প্রয়াত হলেন মতুয়া সঙ্ঘের বড়মা  

  • কলকাতা করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

প্রয়াত হলেন মতুয়া সঙ্ঘের বড়মা   

প্রয়াত হলেন মতুয়া সঙ্ঘের বড়মা  

স্বামীর মৃত্যুর পর মতুয়া সম্প্রদায়ের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন বড়মা তথা বীণাপানি দেবী। অবশেষে ঘটল সেই দায়িত্ব থেকে অব্যহতি। চলে গেলেন শতায়ু বীণাপানি দেবী। দীর্ঘ রোগভোগের পর প্রয়াত মতুয়া সম্প্রদায়ের বড়মা।

ধর্মক্ষেত্রে দাবি আদায়ের আন্দোলন, আর সেই আন্দোলনের সিঁড়ি বেয়েই ঠাকুরবাড়িতে আশ্রয় নেয় রাজনীতি। ভারতের নাগরিকত্বের দাবিতে কখনও কলকাতার এসপ্ল্যানেডে, কখনও উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরেই অনশনে বসেছিলেন বীণাপানি দেবী। তবে এই লড়াইয়ের ইতিহাসটা আজকের নয়, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় থেকেই। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনেও ছিল পদচারণ। শেষ হল একটা সেই যুগ।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Mar/06/1551811869659.jpg

মতুয়া সম্প্রদায়ের অধিকার আদায়ে সুদীর্ঘ লড়াই। একইভাবে লড়াইটা বজায় ছিল বয়সের সঙ্গেও, অসুস্থতার সঙ্গেও। তবুও তিনি ছিলেন, এটাই যেন স্বস্তি দিচ্ছিল ভারত ও বাংলাদেশ মিলিয়ে পাঁচ কোটি ভক্তকে, পশ্চিমবাংলার কয়েক কোটি মতুয়া ধর্মালম্বী মানুষকে। শেষের কটা দিন চলাফেরা, কথাবার্তা বন্ধ হয়ে যায়। অবশেষে জীবনশিখা নিভল। চলে গেলেন বড়মা

১৯১৯ সালে অবিভক্ত বাংলাদেশের বরিশালের জব্দকাঠি গ্রামে জন্ম বীণাপানি দেবীর। সমাজের নিয়ম মেনেই খুব অল্প বয়সে বিয়ে হয় ফরিদপুরের ওরাকান্দির প্রমথরঞ্জন ঠাকুরের সঙ্গে। দেশভাগের পর ইছামতী পেরিয়ে স্বামীর সঙ্গে বনগার অশোকনগরের ঠাকুরনগরে চলে আসেন। শুরু হয় নতুন অধ্যায়। বীণাপানি দেবী যখন অশোকনগরে এলেন, তার আগেই ওপার বাংলায় পথ চলা শুরু করে মতুয়া সম্প্রদায়। ফরিদপুরের কৃষক পরিবারের সন্তান হরিচাঁদ ঠাকুর প্রবর্তন করেছিলেন বৈষ্ণব ধর্মের নতুন এই শাখা। হরিচাঁদের ছেলে গুরুচাঁদ তৈরি করেন মতুয়া সংগঠন। আর সেই সংগঠনকেই বিস্তার করেছিলেন বীণাপানি দেবী ও তাঁর স্বামী প্রমথরঞ্জন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Mar/06/1551811890395.jpg

দেশভাগের পর ঠাকুরনগরই হয়ে ওঠে মতুয়াদের নতুন ধর্মক্ষেত্র, নতুন ঠিকানা। অধিকার আদায়, নাগরিকত্ব আদায়। ধর্মক্ষেত্রে দাবি আদায়, স্বাভাবিকভাবেই ঠাকুরবাড়িতে প্রবেশ করে রাজনীতি। যদিও রাজনীতির ইতিহাসটা অনেক আগের। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ।  ১৯৪৬ প্রমথরঞ্জন ঠাকুর গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত। ১৯৫২ কংগ্রেসের সাংসদ নির্বাচিত হন প্রমথরঞ্জন ঠাকুর। হাঁসখালির বিধায়কও হন।

স্বামীর মৃত্যুর পর মতুয়া সম্প্রদায়ের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন বীণাপানি দেবী। মতুয়া সম্প্রদায়ের অধিকাংশরই নাগরিকত্ব নেই। দাবি আদায়ে অনশনেও বসেন বড়মা। বাম আমলে কলকাতার  ধর্মতলায় সেই আন্দোলনে আশ্বাস মিলেছিল বটে, তবে তা পূরণ হয়নি। তারপর থেকে প্রতি ভোটে, বারবার ঠাকুরবাড়ির উঠোনে পা রেখেছে রাজনীতি। ভোট মিটতেই ফের হারিয়েছে ভোটপাখিরা। কিন্তু কেউই মতুয়াদের উপেক্ষা করার সাহস দেখাতে পারেনি। হবে নাই বা কেন, রাজ্যের ২৯৪ বিধানসভা আসনের মধ্যে  প্রায় ৬০টি আসনে ফ্যাক্টর মতুয়ারাই।

পশ্চিমবাংলার ৪২টি লোকসভা আসনের প্রায় ৬ থেকে ৭ আসনেও ফ্যাক্টর। রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ঠাকুরবাড়ির আরও কাছে চলে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনার্জী। বারবার ছুটে গিয়েছেন বড়মাকে দেখতে। যা বজায় ছিল শেষ দিন পর্যন্ত। এই বড়মার আশীর্বাদ নিতে ৩ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরবাড়ি  ছুটে এসেছেন খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আবার এই রাজনীতির কারণেই ফাটল ধরেছে ঠাকুরবাড়ির অন্দরেও। তবুও অটল ছিলেন বড়মা। শেষ হল সেই লড়াই। শেষ হল একটা যুগ।

বুধবার তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় এমনই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, টু্ইটে শোকবার্তা জানিয়েছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী।