ করে দৌঁড়ে যেত ট্রাম ৷ সেই দৃশ্য এখন বড়ই বিরল । ঠাণ্ডা ঘরে ঢুকেছে ট্রামের ভবিষৎ । তাই বোধহয় ট্রামের ১৫১ বছর নিয়ে মানুষের মধ্যে উৎসাহ একেবারেই নেই । তবে শহরের ট্রামপ্রেমী সংগঠন ক্যালকাটা ট্রাম ইউজারস অ্যাসোসিয়েশন, ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন ও ট্রাম যাত্রা বলে একটি সংগঠনের উদ্যোগে এই উপলক্ষ্যে এক বিশেষ উদ্যোগ নেয়।

কলকাতায় ট্রাম পরিবহণ ব্যবস্থা অন্যান্য দেশের ট্রাম নেটওয়ার্ক তুলনায় অনেকটাই অন্যরকম। শতাব্দী প্রাচীন এই ট্রামগুলি এখনও পরিষেবা দিয়ে চলেছে । সাধারণ মানুষের মতে শুধুমাত্র ট্রামকে উন্নত করলেই চলবে না। ট্রাম এবং অন্যান্য পরিবহণ ব্যবস্থা যাতে একে অপরের সমস্যা সৃষ্টি না-করে পরিষেবা দিতে পারে সেইভাবে পরিকল্পনা করতে হবে ।

ট্রামের তার দেখিয়ে মহানগর কলকাতার পরিচয় তুলে ধরতে চেয়েছিলেন সত্যজিৎ। কিন্তু কলকাতার পরিচয় বহনকারী সেই ট্রাম এখন যেন ‘ফেয়ারওয়েল’ পাওয়ার অপেক্ষায়। দেড়শো বছর ধরে শহরের ‘ঐতিহ্য’ হয়ে থেকে গেলেও ‘হেরিটেজ’ তকমা জোটেনি তার।

;

হুগলির কোন্নগরে অনাদরে ভাষাশহিদ শফিউরের জন্মভিটা!



ঋত্বিক মুখোপাধ্যায়, কলকাতা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি’ ১৯৫২ সালের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকা শহরের একদল দামাল ছেলে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে বর্বর পাকিস্তানি পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দিয়েছিলেন। রক্তে ভেসে গিয়েছিল ঢাকার রাজপথ। সেইদিন স্মরণে ১৯৯৯ সালের ৭ নভেম্বর জাতিসংঘ ২১ ফেব্রুয়ারিকে 'আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সারা পৃথিবীর মানুষ এই দিনটিকে 'ভাষা দিবস' হিসেবে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

সেদিনের সেই রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের যে বীর শহিদেরা মাতৃভাষার সম্মানার্থে প্রাণ দিয়েছিলেরন, তাদের মধ্যে ছিলেন রফিক, জব্বার , শফিউর, সালাম, বরকতের মতোন যুবক। তাদের মধ্যে শফিউর রহমান ছিলেন ওপার বাংলার মানুষ। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার কোন্নগরের কাছে জিটি রোডের ওপর এখনো তাদের বাড়িটি শহিদের জন্মভূমি হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে অত্যন্ত অবহেলায় ও অনাদরে!

অত্যন্ত আক্ষেপের বিষয় একজন ভাষাশহিদের জন্মভিটা আজ ধ্বংসের মুখে। ১৯১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি এই মহান ভাষাশহিদের জন্ম হয় কোন্নগরে। শফিউর রহমানের বাবা ছিলেন ঢাকার পোস্ট অ্যান্ড টেলিগ্রাফ অফিসের সুপারিনটেনডেন্ট। কোন্নগর হাইস্কুলে পড়া শেষ করে কলকাতা গভর্মেন্ট কমার্শিয়াল কলেজ থেকে আইএসসি পাস করার পর ১৯৪৮ সালের শফিউররা সপরিবারে ঢাকায় চলে যান। ঢাকা হাইকোর্টে কেরানির পদে কর্মরত ছিলেন তিনি। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে মাতৃভাষাকে রাষ্ট্র ভাষার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যান্যদের সঙ্গে সামিল হয়েছিলেন শফিউরও।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪৪ ধারা অমান্য করে রফিক, জব্বার,সালাম, বরকত, শফিউরসহ হাজারও ভাষাপ্রেমী মানুষ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। সেদিনের সেই বিক্ষোভ সমাবেশে ঢাকা শহরের মানুষ শামিল হয়েছিলেন। ক্ষিপ্ত পাকিস্তানি পুলিশ সেই বিক্ষোভকে ছত্রভঙ্গ করতে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে দামাল ছেলেদের দেহ মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিল। সেদিন প্রভাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা রক্তের নদীতে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু তাতেও দমেনি বিক্ষোভ সংগ্রাম। তাদের সেই মরণপণ সংগ্রাম আরো তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছিল। অবশেষে, ১৯৫৪ সালের ৭ মে পাকিস্তান সরকার বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তারপর থেকেই এপার ওপার দুই বাংলা মিলিয়ে এই দিনটি শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করে আসছে। কিন্তু সব থেকে বড় আক্ষেপের বিষয়, সেদিনের সেই মরণপণ সংগ্রামের অন্যতম যোদ্ধা শফিউর রহমান যার জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলিতে, তাঁর সেই জন্মভিটাটি আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে অত্যন্ত অনাদর ও অবহেলায়।

সম্প্রতি, যখন পশ্চিমবঙ্গের বড় বড় দেশপ্রেমী মনীষীদের স্মরণে রাখতে তাঁদের জন্মভূমি এবং কর্মক্ষেত্রগুলি সরকার স্বীকৃতি দিয়ে তীর্থস্থানে পরিণত করেছে, কিন্তু সেই ১৯৫২ সালে ঢাকার মাটিতে শহিদ হওয়া সফিউর রহমানের কথা আজ আর কেউ আর মনে রাখেননি। যে বিদ্যালয়ে শফিউর পড়াশোনা করেছেন, পৌরসভার পক্ষ থেকে সেই কোন্নগর হাইস্কুলের একপাশে জিটি রোডের ধারে ছোট্ট একটি শহিদ বেদি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সেখানেই প্রতিবছর গুটিকয়েক মানুষ যারা শফিউর রহমানকে চেনেন, ভাষা আন্দোলনের বীরগাথার কথা জানেন, তারা ’২১-এর সকালে কয়েক মুঠো ফুল দিয়ে শহিদবেদিতে তর্পণ করেন।

কোন্নগরবাসীর অত্যন্ত আক্ষেপ, এই শহরে এত বড় একজন ভাষা শহিদ জন্ম নিয়েছিলেন, শিক্ষার প্রথম পাঠ হিসেবে এখানকার কোন্নগর হাইস্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন, তাঁর কথা আজ আর কেউই মনে রাখেননি। স্থানীয়দের দাবি, শফিউরের বাড়িটি অন্তত সংরক্ষণ করা হোক অথবা তাঁর স্মরণে এই শহরে যদি একটি মিনার তৈরি করা হয়, তাহলে ভৌগলিক সীমানা অতিক্রম করে আপামর বাঙালি সেই গৌরবের অংশীদার হতে পারবেন। সেইসঙ্গে অমরত্ব পাবে ভাষা সংগ্রামের ইতিহাসও!

;