হোটেলে মা-ছেলে খুন, আদালতে বাবার স্বীকারোক্তি

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বগুড়া
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ায় আবাসিক হোটেলে স্ত্রী আশামনি ও শিশু- সন্তান আব্দুল্লাহেল রাফিকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার সেনা সদস্য আজিজুল হক হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন।

সোমবার (৩ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত বগুড়ার সিনিয়র জ্যুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সোমাইয়া জাহান ১৬৪ ধারায় সেনা সদস্য আজিজুল হকের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এর আগে আজিজুল হককে দুই ঘণ্টা সময় দেয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

বগুড়ার শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরীদল পুলিশ ও সেনা সদস্য আজিজুল হকের উপস্থিততে করতোয়া নদীতে তল্লাশি করে শিশু আব্দুল্লাহেল রাফীর দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করা মাথা উদ্ধার করতে না পেরে অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেছে ফায়ার সার্ভিস।

এর আগে রোববার রাতে আজিজুল হকের শ্বশুর আসাদুল ইসলাম বাদী হয়ে শাজাহানপুর থানায় মামলা করেছেন। মামলায় জামাই আজিজুল হক ও তার বাবা হামিদুল হককে আসামি করা হয়। সেই মামলায় পুলিশ আজিজুল হককে গ্রেফতারের পাশাপাশি তার বাবাকেও গ্রেফতার করেছে।

মামলায় আজিজুল হকের বাবাকে হত্যাকান্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় পারিবারিক বিরোধ এবং দাম্পত্য কলহের কারণে আশামনি ও তার ১১ মাস বয়সী ছেলে আব্দুল্লাহেল রাফিকে হত্যা করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়। মামলায় যৌতুক নিয়ে বিরোধের কথা উল্লেখ না থাকলেও বাদী জানায়, সেনা সদস্য আজিজুল হকের সাথে তার মেয়ের বিয়ের সময় শ্বশুর বাড়ি শহরের নারুলী এলাকায় বাড়ি করার জন্য জামাইকে তিন শতাংশ জমি কিনে দিতে চেয়েছিলেন আসাদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, পরবর্তী সময়ে জামাই আজিজুল জমির পরিবর্তে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে। তার মধ্যে দুই লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। বাকী তিন লাখ টাকার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছিল। আসাদুলের এই বক্তব্য আংশিক সত্য উল্লেখ করে সেনা সদস্য আজিজুল হকের বাবা হামিদুল হক গ্রেফতারের আগে বলেছেন, জামাইকে দুই লাখ টাকা দেয়ার কিছুদিন পর ধার হিসেবে সেই টাকা নিয়েছেন আজিজুলের শ্বশুর আসাদুল।

এদিকে পুলিশের একাধিক সূত্র মতে, সেনা সদস্য আজিজুল পুর্ব পরিকল্পিত ভাবেই তার স্ত্রী আশামনি ও সন্তান আব্দুল্লাহেল রাফিকে হত্যা করেছে। গত বৃহস্পতিবার আজিজুল হক শ্বশুর বাড়ি বগুড়া শহরের নারুলীতে আসেন। শনিবার বিকেলে স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে মার্কেট করার কথা বলে বের হন। এর আগেই তিনি শ্বশুর বাড়ি থেকে শহরে বেড়ানোর কথা বলে বের হয়েছিলেন। আর তখনই স্ত্রী সন্তানকে হত্যার পরিকল্পনা করে বলে পুলিশের ধারণা।

এদিকে শহরের বনানী এলাকায় শুভেচ্ছা আবাসিক হোটেলের ব্যবস্থাপক রবিউল ইসলামের ভাষ্য মতে, শনিবার দুপুরের দিকে আজিজুল হক একাই হোটেলে যান। সে সময় তিনি নিজেকে মিরাজ বাড়ি রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায় পরিচয় দিয়ে হোটেলের ৩০১ নম্বর কক্ষ ভাড়া করেন। হোটেলের ব্যবস্থাপক আরো বলেন, স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য তিনি এসেছেন এবং সন্ধ্যার পর স্ত্রী সন্তান নিয়ে উঠবেন বলে কক্ষ বুকিং দিয়ে তিনি চলে যান। সন্ধ্যার পর তিনি স্ত্রী সন্তান নিয়ে হোটেলের কক্ষে উঠেন। রাত ১১টার দিকে তিনি একাই বের হয়ে যান। এরপর রাতে ফিরছেন কি না হোটেল ব্যবস্থাপক তা বলতে পারেন না।

পরদিন রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আজিজুল হক ভাড়া পরিশোধ করতে গেলে হোটেল ব্যবস্থাপকের সন্দেহ হয়। এক পর্যায় তিনি স্ত্রী সন্তানকে হোটেল কক্ষে হত্যার কথা স্বিকার করেন। পরে পুলিশ হোটেল থেকেই আজিজুল হককে গ্রেফতার করে।

এদিকে মামলার বাদী ও নিহত আশামনির বাবা জানায়, শনিবার রাত ১০টার দিকে আজিজুল ফোনে তাকে জানায় রাত ৮টার দিকে শহরের সাতমাথায় স্ত্রী সন্তানকে রিক্সায় তুলে দেয়ার পর থেকে ফোন বন্ধ। রাত ১২টার দিকে আজিজুল শ্বশুরবাড়িতে যায় এবং শ্বশুরের সাথে রাতে বগুড়া সদর থানায় পুলিশকে অবহিত করতে যায়। রাতভর তিনি শ্বশুরের সাথেই ছিলেন এবং পরদিন সকালে শ্বশুরকে সাথে নিয়ে বগুড়া সদর থানায় জিডি করতে যান।

শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আজিজুল হক পুলিশকে জানায়, কর্মস্থলে চলে যাওয়ার আগে এক রাত হোটেলে রাত্রী যাপন করার কথা বলে স্ত্রী- সন্তানকে হোটেলে নিয়ে যান। শনিবার রাত ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে স্ত্রী- সন্তানকে গলা কেটে হত্যা করে। ১১ মাস বয়সী সন্তানের মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে একটি ব্যাগে ভরে বগুড়া শহরে আসে। এরপর শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পথে চেলোপাড়া রেলব্রীজের নিচে করতোয়া নদীতে কচুরিপানার মধ্যে ফেলে দিয়ে নারুলীতে শ্বশুরবাড়ি যান। ওসি আরো বলেন, আজিজুল দেয়া তথ্য অনুযায়ী রোবার এবং সোমবার দুপুর পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরী নদীতে তল্লাশী করেও ফেলে দেয়া মাথা উদ্ধার করা যায়নি।