প্রতিবেশীকে ফাঁসাতে নিজের স্বামীকে গলা কেটে হত্যা
যশোরের মণিরামপুরের কৃষ্ণবাটি গ্রামের আকবর আলী গাজী হত্যা মামলায় স্ত্রী হালিমা খাতুনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছে সিআইডি পুলিশ।
হালিমা খাতুন একই গ্রামের মৃত শামছুদ্দিন গাজীর মেয়ে।
হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ৫ জনের অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে। মামলার তদন্ত শেষে আদালতে এ চার্জশিট জমা দিয়েছেন সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক সুব্রত কুমার পাল।
জানা যায়, আসামি হালিমা খাতুনের বাবার বাড়ি ও শ্বশুর বাড়ি পাশাপাশি। হালিমা খাতুনের ভাই মিনাজ কাশেমের সাথে প্রতিবেশী আব্দুল হাইয়ের পরিবারের প্রায় ঝগড়া হতো। আব্দুল হাই ও তার পরিবারের লোকজন ঝগড়া হলেই মিনাজ কাশেমের বংশ তুলে গালিগালাজ করত। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে মারামারির ঘটনায় আব্দুল হাই বাদী হয়ে মিনাজ কাশেমসহ তিনজনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। মামলাটি ১৪ হাজার টাকায় মিমাংসা করেন মিনাজ কাশেম। এদিন টাকা না থাকায় আব্দুল হাই জোর করে একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে নিয়েছিল মিনাজ কাশেমের। এনিয়ে বিরোধ চরমে পৌঁছে।
ওই বছরের ১৭ নভেম্বর রাতে মিনাজ কাশেমের দুলাভাই আকবার আলী ও তার বোন হালিম রাতে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়ে। গভীর রাতে চিৎকারে সকলের ঘুম ভাঙলে দেখে বারান্দায় আকবার আলীর গলাকাটা লাশ পড়ে আছে।
এ ব্যাপারে আকবর আলীর ছেলে মিন্টু হোসেন আব্দুল হাইসহ পরিবারের চার সদস্যকে আসামি করে মণিরামপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ পরে সিআইডি পুলিশ তদন্তের দায়িত্ব পায়।
মামলার তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, ৩০ বছর আগে হালিমা খাতুনকে বিয়ে করে শ্বশুরের দেওয়া জমিতে বাড়ি করে বসবাস করত আকবর আলী গাজী। বিয়ের পর থেকে আকবর আলী তার শ্যালিকাসহ বিভিন্ন নারীদের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। একপর্যায়ে শ্যালিকার সাথে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তোলে আকবর। ২০১৫ সালে শ্যালিকার সাথে আপত্তিকর অবস্থায় আকবর আলীকে ধরে ফেলে স্ত্রী হালিমা খাতুন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আকবর আলী সংসার চালানো টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এনিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ চরম আকারে পৌঁছায়। ওই বছরে ১৫ নভেম্বর গভীর রাতে আকবর আলী বাড়ি ফিরলে স্ত্রীর সাথে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তাকে বেদম মারপিট করে। এরপর থেকে হালিমা খাতুন প্রতিশোধ নিতে আকবর আলীকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে। এরমধ্যে ২০১৭ সালের সালে হালিমার ভাই মিনাজ কাশেমের কাছ থেকে প্রতিবেশী আব্দুল হাই মামলা মীমাংসার কথা বলে ১৪ হাজার টাকা দাবি করে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে নিলে বোন হালিমা খাতুন তাদের ওপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত হয় পাল্টা মামলা দিয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করে হালিমা।
পরিকল্পনা অনুয়ায়ী আব্দুল হাইয়ের বাড়ি থেকে হালিমা একটি ওড়না চুরি করে নিয়ে আসে। রাতে বাড়ির সকলে ঘুমিয়ে পড়লে হালিমা খাতুন তার স্বামী আকবর আলীকে ছুরি দিয়ে গলা কেটে বেডসিট দিয়ে চেপে ধরে রাখে। আকবর আলী বেশি নড়াচড়া করায় ঘাড়ের দুইপাশে কোপ দিয়ে জখম করেছিল হালিমা। আকবর আলী খাটের নিচে পড়ে গেলে হালিমা টেনে বারান্দায় রেখে হাত-মুখ ধুয়ে আসে। এরপর ভাই মিনাজ কাশেমকে ঘুম থেকে তুলে হালিমা জানিয়েছিল, ওড়ানা দিয়ে তার হাত-মুখ বেঁধে আব্দুল হাইসহ অন্য আসামিরা আকবর আলীকে জবাই করে হত্যার পর ফেলে রেখে গেছে। হালিমা তার স্বামীকে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরিটি ঘরের পিছনে মাটিতে পুতে রেখেছিল। যা পরে হালিমা ফেরিওয়ালাকে দিয়ে পাপড় কিনেছিল।
এ মামলার দীর্ঘ তদন্তকালে হত্যার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে নিহতের স্ত্রী হালিমাকে আটক করে পুলিশ। হালিমা তার স্বামীকে হত্যা করেছে বলে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে আসামির দেওয়া তথ্য ও সাক্ষীদের দেওয়া বক্তব্য যাচাই বাছায় করে হত্যার সাথে জড়িত থাকায় হালিমাকে অভিযুক্ত করে আদালতে এ চার্জশিট জমা দিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আব্দুল হাই, পারভীনা খাতুন, জুলেখা খাতুন, আনিছুর রহমান, নুরনবী হোসেনের অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে চার্জশিটে।